ঢাকা, রবিবার, ৩০ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১৫ ডিসেম্বর ২০২৪, ১২ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

ক্রিকেট

দীপুর নিঃসঙ্গ লড়াইয়ে এখন আকাশ ছোঁয়ার তাড়না

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট (স্পোর্টস) | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২০০৬ ঘণ্টা, জুন ৫, ২০২৩
দীপুর নিঃসঙ্গ লড়াইয়ে এখন আকাশ ছোঁয়ার তাড়না

ইনডোরের সামনের মাঠ তখন কোলাহলে ভরপুর। টেস্ট দল- বাইরের ক্রিকেটার, নেট বোলার, জাতীয় দলের সাপোর্ট স্টাফ; কোচিং স্টাফের সদস্যও নয়জন।

জাকির হাসানের সঙ্গে লম্বা আলাপ করছেন হেড কোচ চন্ডিকা হাথুরুসিংহে, তাসকিন আহমেদের ব্যাটিং নিয়ে ব্যস্ততা সহকারী নিক পোথাসের। ডোনাল্ডের দীক্ষা নিচ্ছেন শরিফুল, রঙ্গনা হেরাথের জুবায়ের হোসেন লিখন।

ব্যাট-বলের টুকটাক শব্দ, ক্যামেরার ল্যান্সের ব্যস্ততা বা বাইরে ভক্তদের অপেক্ষা; এসব অনেকটা নিয়মিত ব্যাপারই এখানে। কিন্তু সবকিছু শাহাদাৎ হোসেন দীপুর জন্য নিশ্চয়ই আলাদা। ইস্পাহানি ক্রিকেট একাডেমি হয়ে তার জীবন এখন জাতীয় দলের ক্যাম্পে। ব্যাটটা থুতনির নিচে দিয়ে অপলক দৃষ্টিতে একাডেমি মাঠের ব্যস্ততা দেখে দীপু হয়তো ভাবছিলেন সেসব।

৯ বছর বয়সে ক্যান্সারে ড্রাইভার বাবা মারা গিয়েছিলেন যখন, দীপুর জীবন বদলাতে পারতো তখনই। অথবা অন্তত তখন, যখন ১৩ বছর বয়সে তিনি বাংলাদেশ ক্রীড়া শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ট্রায়াল দিয়েও টেকেননি। পরে তার জন্য দেবদূত হয়ে এসেছিলেন সুদীপ্ত দেব। মা-ভাইকে বুঝিয়ে দীপুকে ইস্পাহানি ক্রিকেট একাডেমিতে নিয়ে গিয়েছিলেন এই ভদ্রলোক।

এরপর স্কুল ক্রিকেট, বয়সভিত্তিক নানা ধাপ, অনূর্ধ্ব-১৯ দলের হয়ে বিশ্বকাপ জয়, লিস্ট-এ, প্রথম শ্রেণির ক্রিকেট আরও কত অজানা বন্ধুর পথ পাড়ি দিতে হয়েছে দীপুকে। জাতীয় দলের রঙিন দুনিয়া তাই হয়তো তাকে ফিরিয়ে নিয়ে গিয়েছিল পুরোনো সেই দিনে। প্রথম দিনের অনুশীলনের প্রায় পুরোটা সময়ই দীপু তাই ইতস্তত।

একবার একটু সামনে বসা মুমিনুল হককে দেখে চেয়ারটা এগোলেন বটে, কিন্তু কথা আর বলতে পারলেন না। চারদিকে যখন তাকে খুঁজছে সবাই, তিনি তখন অপেক্ষায় নেটে ব্যাটিংয়ের সুযোগ পাওয়ার। ঠাণ্ডা মাথা আর ভালো টেকনিকের জন্য তাকে নিয়ে উচ্ছ্বাসটা বেশ।

কিন্তু পরে যখন এলেন সংবাদ মাধ্যমে- দীপু চাইলেন ভিন্ন একটা শক্তিও, ‘স্কিল ভালো সেটা সবাই বলে। আর আসলে আমি ফিল করি, মানসিকভাবে আরও স্ট্রং হওয়া দরকার এখানে খেলার জন্য। ’

জাতীয় দলের ক্যাম্পে যখন ঢুকেছেন, ভেসেছেন অভিনন্দন বার্তায়। পেয়েছেন স্বপ্ন পূরণের আনন্দও। তবে ঘরোয়া ক্রিকেটের সঙ্গে সর্বোচ্চ পর্যায়ের ক্রিকেটের তফাৎটা এমনিতে শাহাদাৎ টের পেয়েছেন ‘এ’ দলে খেলেই। ওই অভিজ্ঞতাও বলছিলেন দীপু।  

‘ওদের বোলার একটু কঠিন থাকে অবশ্যই। ভালো অভিজ্ঞতা থাকে। আন্তর্জাতিক পর্যায়ের। যারা এ টিমে খেলে। ভারতের মোটামুটি ভালো বোলাররাই খেলেছে। ওদের স্কিল খুব ভালো থাকে। ওরা একটু চ্যালেঞ্জিং থাকে। মানসিকভাবে অনেক শক্ত থাকতে হয় আমি ফিল করি৷ এটা যদি মানিয়ে নেওয়া যায়, তাহলে…। ’

জাতীয় দলের ক্যাম্পে প্রথম দিনটা দীপুর কেটেছে চুপচাপ থেকে। দীর্ঘ অপেক্ষার পর যখন ব্যাটিংয়ের সুযোগ পেয়েছেন নেটে, তার দু'পাশে মুশফিকুর রহিম ও নাজমুল হোসেন শান্ত। কে জানে, দীপু তাদের ছাড়িয়ে যাওয়ার প্রত্যয় নিয়েই ছুটবেন বলেই কি না! 

বাংলাদেশ সময়: ২০২৩ ঘণ্টা, জুন ০৫, ২০২৩ 
এমএইচবি/এমএইচএম

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।