ঢাকা, শনিবার, ১৬ আষাঢ় ১৪৩১, ২৯ জুন ২০২৪, ২১ জিলহজ ১৪৪৫

ক্রিকেট

সাকিব-মাহমুদউল্লাহ কি এবার টি-টোয়েন্টি ছাড়বেন?

আশরাফুল মাখলুকাত | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২১৩৩ ঘণ্টা, জুন ২৫, ২০২৪
সাকিব-মাহমুদউল্লাহ কি এবার টি-টোয়েন্টি ছাড়বেন?

দাপুটে বোলিংয়ে আফগানিস্তানকে ১১৫ রানে থামিয়ে দেওয়ার পর বাংলাদেশের সমর্থকরা আশায় বুক বেঁধেছিলেন। কারণ ১২.১ ওভারে ম্যাচটা জিতলেই সেমিফাইনালে উঠে যেত টাইগাররা।

এত সহজ লক্ষ্য তাড়া করেও মাত্র ১০৫ রান অলআউট হয়ে গেল তারা। এমনকি ম্যাচ শেষে অধিনায়ক নাজমুল হোসেন শান্ত জানান, প্রথম ৩ উইকেট হারানোর পর সেমির আশা বাদ দিয়ে নাকি শুধু জেতার লক্ষ্য ছিল তাদের। অথচ তৃতীয় উইকেট তারা হারিয়েছিল তৃতীয় ওভারে। নির্ধারিত ওভারের মধ্যে জেতার জন্য যথেষ্ট সুযোগ ছিল তাদের সামনে। কিন্তু শেষে হেরেই গেল বাংলাদেশ।

এই হার বাংলাদেশের সমর্থকরা কিছুতেই মানতে পারছেন না। যদিও অনেকে এমন হারকে স্বাভাবিক হিসেবেই নিচ্ছেন। কারণে বিশ্বকাপ শুরুর আগেই অনেকে ধারণা করেছিলেন, বাংলাদেশ হয়তো গ্রুপ পর্বের সব ম্যাচেই হেরে বিদায় নেবে। বিশ্বকাপে আগে বাংলাদেশ দলের ছন্নছাড়া পারফরম্যান্সই ভক্ত-সমর্থকদের মনে এই সংশয় তৈরি করেছে। তবে কিছু নাটকীয়তা ও তুলনামূলক দুর্বল প্রতিপক্ষকে হারিয়ে বাংলাদেশ সুপার এইটে কোয়ালিফাই করে।

সুপার এইট পর্বে অস্ট্রেলিয়া ও ভারতের বিরুদ্ধে ন্যূনতম প্রতিযোগিতা না করেই হেরে যাওয়ার পর, আফগানিস্তানও বাংলাদেশকে নির্বাক করে বিশ্বকাপ থেকে বিদায় করে দেয়। সমীকরণ মিলে গেলে হয়তো বাংলাদেশও সেমিফাইনাল খেলতে পারতো। কিন্তু দলের কোনো খেলোয়াড়ের শরীরী ভাষায় জয়ের ক্ষুধা দেখা যায়নি।

অথচ তরুণ ও অভিজ্ঞদের সংমিশ্রণে সাজানো হয়েছিল বাংলাদেশ ২০২৪ টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ দল। কিন্তু দলের বোলাররা নিজেদের উজাড় করে দিলেও ব্যাটিং ইউনিট ছিল নিষ্ক্রিয়। অভিজ্ঞ সাকিব আল হাসান ও মাহমুদউল্লাহ রিয়াদের পারফরম্যান্স ছিল সবচেয়ে হতাশাজনক। গ্রুপ পর্বে দুর্বল নেদারল্যান্ডসের বিরুদ্ধে সাকিব ব্যাটে-বলে জ্বলে উঠেছিলেন। তবে প্রায় সব ম্যাচেই বল হাতে ছিলেন ছন্নছাড়া। সাকিবের বর্তমান ব্যাটিং ও বোলিং ফর্ম তার পক্ষে কথা বলছে না। আবার বারবার ব্যাট হাতেও ব্যর্থ হচ্ছেন। সাকিবের ব্যাটিং স্ট্যান্স প্রশ্নবিদ্ধ ও অকার্যকর প্রমাণিত হয়েছে এই বিশ্বকাপে বারবার।

অন্যদিকে, মাহমুদউল্লাহ রিয়াদও ছিলেন অকার্যকর। শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে ছয় মেরে ম্যাচ ফিনিশ করে আসা ছাড়া, এই বিশ্বকাপে তার অবদান ভুলে যাওয়ার মতোই। সর্বশেষ আফগানিস্তানের বিরুদ্ধে ম্যাচে তিনি বারবার ডট খেলে নিজের ভূমিকা প্রশ্নবিদ্ধ করেছেন। আফগান স্পিনার নূর আহমেদের এক ওভারে ৫টি বলে কোনও রান নিতে পারেননি তিনি। এক পর্যায়ে দলকে চাপের মুখে রেখে আউটও হয়েছেন। যেটা দেশের ক্রিকেট ভক্তের স্বপ্নভঙ্গের অন্যতম কারণ।  

সাকিব ও মাহমুদউল্লাহ দুজনই বর্তমান দলের সবচেয়ে বেশিবার বিশ্বকাপ খেলার অভিজ্ঞতা সমৃদ্ধ। সাকিব ২০০৭ সালের টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ থেকে ২০২৪ টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের প্রতিটি আসরেই খেলেছেন। কিন্তু তিনি থাকা সত্ত্বেও বাংলাদেশের অর্জনের খাতা বারবারই শূন্যই থেকে গেছে। ক্রিকেট ভক্ত থেকে শুরু করে ক্রিকেট বিশ্লেষকরা সাকিব ও মাহমুদউল্লাহর টি-টোয়েন্টি ফরম্যাটে খেলা চালিয়ে যাওয়া নিয়ে বারবার প্রশ্ন তুলছেন। একদিকে অফ-ফর্ম, অন্যদিকে বয়সের ভার। এই দুই মিলিয়ে সাকিব ও মাহমুদউল্লাহকে সাবেক তারকারা অবসর নেওয়ার ইঙ্গিত দিয়ে আসছেন। এবারের বিশ্বকাপেই ভারতের সাবেক ওপেনার বীরেন্দ্র শেবাগ রাখঢাক না করেই সাকিবকে বারবার অবসর নেওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন।  

সাকিব ও মাহমুদউল্লাহ হয়তো তাদের সর্বোচ্চ চেষ্টা করে যাচ্ছেন, কিন্তু সব কিছুরই শেষ আছে। ২০০৭ বিশ্বকাপে খেলা সাকিব ছাড়া ওই আসরে অংশ নেওয়া একমাত্র খেলোয়াড় ভারতীয় অধিনায়ক রোহিত শর্মা এখনো টি-টোয়েন্টি ফরম্যাটে খেলা চালিয়ে যাচ্ছেন। আসরের শুরুতে বাজে পারফর্ম করলেও অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে গতকাল সুপার এইটের ম্যাচে খেলেছেন ৪১ বলে ৯২ রানের দুর্দান্ত ইনিংস। তার দলের আরেক 'বুড়ো' বিরাট কোহলিও মাঝে মাঝে ছন্দে ফেরার ইঙ্গিত দিয়ে যাচ্ছেন। তাদের দলও আছে দারুণ ছন্দে। এরইমধ্যে তারা সেমিফাইনালে উঠে গেছে।  

বিপরীতে আমাদের সাকিব ও মাহমুদউল্লাহর অবস্থা মোটেই সুবিধাজনক নয়। ব্যাট হাতে ৭ ম্যাচে ১১১ রান করেছেন সাকিব, গড় ১৮.৫০। বল হাতে নিয়েছেন মাত্র ৩ উইকেট; ইকোনোমি রেট ৭.৫০। অন্যদিকে মাহমুদউল্লাহ ৭ ম্যাচে করেছেন মাত্র ৯৫ রান; গড় ১৫.৮৩। স্ট্রাইক রেট ১০০-এর কম। বর্তমান ফর্ম বিবেচনায় টি-টোয়েন্টি ফরম্যাট থেকে সরে যাওয়াই তাদের জন্য শ্রেয় বলে অনেকে বলেছেন। আদতে, এই দুই মহারথীকে বিদায় জানিয়েই বাংলাদেশ ক্রিকেটকে সামনের দিকে এগিয়ে যেতে হবে, এটাই সত্য।

তবে প্রশ্ন হচ্ছে, সাকিব-মাহমুদউল্লাহ কি সত্যিই সরে দাঁড়াবেন? নাকি আবারও চেষ্টা চালিয়ে যাবেন ফর্মে ফেরার? গত দুই দশকের টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটের উত্থানে বেশিরভাগ সময়ই সাকিব-মাহমুদউল্লাহ বাংলাদেশের হয়ে প্রতিনিধিত্ব করেছেন, কিন্ত দলকে কতটুকু দিতে পেরেছেন সেটা তাদের ক্যারিয়ারের শেষ সময়ে এসে প্রশ্নবিদ্ধ হয়ে গেল। নানা নাটকীয়তায় ভরা আমাদের ক্রিকেটারদের চলন-বলন ও সিদ্ধান্ত। তাতে সামনে কী হবে কেউ আন্দাজ করতে পারছে না। তবে দর্শক, সমর্থকদের মনে বারবার একটা প্রশ্নই ঘুরপাক খাচ্ছে, কখন টি-টোয়েন্টি ফরম্যাটকে বিদায় বলবেন সাকিব-মাহমুদউল্লাহ?

লেখক 
✪মানবসম্পদ ও উন্নয়নকর্মী

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।