উদযাপনের তালে আগের দিন জেমস অ্যান্ডারসনকে গার্ড অব অনার দিতে ভুলে গিয়েছিল ওয়েস্ট ইন্ডিজ। অবশ্য সেদিনই বোঝা গিয়েছিল এই টেস্ট তিনদিনের বেশি গড়াবে না।
বিদায়ী মঞ্চে আবেগ ছুঁয়ে গেলেও শেষের কবিতা নিয়ে অ্যান্ডারসন খুশিই বলা যায়। কেননা ওয়েস্ট ইন্ডিজকে ইনিংস ও ১১৪ রানে হারিয়ে তাকে জয় উপহার দিয়েছে ইংল্যান্ড।
লর্ডসে টেস্টের তৃতীয় দিনে জয়ের জন্য কেবল ৪ উইকেট দরকার ছিল ইংল্যান্ডের। দিনের প্রথম ছোবলটা মারেন অ্যান্ডারসন। অফ স্টাম্পের কিছুটা সামনের ডেলিভারিতে লেগ সাইডে খেলতে চেয়েছিলেন জশুয়া দা সিলভা। কিন্তু সাপের মতো বাক নিয়ে সেই বল তার ব্যাট ছুঁয়ে সোজা চলে যায় উইকেটরক্ষক জেমি স্মিথের হাতে।
ধারাভাষ্যকক্ষে থাকা নাসের হুসেইন তখন বলে ওঠেন, 'অ্যান্ডারসন কেন অসাধারণ তা জানতে হলে শুধু এই ডেলিভারিটি দেখুন। '
এখন থেকে অ্যান্ডারসনের বোলিং কেবল সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম কিংবা টিভি পর্দার হাইলাইটসেই দেখা যাবে। যদিও পেশাদার ক্রিকেটকে এখনো বিদায় বলেননি। কিন্তু আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে শেষ হলো জেমস মাইকেল অ্যান্ডারসন পর্ব। ২১ বছর আগে যার শুরুটা হয়েছিল এই লর্ডসেই। শূন্য থেকে শুরু করে ডানহাতি এই পেসার আজ থামলেন সাদা পোশাকে ১৮৮ ম্যাচে ২৬.৪৫ গড়ে ৭০৪ উইকেট নিয়ে। সর্বোচ্চ উইকেট শিকারীর তালিকায় তার সামনে আছেন কেবল শেন ওয়ার্ন (৭০৮) ও মুত্তিয়া মুরালিধরন (৮০০)।
পেসারদের মধ্যে অ্যান্ডারসন চূড়ায় উঠেছেন সেই কবেই। বর্তমানে খেলা পেসারদের তার ধারে কাছেও নেই কেউ। ৩৫৮ উইকেট নিয়ে সিংহাসন এখন মিচেল স্টার্কের দখলে। তবে তিনিও আছেন ক্যারিয়ারের ক্রান্তিলগ্নে। তাই অ্যান্ডারসনকে ছাপিয়ে যাওয়াটা আদৌ সম্ভব কি না, তা এক প্রশ্ন বটে। তার মতো ৪২ ছুঁইছুঁই বছর বয়সেও কেউ এমন সাবলীলভাবে বোলিং করে যেতে পারবেন তো?
অ্যান্ডারসন বিদায় বলেছেন অ্যাশেজের আগে দলকে একটি ভারসাম্যপূর্ণ পেস অ্যাটাক গড়ে তোলার সুযোগ করে দেওয়ার কারণে। সেই যাত্রায় কী দুর্দান্তভাবেই না নিজের আগমনী বার্তা দিলেন গাস অ্যাটকিনসন। প্রথম ইনিংসে স্রেফ ৪৫ রানে ৭ উইকেট নেওয়ার পর দ্বিতীয় ইনিংসে ৬১ রান খরচে নিলেন ৫ উইকেট। আর ৪ রান কম দিলে অভিষেকে ইংল্যান্ডের হয়ে সেরা বোলিং ফিগারের রেকর্ডটা নিজের করে নিতে ডানহাতি এই পেসার। ১৩৪ বছর আগে তার মতোই নিজের অভিষেক টেস্টে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে ১০২ রান দিয়ে ১২ উইকেট শিকার করেছিলেন ফ্রেড মার্টিন।
অ্যাটকিনসনের কাছে রীতিমত অসহায়ই ছিল ওয়েস্ট ইন্ডিজ। প্রথম ইনিংসে ১২১ রানের পর দ্বিতীয় ইনিংসে গুটিয়ে গেল ১৩৬ রানে। যার ফলে তিন দিনেই শেষ হলো লর্ডস টেস্ট। শেষ হলো অ্যান্ডারসনের আন্তর্জাতিক ক্যারিয়ারও।
সংক্ষিপ্ত স্কোর
ওয়েস্ট ইন্ডিজ ১ম ইনিংস: ১২১/১০ (মিকাইল ২৭, হজ ২৪; অ্যাটকিনসন ৭/৪৫, অ্যান্ডারসন ১/২৬)।
ইংল্যান্ড ১ম ইনিংস: ৩৭১/১০ (ক্রলি ৭৬, স্মিথ ৭০, রুট ৬৮; সিলস ৪/৭৭)।
ওয়েস্ট ইন্ডিজ ২য় ইনিংস: ১৩৬/১০ (মোতি ৩১*, অ্যাথানেজ ২২; অ্যাটকিনসন ৫/৬১, অ্যান্ডারসন ৩/৩২)।
ফল: ইংল্যান্ড ইনিংস ও ১১৪ রানে জয়ী।
সিরিজ : তিন ম্যাচ সিরিজে ১-০ তে এগিয়ে ইংল্যান্ড।
বাংলাদেশ সময়: ১৭৩১ ঘণ্টা, জুলাই ১২, ২০২৪
এএইচএস