তিন ‘আ’-তে ইডেন পার্কে খুঁজে পাওয়া গেলো পুরনো পাকিস্তানকে। এক. আত্মবিশ্বাস।
টস হেরে আগে ব্যাট করতে নামা পাকিস্তানকে আগের ম্যাচগুলোর চেয়ে অনেক বেশি আত্মবিশ্বাসী মনে হচ্ছিলো এই ম্যাচে। মেকশিফট ওপেনার হিসেবে সরফরাজ আহমেদকে দিয়ে ইনিংস ওপেন করিয়েছে পাকিস্তান। কিন্তু এই উইকেট কিপার ব্যাটসম্যানই শেষ পর্যন্ত ম্যান অফ দ্য ম্যাচ। আর সেটা তার অল রাউন্ড পারফরম্যান্সের কারণে।
উইকেটরে সামনে- পেছনে দুই জায়গায় সফল তিনি। গ্লাভস হাতে ৬টা ক্যাচ নিয়েছেন। যা এর আগে বিশ্বকাপে একমাত্র গিলক্রিস্ট নিয়েছিলেন। তারআগে সরফরাজ ডেইল স্টেইন -অ্যাবোটদের সামলে ৩০ রানের একটা পার্টনারশিপ গড়েন আহমেদ শেহজাদকে নিয়ে। আত্মবিশ্বাসের শুরু সেখানে। গোটা দলকেই যথেষ্ট আত্মবিশ্বাসী মনে হয়েছে।
এই মাঠে আগের ম্যাচে অস্ট্রেলিয়া অল আউট হয়েছিল ১৫১ রানে। ঐ রান তাড়া করে নিউজিল্যান্ড ৯ উইকেট হারিয়েছিল। সেখানে বার কয়েক বৃষ্টি বিঘিœত ম্যাচে পাকিস্তানের ইনিংস শেষ হয় ২২২ রানে। কিন্তু বৃষ্টি ম্যাচের দৈর্ঘ্যও কমিয়ে নিয়ে আনে ৪৭ ওভারে। ডাক ওয়ার্থ এন্ড লুইস মেথডে সাউথ আফ্রিকার জন্য টার্গেট দাঁড়ায় ২৩২ রানের। সে কারণে লড়াই করার জন্য পাকিস্তানের বোলাররা পুঁজি পেয়ে যায় ২৩১ রানের।
ঐ পুঁজি নিয়ে লড়াই করতে যে আত্মবিশ্বাসটা দরকার ছিল তার কোন অভাব ছিল না পাকিস্তানিদের মধ্যে। সাউথ আফ্রিকার ইনিংসের দ্বিতীয় বলে ডি-কককে মোহাম্মদ ইরফান ফিরিয়ে দিলে পাকিস্তানিদের আত্মবিশ্বাসের পারদ আরো উর্দ্ধমুখি হয়ে যায়। আমলা আর ফেফ ডুফ্লিসেস এর ৬৬ রানের দ্বিতীয় উইকেট পার্টনারশিপ ভাঙেন আরেক বাঁহাতি রাহাত আলী। এরপর আর পেছনে তাকায়নি পাকিস্তান। কারণ, তাঁদের আত্মবিশ্বাস তখন তুঙ্গে। ওরকম আত্মবিশ্বাসী দলটার সামনে এক মাত্র বাঁধা হয়ে দাঁড়াতে চেয়েছিলেন একজনই। তিনি এবি ডিভিলিয়ার্স। কিন্তু পারলেন না। ৫৮ বলে ৭৭ রানের ভাল ইনিংস খেললেন বটে। কিন্তু দিন শেষে পরাজিত দলের অধিনায়ক হিসেবে সাংবাদিকদের সামনে হাজির হলেন। হতাশা আর আশার মিশেলে অসাধারণ কিছু কথাবার্তা বললেন!
হাঁ, হতাশ তিনি ম্যাচটা জিততে না পারায়। হতাশ- নিজে শেষ পর্যন্ত উইকেটে থাকতে না পারায়। তার বিশ্বাস তিনি শেষ পর্যন্ত খেলতে পারলে ম্যাচটা বের করে নিতে পারতেন। কিন্ত নবম ব্যাটসম্যান হিসেবে আউট হলেন। দায়টা তাই নিজের কাঁধে নিয়েই এবি বললেন,‘ আমি হতাশ এরকম একটা ম্যাচ জিততে পারলাম না। দায়টা আমার। আমি শেষ পর্যন্ত টিকতে পারলাম না!’
তিনি পারেননি। কিন্তু বাকিরা? তারা যে পাকিস্তানি বোলিঙের কোন উত্তর দিতে পারলেন না! তবে সংবাদ সম্মেলনে সেই প্রশ্নটা উঠতেই সাউথ আফ্রিকার অধিনায়ক বুক চিতিয়ে আগলে রাখলেন তার টিমমেটদের।
‘না না পাকিস্তানি বোলিং আহমরি কিছু ছিল না। আজকে আমাদের ব্যাটিংটা ক্লিক করলো না। এটা হতেই পারে। আমি পারলাম না এটাই মুলত দলের হারের বড় একটা কারণ। আমার পারা উচিৎ ছিল। ’ বললেন এবি।
তবে তার বেশিরভাগ কথার মধ্যেই অধিনায়ক হিসেবে নিজের না পারাটাকে বড় করে দেখার চেষ্টা ছিল। তাই স্বাভাবিকভাবে প্রশ্ন উঠে; তাহলে কি সাউথ আফ্রিকার জয়-পরাজয়ের মধ্যে এবি-ই মুল ফ্যাক্টর?
‘না , না তা হবে কেন! আজকের পরিস্থিতি অনুযায়ী আমার দায়িত্ব ছিল ম্যাচ বের করে নেয়া। কিন্তু পারলাম না। ’
কিন্তু এরপরই নিজের সব হতাশাকে চাপা দিয়ে অন্য এক এবিডি ভিলিয়ার্স বেরিয়ে এলেন। যিনি আশাবাদী হতে পারেন। স্বপ্নের কথা বলতে পারেন। আবার সেই ‘চোকার’ শব্দটা উঠতেই তাকে বিশাল ছক্কার মতো উড়িয়ে ফেলতে পারেন মিডিয়া সেন্টারের বাইরে! যিনি বলতে পারেন, ‘আরে বিশ্বকাপ জিততে দরকার তো শেষ তিনটা ম্যাচ জেতা। আমাদের সামনে আরো চারটা ম্যাচ আছে। জিতলেই কাপটা হবে আমাদের। বাকি ম্যাচগুলো জেতার ক্ষমতা আমাদের আছে। আমরা জিতবো। ’
চার ম্যাচ জিতলে বিশ্বকাপ! অংকের হিসেবে একদম ঠিক। কিন্তু সেই বিশ্বকাপটা হাতে নেওয়ার জন্য এবিডি ভিলিয়ার্সরা যেমন মুখিয়ে আছেন তেমনি আরেকটা দলও কিন্তু আত্মবিশ্বাসী হয়ে উঠছে কাপ জয়ের ব্যাপারে। আর কাপ জয়ের ইতিহাসও তাদের আছে। দলটা পাকিস্তান। খারাপ সময়ে ঘুরে দাঁড়ানোর অনেক নজির যাদের। এবং ইতিহাস থেকে আত্মবিশ্বাসের উৎস খুঁজে পাচ্ছেন পাকিস্তান কোচ ওয়াকার ইউনিস।
‘পাকিস্তান দলের ক্রিকেটাররা এখন বিশ্বাস করতে শুরু করেছে তারা পারে। তাদেরও কাপ জেতার ক্ষমতা আছে। ইমরান খানের দলটা যেমন প্রথম দিকে খুব একটা ভাল না খেললেও টুর্নামেন্টের শেষ দিকে এসে দুর্দান্ত ক্রিকেট খেলতে শুরু করে। কাপ জিতে শেষ করে। এই পাকিস্তান দলে সেই আত্মবিশ্বাস ফিরছে। এখন আক্রমনাত্মক ক্রিকেট খেলতে শুরু করেছে তারা। এরকম একটা দল নিয়ে কাপ জয়ের ব্যাপারে আমি আশাবাদী। আশা করার অনেক কারণ আমি দেখছি। ’-ম্যাচ পরবর্তী সংবাদ সম্মেলনে বললেন পাকিস্তানের কোচ ওয়াকার ইউনিস।
পাকিস্তানের বোলাররাই মুলত ম্যাচটা জেতালেন। অথচ সাউথ আফ্রিকার অধিনায়ক সংবাদ সম্মেলনে এসে বলে গেলেন,‘ওদের বোলিং ওরকম অসাধারণ কিছু নয়। ’ এর পাল্টা একটা জবাব দিয়ে গেলেন পাকিস্তান কোচ।
‘এবি হয়তো ঠিক-ই বলেছে! ওর কাছে তেমন কিছু মনে নাও হতে পারে। কিন্তু বাকিরা কি বলেন সেটা শুনতে পারলে ভাল লাগতো। তবে আমার বিশ্বাস পাকিস্তানের বোলিং কেমন সেটা গোটা বিশ্ব দেখেছে। বুঝতে পেরেছে। আক্রমনাত্মক ক্রিকেট খেলা পাকিস্তানের ঐতিহ্য। সেটা আমরা আজ খেলতে পেরেছি। আমাদের আত্মবিশ্বাস আছে আমরা পারি। যে কারণে আমি আশাবাদী । তবে এখনো অনেকটা পথ পাড়ি দিতে হবে, সেটা জানি। ’
আরেকটা ‘আ’- আবেগকে একদম দূরে সরিয়ে রেখে সংবাদ সম্মেলন শেষ করলেন পাকিস্তান কোচ।
বাংলাদেশ সময় ২০১৬ ঘণ্টা, মার্চ ০৭, ২০১৫
** ওয়ানডে-তে বোলাররা এখন শ্রমিকের ভূমিকায়! অঘোর মন্ডল, অকল্যান্ড থেকে
** অনেক নাটক জন্ম দিতে পারে ইডেন পার্ক ॥ অঘোর মন্ডল, অকল্যান্ড থেকে
** ইয়র্কার এখন বিরল ডেলিভারি!॥ অঘোর মন্ডল, অকল্যান্ড থেকে
** বিশ্বকাপের রান উৎসবে বাংলাদেশও ॥ অঘোর মন্ডল, অকল্যান্ড থেকে
** নেলসনে টাইগারদের তিন ‘ল্যান্ড’ হার্ডল ॥ অঘোর মন্ডল, অকল্যান্ড থেকে
** ইংল্যান্ড পারলে বাংলাদেশ কেন নয়? । । অঘোর মন্ডল, অকল্যান্ড থেকে
** শচীন আছেন শচীন নেই! | অঘোর মন্ডল, অকল্যান্ড থেকে
** ব্রিলিয়ান্ট! সুপার! গ্রেট! অঘোর মন্ডল, মেলবোর্ন থেকে
** বাংলাদেশের ব্র্যান্ড সাকিব!|| অঘোর মন্ডল, মেলবোর্ন থেকে
** মিরপুর টেক্কা দিচ্ছে মেলবোর্নকে ॥ অঘোর মন্ডল, মেলবোর্ন থেকে
** অস্ট্রেলীয় ক্রিকেট সংস্কৃতি নিয়ে বাকযুদ্ধ ॥ অঘোর মন্ডল, মেলবোর্ন থেকে
** নীল-হলুদ নাকি লাল-সবুজের ঢেউ ॥ অঘোর মন্ডল, মেলবোর্ন থেকে
** চোক’ কি ক্রিকেটীয় জোক?। । অঘোর মন্ডল, ব্রিসবেন থেকে
** ব্রিসবেনে আক্ষেপের উল্টোপিঠে স্বস্তিও॥ অঘোর মন্ডল, ব্রিসবেন থেকে
** সাকিব-ই সেরা মানতে অসুবিধা কোথায়!॥ অঘোর মন্ডল, ব্রিসবেন থেকে
** ব্রিসবেনে আক্ষেপের উল্টোপিঠে স্বস্তিও॥ অঘোর মন্ডল, ব্রিসবেন থেকে
** বৃষ্টিবিলম্বিত ক্লার্কের ফেরা! না থেকেও আছেন আশরাফুল॥ ব্রিসবেন থেকে অঘোর মন্ডল
** শঙ্কার চোরা স্রোত ব্রিসবেনে॥ অঘোর মন্ডল, ব্রিসবেন থেকে
** ম্যাচের নায়করা ছিলেন বাইশ গজের বাইরে। । অঘোর মন্ডল, ক্যানবেরা থেকে
** ‘সি’ ফর ক্রিকেট নাকি সাইক্লোন!॥ অঘোর মন্ডল, ব্রিসবেন থেকে