মাইকেল ক্লার্কের মতবাদ আর্দশ কি না তা নিয়ে বির্তক হতে পারে। কিন্তু আপনি সেটাকে একেবারে উড়িয়ে দিতে পারবেন না।
কোয়ার্টার ফাইনাল ম্যাচ তাদের ১৯ মার্চ; ভারতের বিপক্ষে। তার আগে প্র্যাকটিস , প্র্যাকটিস বলে আওয়াজ তোলারও কিছু দেখছে না বাংলাদেশ টিম ম্যানেজমেন্ট। আর তাতে খুব বেশি দোষেরও কিছু নেই। অন্তত ক্লার্ক এর মতবাদ অনুযায়ী। ‘ম্যাচ জেতার চেয়ে ভাল প্র্যাকটিস কিছু আছে নাকি!’ জয়ের মধ্যেই খুঁজে পাওয়া যায় পরের ম্যাচ জেতার অনেক রসদ। এসবের মধ্যে আত্মবিশ্বাস হচ্ছে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়।
তাহলে কোয়ার্টার ফাইনালের আগে ভারত কি একটু বেশি এগিয়ে রইলো? ‘বেশি কি না জানি না। তবে এগিয়ে থাকছে। ’ অস্ট্রেলিয়ান ক্রিকেট মহলে ঢুকে সেটাই মনে হলো। সিডনি ক্রিকেট গ্রাউন্ডে প্রথম কোয়ার্টার ফাইনালে মুখোমুখি হবে দক্ষিণ আফ্রিকা আর শ্রীলংকা। ম্যাচটা হবে ১৮ মার্চ। কিন্তু তার আগে দুটো দলের কাউকে খুঁজে পাওয়া গেলো না এসসিজি’র আশপাশে! না আসার আপাত কারণ, ক্লার্কীয় দর্শন মেনে চলা। জয়ের চেয়ে ভাল প্রস্তুতি কি আর আছে! কিন্তু সিডনি ক্রিকেট গ্রাউন্ডে যে নিজেদের শেষ ম্যাচে অস্ট্রেলিয়ার কাছে হেরেছিল লংকানরা! সাঙ্গাকারার দুর্দান্ত সেঞ্চুরিটাও সেদিন অর্থহীন হয়ে গিয়েছিল! কিন্তু সেই সিডনি ক্রিকেট গ্রাউন্ডেই কি কুমার সাঙ্গাকারা তাঁর ওয়ানডে ক্যারিয়ারের শেষ ম্যাচটা খেলতে যাচ্ছেন?
শেষ ম্যাচ! শব্দ দুটো যেন মিচেল স্টার্ক, ট্রেন্ট বোল্ট বা ডেইল স্টেইনের বাউন্সারের চেয়ে ভয়ঙ্কর মনে হলো অস্ট্রেলিয়ান এক সাংবাদিকের কাছে। দ্য আইল্যান্ডের হয়ে কাজ করছেন ভদ্রলোক। সিডনিতেই থাকেন। কিন্তু নরম্যান ভাবতে পারছেন না শ্রীলংকা নামের ঐ দ্বীপ-দেশটার ইতিহাসের সেরা ব্যাটসম্যান বিশ্বকাপের কোয়ার্টার ফাইনালকেই বিদায় নেয়ার জন্য সেরা মঞ্চ হিসেবে মানবেন। ‘
সাঙ্গা টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটকে কিন্তু বিদায় জানিয়েছিল আপনাদের ঢাকায় ট্রফিটা হাতে নিয়ে। এবার ওর দলের বাকি ক্রিকেটাররা চাইছে ট্রফি হাতে দিয়েই সাঙ্গা এবং মাহেলাকে ওয়ানডে ক্রিকেট থেকে বিদায় দিতে। ট্রফি জেতার ক্ষমতা যে ওদের নেই তা বলা যাচ্ছে না। ’ বিশ্বকাপ হাতে নিতে আরো তিনটা ম্যাচ জিততে হবে। তবে শেষ দুটো ম্যাচ খেলতে হলে সিডনিতেই সাউথ আফ্রিকাকে ধরিয়ে দিতে হবে জোহানেসবার্গের টিকিট। ২০০৩ সালে হাতে ডাক ওয়ার্থ অ্যান্ড লুইস মেথডের চার্ট না থাকায় এই শ্রীলংকার কাছে হেরে প্রথম রাউন্ড থেকেই বিদায় নিয়েছিল দক্ষিণ আফ্রিকা। বিশ্বকাপ ইতিহাসে নেলসন ম্যান্ডেলার দেশের ট্র্যাজেডির অবশ্য অভাব নেই। তারপরও দেশের মাটিতে বিশ্বকাপে সেটা ছিল দক্ষিণ আফ্রিকানদের জন্য জাতীয় শোকের মতো! যে বিশ্বকাপে একটা স্লোগান ছিল সাউথ আফ্রিকান এয়ার লাইন্সের; ‘পলি, মাঠের কাজটা তোমরা করো। বাকিদের বাড়ি পাঠানোর কাজটা আমরা করবো। ’ পলি মানে শন পোলক।
সেবারের বিশ্বকাপে দক্ষিণ আফ্রিকান দলের অধিনায়ক ছিলেন। কিন্তু অন্যদের বাড়িতে ফেরত পাঠানোর আগেই তাঁর দল বিশ্বকাপ থেকে ছিটকে গিয়েছিল।
সেই ভদ্রলোকও আছেন সিডনিতে। কমেন্ট্রি করছেন। কিন্তু সেই শন পোলক মনে করছেন, সিডনি থেকে নয়,দক্ষিণ আফ্রিকা বাড়ি ফিরবে; তবে সেটা মেলবোর্ন থেকে। অর্থাৎ; ২৯ মার্চ সাউথ আফ্রিকা ফাইনাল খেলছে এরকম বিশ্বাস দলটার সঙ্গে থাকা মিডিয়ার লোকজনেরও। কিন্তু দক্ষিণ আফ্রিকা যদি মেলবোর্নে যায় তাহলে খুব তাড়াতাড়ি কলম্বো ফিরতে হবে শ্রীলংকাকে। এবং সেটা সিডনি থেকেই! কিন্তু দাক্ষণ আফ্রিকা যে এখনো বিশ্বকাপে শ্রীলংকাকে হারাতে পারেনি।
দেখা যাক, স্বপ্নের ফর্মে থাকা সাঙ্গাকারা শ্রীলংকাকে টানবেন নাকি এবি ডি ভিলিয়ার্স যেমন টানছেন দক্ষিণ আফ্রিকাকে তেমনি এ ম্যাচেও টেনে নেবেন! যদি সত্যিই এবি ডি টানেন দক্ষিণ আফ্রিকাকে, তাহলে সিডনি থেকেই শ্রীলংকাকে টানতে হবে এমিরেটস এয়ার লাইন্সের! কিন্তু এতোতাড়ি কি এমিরেটসের যাত্রী হবেন সাঙ্গাকারা- মাহেলা-দিলশানরা?
অস্ট্রেলিয়ায় শ্রীলংকান অনাবাসীর সংখ্যা অনেক। সিডনি, মেলবোর্ন দু’জায়গাতেই। অকল্যান্ড থেকে সকালে সিডনি এয়ারপোর্টে নেমে যে ট্যাক্সি ধরে রুমে আসা, কাকতলীয়ভাবে ভদ্রলোক শ্রীলংকান। মুলত: মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ার। কিন্তু খণ্ডকালীন কাজ হিসেবে যাত্রীদের বিভিন্ন জায়গায় পৌঁছে দেন কুশল ধর্মদাসা। ভদ্রলোকের বিশ্বাস সিডনিতে শ্রীলংকা অস্ট্রেলিয়ার কাছে হারালেও দক্ষিণ আফ্রিকাকে হারাবে। ‘ ঐদিন মাঠে দেখবেন শ্রীলংকান উৎসব। আর সেটা পূর্ণতা পাবে ম্যাচ শেষে। ’ মানে শ্রীলংকা হারাছে দক্ষিণ আফ্রিকাকে! ‘অবশ্যই। ওদের হারানোটা বিশ্বকাপে আমাদের অভ্যাস। ’ বললেন কুশল।
হ্যাঁ, মেলবোর্নে কোয়ার্টার ফাইনালে বাংলাদেশ যে দলটার মুখোমুখি হবে তারা কিন্তু বলতে পারছে না, ওদের হারানো আমাদের অভ্যাস। ২০১১ বিশ্বকাপে ভারতের কাছে হারলেও ২০০৭ এ ভারতকে হারিয়েছিল বাংলাদেশ। তাই অভ্যাসের কথাটা কেউ বলতে পারছে না। কিন্তু মাইকেল ক্লার্কের দর্শনের কথা মাথায় রাখলে, ভারতকে খানিকটা এগিয়েই রাখতে হচ্ছে। কারণ; টানা ছয়টা ম্যাচ জিতে কোয়ার্টার ফাইনালে এসেছে ধোনির ভারত। যে নজির একমাত্র নিউজিল্যান্ডের আছে। অবশ্য সেই নিউজিল্যান্ডকে হারানোর সহজ সুযোগটা হাতছাড়া হয়েছে বাংলাদেশের। এটা এখন ক্রিকেট মহলে সবচেয়ে বেশি আলোচিত! প্রশ্ন উঠছে, ঐ ম্যাচে বাংলাদেশকে নেতৃত্ব দিতে গিয়ে সাকিব কেন এরকম ট্যাকটিক্যাল ভুল করলেন! কেন তিনি রুবেল হোসেনের দুটো ওভারকে কাজে লাগালেন না! কেন নিজে আরো একটা ওভার বল করলেন না! কেন তিনি রুবলের জায়গায় তাইজুলের মতো অনভিজ্ঞ বোলারকে দিয়ে ইনিংস ওপেন করালেন! আসলে ম্যাচ শেষে অনেক প্রশ্নই তোলা যায়। আবার ম্যাচটা যদি বাংলাদেশ জিতে যেতো তাহলে সাকিবের অধিনায়কত্ব নিয়ে ধন্য ধন্য আওয়াজ উঠতো চারিদিকে। যেমন উঠেছে মহেন্দ্র সিং ধোনির কাপ্টেন্সি নিয়ে। বিশ্বকাপ কিংবা আইসিসি’র কোনো টুর্নামেন্ট হলেই কেমন যেন বদলে যান এমএসডি! মহেন্দ্র সিং ধোনির এই বদলে যাওয়ার কোনো রহস্য খুঁজে পাচ্ছেন না স্যার রিচার্ড হ্যাডলি থেকে সৌরভ গাঙ্গুলি! লোকটা কিভাবে এরকম রূপান্তর ঘটান? কোয়ার্টার ফাইনালে সেই ধোনির সঙ্গে টস করতে নামবেন মাশরাফি বিন মর্তুজা। ধোনির দলের জয়রথ থামাতে হলে মাশরাফিকে আগেভাগেই কিছু প্রশ্নের উত্তর খুঁজে নিতে হবে। ভারতের বিপক্ষে স্পিন না পেস কোনটাকে আক্রমণের সেরা অস্ত্র হিসেবে বেছে নেবেন তিনি? টস জিতলে রান তাড়া করা নাকি আগে ব্যাট করে বড় স্কোর দাঁড় করিয়ে ভারতকে চাপে রাখা? কিন্তু এমএসডি নামে একজন ব্যাটসম্যান আছেন ভারতীয় দলে যিনি রান তাড়া করে দলকে জেতানোর ক্ষেত্রে মাইকেল বেভানকেও পেছনে ফেলেছেন। রান তাড়া করে ধোনি এখনো পর্যন্ত ৪০ বার অপরাজিত থেকে ৩৮ বার জিতিয়েছেন ভারতকে। এর মধ্যে ন’বার তাঁর ম্যাচ উইনিং স্ট্রোক ছিল ওভার বাউন্ডারি। আর রান করেছেন ১০৯ দশমিক ১৯ গড়ে। বেভান সেখানে ৩০ বার অপরাজিত থেকে ২৫ বার অস্ট্রেলিয়াকে জিতিয়েছিলেন। নিজে রান করেছেন ৮৬ দশমিক ২৫ গড়ে। মেলবোর্নে সেই ধোনির সঙ্গে টস করতে নামার সময়ই হয়তো মাশরাফিকে দেখতে হবে গ্যালারির নীল সমুদ্র! সেই নীলে ১৯ মার্চ গোটা বাংলাদেশ বিবর্ণ হতে পারে না, সেটা ভাল করেই জানা ‘এম বি এম’-র। এমএসডি-র ভারত টানা ছয় ম্যাচ জিতে কোয়ার্টার ফাইনালের প্রস্তুতিটা ভালই নিয়ে রেখেছে। যদি আপনি বিশ্বাস রাখেন ক্লার্কীয় থিওরি ; জয়ের চেয়ে ভাল প্রস্তুতি কিছু নেই। ক্লার্কের কথাটা আরো একটু বেশি মনে করিয়ে দিচ্ছে; অল্পের জন্য নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে ম্যাচটা জেতা হলো না বাংলাদেশের! তা নাহলে হয়তো মাশরাফিও বলতে পারতেন; ‘মাইকেল আমরাও তোমার দর্শনে বিশ্বাসী। জয়ের চেয়ে ভাল প্রস্তুতি আর কি আছে। আমরাও তো নিউজিল্যান্ডকে হারিয়ে কোয়ার্টার ফাইনালে ভারতের মুখোমুখি হতে যাচ্ছি। আমরা প্রস্তুত...!’ কিন্তু সে কথাটা বলতে পারছেন না মাশরাফি এবং বাংলাদেশ। শেষ ম্যাচে বাংলাদেশের জয়টা আসলে খুব প্রয়োজনীয় ছিল ভারতের মুখোমুখি হওয়ার আগে। কিন্তু ভারতের বিপক্ষেই বিশ্বকাপে শেষ ম্যাচ সেটা এখনই ভাবতে যাবে কেন বাংলাদেশ!
বাংলাদেশ সময়: ১৬১৬ ঘণ্টা, মার্চ ১৫, ২০১৫
** বাংলাদেশের পারফরম্যান্সে মুগ্ধ হ্যাডলিও || অঘোর মন্ডল, অকল্যান্ড থেকে
** মাহমুদুল্লাহর ইনিংস টেনে আনলো মার্টিন ক্রো-কে। । অঘোর মন্ডল, হ্যামিল্টন থেকে
** ক্লাস অব জিরো এইট! || অঘোর মন্ডল, অকল্যান্ড থেকে
** অ্যাডিলেডে শরতের রংও যেন লাল-সবুজ | অঘোর মন্ডল, অ্যাডিলেড থেকে
** ওয়ানডে-তে বোলাররা এখন শ্রমিকের ভূমিকায়! অঘোর মন্ডল, অকল্যান্ড থেকে
** অনেক নাটক জন্ম দিতে পারে ইডেন পার্ক ॥ অঘোর মন্ডল, অকল্যান্ড থেকে
** ইয়র্কার এখন বিরল ডেলিভারি!॥ অঘোর মন্ডল, অকল্যান্ড থেকে
** বিশ্বকাপের রান উৎসবে বাংলাদেশও ॥ অঘোর মন্ডল, অকল্যান্ড থেকে
** নেলসনে টাইগারদের তিন ‘ল্যান্ড’ হার্ডল ॥ অঘোর মন্ডল, অকল্যান্ড থেকে
** ইংল্যান্ড পারলে বাংলাদেশ কেন নয়? । । অঘোর মন্ডল, অকল্যান্ড থেকে
** শচীন আছেন শচীন নেই! | অঘোর মন্ডল, অকল্যান্ড থেকে
** ব্রিলিয়ান্ট! সুপার! গ্রেট! অঘোর মন্ডল, মেলবোর্ন থেকে
** বাংলাদেশের ব্র্যান্ড সাকিব!|| অঘোর মন্ডল, মেলবোর্ন থেকে
** মিরপুর টেক্কা দিচ্ছে মেলবোর্নকে ॥ অঘোর মন্ডল, মেলবোর্ন থেকে
** অস্ট্রেলীয় ক্রিকেট সংস্কৃতি নিয়ে বাকযুদ্ধ ॥ অঘোর মন্ডল, মেলবোর্ন থেকে
** নীল-হলুদ নাকি লাল-সবুজের ঢেউ ॥ অঘোর মন্ডল, মেলবোর্ন থেকে
** চোক’ কি ক্রিকেটীয় জোক?। । অঘোর মন্ডল, ব্রিসবেন থেকে
** ব্রিসবেনে আক্ষেপের উল্টোপিঠে স্বস্তিও॥ অঘোর মন্ডল, ব্রিসবেন থেকে
** সাকিব-ই সেরা মানতে অসুবিধা কোথায়!॥ অঘোর মন্ডল, ব্রিসবেন থেকে
** ব্রিসবেনে আক্ষেপের উল্টোপিঠে স্বস্তিও॥ অঘোর মন্ডল, ব্রিসবেন থেকে
** বৃষ্টিবিলম্বিত ক্লার্কের ফেরা! না থেকেও আছেন আশরাফুল॥ ব্রিসবেন থেকে অঘোর মন্ডল
** শঙ্কার চোরা স্রোত ব্রিসবেনে॥ অঘোর মন্ডল, ব্রিসবেন থেকে
** ম্যাচের নায়করা ছিলেন বাইশ গজের বাইরে। । অঘোর মন্ডল, ক্যানবেরা থেকে
** ‘সি’ ফর ক্রিকেট নাকি সাইক্লোন!॥ অঘোর মন্ডল, ব্রিসবেন থেকে