সিডনির সঙ্গে তাঁর সম্পর্কটা একটু অন্যরকম। অনেকে বলেন, সেই সম্পর্কটা অনেকটা আত্মিক পর্যায়ের।
নিশ্চিতভাবে বলা যায়, সিডনিতে যখন চলছে সাবেক তারকাদের এই ক্রিকেটীয় মহাআড্ডা, মেলবোর্নে তখন বাংলাদেশ ক্রিকেটারদের নেটে ঘাম ঝরছে। আর উপমহাদেশীয় ক্রিকেট উত্তেজনা সারা মেলবোর্নজুড়ে। প্রবাসী বাংলাদেশিরা অস্ট্রেলিয়ার বিভিন্ন শহর থেকে তাদের গন্তব্য হিসেবে নাম লেখাচ্ছেন মেলবোর্ন। সিডনি, ব্রিসবেন, পার্থ, অ্যাডিলেড থেকে কেন, তাসমান সাগর পেরিয়ে অকল্যান্ড, ওয়েলিংটন, হ্যামিল্টন, ক্রাইস্টচার্চ থেকেও অনেক বাংলাদেশির গন্তব্য এখন মেলবোর্ন। এটা যদি বাংলাদেশি বাঙালিদের ক্রিকেট আবেগের খণ্ডচিত্র হয়, তাহলে ভারতীয়দের আবেগ কোন স্তরে সেটা বুঝতে অসুবিধা হবার কথা নয়। এমসিজির ৯৫ হাজার দর্শক ধারণ ক্ষমতার গ্যালারিকে নীল সমুদ্র বানাতে পুরো মেলবোর্ন শহরটাই নাকি এখন ভারতীয়দের দখলে! সিডনি থেকে গোটা দশেক গেস্ট হাউসে ফোন করে, একটা শব্দই শুনতে হয়েছে ;‘ উই আর ফুললি বুকড!’ এবং সেটা মূলত ভারতীয় ক্রিকেট পর্যটকদের সুবাদে। তবে এমসিজির নীল সমুদ্রে মাঝমধ্যে সবুজ ঢেউও যে উঠবে সেটা জোর দিয়েই বলা যাচ্ছে। বাঙালির ক্রিকেট-ভালবাসাকে বিশ্ব কিন্তু একটু অন্যভাবেই দেখছে। মার্ক ওয়াহ যেমন বললেন ;‘ আপনাদের টিমটা ভাল ক্রিকেট খেলছে। বাংলাদেশের ম্যাচে প্রচুর দর্শকও দেখছি। ক্রিকেটের জন্য এটা খুব ভাল। ’ তার পাশ থেকে মাইক হাসি জানতে চাইলেন, বাংলাদেশ দলের এই রুপান্তরের পেছনে চান্দিকার অবদান কতোটা? কি বলবেন মাইক হাসিকে! তিনি নিজে কমেন্ট্রির পাশাপাশি কাজ করছেন সাউথ আফ্রিকান দলের ব্যাটিং কনসালটেন্ট হিসেবে। গলায় যে অ্যাক্রেডিটেশন কার্ডটা ঝোলানো সেখানেও লেখা ;‘কনসালট্যান্ট, সাউথ আফ্রিকা’। দুটো কাজ একই সঙ্গে করে যাচ্ছেন, কোনটা বেশি উপভোগ করছেন?-- প্রশ্নটা করতেই হলো তাঁকে। খানিকটা নিজস্ব দর্শনের কথাই শোনালেন অস্ট্রেলিয়ার সাবেক এই ব্যাটসম্যান। ‘ আপনি যখন যে কাজটা করবেন, সেটা যদি উপভোগ না করেন, তাহলে সেটা করা উচিত না। করলেও সাফল্য পাওয়ার সম্ভাবনা থাকে কম। আমি দুটো কাজ করছি। কিন্তু ম্যাচ ডে-তে আমি কোনদিন দক্ষিণ আফ্রিকা দলের সঙ্গে নেই। সেদিন আমি কমেন্টেটর। কাজগুলো আমি ভাগ করে নিতে পছন্দ করি। যখন ব্যাট করতাম তখনও তা-ই। পরিস্থিতি বুঝে পরিকল্পনা সাজানোর চেষ্টা করেছি। ’
মাইক হাসির মতো মার্কও কমেন্ট্রি করছেন। তিনি অবশ্য ক্রিকেট অস্ট্রেলিয়ার সিলেক্টর। তাই তাকে ম্যাচের দিন কমেন্ট্রি করার অনুমতিটা আগেই নিতে হয়েছে ক্রিকেট অস্ট্রেলিয়ার কাছ থেকে। তবে বাংলাদেশের সাংবাদিকের সঙ্গে কথা বলতে আর অনুমতির প্রয়োজন পড়েনি। বাংলাদেশ নিয়ে মার্ক ওয়াহ’রও দেখছি আগ্রহ অনেক বেড়েছে। সাকিব আল হাসানকে দেখেছেন বিগ ব্যাশে। ‘ ওকে আমার যথেষ্ট ভাল ক্রিকেটার মনে হয়েছে। ’ ছোট কিন্তু যথেষ্ট দামি সার্টিফিকেট দিয়ে দিলেন মার্ক সাকিবকে। মাইক হাসি অবশ্য সাকিবের সঙ্গে খেলার অভিজ্ঞতার কথাও বললেন। আই পিএল এবং বিগ ব্যাশ দু’জায়গায় খুব কাছ থেকে দেখেছেন তিনি বাংলাদেশের এই অল রাউন্ডারকে। ‘ভারতের বিপক্ষে ওর পারফরম্যান্সটা খুব দরকার হবে বাংলাদেশের। ’-মনে করেন গ্লেন ম্যাকগ্রা। মাহমুদউল্ল্যাহর টানা দুটো সেঞ্চুরিতে মুগ্ধ ক্রিকেটবিশ্ব। স্যার রির্চাড হ্যাডলি তো বলেই রেখেছেন, ‘হ্যামিল্টনে ওর ইনিংসটা এবারের বিশ্বকাপের সেরা পাঁচ ইনিংসের মধ্যে অবশ্যই আসবে। ’ তবে মাহমুদউল্ল্যাহর চেয়ে মাইক হাসির বেশি পছন্দ মুশফিককে। ‘দেখতে ছোটখাটো। কিন্তু অসম্ভব সাহসী এবং ধারাবাহিক। গত বছর দেড়েক তো ঐ আপনাদের সবচেয়ে ধারাবাহিক ব্যাটসম্যান। ’ --বিশ্লেষন মাইক হাসির। তবে যে প্রশ্নটা হাসি করেছিলেন, তাঁর উত্তরটা দিতেই হলো তাঁকে । ‘ কোচ হিসেবে চন্দিকাকে কিছু মার্কস তো দিতেই হবে। কারণ তিনি দলের কোচ। দল ভাল খেলছে। কোয়ার্টার ফাইনালে উঠে এসেছে। সেখানে কোচের অবদানকে অস্বীকার করবেন কিভাবে? কথাগুলো শুনে মাইক হাসি নিজে আর একটু যোগ করলেন;‘চন্দিকা ভাল কোচ। সিডনিতে আমাদের সঙ্গে বিগ ব্যাশে এক বছর ছিল। ’
চন্দিকা ভাল কোচ। কিন্তু বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড যদি আপনাদের মতো তারকাদের কোচ হতে অফার দেয়, তাহলে রাজি হবেন? মার্ক-মাইক এবং ম্যাকগ্রা তিনিজনই হাত উঁচিয়ে ধরলেন! তিনজনই রাজি! সেটাও রসিকতা! এবং মার্ক ওয়াহ পরিষ্কার বললেন: আমি তো কোচিং নিয়ে ভাবছি না। সিলেক্টর হিসেবে কাজ করছি। কাজটা চ্যালেঞ্জিং হলেও ভালো লাগছে। তবে বাংলাদেশের জন্য শুভ কামনা রইলো। ’ মাইক হাসি জানিয়ে দিলেন, দক্ষিণ আফ্রিকা দলের ব্যাটিং কনসালট্যান্ট তিনি বিশ্বকাপের জন্য। এরপর আরো অনেক কাজ তাঁর। সেসবের মধ্যে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হচ্ছে পরিবারকে সময় দেয়া। তবে ভবিষতে বাংলাদেশ থেকে কোনো অফার এলে কনসালট্যান্ট হিসেবে কাজ করার কথা ভেবে দেখতে পারেন। আর ম্যাকগ্রা?-- ‘ খেলা দেখছি। মাঝে মধ্যে কমেন্ট্রি করছি। এটাইতো ভাল জীবন। বল করার সময় অনেক দৌড়াতে হয়েছে। আর দৌড়াতে চাই না। তবে আপনাদের দলের একটা ছেলের দৌড় ভাল লেগেছে। কি যেন হুসেন!’ বুঝলাম রুবেল হোসেনের কথাই বলছেন গ্লেন ম্যাকগ্রা। ইংল্যান্ডকে হারানোর পর তাঁর দৌড়টা নিশ্চয়ই খুব ভাল লাগার কথা নয় মাইকেল ভনের। তিনি শুধু মুচকি হাসলেন ম্যাকগ্রার দিকে তাকিয়ে। কিন্তু যার মুখের হাসি অনেক দামি, সেই ব্রায়ান চার্লস লারাকে মনে করিয়ে দেওয়া হলো: আপনার শহরেই তো আট বছর আগে বাংলাদেশ বিশ্বকাপ থেকে ভারতকে ছিটকে দিয়েছিল। এবার সেই ভারতেরই মুখোমুখি হচ্ছে তারা শেন ওয়ার্নের শহরে। লারা না ওয়ার্ন? বাংলাদেশের জন্য কার শহরটা বেশি ‘লাকি’ তাও প্রমাণ হয়ে যাবে। এবার একটু যেন হাসালেন লারা। ‘গুড লাক মান’
শুভ কামনা! স্বর্গ থেকেই যে একজন আশির্বাদ জানিয়েছিলেন বাংলাদেশকে তাঁর নিজের শহরে। স্যার ডন। হ্যাঁ, মেলবোর্নে ওয়ার্নের পাশাপাশি ব্র্যাডম্যানের একটা মূর্তিও আছে। অ্যাডিলেডে ইংল্যান্ড-বধের পর মেলবোর্নে যদি ভারত-বধ করে ফেলতে পারে বাংলাদেশ, তাহলে এবারে বিশ্বকাপের চ্যাম্পিয়ন দলটার নামও অবশ্যই বাংলাদেশ। তা ২৯ মার্চ রাতে তাঁরা এমসিজিতে খেলুক আর নাই খেলুক! মার্ক-মাইক-ম্যাকগ্রা’র পাশে যে ভদ্রলোক ছিলেন তিনি বিশ্বকাপ না জিতলেও চ্যাম্পিয়ন ব্যাটসম্যান তো ছিলেন! ২৯ মার্চ বাংলাদেশের জেতার দরকার নেই। ১৯ মার্চ জিতলেই তাদের চ্যাম্পিয়নই বলতে হবে। কারণ, ঐ দিন যে বিশ্বচ্যাম্পিয়নদের বিদায় হবে।
বাংলাদেশ সময়: ১৬০৩ ঘণ্টা, ১৮ মার্চ, ২০১৫
** আবেগ মেলবোর্নে, যুদ্ধটা সিডনিতে॥ অঘোর মন্ডল, সিডনি থেকে
** তবু ‘চোক’ শব্দটাকে এড়ানো যাচ্ছে না | সিডনি থেকে অঘোর মন্ডল
** জয়ের চেয়ে ভাল প্রস্তুতি আর কি হতে পারতো!| অঘোর মন্ডল, সিডনি থেকে
** বাংলাদেশের পারফরম্যান্সে মুগ্ধ হ্যাডলিও || অঘোর মন্ডল, অকল্যান্ড থেকে
** মাহমুদুল্লাহর ইনিংস টেনে আনলো মার্টিন ক্রো-কে। । অঘোর মন্ডল, হ্যামিল্টন থেকে
** ক্লাস অব জিরো এইট! || অঘোর মন্ডল, অকল্যান্ড থেকে
** অ্যাডিলেডে শরতের রংও যেন লাল-সবুজ | অঘোর মন্ডল, অ্যাডিলেড থেকে
** ওয়ানডে-তে বোলাররা এখন শ্রমিকের ভূমিকায়! অঘোর মন্ডল, অকল্যান্ড থেকে
** অনেক নাটক জন্ম দিতে পারে ইডেন পার্ক ॥ অঘোর মন্ডল, অকল্যান্ড থেকে
** ইয়র্কার এখন বিরল ডেলিভারি!॥ অঘোর মন্ডল, অকল্যান্ড থেকে
** বিশ্বকাপের রান উৎসবে বাংলাদেশও ॥ অঘোর মন্ডল, অকল্যান্ড থেকে
** নেলসনে টাইগারদের তিন ‘ল্যান্ড’ হার্ডল ॥ অঘোর মন্ডল, অকল্যান্ড থেকে
** ইংল্যান্ড পারলে বাংলাদেশ কেন নয়? । । অঘোর মন্ডল, অকল্যান্ড থেকে
** শচীন আছেন শচীন নেই! | অঘোর মন্ডল, অকল্যান্ড থেকে
** ব্রিলিয়ান্ট! সুপার! গ্রেট! অঘোর মন্ডল, মেলবোর্ন থেকে
** বাংলাদেশের ব্র্যান্ড সাকিব!|| অঘোর মন্ডল, মেলবোর্ন থেকে
** মিরপুর টেক্কা দিচ্ছে মেলবোর্নকে ॥ অঘোর মন্ডল, মেলবোর্ন থেকে
** অস্ট্রেলীয় ক্রিকেট সংস্কৃতি নিয়ে বাকযুদ্ধ ॥ অঘোর মন্ডল, মেলবোর্ন থেকে
** নীল-হলুদ নাকি লাল-সবুজের ঢেউ ॥ অঘোর মন্ডল, মেলবোর্ন থেকে
** চোক’ কি ক্রিকেটীয় জোক?। । অঘোর মন্ডল, ব্রিসবেন থেকে
** ব্রিসবেনে আক্ষেপের উল্টোপিঠে স্বস্তিও॥ অঘোর মন্ডল, ব্রিসবেন থেকে
** সাকিব-ই সেরা মানতে অসুবিধা কোথায়!॥ অঘোর মন্ডল, ব্রিসবেন থেকে
** ব্রিসবেনে আক্ষেপের উল্টোপিঠে স্বস্তিও॥ অঘোর মন্ডল, ব্রিসবেন থেকে
** বৃষ্টিবিলম্বিত ক্লার্কের ফেরা! না থেকেও আছেন আশরাফুল॥ ব্রিসবেন থেকে অঘোর মন্ডল
** শঙ্কার চোরা স্রোত ব্রিসবেনে॥ অঘোর মন্ডল, ব্রিসবেন থেকে
** ম্যাচের নায়করা ছিলেন বাইশ গজের বাইরে। । অঘোর মন্ডল, ক্যানবেরা থেকে
** ‘সি’ ফর ক্রিকেট নাকি সাইক্লোন!॥ অঘোর মন্ডল, ব্রিসবেন থেকে