এর আগে বাংলাদেশের বাঙালিরা এতোটা উত্তেজিত খুব কম সময়ই ছিল। গত রাতে কি ফেসবুকে, কি রাস্তায়--- উত্তেজনায় পুরো টগবগ করছিল।
বাংলাদেশে শিশু-বুড়ো প্রায় সবাই সকালে বিছানা ছেড়ে গোসল করে টিভির সামনে বসেছে। রাস্তাঘাট অফিস আদালত ব্যাংক কার্যত ফাঁকঁই ছিল। সকালে টিএসসিতে বড় পর্দা নাই কেন এ নিয়ে বিক্ষোভও হয়েছে। বড় অফিসে কর্তারা পর্দা লাগিয়ে দিয়েছিলেন তাদের অফিসে। শুধু বাংলাদেশ নয়, ওপার বাংলায়্ও এ বাংলার আবেগ ছুঁয়ে গেছে। প্রখ্যাত লেখক শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায ১১ বাঙালির গুণকীর্তন গেয়ে কলাম লিখেছেন আনন্দবাজার পত্রিকায। এগারো বাঙালির টিম তাকে গর্বিত করেছে শিরোনামে কলাম লিখেছেন। কলকাতার অন্য পত্রিকাগুলো পড়লে মনে হবে কলকাতা ভারত থেকে বিচ্ছিন্ন কোনো রাজ্য, তারা ভারতের সাথে আছে, আবার বাংলাদেশের সাথেও আছে। ১৯৪৭-এর দেশভাগের সীমানা-পিলার বাঙালিদের আলাদা করেছে ঠিকই কিন্তু আবেগ আর উচ্ছ্বাসে দু’পারের বাঙালি আলাদা নয়, বরং এক।
পশ্চিমবঙ্গের নামকরা কবি, শিল্পী, গুণীজনদের অনেকেই উচ্ছ্বসিত। ভারতের জাতীয় দলে উপেক্ষিত বাঙালিরা, অন্য পারের বাঙালিদের সাফল্যে নিজেদের ভেতো বাঙালির অপবাদ ঘুচে দেবার সুপ্ত ইচ্ছা লালন করছিলেন। অবশ্য পত্রিকার মন্তব্য কলামে সেটা আর সুপ্ত থাকছিল না। এপার-ওপার দু’পারই যেন বাঙালি হয়ে উঠেছিল আজ। সন্দেহ নেই দিনশেষে খেলার ফলাফল যদি এগারো বাঙালির পক্ষে যেত তবে দু’বাংলাই খুশী হতো। যদিও রাষ্ট্রীয় পরিচয়ের দিক থেকে তারা ভারতীয়; সে-হিসেবে পশ্চিমবঙ্গের লোকেরা মন খারাপও করতো। কিন্তু বাঙালির বিজয় তাদের ছুঁয়ে যেত, সন্দেহনেঁই। কিন্তু দুর্ভাগ্য, বাঙালির স্বপ্ন চুরি হয়ে গেছে।
মেলবোর্ন ক্রিকেট গ্রাউন্ডে আজ যা হলো তা এক কথায় ন্যাক্কারজনক। ৯০ রানের মাথায় রোহিত শর্মার ক্যাচ-আউটটি যেভাবে আম্পায়ার গোউল্ড নো বল হেঁকে দিলেন তা ছিল অবিচার। শেন ওয়ার্ন কয়েকশ গজ দূরে প্রেসবক্সে বসেই বলে দিলেন, এটা হতাশাজনক। ভুল সিদ্ধান্ত। ভিভিএস লক্ষণও সাথে সাথেই টুইটারে টুইট করে লজ্জার কথা জানিয়েছেন। তীব্র সমালোচনার ঝড় উঠেছে ক্রিকেটবিশ্বে। সৌরভ গাঙ্গুলি, মাইকেল হোল্ডিং, মার্টিন ক্রো, অজিত আগারকার---কে সমালোচনা করছে না এই নোংরামির। ব্যাক টু ব্যাক সেঞ্চুরিয়ান এবারের বিশ্বকাপে অন্যতম আকর্ষণ মাহমুদউল্লাহর ক্যাচটি নিয়েও আপত্তি উঠেছে। এ সিদ্ধান্তগুলো সঠিক হলে বাংলাদেশ জিতত কিনা জানি না, তবে বাঙালি এতোটা আহতও হতো না। আইসিসির দুর্বলতার কারণে ভুল সিদ্ধান্তের বলি হলো বাংলাদেশ দল।
ক্রিকেটের কুলীন দল ভারতের একটি জয় দরকার ছিল। শত কোটি টাকার ব্যবসা, আইসিসির অর্থের যোগান, ভারতের ইজ্জত, আরো বহু বিষয় আইসিসিকে দেখতে হয়। ২০০৭ সালের মতো বাংলাদেশের মতো ‘‘আন্ডারডগ” এর বিরুদ্ধে এবারও হেরে শত কোটি টাকার বাণিজ্য নষ্ট করতে চায় নি এবার আইসিসি, এমনটাই অভিযোগ বাঙালি ক্রিকেটবোদ্ধাদের। তবে তারা অস্বীকার করছে না বাংলাদেশের তুলনায় ভারত ঢের শক্তিশালী দল। আবার এটা ভারতের বোদ্ধারাও স্বীকার করে না যে, বাংলাদেশিরা তাদের হারিয়ে দেবার ক্ষমতা রাখে। কিন্তু এমন ক্লেদাক্ত বিজয় ভারতের ক্রিকেটাররাও হয়তো চায়নি।
ভারত-পাকিস্তান ম্যাচের মতোই গত ক’দিন যে উত্তাপ ভারত-বাংলাদেশ ম্যাচ নিয়ে ছড়িয়ে পড়েছিল তাতে জল ঢেলে দিলেন আম্পায়াররা। একই দিনে আম্পায়ারদের এমন কিছু পক্ষপাতদুষ্ট ভুল সিদ্ধান্ত পুরো ব্যাপারটাকে ঘোলাটে করে দিল। খেলাটা যদি শুদ্ধ হতো, বাংলাদেশে আরো বাজে ভাবে হারলেও উপভোগ্য হতো। ক্রিকেটের জয় হতো। কিন্তু সেটা হয় নি।
ভারত হয়তো জিতেছে, কিন্তু ক্রিকেট হেরেছে।
-মনোয়ার রুবেল
কলামিস্ট ও অনলাইন এক্টিভিস্ট
ইমেইল: monowarrubel@yahoo.com
বাংলাদেশ সময়: ২১২০ ঘণ্টা, মার্চ ১৯, ২০১৫