ঢাকা: মেলবোর্নের সঙ্গে মিরপুরের মিল শুধু আদ্যক্ষরে-‘এম’। মাশরাফি মর্তুজার সঙ্গে মহেন্দ্র সিংহ ধোনির মিলও সেই আদ্যক্ষরে- ‘এম’।
আর মিরপুরের এই ম্যাচ বাংলাদেশের মানুষকে আবার মনে করিয়ে দিলো; বিশ্বকাপের কোয়ার্টার ফাইনালের সেই হারকে। যে হারের ক্ষত বাংলাদেশকে হয়তো আগামী অনেক দিন পর্যন্ত বয়ে বেড়াতে হবে। আগামীতে যদি কোনদিন বাংলাদেশ বিশ্বকাপের সেমিফাইনাল খেলে তাহলে হয়তো সেই ক্ষতের ওপর কিছুটা সান্ত্বনার প্রলেপ পড়বে। বাংলাদেশকে তাই সেই দিন পর্যন্ত অপেক্ষা করতেই হবে।
কিন্তু বিশ্বকাপে হারের পর বাংলাদেশ যে ম্যাচটার অপেক্ষায় ছিল, সেই ম্যাচটায় বাংলাদেশ শুধু জয় পেলো নাকি সঙ্গে আরো খানিকটা রক্তক্ষরণও হলো! ম্যাচ তো জিতলো। সঙ্গে সেই প্রশ্নটা আবারও সামনে চলে এলো; মেলবোর্নে বির্তকিত আম্পায়ারিং কি বাংলাদেশকে জয় বঞ্চিত করেছিলো? এ নিয়ে তর্ক চলবে। তবে একটা বিষয় পরিস্কার হয়ে গেলো; ওয়ানডেতে বাংলাদেশ যে কোন দলের চোখের দিকে চোখ রেখে লড়াই করতে শিখেছে। সেই দলের নাম সাবেক বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন পাকিস্তান কিংবা ভারত যাই হোক না কেন। ভারতীয় টেলিভিশনের বিজ্ঞাপন চিত্রে যা বলা হয়েছে সেটাই সত্যি।
বিশ্ব ক্রিকেটে বাংলাদেশকে এখন আর কচিকাঁচার দল ভাবার কোন কারণ নেই। তবে হ্যাঁ, এই ম্যাচেও বাংলাদেশ প্রমাণ করেছে কচিকাঁচাও এখন রীতিমতো বালক বীর ! ভারতের বিখ্যাত ব্যাটিং লাইনকে অভিষেকে যিনি ধসিয়ে দিয়ে পাঁচ উইকেট নিলেন সেই মোস্তাফিজুর রহমান দিন কয়েক আগেও অনূর্ধ্ব-১৯ দলের সদস্য ছিলেন। সাতক্ষীরার সেই বাঁহাতি পেসার রায়না-ধোনিদের মতো ব্যাটসম্যানকে কাঁপিয়ে দিলেন ! আর এই মোস্তাফিজকে ওয়ানডে ক্যাপ পরিয়ে দেয়ার সময় তাঁর অধিনায়ক একটা কথাই বলেছেন;‘ দশ বছর। দশ বছর খেলতে হবে। ’
বাইশ গজে যিনি আগুন ঝরালেন তিনি কিন্তু মাঠের বাইরে অসম্ভব জড়তা মেশানো এক তরুণ। তাই তিনি তাঁর অধিনায়কদের কথা শুনে কি বলেছিলেন, সেটা জানা গেলো না! তবে অধিনায়ক মাশরাফি নিশ্চিত মুস্তাফিজ লম্বা দৌড়ের ঘোড়াই হবেন। প্রথম ম্যাচে যার স্বপ্নের মতো পারফরম্যান্স তাঁকে নিয়ে আশাবাদী হতেই হবে। ৯ দশমিক ২ ওভার বল করে ঠিক ৫০ রানে ৫ উইকেট নিয়েছেন এই বাঁহাতি পেসার। যার বোলিংয়ে এতটাই আস্থা ছিল মাশরাফির যে নতুন বল নিজে না করে ঐ বাঁহাতি তরুণের হাতেই তুলে দিয়েছিলেন তিনি। অধিনায়কের আস্থার প্রতিদান দিলেন তিনি রোহিত শর্মা-রাহানে-সুরেশ রায়না- অশ্বিন-মোহিত শর্মার উইকেট নিয়ে। পাকিস্তানের বাঁহাতি পেসার মোহাম্মদ আমেরের বোলিং যাকে অনুপ্রাণিত করেছে সেই মোস্তাফিজের বোলিং দেখে মুগ্ধ হতেই পারেন বিশ্ব ক্রিকেটের অনেক বাঁহাতি পেসার।
কিন্তু বাংলাদেশের এমন একটা জয়ে আরো দুই বাঁহাতির গল্পটা বলতেই হবে। তামিম ইকবাল আর সৌম্য সরকার। বাংলাদেশ দলের এই দুই ওপেনার যেভাবে ইনিংসের শুরু করেছিলেন, সেখানেই বড় স্কোরের ভিতটা পেয়ে যায় স্বাগতিকরা। ১৩ দশমিক পাঁচ ওভারে ১০২ রান তুলে তাঁরা বিচ্ছিন্ন হয়েছেন। সৌম্য সরকারের উইকেটটা তুলে নেয় ভারত রায়নার সরাসরি থ্রোতে। কিন্তু তার আগ পর্যন্ত সৌম্য সরকার যেভাবে ব্যাট করেছেন তাতে তামিমের আক্রমণাত্মক মেজাজকেও ছাপিয়ে গেছেন তিনি। ভারতীয় পেসার-স্পিনারদের তিনি খেলেছেন অনেকটা পাড়ার বোলারদের ঠ্যাঙানোর মতো! ৪০ বলে ৫৪ করে রান আউট হলেন সৌম্য। রান আউট ছাড়া অন্যকোন ভাবে তাঁকে আউট করার পথটা যেন ভারতীয়দের জানা ছিল না! তামিম(৬০), সাকিব(৫২), সাব্বির(৪১), নাসির(৩৪) এক সঙ্গে এমনভাবে জ্বলে উঠলেন যাতে বাংলাদেশ প্রথমবারের মতো ভারতের বিপক্ষে তিনশ’ রানের গণ্ডি টপকে গেলো।
বাংলাদেশের ৩০৭ রান তাড়া করে ম্যাচ জেতা ভারতের পক্ষে সম্ভব, অন্তত তাদের ব্যাটিংয়ে তার কোন আভাস মেলেনি। বরং আইলা-সিডর বিধ্বস্থ সাতক্ষীরা থেকে উঠে আসা এক মোস্তাফিজের বোলিংয়ে রীতিমতো বিধ্বস্থ ভারত! ২২৮ এর বেশি এগুতে পারলো না মহেন্দ্র সিং ধোনির দল। আর তাতেই বাংলাদেশ পেয়ে গেলো ভারতের বিপক্ষে ৭৯ রানের জয়। এখনো পর্যন্ত রানের বিচারে ভারতের বিপক্ষে এটাই বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় জয়।
সাতক্ষীরা শুধু আইলা-সিডর বিধ্বস্ত জনপদ নয়। সুন্দরবনেরও বড় একটা অংশ তাদের। আর সেই সুন্দরবনের রয়েল বেঙ্গল টাইগারের ট্যাগটা বাংলাদেশ দলের গায়ে লাগানো। সৌম্য-মোস্তাফিজরা বুঝিয়ে দিলেন; সত্যিই তাঁরা বাঘের মতো প্রতিপক্ষের ওপর ঝাঁপিয়ে পড়তে পারেন। সৌম্য’র ব্যাটিং আর মোস্তাফিজের বোলিংয়ে রয়েল বেঙ্গল টাইগারের ক্রিকেটীয় মেজাজটাই কি খুঁজে পাওয়া গেলো না?
মেলবোর্নে আহত বাঘ মিরপুরে এতোটা ভয়ঙ্কর হয়ে উঠবে ভারতীয়রা হয়তো ভাবতেই পারেনি। যেমন বাংলাদেশ সেদিন ভাবতে পারেনি অতোটা খারাপ আম্পায়ারিংয়ের শিকার হতে পারে তাঁরা।
প্রতিশোধ শব্দটাকে সযত্নে পাশে সরিয়ে রাখার চেষ্টা করেছেন বাংলাদেশ অধিনায়ক। কিন্তু মনের মধ্যে প্রতিশোধের আগুন না জ্বললে দলকে ওভাবে তাঁতিয়ে দিলেন কিভাবে?
ম্যাচের আগের দিন যে মহেন্দ্র সিং ধোনি বার বার বোঝানোর চেষ্টা করেছিলেন; মেলবোর্নের সেই ম্যাচের কথা ভুলেই গেছেন তারা; মিরপুর তাদেরও আবার মনে করিয়ে দিলো সেই ম্যাচকে।
বাংলাদেশ সময়: ০২৪৯ ঘণ্টা, জুন ১৯, ২০১৫
** বাঘের থাবায় বিধ্বস্ত ভারত
** জয়ের কাছে টাইগাররা
** ক্রিকেট বিশ্বকে চমকে দিল মুস্তাফিজ
** মুস্তাফিজের গর্জনে কাঁপছে মিরপুর
** বাড়ছে ভারতের নেট রানরেট
** ধোনিকে ফেরালেন সাকিব
** মুস্তাফিজের গর্জনে ভারতের চতুর্থ উইকেটের পতন
** তাসকিনের গর্জনের পর মুস্তাফিজের অভিষেক উইকেট
** তাসকিনের ‘বিরাট’ শিকার
** অবশেষে ধাওয়ানকে ফেরালেন তাসকিন
** জোড়া ক্যাচ মিসে উইকেট বঞ্চিত টাইগাররা
** নিয়ন্ত্রিত বোলিংয়ে খোলসবন্দি ভারতীয় ব্যাটসম্যানরা
** ফিল্ডিংয়ে আক্রমণাত্মক টাইগাররা
** টিম ইন্ডিয়াকে ৩০৮ রানের টার্গেট দিল টাইগাররা
** টাইগারদের অষ্টম উইকেটের পতন
** অর্ধশতক হাঁকিয়ে ফিরলেন সাকিব
** সাকিব-নাসিরের প্রত্যয়ী ব্যাটিং
** দারুণ খেলে বিদায় নিলেন সাব্বির
** সাকিব-সাব্বিরের ব্যাটে এগোচ্ছে বাংলাদেশ
** প্রতিরোধ গড়ার চেষ্টায় টাইগাররা
** বৃষ্টির পর নড়বড়ে বাংলাদেশ
** তামিম, লিটনের বিদায়
** কাটা হয়নি ওভার, মাঠে নেমেছে টাইগাররা
** ৫টা ১০ মিনিটে খেলা শুরু
** সৌম্যর বিদায়ে ব্যাটিংয়ে অভিষিক্ত লিটন
** টাইগারদের উড়ন্ত সূচনা
** তামিম-সৌম্যর ভালো সূচনার ইঙ্গিত
** ব্যাটিংয়ে আত্মবিশ্বাসী টাইগাররা
** ব্যাটিং নিয়েছে টাইগাররা