ঢাকা, বুধবার, ১১ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ নভেম্বর ২০২৪, ২৫ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

ক্রিকেট

শাবাশ মুস্তাফিজ!

জনি সাহা, সিনিয়র নি‍উজরুম এডিটর | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৩৫৩ ঘণ্টা, জুন ২০, ২০১৫
শাবাশ মুস্তাফিজ! ছবি : সংগৃহীত

ঢাকা: ১৮ জুন, বাংলাদেশ-ভারতের মধ্যকার প্রথম একদিনের আন্তর্জাতিক ম্যাচ। ৩০৮ রানের লক্ষ্যে ব্যাটিংয়ে ভারত।

২৫তম ওভারের প্রথম বলটি করলেন অভিষিক্ত টাইগার বাঁহাতি পেসার মুস্তাফিজ। এ পর্যন্ত সবকিছু ঠিকঠাক। দ্বিতীয় বলের পরই পাল্টে গেলো চিত্র। ক্রিকেট বিশ্বে জন্ম দিলো আলোচিত-সমালোচিত এক ঘটনার।  

কী এমন হলো দ্বিতীয় বলে!

দুই উইকেট নিয়ে ভারতীয়দের ভিত নড়বড়ে করে দেওয়া মুস্তাফিজ করলেন ওই ওভারের দ্বিতীয় বলটি। ধোনি বলটি সামনে পুশ করেই দৌড় দিলেন ১ রানের জন্য। ততক্ষণে রানিং ক্রিজের লাইনে এসে দাঁড়িয়ে মুস্তাফিজ। ঠিক ধোনি যে লাইনে দৌড়াচ্ছিলেন। কিছু বুঝে ওঠার আগেই আচমকা ভারতের ‘ক্যাপ্টেন কুল’ কনুই উঁচিয়ে সজোরে দিলেন গুঁতা মোস্তাফিজের বুকে। অভিজ্ঞতা, শারীরিক শক্তি দু’দিন দিয়েই পিছিয়ে থাকা সদ্য অভিষিক্ত মোস্তাফিজ পড়ে না গেলেও ধাক্কা সামলে সরে গেলেন কয়েক ধাপ। তারপর বল না করতে পারার যন্ত্রণা নিয়ে মাঠের বাইরে।

ভদ্রলোকের খেলা ক্রিকেটে এটি স্বাভাবিক ঘটনা নয়। তাই ম্যাচ শেষে কাঠগড়ায় দাঁড়াতে হলো দু’জনকেই। মূল বক্তব্য সেখানেই। এখানে এসে ‘নতুনের’ কাছে পরাজয় হলো ‘অভিজ্ঞতার’। ক্রিকেটের তিন ফরম্যাটেই বিশ্বমুকুটজয়ী ধোনি স্বীকার করলেন না তার ‘ভুল’ অথবা ‘অপরাধ’। আর ‘নতুন’ মোস্তাফিজের সরল স্বীকারোক্তি ‘আরেকটু সরে গেলে হয়তো ধাক্কাটা এড়ানো যেতো’।

সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুক, ব্লগসহ সবখানেই এখন ওই ঘটনা নিয়ে চলছে তোলপাড়। আর ঘটনার জন্য স্বয়ং ভারতীয় মিডিয়াই ধোনিকে ‘দোষী’ হিসেবে দেখছে।

ধোনির এ ঘটনা আনন্দবাজার পত্রিকা ব্যাখ্যা করেছে এভাবে- ‘মাঝরাতের মহেন্দ্র সিংহ ধোনি? তার অভিব্যক্তি ব্যাখ্যাও সম্ভব তো? পুরস্কার বিতরণী মঞ্চে যে ভারত অধিনায়ককে দেখা গেল, মুখ তার যন্ত্রণায় বেঁকেচুরে গিয়েছে। বিশ্বকাপের পর ওয়ান ডে-তে এটা তার কামব্যাক ম্যাচ ছিল। এমএসডি রান পেলেন না। প্রয়োজনের দিনে দেশকে আবারও বাঁচাতে পারলেন না। অধিনায়কত্ব নিয়ে প্রশ্ন উঠল। তবু সে সব নয়। ভারত অধিনায়ক এ দিন যা করলেন, তা তাকে সাধারণত করতে দেখা যায় না। মুস্তাফিজুরকে ভারত অধিনায়ক ধাক্কা মেরে বসলেন।

ঘটনার পরপরই ক্রিকেটবিশ্ব বিষয়টি ধোনির ‘ইচ্ছাকৃত’ বললেও তা এড়িয়ে যান তিনি।

তবে স্লোমোশন ভিডিও ফুটেজে বিষয়টির সত্যতা পাওয়া যায়। নইলে শরীর থেকে তার কনুইয়ের দূরত্ব বেশি হবে কেন?

ম্যাচের পর দু’জনের বিরুদ্ধেই রিপোর্ট করেন মাঠে উপস্থিত আম্পায়াররা। আর তাতে শুনানির জন্য শুক্রবার (১৯ জুন) ধোনি ও মুস্তাফিজকে তলব করেন ম্যাচ রেফারি এন্ড্রি পাইক্রফট। শুনানি শেষে ধোনিকে ম্যাচ ফির ৭৫ শতাংশ আর মুস্তাফিজকে ৫০ শতাংশ জরিমানা করেন ম্যাচ রেফারি।

জানা যায়, শুনানিতে নিজের দোষ স্বীকার করে নিয়েছেন মুস্তাফিজ। আরেকটু সরে গেলে হয়তো ধাক্কাটা এড়ানো যেতো, বলেছেন তিনি।

মুস্তাফিজ দোষ স্বীকার করে নিলেও, নিজের দোষ রয়েছে তা মানতে নারাজ ধোনি। ‘দৌড়ানোর জায়গা ছিল না। অপরপ্রান্তে থাকা রায়নাকে জায়গা দিতেই এ পাশ ব্যবহার করা হয়েছে’ বলেন তিনি।

ধোনির ওই ধাক্কা মারা ছিল লেভেল টু অপরাধ। এজন্য শাস্তি হিসেবে ধোনির সামনে তিনটি পথের কথা বলা হয়- দোষ স্বীকার করে নেওয়া। এতে ম্যাচ ফি’র পঞ্চাশ শতাংশ জরিমানা হতো। দোষ স্বীকার করে শাস্তি কমানোর আবেদন করা। নতুবা অভিযোগকে চ্যালেঞ্জ করা। সেক্ষেত্রে দু’ম্যাচের নিষেধাজ্ঞা বা ম্যাচ ফি পুরোটা কেটে নেওয়া, যে কোনো একটি হতো।

বলা হয়, ক্রিকেট ভদ্রলোকের খেলা। এ ধরনের আচরণ খেলাটি কতটুকু ভদ্রলোকের তা নিয়েও এখন প্রশ্ন। আর আড়াইশ’র বেশি ওডিআই খেলা ধোনির এ আচরণইবা ক্রিকেটপ্রেমীরা কীভাবে নিচ্ছেন?

ভারতের বিপক্ষে ওই ম্যাচের মধ্য দিয়ে ওডিআইয়ে অভিষেক হয় টাইগার পেসার মুস্তাফিজের। বিশ্বখ্যাত তারকাদের মুখোমুখি হওয়ার আনন্দে হয়তো মুখিয়ে ছিলেন তিনি। আর ‘হেলিকপ্টার শট’ খ্যাত ধোনির মতো মারকুটে ব্যাটসম্যানের বিপক্ষে বলা করাটাও ছিল তার জন্য চ্যালেঞ্জিং।

তবে কী মুস্তাফিজের চ্যালেঞ্জটা নিজেই নিলেন ধোনি। নাকি ‘তৃতীয় শক্তি’র উপস্থিতি না থাকায় জ্বলে ওঠা মুস্তাফিজকে জয়ের পথে বাধা মনে করেই ‘ধাক্কা’ দেওয়ার সুযোগটা কাজে লাগালেন ধোনি?

আর ক্যারিয়ারের প্রথম ওডিআই খেলতে নামা মুস্তাফিজইবা কী দেখলেন ‘মি. কুল’ খ্যাত ধোনির আচরণে। অভিষিক্ত কোনো খেলোয়াড়ের সঙ্গে ৯০ টেস্ট খেলে বিদায় নেওয়া খেলোয়াড়ের এমন আচরণ পরবর্তী প্রজন্মের ক্রিকেট‍ারদের জন্যও ভাবনার বিষয়।

এদিকে, জানা যায়, ভারতই নাকি ঠিক করে বাংলাদেশকে না ডাকা হলে তারা আইসিসির কাছে রায়ের বিরুদ্ধে আবেদন করবে। আর তাতে অপ্রত্যাশিতভাবে মুস্তাফিজকে ডেকে পাঠান ম্যাচ রেফারি, যার নামই নাকি ছিল না আম্পায়ার রিপোর্টে।

বাংলাদেশের জয়, মাশর‍াফির ঘটনা এড়িয়ে যাওয়া, মুস্তাফিজের দোষ স্বীকার-এ ফ্যাক্টরগুলো কাজ না করলে আরও বিপন্ন হতে পারতো ধোনির ভাবমূর্তি।

গত মার্চে মেলবোর্নের কোয়ার্টার ফাইনালের ম্যাচ নিয়ে তিনমাস এপার-ওপার দুইপারে ব্যাপক আলোচনা-সমালোচনা হয়েছে। ভারতের এ সফরের মধ্য দিয়ে তা প্রশমিত না হয়ে উল্টো বিতর্কিত করে দিলেন ধোনি। এতে পাকিস্তান-ভারত দ্বৈরথের মতো জমে উঠলো ‘বাংলাদেশ-ভারত দ্বৈরথ’। আর এর শেষ কোথায় এখন তা দেখার অপেক্ষা।

বাংলাদেশ সময়: ১৩৫২ ঘণ্টা, জুন ২০, ২০১৫
জেডএস/এএ

** সুযোগ হাতছাড়া হলেও সেরা দশে মুস্তাফিজ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।