ঢাকা: ব্রায়ান ভেট্টরি- নামটা ঘুরে–ফিরে এলো ভারতের ইনিংসটা শেষ হওয়ার আগেই। ওয়ানডে ইতিহাসের পাতা ঘেঁটে ওই জিম্বাবুয়ানের নামটা তুলে আনতে হলো বাংলাদেশের এক তরুণ পেসারের কারণে।
নিজের শেষ বলে রবি চন্দন অশ্বিনের উইকেটটা নিয়ে ব্রায়ান ভেট্টরির থেকে নিজের নামটাকে আলাদা করে ফেললেন ১৯ বছরের এই তরুণ। দশ নয় অভিষেকের পর টানা দুই ম্যাচে তার উইকেট এগারো। যার ভাগীদার বিশ্বের ক্রিকেট ইতিহাসে আর কেউ নেই।
ইতিহাসের পাতায় নাম লেখানোর পরেও ব্যতিক্রমী সাতক্ষীরার এই বাঁহাতি পেসার! ম্যাচ পরবর্তী সংবাদ সম্মেলনে এক একটা প্রশ্নের উত্তর তিনি যেভাবে দিলেন তা, তাঁর শার্প অফ কাটারের চেয়ে শার্প! প্রত্যেকটা প্রশ্নের উত্তর এক শব্দ, দুই শব্দ! বড়জোর সেটা তিন শব্দ! নমুনা শুনতে চান? শুনুন:
আপনি যে একটা রেকর্ড গড়েছেন জানেন? ‘জানি’।
এই ম্যাচে আপনার আলাদা কোন টার্গেট ছিল? ‘না’।
পরের ম্যাচে টার্গেট কি? ‘ভাল খেলা’।
কি রকম ভাল? ‘এরচেয়ে ভাল’
তবে হ্যাঁ, যে বোলার ৪৩ রানে ৬ উইকেট তুলে নিয়েছেন তার বোলিং নিয়ে অধিনায়ক এবং প্রতিপক্ষের অধিনায়ক দুজনকেই কিন্তু অনেক বেশি শব্দ খরচ করতে হলো। মাশরাফি এবং মহেন্দ্র সিং ধোনি দুজনের কাছ থেকেই খুব লম্বা-চওড়া সার্টিফিকেট আদায় করে নিয়েছেন বাংলাদেশ দলের এই তরুন বাঁহাতি পেসার।
পর পর দু’ম্যাচে তিনি যেভাবে ভারতীয় ব্যাটিং লাইনকে ধসিয়ে দিলেন তা নিয়ে মহেন্দ্র সিং ধোনিকেও বলতে হলো, ‘ওর স্লোয়ার এবং কাটারগুলো খুব কার্যকর। এই উইকেটে অন্যরা স্লোয়ার ডেলিভারি দিলে অনেক সময় উইকেট কিপারের গ্লাভস পর্যন্ত পৌছায় না। কিন্তু ওরটা ক্যারি করে। ব্যাটসম্যানদেরও ওর বলগুলো খেলা কঠিন হয়েছে। ’
যে বোলার পর পর দুই ম্যাচে ম্যান অব দ্য ম্যাচ তার পারফম্যান্সে উচ্ছ্বসিত হবেন অধিনায়ক এটাই স্বাভাবিক। মাশরাফিও ব্যতিক্রম নন। তিনিও দারুণভাবে উচ্ছ্বসিত মোস্তাফিজের পারফরম্যান্সে। হাসতে হাসতে বলেই ফেললেন, ‘রোজ রোজ ম্যান অব দ্য ম্যাচ হবি আর এখানে আসবি। ’
মাশরাফির কথা শুনেও হাসি মোস্তাফিজের মুখে। যার বোলিং গত দুটো ম্যাচে ভারতীয় ব্যাটসম্যানদের মুখের হাসি কেড়ে নিয়েছে।
বাইশ গজে যিনি এই মুর্হুতে ভয়ঙ্কর এক বোলার সেই মোস্তাফিজ মিডিয়ার সামনে একেবারেই নীরহ-শান্ত! ঠিক পেস বোলার সুলভ চরিত্রই মনে হবে না তাকে। সহজ-সরল এক তরুণ। ক্রিকেটীয় আধুনিকতার ছোঁয়া তার পারফরম্যান্সে। কিন্তু কথা-বার্তায় এখনো শহুরে ছোঁয়া লাগেনি।
মিডিয়া কর্মীদের কাছে এখনো অব্দি অন্যরকম এক চরিত্র বাংলাদেশ ক্রিকেটের নতুন নায়ক মোস্তাফিজুর রহমান।
ভারতের বিপক্ষে দ্বিতীয় ম্যাচে তার বোলিং ফিগার দাঁড়িয়েছে: ১০-০-৪৩-৬! ছয় উইকেট এর আগে বাংলাদেশের হয়ে নিয়েছিলেন মাশরাফি এবং রুবেল। দুজনেরই ৬ উইকেটের জন্য খরচা ২৬ রান। মনে হতে পারে, রান খরচাটা হয়তো মোস্তাফিজ একটু বেশি করে ফেলেছেন। তবে মনে রাখতে হবে প্রতিপক্ষের নাম ভারত।
ভারতের যে ব্যাটসম্যানদের উইকেটগুলো মোস্তাফিজ নিয়েছেন সেগুলো নিয়ে একটু বলতেই হচ্ছে:
রোহিত শর্মা: ওয়ানডে ক্রিকেটে দু’দুটো ডাবল সেঞ্চুরির মালিক যিনি। তাকে ফেরালেন ইনিংসের দ্বিতীয় বলে। এবং শুন্য রানে।
এম এস ধোনি: বিশ্বের অনেক বড় বড় বোলারকে হেলিকপ্টর শটে মাঠের বাইরে পাঠিয়ে যিনি বিখ্যাত। সেই এমএসডি এই ম্যাচে ৭৫ বল খেলে করেছেন ৪৭ রান।
আরও রয়েছেন সুরেশ রায়না, আম্বাতি রাইডু, অক্ষর প্যাটেল, রবীন্দ্র জাডেজা আর বরি চন্দন অশ্বিন।
মাশরাফি আর রুবেলের কৃতীত্ব সামান্য খাটো না করেও লিখতে হচ্ছে প্রথম জন ছয় উইকেট নিয়েছিলেন কেনিয়ার বিপক্ষে, দ্বিতীয়জন নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে। আর মোস্তাফিজ ৬ উইকেট নিলেন ভারতের বিপক্ষে।
পরিসংখ্যানে না হলেও ক্রিকেটীয় বিবেচনায় মোস্তাফিজ তার অধিনায়ক আর সিনিয়র টিমমেটের চেয়ে একটু এগিয়েই থাকবেন। তবে ছয় উইকেট নেয়ার পরও মোস্তাফিজ কিন্তু নিজের কোন একটা উইকেটকেও এগিয়ে রাখতে পারছেন না। তার কাছে প্রত্যেকটা উইকেটই মুল্যবান। ভাললাগার উপলক্ষ্য।
যার খেলা দেখতে খুব ভাল লাগতো মোস্তাফিজের, পাকিস্তানের সেই পেসার মোহাম্মদ আমের আপাত ক্রিকেট থেকে নির্বাসিত। কিন্তু নির্বাসনে থেকেও ঐ পাকিস্তানি বোলারও হয়তো জেনে গেছেন বাংলাদেশের এই বাঁহাতি তরুণের কৃর্তির কথা। তবে আমের নয়; অনেকে মোস্তাফিজকে দেখে খোঁজার চেষ্টা করছেন তরুণ সেই ওয়াসিম আকরামকে! আকরামের ছিল সুইং। মোস্তাফিজের আছে অফ কাটার। ওয়াসিম আকরাম কিংবা মোহাম্মদ আমেরের মতো হতে হয়নি মোস্তাফিজকে। তিনি মোস্তাফিজ হয়েই ক্রিকেট বিশ্বকে ছোট একটা ঝাঁকুনি দিয়ে দিলেন নিজের প্রথম দুটো ম্যাচে।
** বাংলাওয়াশের কথা কেন ভাববে না বাংলাদেশ
বাংলাদেশ সময় ০৯১৯ ঘণ্টা, জুন ২২, ২০১৫
এমএমকে