ঢাকা: ‘অদৃশ্য ভীতি’ নাকি ‘আত্মবিশ্বাস’? সফরকারী ক্রিকেটশক্তি দক্ষিণ আফ্রিকার সঙ্গে প্রথম টি-টোয়েন্টি ম্যাচে বাংলাদেশের এমন দুমড়েমুচড়ে যাওয়ার কারণ কী? যদি দায়ী হয় ‘অদৃশ্য ভীতি’ সেটা কি কুঁকড়ে দেওয়ার মতো ছিল? টাইগারদের বোলিংয়ের সময়ে কি আদৌ কুঁকড়ে যাওয়ার কোনো আভাস ছিল?
হালের শীর্ষ সব ব্যাটসম্যানের দল দক্ষিণ আফ্রিকাকে ১৪৮ রানে বেঁধে ফেলার কীর্তি তো কোনো ভয়-ঢরকে প্রাসঙ্গিক হতে দিচ্ছে না। তাহলে? দায় কি তবে ‘অতি আত্মবিশ্বাস’কেই নিতে হচ্ছে? ১৪৯ রানের টার্গেটে সাত স্বীকৃত ব্যাটসম্যান নিয়ে খেলতে নেমে মাত্র ৯৬ রানেই গুটিয়ে যাওয়া তো এই ‘অতি আত্মবিশ্বাস’কেই দায় দিচ্ছে।
অথচ ম্যাচ শুরুর আগে ‘অতি আত্মবিশ্বাসে’ ভুগতে মানা করেছিলেন খোদ টাইগার দলপতিই। মাশরাফি বিন মর্তুজা তার সতীর্থদের বলেছিলেন, ‘সাহস নিয়ে খেলা চালিয়ে যেতে হবে। আমরা যে জয়ের ধারায় রয়েছি, সেটি ধরে রেখে খেলতে হবে। ’
জয়ের ধারাটা থাকলো না। সেটা তো ভাঙলোই- এমনভাবে ভাঙলো যে- এই হারের দৃশ্যমান কারণ তাড়াহুড়ো ও অধৈর্য্য ব্যাটিংকে নিকট-অতীতের ‘দায়িত্বহীন ইনিংস’ও বলা হচ্ছে!
কিন্তু জয়ের টার্গেটে ব্যাট করতে নামার আগ পর্যন্ত ম্যাচটি বাংলাদেশ দলেরই অনুকূলে বলে ভাবা হচ্ছিল; টার্গেটটা অতিক্রমের আওতায় থাকার সঙ্গত কারণেই। দু’একজন জয়ের ব্যবধানও গুনতে শুরু করেছিলেন।
স্পিনে দুর্বল প্রোটিয়া ব্যাটসম্যানদের বিপক্ষে প্রথমে আরাফাত সানিকে বল তুলে দিয়ে মাশরাফি ওপেনার এবিডি ভিলিয়ার্সের ক্যাচ তালুবন্দি করলেই প্রত্যাশার পালক গজাতে থাকে। সফরকারীদের নিয়মিত বিরতিতে উইকেট না পড়লেও সানি, সাকিব আল হাসান, মাশরাফি আর মুস্তাফিজুর রহমানদের নিয়ন্ত্রিত বোলিংয়ে সফরকারীরা দেড়শ’র আগেই আটকে গেলে চোখ ঝলমল করতে থাকে মিরপুরের গ্যালারির ক্রিকেটপ্রেমীদের।
কিন্তু বোলিংয়ের গল্পটা যে দুরন্তভাবে শুরু হয়েছিল, তারপরের অর্থাৎ ব্যাটিংয়ের গল্পটার শেষ হয়েছে কেবলই ‘বিরক্তি’ দিয়ে- অধৈর্য্য, তাড়াহুড়োয়! ১২০ বলে ১৪৯ রান; ধুমধাড়াক্কা এ ব্যাটিংয়ের যুগে খুব বড়ো টার্গেট না হলেও প্রতি বলে বলে শট নেওয়ার প্রবণতায় উইকেট বিসর্জন দিয়ে আসেন ওপেনার থেকে টপঅর্ডার-মিডল অর্ডারের ব্যাটসম্যানরাও।
নিকট অতীতে টপ-মিডল অর্ডার পর্যন্ত ভেঙে যাওয়ার পরও মিডল বা লোয়ার অর্ডারে বাংলাদেশের দারুণ পার্টনারশিপ গড়ে ম্যাচ বের করে আনার বেশ কিছু জ্বলজ্বলে দৃষ্টান্ত থাকলেও এদিন কোনো পর্যায়েই কার্যকর কোনো জুটি দেখা গেলো না। আগের কথাটিই আবার আওড়াতে হচ্ছে, বলে বলে শট নিতে গিয়ে দুই ওপেনারসহ টপঅর্ডার ব্যাটসম্যানরা যে উইকেট বিসর্জনের ‘অভিশাপ’ দিয়ে গেছেন- যার ছাপ পড়ে মিডল ও লোয়ার অর্ডারে- সে অভিশাপ কাটিয়ে ওঠা সম্ভব হয়নি কোনো অর্ডারেই। পরিণতি, ১৪৯ রানের টার্গেটে ব্যাট করতে নেমে অলআউট মাত্র ৯৬ রানে। তাও আবার সাত বল বাকি থাকতেই!
ম্যাচ পরবর্তী পুরস্কার বিতরণীতে অবশ্য বাংলাদেশ অধিনায়ক মাশরাফি সোজাসাপ্টা স্বীকার করে নিয়েছেন, বোলিংয়ে ভালো করলেও ব্যাটিংয়ে কোনো পার্টনারশিপ গড়তে না পারার খেসারত দিতে হয়েছে তাদের।
আবার, খেলা শুরুর আগের মতো খেলা শেষেও সমর্থকদের অভয় বাণী দিলেন টাইগার দলপতি; ‘এই ম্যাচ নিয়ে খুব বেশি চিন্তার কিছু নেই, আমরা পরের ম্যাচেই ফিরতে পারবো। ’
মাশরাফির অভয় বাণী বুকে নিয়ে ক্রিকেটভক্তরা অপেক্ষার প্রহর গুণতে পারেন; টাইগাররা স্বরূপে ফিরবেই- টাইগারদের স্বরূপে দেখার ‘অঘোষিত’ প্রস্তুতি যে রয়েছে খোদ সফরকারীদেরই!
বাংলাদেশ সময়: ১৮০৮ ঘণ্টা, জুলাই ৫, ২০১৫
এইচএ/জেডএম
** প্রথম টি-টোয়েন্টিতে প্রোটিয়াদের সহজ জয়