বিশ্বকাপের পর থেকে বাংলাদেশ একটার পর একটা সিরিজ খেলছে। মোটা দাগে বলা যায়, একটা সিরিজের পেটে আরেকটা সিরিজ ঢুকিয়ে দেয়া হয়েছে।
উত্তরটা তোলা থাকছে শুক্রবার থেকে শুরু হতে যাওয়া ওয়ানডে সিরিজের জন্য। তবে তার আগে একটা কথা বলা যায়: সাউথ আফ্রিকার বিপক্ষে ওয়ানডে সিরিজে কঠিন চ্যালেঞ্জের মুখে পড়তে যাচ্ছে বাংলাদেশ। এখনো পর্যন্ত সাউথ আফ্রিকার বিপক্ষে ওয়ানডেতে জয় বলতে আট বছর আগে ২০০৭ সালের বিশ^কাপের সেই ম্যাচ। সব মিলিয়ে ১৪ ম্যাচের বাকি ১৩টাতেই হার। কিন্তু এই পরিসংখ্যানকে যখন অতীত বলে সামনের দিকে তাকিয়ে ছিলেন ক্রিকেটপ্রেমীরা, ঠিক সেই সময় বর্তমান তাঁদের কঠিন এক বাস্তবতার মুখোমুখি দাঁড় করিয়ে দিলো। টি-টোয়েন্টি সিরিজে খুব বাজেভাবে হারলো স্বাগতিকরা। চোখে চোখ রেখে, কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে তারা লড়াই করতে পেরেছেন সেরকমটা দাবি করা যাচ্ছে না। বাংলাদেশ-ক্রিকেটের অন্ধ সমর্থকও সেটা করছেন না। তবে টি-টোয়েন্টি সিরিজের দুটো ম্যাচ চোখে আঙুল দিয়ে অনেক কিছু দেখিয়ে দিলো। ফিটনেস, স্কিল, টেকনিক সব কিছুতেই সাউথ আফ্রিকা ঢের এগিয়ে বাংলাদেশের চেয়ে।
সাউথ আফ্রিকার বিপক্ষে টি-টোয়েন্টিতে সাফল্য পাওয়ার জন্য মাঠের বাইরে অন্যরকম কিছু স্ট্র্যাটেজি ঠিক করেছিল বাংলাদেশ। কিন্তু সেগুলো কোনো কাজে দিয়েছে এমনটা মনে করার কারণ নেই। ভাবা হয়েছিল, জুলাইয়ে ঢাকার কন্ডিশনে দ্রুত খাপ খাইয়ে নিতে পারবে না সাউথ আফ্রিকান ক্রিকেটাররা। তাই টি-টোয়েন্টি ম্যাচের টাইমিং ঠিক করা হলো দুপুর একটায়! এরকম একটা সিদ্ধান্তের যৌক্তিকতা ব্যাখায় আবার টেনে আনা হলো রমজান এবং ইফতারকে! কিন্তু রমজান পড়ে রইলো রমজানের জায়গায়। ইফতার থাকলো ইফতারের সময়। আর বাংলাদেশ থাকলো বাংলাদেশে। সাউথ আফ্রিকা সিরিজ জিতলে অনায়াসে। ঢাকার গরম সাউথ আফ্রিকান ক্রিকেটারদের শরীর থেকে বাড়তি টোল হয়তো নিলো, কিন্তু ম্যাচ জিতলো একেবারে পেশাদারিত্বের সাথে। আর তাদের সেই পেশাদারিত্ব আরো একটা জিনিস দেখিয়ে দিলো। স্লো স্পিনিং উইকেটে সাউথ আফিকানদের ফাঁদে ফেলার যে চেষ্টা হলো সেই ফাঁদে উল্টো তাঁরা বাংলাদেশকে ফেললো! ঢাকার কন্ডিশন, স্পিনিং ট্রাক, সব কিছুকেই সাউথ আফ্রিকানরা বশে নিয়ে এলো স্কিল দিয়ে। প্রতিকুল পরিস্থিতিকে সামাল দিতে পারার দক্ষতাই স্কিল। সেটা এবি ডি ভিলিয়ার্স, জেপি ডুমিনি, ফ্যাফ ডুপ্লিসি, মিলাররা দেখিয়ে দিলেন। যে চিন্তার কথা মাথায় রেখে ভরদুপুরে টি-টোয়েন্টি ম্যাচের আয়োজন হলো, সেটা যে কাজে দেয়নি তা উপলব্ধি করতে বেশি সময় নেয়নি বাংলাদেশ। যে কারণে ওয়ানডের টাইমিং আবার পরিবর্তন করে দুপুর ১২টার জায়গায় ম্যাচ শুরু হবে তিনটায়।
কিন্তু তারপরও তিন ম্যাচের এই ওয়ানডে সিরিজ বাংলাদেশ ক্রিকেটের জন্য বড় এক চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে। ২০১৭ সালের চ্যাম্পিয়নস ট্রফিতে খেলার যোগ্যতা অর্জনের একটা বাড়তি চ্যালেঞ্জও বাংলাদেশের সামনে দাঁড় করিয়ে দিচ্ছে জিম্বাবুয়ে পাকিস্তান, ওয়েস্ট ইন্ডিজকে নিয়ে তিন জাতির টুর্নামেন্ট আয়োজনের মধ্যে দিয়ে। সেই চ্যালেঞ্জের ভাল জবাব হতে পারে সাউথ আফ্রিকার বিপক্ষে ওয়ানডে সিরিজে একটা ম্যাচে জয়। সেদিক থেকে অন্যরকম একটা মানসিক চাপ বাংলাদেশ দলের ওপর তৈরি হয়েই আছে। তারপর আবার সাউথ আফ্রিকার বিপক্ষে টি-টোয়েন্টি সিরিজ হার চাপটাকে আরো বাড়িয়ে দিয়েছে। পাশাপাশি ম্যান্ডেলার দেশের ক্রিকেটাররাও বাংলাদেশের জল-হাওয়ার সঙ্গে খাপ খাইয়ে নেয়ার সুযোগটাও পেয়ে গেছে। ফতুল্লায় প্র্যাকটিস ম্যাচের পর সাউথ আফ্রিকান অধিনায়ক খানিকটা রসিকতা করে বলেছিলেন: ‘ঐ চল্লিশ ওভারের ম্যাচ আমার দুই কেজি ওজন কমিয়ে দিয়েছে!’ সেই ফ্যাফ ডু প্লেসি অবশ্য টি-টয়োন্টি সিরিজ জিতে উঠেই বললেন, তাঁরা বাংলাদেশের কন্ডিশনের সঙ্গে ভালভাবেই মানিয়ে নিয়েছেন। বাংলাদেশের কন্ডিশনের সঙ্গে মানিয়ে নেয়া মানে বাংলাদেশকে আরো চাপে ফেলা। বাংলাদেশের জন্য চ্যালেঞ্জটা আরো বেড়ে যাওয়া!
কিন্তু পাকিস্তান, ভারতের বিপক্ষে ওয়ানডে সিরিজে জোড়া সাফল্য যাদের তারা কি সাউথ আফ্রিকার বিপক্ষে একটা ম্যাচ জিততে পারবে না?
বাংলাদেশ সময়: ২০৪৪ ঘণ্টা, জুলাই ০৮, ২০১৫
জেএম
** প্রথম দু’টি ওয়ানেডের দল ঘোষণা