ঢাকা: চট্টগ্রামে সিরিজের প্রথম টেস্টে রোমাঞ্চ তৈরি করেছিল বাংলাদেশ। ম্যাচের শেষ দুই দিন বৃষ্টিতে ভেসে যাওয়ায় টাইগারদের অসাধারণ পারফরম্যান্সে তৈরি হওয়া রোমাঞ্চ পূর্ণতা পায়নি।
প্রথম টেস্টে বাংলাদেশ দল ভালো অবস্থানে থাকায় টেস্ট অধিনায়ক মুশফিকুর রহিমের দাবি, আমরাই ফেভারে ছিলাম। অন্যদিকে দক্ষিণ আফ্রিকান অধিনায়ক হাশিম আমলা মনে করেন, বৃষ্টি না হলে প্রথম টেস্টে যে কোনো কিছুই ঘটতে পারতো।
প্রথম টেস্টে ফেভারিট ছিল কোন দল? এমন প্রশ্নের উত্তরও মিলে যাবে ঢাকা টেস্টে। সেই সঙ্গে সিরিজের নিষ্পত্তি ঘটবে এই ম্যাচের মধ্য দিয়ে। তাইতো দুই দলের জন্যই গুরুত্বপূর্ণ সিরিজের শেষ টেস্ট ম্যাচটি। বৃহস্পতিবার (৩০ জুলাই) মিরপুর শের-ই-বাংলা জাতীয় ক্রিকেট স্টেডিয়ামে ম্যাচ শুরু হবে সকাল সাড়ে ৯টায়।
বিশ্বের এক নম্বর টেস্ট দলের বিপক্ষে টাইগারদের জয় প্রত্যাশা করার সাহস দিচ্ছে প্রথম টেস্টের পারফরম্যান্স। প্রোটিয়াদের ২৪৮ রানে অলআউট করে দিয়ে জহুর আহমেদ চৌধুরী স্টেডিয়ামে লড়াই করার রসদ যুগিয়েছিলেন বোলাররা। এরপর ব্যাটসম্যানদের দাপটে প্রথম ইনিংসে ৩২৬ রান করায় ৭৮ রানের লিড পায় স্বাগতিক দলটি।
দ্বিতীয় ইনিংসে দক্ষিণ আফ্রিকা বিনা উইকেটে ৬১ রান তুলে পিছিয়ে থাকার ব্যবধান কমালেও লিড ধরে রেখে টেস্ট শেষ করায় চট্টগ্রাম থেকে আত্মবিশ্বাস সঙ্গী করে ফিরেছে টাইগাররা। প্রথম টেস্টে অন্তত প্রমাণ করা গেছে তাদের অলআউট করা সম্ভব, লিড নেওয়াও সম্ভব!
টাইগার ক্রিকেটারদের মনের মাঝে জমাট বাঁধা আত্মবিশ্বাস ঢাকা টেস্টে ছড়িয়ে দিতে পারলে জয়ের মঞ্চও রচনা হয়ে যেতে পারে মিরপুরে। টাইগার অধিনায়ক মুশফিকুর রহিমের কথাতে ইঙ্গিত মিললো জয়ের জন্যই খেলবে বাংলাদেশ, ‘প্রথম টেস্টে ব্যাটিং-বোলিং ফিল্ডিং আমাদের খুব ভালো হয়েছে। সেই আত্মবিশ্বাস নিয়েই আমরা মাঠে নামবো। আমাদের পরিকল্পনাগুলো মাঠে প্রয়োগ করতে পারলে সিরিজটা আমাদেরও হতে পারে। ’
দক্ষিণ আফ্রিকা দলও চোখ রাখছে সিরিজ জয়ে। শেষ ম্যাচ জিতে সফর শেষ করতে চায় প্রোটিয়ারা। বুধবার (২৯ জুলাই) ম্যাচ পূর্ববর্তী সংবাদ সম্মেলনে সফরকারী দলের অধিনায়ক হাশিম আমলা বলেন, ‘আমরা শুরুটা ভালো করতে চাই। শুরু ভালো হলে দল ভালো পজিশনে চলে যাবে। তারপর অবশ্যই জয় চাইব। আমরা জয়ের জন্যই খেলব। আর লক্ষ্য বাস্তবায়নের জন্য দিনের প্রথম সেশনটা গুরুত্বপূর্ণ। ’
ঢাকা টেস্ট শুরুর আগে অনেকগুলো মাইলফলকের সামনে দুই দলের ক্রিকেটাররা। বিশ্বসেরা অলরাউন্ডার সাকিব আল হাসান দাঁড়িয়ে রয়েছেন দারুণ এক রেকর্ডের সামনে। সব ফরম্যাট মিলিয়ে চার’শ উইকেট শিকারীদের তালিকায় নাম লেখানোর অপেক্ষায় এ বাঁহাতি স্পিনার।
এছাড়া সাকিবের সামনে অপেক্ষা করছে সব ফরম্যাট মিলিয়ে একই সঙ্গে আট হাজার রান ও চার’শ উইকেট শিকারীদের এলিট ক্লাবে প্রবেশের সুযোগ। ক্রিকেট ইতিহাসে এমন রেকর্ড রয়েছে মাত্র ৫ জন অলরাউন্ডারের।
দক্ষিণ আফ্রিকান পেসার ডেল স্টেইন সবচেয়ে বড় মাইলফলকের সামনে। বিশ্বের অষ্টম বোলার হিসেবে টেস্টে চার’শ উইকেট শিকারীর এলিট ক্লাবে যোগ দিতে যাচ্ছেন এই গতিময় বোলার। চার’শ উইকেট থেকে মাত্র এক উইকেট দূরে স্টেইন। ৭৯ টেস্ট খেলা স্টেইনের বর্তমানে উইকেট সংখ্যা ৩৯৯টি।
বাংলাদেশের আরেক বাঁহাতি বোলার মুস্তাফিজুর রহমানের সামনে আরেকটি মাইলফলক ছোঁয়ার হাতছানি। চট্টগ্রাম টেস্টে ম্যান অব দ্য ম্যাচ হয়ে রীতিমত ইতিহাসই সৃষ্টি করেছিলেন এই কাটার মাস্টার। প্রথম ক্রিকেটার হিসেবে ওয়ানডে এবং টেস্ট অভিষেকে ম্যাচ সেরা হওয়ার গৌরব অর্জন করেন তিনি। এবার সেই মুস্তাফিজ দাঁড়িয়ে আরেকটি ইতিহাসের সামনে। যে রেকর্ডটি আর কারো নেই। সেটা হলো, অভিষেক ওয়ানডে সিরিজের পর অভিষেক টেস্ট সিরিজেও সিরিজ সেরা হওয়ার হাতছানি মুস্তাফিজের সামনে। অভিষেকে ভারতের বিপক্ষে ওয়ানডে সিরিজে ১৪ উইকেট নিয়ে সিরিজ সেরার পুরস্কার পেয়েছিলেন সাতক্ষীরার এই তরুণ।
দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে অভিষেক টেস্টে চার উইকেট দখল করেন মুস্তাফিজ। দ্বিতীয় টেস্টে বোলিংয়ে ভালো করতে পারলে সিরিজ সেরা হওয়া অসম্ভব কিছু নয়। কারণ, চট্টগ্রামের পর ঢাকা টেস্টের উইকেটও স্পোর্টিং হতে যাচ্ছে। তাতে বোলারদের ভালো করার সুযোগ থাকছেই, বিশেষ করে পেসারদের।
বাংলাদেশ সময়: ২০৪০ ঘণ্টা, ২৯ জুলাই ২০১৫
এসকে/এমআর