মিরপুর থেকে: জেপি ডুমিনির ঘূর্ণিতে ধরা পড়ে বিদায় নিয়েছেন ক্যারিয়ারের তৃতীয় টেস্ট খেলতে নামা লিটন কুমার দাশ। প্রথম দুটি টেস্টে নামের প্রতি সুবিচার করলেও নিজের তৃতীয় টেস্টে এসে মাত্র ৩ রান করে বিদায় নেন লিটন।
সিরিজ নির্ধারণী ম্যাচের প্রথম দিনের তৃতীয় ও শেষ সেশনে ব্যাট করছে টস জেতা বাংলাদেশ। লিটনের বিদায়ে বাংলাদেশের ষষ্ঠ উইকেটের পতন ঘটে।
এ রিপোর্ট লেখা অবধি টাইগারদের সংগ্রহ ছয় উইকেট হারিয়ে ২২০ রান। উইকেটে সাকিব ২৩ রান নিয়ে ব্যাট করছেন। নতুন ব্যাটসম্যান হিসেবে এসেছেন নাসির হোসেন।
দলীয় শতক পেরুতে বাংলাদেশকে খেলতে হয় ৩৮.১ ওভার। আর দলীয় ২০০ করতে স্বাগতিকদের লাগে ৬৯ ওভার। প্রথম ও দ্বিতীয় সেশন শেষে স্বাগতিকরা তিন ব্যাটসম্যানকে হারায়। দ্বিতীয় সেশনে বাংলাদেশ ২৬ ওভার ব্যাট করে দুই উইকেট হারিয়ে তোলে আরও ৭৯ রান। প্রথম সেশনে এক উইকেট খুঁইয়ে আসে ৭৫ রান।
এর আগে ডেল স্টেইনের ৪০০তম টেস্ট শিকার হয়ে ঢাকা টেস্টের প্রথম দিনের প্রথম সেশনে বিদায় নেন টাইগারদের ওপেনার তামিম ইকবাল। দলীয় ১২ রানের মাথায় হাশিম আমলার তালুবন্দি হয়ে ফেরেন ব্যক্তিগত ৬ রান করা তামিম। তামিমের বিদায়ে উইকেটে আসেন মুমিনুল হক।
ম্যাচের আগের দিন সফরকারী দলটির অধিনায়ক হাশিম আমলা বলেছিলেন, প্রথম সেশনটি তাদের জন্য বেশ গুরুত্বপূর্ণ। তবে, ইমরুল কায়েস ও মুমিনুল হকের প্রতিরোধে প্রথম সেশনে মাত্র একটি উইকেটের দেখা পায় প্রোটিয়ারা। দিনের শুরুতে স্বাগতিকদের অভিজ্ঞ ওপেনার তামিম ইকবালের উইকেট হারিয়ে বেশ সতর্ক হয়ে ব্যাটিং করেন ইমরুল ও মুমিনুল। দিনের প্রথম সেশন শেষে ৬৩ রানের জুটি গড়েন এ দুই অপরাজিত ব্যাটসম্যান।
টেস্ট ক্যারিয়ারের চারটি শতকের মালিক বাংলাদেশের নির্ভরযোগ্য ব্যাটসম্যান মুমিনুল হক সাদা পোশোকে ব্যক্তিগত দশম অর্ধশতক থেকে ১০ রান দূরে থাকতে বিদায় নেন। এশিয়ান উইকেটে প্রোটিয়াদের সফলতম বোলার জেপি ডুমিনির বলে ব্যক্তিগত ৪০ রান করে উইকেটের পেছনে অভিষিক্ত ভিলাসের গ্লাভসবন্দি হন মুমিনুল। আউট হওয়ার আগে ইমরুল কায়েসের সঙ্গে গুরুত্বপূর্ণ ৬৯ রানের জুটি গড়েন টাইগারদের ‘ব্রাডম্যান’ খ্যাত মুমিনুল।
দ্বিতীয় সেশনের শুরু থেকে চাপের মধ্যে পড়ে স্বাগতিকরা। মুমিনুল হকের পর দ্রুতই বিদায় নেন ইমরুল কায়েস। দলীয় ৮১ রানের মাথায় মুমিনুল ফেরার পর স্কোরবোর্ডে মাত্র ৫ রান যোগ হতেই বিদায় নেন ওপেনার ইমরুল। ডুমিনির দ্বিতীয় শিকারে ব্যক্তিগত ৩০ রান করে এলবি’র ফাঁদে পড়েন তিনি।
প্রথম সেশনের শুরুতে তামিম ইকবাল, দ্বিতীয় সেশনের শুরুতে ইমরুল কায়েস আর মুমিনুল হকের বিদায়ে ব্যাটিং ক্রিজের দায়িত্ব নেন টাইগারদের দলপতি মুশফিকুর রহিম এবং মিডলঅর্ডারের নির্ভরযোগ্য ব্যাটসম্যান মাহামুদুল্লাহ রিয়াদ। চতুর্থ উইকেটে বাংলাদেশের হয়ে শতরানের জুটি গড়া থেকে মাত্র ৬ রান দূরে থাকতে আউট হন মাহামুদুল্লাহ রিয়াদ। ডেল স্টেইনের দ্বিতীয় শিকারে ফেরেন তিনি। ফ্লিক করতে গিয়ে মিডউইকেটে বাভুমার তালুবন্দি হয়ে ফেরার আগে রিয়াদের ব্যাট থেকে আসে ৩৫ রান। মুশফিকের সঙ্গে ৯৪ রানের জুটি গড়েন তিনি।
ম্যাচ পূর্ববর্তী সংবাদ সম্মেলনে টাইগারদের অধিনায়ক মুশফিকুর রহিম নিজের ব্যক্তিগত লক্ষ্যের কথা জানিয়ে বলেছিলেন, ‘এটা হতাশাজনক যে আমি ব্যাটিংয়ে তেমন অবদান রাখতে পারছি না। চেষ্টা করবো মিরপুর টেস্টে নিজের শতভাগ দিয়ে খেলতে। সুযোগ পেলে যেন ইনিংস বড় করতে পারি। ’ কথার সঙ্গে নিজের ব্যাটিং ঠিক রেখে দলকে এগিয়ে নিয়ে চলেন টেস্ট ক্যারিয়ারের ১৫তম অর্ধশতক হাঁকিয়ে টাইগারদের বড় ইনিংসের স্বপ্ন দেখানো দলপতি মুশফিকুর রহিম। দলীয় ১৮০ রানের মাথায় টাইগারদের চতুর্থ উইকেটের পতনের পর দলের ব্যাটিংয়ের দায়িত্ব নেন দলপতি মুশফিক এবং দেশসেরা অলরাউন্ডার সাকিব। তবে, ইনিংসের ৭৫তম ওভারে পার্টটাইম বোলার ডিন এলগারের বলে উইকেটের পেছনে থাকা ভিলাসের গ্লাভসবন্দি হন মুশফিকুর রহিম। টাইগার দলপতি আউট হওয়ার আগে খেলেন ৬৫ রানের অসাধারণ এক ইনিংস। ১২৫ বলে ৭টি চারে মুশফিক তার ইনিংসটি সাজান। বিদায় নেওয়ার আগে সাকিবের সঙ্গে ৩৫ রানের জুটি গড়েন মুশফিক।
সকাল সাড়ে নয়টায় বিশ্বসেরা টেস্ট দলের বিপক্ষে দুই ম্যাচ টেস্ট সিরিজের দ্বিতীয় ও শেষ টেস্টে ব্যাটিংয়ে নামে বাংলাদেশ। টাইগারদের দুই ওপেনার তামিম ইকবাল এবং ইমরুল কায়েস ব্যাটিংয়ের সূচনা করতে আসেন। আর প্রোটিয়াদের হয়ে ৪০০ উইকেটের মাইলফলকের সামনে দাঁড়িয়ে বোলিং উদ্বোধন করেন ডেল স্টেইন। টস জিতে মিরপুর শের-ই-বাংলা স্টেডিয়ামে এ ম্যাচে আগে ব্যাট করার সিদ্ধান্ত নেন টাইগার দলপতি মুশফিকুর রহিম।
তাইজুল ইসলামের পরিবর্তে ব্যাটিংয়ে শক্তি বাড়াতে এ ম্যাচে নাসির হোসেনকে জায়গা দেওয়া হয়েছে। আর প্রোটিয়া স্কোয়াড থেকে বাদ পড়েছেন কুইন্টন ডি কক। তার জায়গায় অভিষেক হয়েছে ড্যান ভিলাসের।
প্রথম টেস্ট ড্র হওয়ায় এ ম্যাচটিকে সিরিজ নির্ধারণী ম্যাচ হিসেবে ধরা হচ্ছে। জহুর আহমেদ চৌধুরি স্টেডিয়ামের প্রথম ম্যাচ বৃষ্টিতে ড্র হলেও আত্মবিশ্বাস নিয়ে চট্টগ্রাম থেকে ফেরে টাইগাররা। টাইগার ক্রিকেটারদের মনের মাঝে জমাট বাঁধা আত্মবিশ্বাস ঢাকা টেস্টে ছড়িয়ে দিতে পারলে জয়ের মঞ্চও রচনা হয়ে যেতে পারে মিরপুরে। দ. আফ্রিকা সফরের দু’টি টি-টোয়েন্টি জিতে ক্রিকেটের ক্ষুদ্র ফরমেটের সিরিজটি নিজেদের করে নিয়েছিল। তারই ধারাবাহিকতায় তিন ম্যাচ ওয়ানডে সিরিজের প্রথমটি জিতে নেয় প্রোটিয়ারা। তবে, বদলে যাওয়া টাইগাররা শেষ দুই ওয়ানডেতে সফরকারীদের হারিয়ে ওয়ানডে সিরিজ নিজেদের কাছে রেখে দেয়।
ওয়ানডে সিরিজ হারের পর বিপদে পড়া প্রোটিয়ারা চট্টগ্রাম টেস্টেও মাত্র ২৪৮ রানে প্রথম ইনিংসে গুটিয়ে গিয়েছিল। আমলা বাহিনীর প্রথম ইনিংসের জবাবে ৭৮ রানের লিড নেয় বাংলাদেশ। তবে, বৃষ্টির কারণে শেষ দুইদিন কোনো বল মাঠে না গড়ালে এগিয়ে থেকেও ড্র মেনে নিতে হয় মুশফিক বাহিনীকে।
বাংলাদেশ একাদশ: মুশফিকুর রহিম (অধিনায়ক), তামিম ইকবাল (সহ-অধিনায়ক), ইমরুল কায়েস, লিটন কুমার দাশ, মুমিনুল হক, সাকিব আল হাসান, মাহামুদুল্লাহ রিয়াদ, নাসির হোসেন, জুবায়ের হোসেন, মোহাম্মদ শহীদ ও মুস্তাফিজুর রহমান।
দক্ষিণ আফ্রিকা একাদশ: হাশিম আমলা, টি বাভুমা, জেপি ডুমিনি, ফাফ ডু প্লেসিস, ডিন এলগার, হারমার, মরনে মরকেল, ফিল্যান্ডার, ডেল স্টেইন, ভ্যান জিল ও ড্যান ভিলাস।
বাংলাদেশ সময়: ১৬২৬ ঘণ্টা, ৩০ জুলাই ২০১৫
এমআর
**মুশফিক আউট, লিটন ইন
** মুশফিক-সাকিবের জুটিতে এগুচ্ছে স্বাগতিকরা
** রিয়াদের বিদায়ে উইকেটে সাকিব
** মুশফিকের অর্ধশতকে এগুচ্ছে স্বাগতিকরা
** শেষ সেশনে ব্যাটিংয়ে টাইগাররা
** ঘুরে দাঁড়িয়েছে টাইগাররা
** মুশফিক-রিয়াদের দায়িত্বশীল ব্যাটিং
** মুমিনুলের পর ইমরুলের বিদায়
** দ্বিতীয় সেশনের শুরুতে মুমিনুলের বিদায়
** দ্বিতীয় সেশনে ভালো শুরুর প্রত্যয় টাইগারদের
** প্রথম সেশনে টাইগারদের সংগ্রহ ৭৫/১
** ইমরুল-মুমিনুলে এগুচ্ছে স্বাগতিকরা
** শুরুতেই ফিরলেন তামিম
** ব্যাটিংয়ে নেমেছেন তামিম-ইমরুল
** টস জিতে ব্যাটিংয়ের সিদ্ধান্ত টাইগারদের