ঢাকা: মুঠোফোনে কল করে ‘হ্যালো’ বলতেই পাওয়া গেল প্রয়োজনীয় তথ্য- ফ্লাইট ল্যান্ডেড, টিম হোটেলের (সোনারগাঁও) দিকে রওয়ানা হয়েছে দক্ষিণ আফ্রিকা দল। দেশ ছেড়ে যাওয়ার সময়ও জানিয়েছেন প্রোটিয়াদের বাংলাদেশ ত্যাগের তথ্য।
কাজটাই তার এমন- দক্ষিণ আফ্রিকা ক্রিকেট দলের লিয়াঁজো অফিসারের দায়িত্ব পালন করেছেন তিনি। এর আগে বাংলাদেশ সফরে আসা ভারতীয় দলের লিয়াঁজো অফিসারের দায়িত্বে তিনিই ছিলেন। খুব কাছ থেকে দেখেছেন বাংলাদেশের বিপক্ষে ওয়ানডে সিরিজগুলো হারের পর সফরকারী দলগুলোর মানসিক অবস্থা। ‘বাংলাদেশকে সবাই হাই রিলেটেড করছে। শুধু দক্ষিণ আফ্রিকা না ভারতও। আমি কাছে থেকে দেখেছি বাংলাদেশ সাফল্য পাওয়ার পরই অন্যভাবে মূল্যায়ন করতে শুরু করে। মার্কিংয়ের পরিমান বাড়িয়ে দিতে হয়েছে। ’
তিনি আরো বলেন, ‘বাংলাদেশ যখন জিতেছে তখন টিম মিটিংয়ে বিপক্ষ দল ভিন্ন দৃষ্টান্ত দিয়ে ক্রিকেটারদের বোঝাতো। যদিও আমি ওদের টিম মিটিংয়ে থাকতাম না; কাছাকাছি থাকাতে এবং নিজে ক্রিকেটার হওয়ায় সবকিছু বুঝে নেওয়া যেত। বাংলাদেশের কাছে হারার আগে হয়তো টিম মিটিং করতো এক ঘন্টা, পরে করেছে দুই ঘন্টা। দলের তরুণ ক্রিকেটার সৌম্য, মুস্তাফিজ, সাব্বির, নাসিরদের নিয়ে আলাদা পরিকল্পনা হতো। ওরা জানতো সাকিব-তামিম-মাশরাফিদের সঙ্গে যদি ওরা জ্বলে ওঠে তাহলে ম্যাচ কতটা কঠিন হয়ে যাবে। বাংলাদেশের বদলে যাওয়ার বিষয়টি নিয়ে অনেক প্রশংসা করতো। বাংলাদেশকে সবাই বড় দল হিসেবে মূল্যায়ন করছে। ’
নিজে ক্রিকেট খেলতেন বলেই কাজটা তার কাছে সহজ হয়েছে। হাসানুজ্জামান ঝড়ু প্রথম শ্রেণীর ক্রিকেট খেলতেন খুলনার হয়ে। বিমান বাংলাদেশ এর হয়ে খেলেছেন ঢাকা প্রিমিয়ার ডিভিশন ক্রিকেট লিগ। মিডলঅর্ডারে ব্যাটিংয়ের পাশাপাশি মিডিয়াম পেস বল করতেন এই ডানহাতি। ২০০৫ সালে ইতি টানেন আট বছরের ঘরোয়া ক্রিকেট ক্যারিয়ারের। এর পর থেকে বিমান বাংলাদেশ এ ফ্লাইট সার্ভিস ডিপার্টমেন্টে যোগ দেন। মূল প্রফেশনের পাশাপাশি ২০১১ বিশ্বকাপ থেকেই সফরকারী দলগুলোর হয়ে লিয়াজো অফিসার হয়ে কাজ করে যাচ্ছেন তিনি।
হাসানুজ্জামানের কাছে কাজটি খুবই চ্যালেঞ্জিং। ‘কাজটা কঠিন, অনেক বেশি ধৈয্যের প্রয়োজন হয়। দুই বোর্ডের কন্ট্রাক পেপার থাকে। টাইমিং থেকে শুরু করে সবকিছুই থাকে ওখানে। সেভাবে ক্রিকেটারদের গাইড করতে হয়। তারা এখানে আসে নিউ বর্ন শিশু হিসেবে। সেই শিশুদেরকে ফিঞ্চার ধরে ধরে ওয়ার্কড করানো। তারা আমাদের স্টেডিয়াম চেনে। কিন্ত, একাডেমি মাঠ, আউটার মাঠ, ইনডোর চেনানো, তাদের অনুশীলনের জন্য কয়টা উইকেট বরাদ্দ করা হবে, কতগুলো নেট বোলার থাকবে, মোটামুটি সবকিছুই গাইড করতে হয়। কাজের মধ্য দিয়ে ক্রিকেটিং এর সঙ্গে সঙ্গে দেশটাকে প্রেজেন্ট করি। এছাড়া দেশ-বিদেশের সংবাদ মাধ্যমকে তাদের মুভমেন্টের তথ্য দিয়ে সহযোগিতা করা। খুব অল্প সময়ে সুন্দরভাবে তথ্য জানাতে হয়। ’
এই কাজটির মাধ্যমে দেশকে তুলে ধরার সুযোগ পেয়ে আনন্দিত হাসানুজ্জামান। বাংলাদেশ বিমানের সহযোগিতার কথাও জানান তিনি, ‘বাংলাদেশ বিমান থেকে এ কাজের জন্য অনুমতি নিতে সমস্য হয় না। কারণ ক্রিকেট পরিবার থেকেই তো ওখানে যাওয়া। বিমান অনেক উৎসাহ নিয়েই কাজ করার অনুমতি দেয়। এই সময়টাতে পেমেন্ট নিই না আমার ছুটিও ড্যামেজ হয় না। তাদের ধন্যবাদ, কাজ করার অনুমতি দেওয়ায়। বিমানে যে কাজটা শিখি, এখানে আমি কাজগুলো ইম্লিমেন্ট করি। ’
তিনি আরও যোগ করেন, ‘এয়ারলাইন্সে কাজ করার সুবিধা হলো-নিয়মকানুন, লাগেজ, কার্গো- যেগুলো এয়ারলাইন্সের সাংকেতিক ভাষা। এগুলো জানার ফলে সফরকারী দলের লজিস্টিক ম্যানেজারের ৭০ শতাংশ কাজ আমি করে দিই। ’
হাসানুজ্জামানের দেখা সবচেয়ে প্রফেশনাল দল হলো দক্ষিণ আফ্রিকা। ‘তারা অনেক বেশি প্রফেশনাল এবং সৌজণ্যবোধসম্পন্ন। প্রফেশনাল টিমের সঙ্গে কাজ করে মজাটা হলো, কাজগুলো খুব স্মুথলি হয়। ওয়েল প্ল্যানড থাকে, ওয়েল সেটেলড থাকে। আমাকে ট্র্যাক ধরে ধরে যেতে হয় এবং যোগাযোগ করতে হয়। ঢাকার যানজট তো আমাদের কন্টোলের বাইরে। তাছাড়া সবকিছু সুন্দরভাবে হয়েছে এ সিরিজে। ’
প্রফেশনাল সম্পর্কের পাশাপাশি ব্যক্তিগত সম্পর্কও হয়ে যায় ক্রিকেটারদের সঙ্গে। ‘এখানে ব্যক্তিগত সম্পর্কও থাকে। প্রচন্ড পরিমানে ডেভেলপ করে এটি। ভারতের সঙ্গে যেটা হয়েছে। মহেন্দ্র সিং ধোনি থেকে শুরু করে অন্য ক্রিকেটারদের সঙ্গে মেইল আদান-প্রদান, উইশ এবং ইনভাইটেশন থাকে। বাংলাদেশের ক্রিকেটারদের সঙ্গে যেমন খুব কাছের সম্পর্ক, তেমনই খুব ভালো সম্পর্ক থাকে। প্রোটিয়ারা দেশে ফেরার সময় আমার জন্য সাদা টি-শার্টে সবাই সাইন দিয়ে আমাকে দিয়ে গেছে। এটা আন্তরিকতা থেকেই হয়েছে। মরকেল-স্টেইন-আমলাদের সঙ্গে ব্যক্তিগত সম্পর্ক হয়েছে। দক্ষিণ আফ্রিকা দল ভারত সফরে যাবে সামনে। আমাকে তখন যেতে বলেছে তারা। আমি চিন্তা করেছি ইডেনের ম্যাচটা দেখতে যাব। আন্তরিকতার কারণেই এটা হয়েছে। ’
বাংলাদেশ সময়: ১৪৩৯ ঘণ্টা, আগস্ট ০৫, ২০১৫
এসকে/আরএম