ঢাকা: শ্রীলঙ্কা সফরে তিন ম্যাচ টেস্ট সিরিজের প্রথম টেস্টে ৬৩ রানে হেরে ১-০তে পিছিয়ে পড়ল ভারত। গল টেস্টে বিরাট কোহলির দল লঙ্কানদের দুর্বল দিকটা দেখার পর স্বাগতিকদের শক্তিমত্তা দেখলো।
স্কোর:
শ্রীলঙ্কা: ১৮৩ এবং ৩৬৭
ভারত: ৩৭৫ এবং ১১২
ফল: শ্রীলঙ্কা ৬৩ রানে জয়ী
শ্রীলঙ্কার থেকে প্রথম ইনিংসে ১৯২ রানে এগিয়ে থাকা টিম ইন্ডিয়া ১৭৬ রানের জয়ের লক্ষ্যে নেমে ৪৯.৫ ওভার ব্যাট করে মাত্র ১১২ রানেই গুটিয়ে যায়। স্বাগতিকদের ব্যাট হাতে দ্বিতীয় ইনিংসে চমৎকার ইনিংস খেলে লড়াইয়ের ভীত গড়ে দেন চান্দিমাল। আর বল হাতে টিম ইন্ডিয়াকে গুঁড়িয়ে দেন রঙ্গনা হেরাথ। ইনিংস ব্যবধানে হারের লজ্জা কাটিয়ে উল্টো একদিন হাতে রেখেই জয় তুলে নেয় লঙ্কাবাহিনী।
শ্রীলঙ্কা সফরে প্রথম টেস্টের তৃতীয় দিন নাটকীয়ভাবে ঘুরে দাঁড়ায় স্বাগতিকরা। ভারতের বিপক্ষে তৃতীয় দিনে বড় ব্যবধানে পরাজয়ের মুখ থেকে ফিরে আসে লঙ্কানরা। আর দলকে রক্ষা করতে ব্যাট হাতে অসাধারণ এক শতক হাঁকান উইকেটরক্ষক ব্যাটসম্যান দিনেশ চান্দিমাল।
১৬২ রানে অপরাজিত থেকে মাঠ ছাড়েন চান্দিমাল। তার ১৬৯ বলের ইনিংসে ছিল ১৯টি চারের সঙ্গে ৪টি ছক্কা। সাদা পোশাকে ১৯ ম্যাচ খেলতে নামা চান্দিমালের এটি ছিল চতুর্থ টেস্ট শতক। ৮২.২ ওভার ব্যাট করে অলআউট হওয়ার আগে ভারতকে ১৭৬ রানের টার্গেট দেয় শ্রীলঙ্কা।
দ্বিতীয় ইনিংসে ভারতের হয়ে ব্যাটিং উদ্বোধন করতে আসেন শিখর ধাওয়ান আর লোকেশ রাহুল। দলীয় ১২ রানের মাথায় রঙ্গনা হেরাথের বলে এলবির ফাঁদে পড়ে বিদায় নেন ৫ রান করা রাহুল। তবে, তৃতীয় দিন শেষে ধাওয়ান ১৩ এবং নাইটওয়াচম্যান হিসেবে আসা ইশান্ত শর্মা ৫ রানে অপরাজিত থাকেন। দ্বিতীয় ইনিংসে ব্যাটিংয়ে নেমে তৃতীয় দিন শেষে সফরকারীদের সংগ্রহ দাঁড়ায় এক উইকেট হারিয়ে ২৩ রান। জয়ের জন্য চতুর্থ দিন ভারতের দরকার হয় ১৫৩ রান।
হাতে ৯ উইকেট নিয়ে খেলতে নেমে চতুর্থ দিন দ্রুত বিদায় নেন ইশান্ত শর্মা। দলীয় ৩০ রানে ব্যক্তিগত ১০ রান করে সাজঘরে ফেরেন ইশান্ত। ধাওয়ান ফেরেন ২৮ রান করে। রোহিত শর্মা (৪ রান) আর বিরাট কোহলি (৩ রান) বিদায় নিলে ব্যাটিংয়ের হাল ধরেন অজিঙ্কা রাহানে। আউট হওয়ার আগে ঋদ্ধিমান সাহার ব্যাট থেকে আসে ২ রান। আর হরভজন সিং এক রান করে বিদায় নেন। দলীয় ৬৭ রানের মাথায় টিম ইন্ডিয়ার সপ্তম উইকেটের পতন ঘটে।
দলীয় ৮১ রানের মাথায় রাহানেকে রেখে সাজঘরে ফেরেন অশ্বিন। ভারতকে স্বপ্ন দেখানো রাহানে দলীয় ১০২ রানের মাথায় ফিরে গেলে পরাজয় সময়ের ব্যাপার হয়ে দাঁড়ায়। হেরাথের সপ্তম শিকারে ফেরার আগে রাহানে করেন ৩৬ রান।
দ্বিতীয় ইনিংসে লঙ্কানদের সফল বোলার রঙ্গনা হেরাথ। ২১ ওভার বল করে তিনি ৪৮ রান খরচায় তুলে নেন ৭টি উইকেট। এছাড়া থারিন্ডু কুশল নেন তিনটি উইকেট।
এর আগে বিদায়ী সিরিজে কুমার সাঙ্গাকারার ব্যাট থেকে দ্বিতীয় ইনিংসে আসে ৪০ রান। এছাড়া অসুস্থ থেকেও ব্যাট হাতে নামা লঙ্কান দলপতি অ্যাঞ্জেলো ম্যাথিউসের ব্যাট থেকে আসে ৩৯ রান। চান্দিমালকে যোগ্য সঙ্গ দেন সাত ও আট নম্বরে ব্যাট হাতে আসা লাহিরু থিরিমান্নে এবং জিহান মুবারক। থিরিমান্নে খেলেন ৪৪ রানের ইনিংস আর মুবারকের ব্যাট থেকে আসে ৪৯ রান।
প্রথম ইনিংসে ভারতের হয়ে ৬ উইকেট পাওয়া রবিচন্দ্রন অশ্বিন দ্বিতীয় ইনিংসেও টিম ইন্ডিয়ার সফল বোলার। আরও চারটি উইকেট পেয়েছেন এ স্পিনার। এছাড়া তিনটি উইকেট দখল করেন অমিত মিশ্র।
এর আগে দ্বিতীয় দিন শেষে সুবিধাজনক স্থানে থেকে তৃতীয় দিন শুরু করে ভারত। সফরকারীরা গল টেস্টের দ্বিতীয় দিন শেষে স্বাগতিকদের থেকে ১৮৭ রানে এগিয়ে ছিল। হাতে ৮ উইকেট নিয়ে তৃতীয় দিন দ্বিতীয় ইনিংসে ব্যাটিংয়ে নামে লঙ্কানরা।
প্রথম ইনিংসে রবিচন্দ্রন অশ্বিনের স্পিন জাদুতে ১৮৩ রানেই অলআউট হয়ে যায় পাকিস্তানের বিপক্ষে গত সিরিজে পরাজয় মেনে নেওয়া ম্যাথিউস বাহিনী। অশ্বিন একাই লঙ্কানদের ৬ ব্যাটসম্যানকে সাজঘরে ফেরত পাঠান। স্বাগতিকদের হয়ে ইনিংস সর্বোচ্চ ৬৪ রান আসে দলপতির ব্যাট থেকে। এছাড়া ৫৯ রান আসে দিনেশ চান্দিমালের ব্যাট থেকে।
প্রথম ইনিংসে ব্যাটিংয়ে নেমে শুরুটা ভালো করেনি টিম ইন্ডিয়া। মাত্র ২৮ রানের মাথায় সফরকারীদের দুই ব্যাটসম্যান সাজঘরে ফেরেন। লোকেশ রাহুল আর রোহিত শর্মা ফিরে গেলেও টিম ইন্ডিয়ার ‘ক্যাপ্টেন হট’ খ্যাত বিরাট কোহলি আর ওপেনার শিখর ধাওয়ান দলকে বড় লিড পাইয়ে দেন।
কোহলি আর ধাওয়ানের ব্যাট থেকে আসে ২২৭ রান। বড় এ জুটি গড়ার পথে দু’জনের থেকেই আসে ব্যক্তিগত শতক। ১১টি চারের সাহায্যে ১৯১ বলে ১০৩ রান করেন কোহলি। আর ২৭১ বলে ১৩টি চারের সাহায্যে ১৩৪ রানের ইনিংস খেলেন ধাওয়ান। এছাড়া ঋদ্ধিমান সাহার ব্যাট থেকে আসে ৬০ রান। ১১৭.৪ ওভার খেলে ভারত অলআউট হওয়ার আগে করে ৩৭৫ রান।
শ্রীলঙ্কার হয়ে প্রথম ইনিংসে ৫ উইকেট লাভ করেন থারিন্ডু কুশল। এছাড়া তিনটি উইকেট দখল করেন নুয়ান প্রদীপ।
বাংলাদেশ সময়: ১৪১৩ ঘণ্টা, ১৫ আগস্ট ২০১৫
এমআর