ঢাকা: ১৯৯৩ সালে শ্রীলঙ্কার মাটিতে শেষবার কোনো টেস্ট সিরিজ জিতেছিল ভারত। ২০১৫ সালে এসে প্রায় ২২ বছর পর লঙ্কার মাটিতে আবারো সিরিজ জিতল টিম ইন্ডিয়া।
১৯৯৩ সালে ভারতের নেতৃত্বে ছিলেন মোহাম্মদ আজহারউদ্দিন। এরপর শচীন টেন্ডুলকার, সৌরভ গাঙ্গুলি, অনিল কুম্বলে, মহেন্দ্র সিং ধোনির মতো অধিনায়করা ভারতকে লঙ্কার মাটিতে টেস্ট সিরিজ জেতাতে ব্যর্থ হন। ২২ বছরের সেই আক্ষেপ ঘোচালেন বিরাট কোহলি।
কলম্বোর সিংহলিজ স্পোর্টস ক্লাব গ্রাউন্ডে অনুষ্ঠিত ম্যাচের প্রথম ইনিংসে ভারত সংগ্রহ করে ৩১২ রান। জবাবে শ্রীলঙ্কা ২০১ রানে প্রথম ইনিংসে অলআউট হয়। নিজেদের দ্বিতীয় ইনিংসে ভারত ২৭৪ রানে অলআউট হলে লঙ্কানদের সামনে টার্গেট দাঁড়ায় ৩৮৬ রান। তবে, ম্যাচের পঞ্চম দিন এসে ২৬৮ রানে থেমে যায় স্বাগতিকদের ইনিংস। ফলে, ১১৭ রানের বিশাল ব্যবধানে জয় তুলে নেয় সিরিজের প্রথম টেস্টে নাটকীয়ভাবে হেরে যাওয়া টিম ইন্ডিয়া।
এর আগে চতুর্থ দিন ভারতের ছুঁড়ে দেওয়া ৩৮৬ রানের টার্গেটে দিন শেষে শ্রীলঙ্কা ৩ উইকেট হারিয়ে তোলে ৬৭ রান। সিরিজ জিততে শেষ দিনে স্বাগতিকদের আরও ৩১৯ রান প্রয়োজন ছিল।
দ্বিতীয় ইনিংসে ব্যাটিংয়ে নেমে শ্রীলঙ্কা ব্যাটিং বিপর্যয়ে পড়ে। দলীয় ২১ রানের মাথায় টপঅর্ডারের তিন ব্যাটসম্যানকে হারায় স্বাগতিকরা। ভারতীয় পেসার ইশান্ত শর্মার দাপটে ওপেনার থারাঙ্গা কোনো না করেই বিদায় নেন। চান্দিমাল ব্যক্তিগত ১৮ রান করে ইশান্তের বলে কোহলির তালুবন্দি হন। উমেস যাদবের বলে শূন্য হাতেই ফেরেন করুনারত্নে।
আগের দিনের ২৪ রান নিয়ে অপরাজিত থাকা ওপেনার কুশল সিলভা আর মাত্র তিন রান যোগ করে বিদায় নেন। ২২ রান নিয়ে অপরাজিত থাকা দলপতি অ্যাঞ্জেলো ম্যাথুজ খেলেন ১১০ রানের দারুণ এক ইনিংস। মাঝে লাহিরু থিরিমান্নে ১২ রান করে সাজঘরে ফিরলেও ১০৬ বলে ৭০ রানের অসাধারণ এক ইনিংস খেলেন অভিষিক্ত উইকেটরক্ষক ব্যাটসম্যান কুশল পেরেরা। প্রথম ইনিংসেও তার ব্যাট থেকে আসে ইনিংস সর্বোচ্চ ৫৫ রান।
শেষ দিকে আর কেউ ব্যাট হাতে দাঁড়াতে না পারলে ১১৭ রানের পরাজয় মেনে নিতে হয় স্বাগতিকদের।
ভারতের হয়ে অশ্বিন ৪টি, ইশান্ত শর্মা ৩টি, উমেস যাদব ২টি আর অমিত মিশ্র একটি উইকেট তুলে নেন।
এর আগে দ্বিতীয় ইনিংসে ভারতের হয়ে লোকেশ রাহুল ২, পুজারা ০, রাহানে ৪, কোহলি ২১, রোহিত ৫০, বিনি ৪৯, ওঝা ৩৫, মিশ্র ৩৯, অশ্বিন ৫৮, যাদব ৪ আর ইশান্ত শর্মা ২ রান করেন। দ্বিতীয় ইনিংসে লঙ্কানদের হয়ে চারটি করে উইকেট তুলে নেন ধাম্মিকা প্রসাদ এবং নুয়ান প্রদীপ। হেরাথ পান একটি উইকেট।
সফরকারী ভারতের প্রথম ইনিংসে করা ৩১২ রানের জবাবে ব্যাটিংয়ে নেমে ২০১ রানে অলআউট হয় লঙ্কানরা। টেলএন্ডারদের ব্যাটিং দৃঢ়তায় বিপর্যয় কাটিয়ে উঠলেও প্রথম ইনিংসে স্বাগতিকরা ভারতের থেকে ১১১ রানে পিছিয়ে থাকে।
প্রথম ইনিংসে শ্রীলঙ্কার হয়ে পেরেরা ৫৫, হেরাথ ৪৯ রান করেন। ভারতের হয়ে ইশান্ত শর্মা একাই তুলে নেন ৫টি উইকেট। এছাড়া স্টুয়ার্ট বিনি ও অমিত মিশ্র দুটি করে উইকেট দখল করেন।
ভারতের হয়ে প্রথম ইনিংসে চেতস্বর পুজারার হার না মানা ১৪৫ রানের ইনিংসে ভর করে ভারত সবক’টি উইকেট হারিয়ে তোলে ৩১২ রান। ২৮৯ বল মোকাবেলা করে পুজারা ১৪টি চারের সাহায্যে তার অপরাজিত ইনিংসটি সাজান। আর তাতেই ইতিহাসের পাতায় ঢুকে যান পুজারা। প্রায় আট মাস পর দলে ফিরে ভারতের চতুর্থ ওপেনার ব্যাটসম্যান হিসেবে ইনিংসের প্রথম থেকে শেষ পর্যন্ত ব্যাটিং করে অপরাজিত থাকেন তিনি। এর আগে ভারতের হয়ে এ কীর্তি গড়েন রাহুল দ্রাবিড়, বিরেন্দর শেওয়াগ আর সুনীল গাভাস্কার।
প্রথম ইনিংসে ভারতের হয়ে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ রান আসে নয় নম্বরে নামা অমিত মিশ্রর ব্যাট থেকে। ২০০২ সালে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে বাংলাদেশের তাপস বৈশ্য নয় নম্বরে নেমে অপরাজিত ৫২ রান করে এ মাঠে এতোদিন সর্বোচ্চ স্কোরার ছিলেন। তাপস বৈশ্যকে টপকে মিশ্র ৮৭ বলে ৫৯ রান করার পথে পুজারার সঙ্গে জুটি বেধে স্কোরবোর্ডে আরও ১০৪ রান যোগ করেন। যা লঙ্কানদের বিপক্ষে ভারতের অষ্টম উইকেট জুটিতে সর্বোচ্চ রান। এছাড়া অভিষিক্ত নোমান ওঝাকে সঙ্গে নিয়ে পুজারা ৫৪ রানের জুটি গড়েন। কোহলি ১৮, রোহিত শর্মা ২৬, স্টুয়ার্ট বিনি ০, অশ্বিন ৫, ওঝা ২১, ইশান্ত শর্মা ৬, উমেস যাদব ৪ রান করেন।
প্রথম ইনিংসে শ্রীলঙ্কার হয়ে চারটি উইকেট পান ধাম্মিকা প্রসাদ। আর তিনটি উইকেট দখল করেন রঙ্গনা হেরাথ।
বাংলাদেশ সময়: ১৬১৬ ঘণ্টা, ০১ সেপ্টেম্বর ২০১৫ আপডেট: ১৬৫০ ঘণ্টা
এমআর