ঢাকা: ৯৪ বলে সেঞ্চুরি, ইনিংস শেষে ৯৬ বল মোকাবেলায় অপরাজিত ১০২ রান, সঙ্গে ১২টি বাউণ্ডারি আর একটি ওভার বাউণ্ডারি। বল হাতে জ্বলে উঠে ইনিংস সর্বোচ্চ ৫ উইকেট।
মহাকাব্যিক এ ম্যাচ খেলার পর আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যম গুলো নাসিরকে নিয়ে ফিচার লিখেছিল। পিছিয়ে নেই ‘উইজডেন ইন্ডিয়া’। তারা টাইগার অলরাউন্ডার নাসিরকে নিয়ে লিখতে গিয়ে তাকে তুলনা করেছেন স্যার ভিভিয়ান রিচার্ডস, গ্রায়েম হিক, পল কলিংউড, শহীদ আফ্রিদি, সৌরভ গাঙ্গুলি, স্কট স্টাইরিস আর আব্দুর রাজ্জাকের সঙ্গে।
উইজডেন ইন্ডিয়া লিখেছে, ‘ব্যাঙ্গালুরুতে বাংলাদেশের অলরাউন্ডার নাসির হোসেনের দারুণ শতক আর বল হাতে ৫ উইকেট তুলে নেওয়া পরিসংখ্যান ঘাটতে বাধ্য করছে। নাসিরের অর্জনটি প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটে হলেও ওয়ানডে ফরমেটের ক্রিকেটে মাত্র দু’জন রয়েছেন শতকের পাশাপাশি একই ম্যাচে ৫ উইকেট বা তার বেশি পেয়েছেন।
পরিসংখ্যান ঘেটে উইজডেন ইন্ডিয়া আরও লিখেছে, ওয়েস্ট ইন্ডিজের কিংবদন্তি স্যার ভিভিয়ান রিচার্ডস আর ইংল্যান্ডের পল কলিংউড নাসিরের মতো শতকের পাশাপাশি ইনিংসে ৫ উইকেট পেয়েছে। ১৯৭১ সালের পর থেকে ওয়ানডে ক্রিকেটের ইতিহাসে নাসিরের মতো অলরাউন্ড পারফর্ম আরও দেখা যায়। তবে, মজার বিষয় হচ্ছে অলরাউন্ড পারফর্ম বিবেচনা করে দেখা দেখা যায়, এ তালিকায় নেই কোনো অস্ট্রেলিয়ান কিংবা দক্ষিণ আফ্রিকান ক্রিকেটার।
উইজডেন ইন্ডিয়া তাদের সেরা অলরাউন্ড পারফর্ম দেখাতে একটি তালিকা প্রকাশ করে। তাতে এক নম্বরে রয়েছেন ভিভিয়ান রিচার্ডস। ক্যারিবিয় এ কিংবদন্তি ১৯৮৭ সালের মার্চ মাসে ডুনেডিনে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে ১১৯ রানের ইনিংস খেলার পর ৪১ রানের বিনিময়ে বল হাতে নিয়েছিলেন ৫ উইকেট।
দুই নম্বরে রয়েছেন বাংলাদেশের বিপক্ষে ২০০৫ সালে নটিংহামে অপরাজিত ১১২ রান করার পর বোলিংয়ে ৩১ রান খরচায় ৬ উইকেট তুলে নেওয়া ইংলিশ অলরাউন্ডার পল কলিংউড।
অলরাউন্ড পারফর্মে সেরা বিচার করতে গিয়ে উইজডেন ইন্ডিয়া শহীদ আফ্রিদির ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে ৭৬ রান ও ৭ উইকেট (১২ রান দিয়ে) এবং শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে ৭৫ রান ও ৫ উইকেট (৩৫ রান দিয়ে) তুলে ধরেছে। পাকিস্তানের আরেক অলরাউন্ডার আব্দুর রাজ্জাকের ২০০০ সালে হোবার্টে করা ভারতের বিপক্ষে অপরাজিত ৭০ রান এবং বল হাতে ৪৮ রান খরচায় ৫ উইকেট শিকার করাকে তুলে ধরে।
এছাড়া এ তালিকায় রয়েছেন ইংল্যান্ডের অলরাউন্ডার গ্রায়েম হিক। তিনি ২০০০ সালের ফেব্রুয়ারিতে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে ৮০ রান করেন এবং বল হাতে ৩৩ রান খরচায় ৫ উইকেট তুলে নেন। একই বছর একই প্রতিপক্ষের বিরুদ্ধে ভারতের সাবেক অধিনায়ক সৌরভ গাঙ্গুলি কানপুরে অপরাজিত ৭১ রান করার পাশাপাশি ৩৪ রানের বিনিময়ে ৫ উইকেট তুলে নেন।
দুই বছর পর পোর্ট অব স্পেনে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে অলরাউন্ড পারফর্ম করে দেখান কিউইদের অলরাউন্ডার স্কট স্টাইরিস। তিনি হার না মানা ৬৩ রান করেন এবং বোলিংয়ে ২৫ রানের বিনিময়ে ৬ উইকেট তুলে নেন।
ভারত সফরের প্রথম ওয়ানডেতে ৯৬ রানের পরাজয়ে ব্যাকফুটে থাকা টাইগাররা অলরাউন্ডার নাসির হোসেনের একক কৃতিত্বে স্বাগতিকদের বিপক্ষে দ্বিতীয় ম্যাচে জয় তুলে নেয়। ব্যাট হাতে নাসিরের অপরাজিত ১০২ রানের ইনিংসে ভর করে প্রথমে স্কোরবোর্ডে ২৫২ রান জমা করা টাইগাররা। সিরিজে জয় নিশ্চিত করতে নামা ভারত ১৮৭ রানেই গুটিয়ে যায়। তাদের শক্তিশালী ব্যাটিং লাইনআপকে গুঁড়িয়ে দেন নাসির। অনেকটা একাই ভারতের দলটিকে হারান টাইগার অলরাউন্ডার।
সফরের প্রথম ম্যাচে নাসিরের ব্যাট থেকে আসে ৫২ রান। তবে, দ্বিতীয় ম্যাচে তিন অঙ্কের ম্যাজিক ফিগার ছুঁয়ে নিজের জাত চেনান টাইগারদের অলরাউন্ডার নাসির। বোলিংয়ে এসে একে একে ফিরিয়ে দেন উন্মুখ চাঁদ, সুরেশ রায়না, করুন নায়ার, রিশি ধাওয়ান আর কালারিয়াকে। দলীয় ৩৪তম ওভারে আক্রমণে এসে একই ওভারে ফিরিয়ে দেন রায়না আর নায়ারকে। ১৮৭ রানে ভারতকে গুটিয়ে দিতে পাঁচ উইকেট নেওয়া নাসির ১০ ওভার বল করে মাত্র ৩৬ রান খরচ করেন। ব্যাটিংয়ের পাশাপাশি বোলার হিসেবে অপরিহার্য হয়ে ওঠা নাসিরকে কেন বলা হতো ‘মিস্টার ফিনিশার’ তা তিনি ভালো করেই বুঝিয়ে দিয়েছেন।
বাংলাদেশ সময়: ১৫০০ ঘণ্টা, ২৬ সেপ্টেম্বর ২০১৫
এমআর