ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১৩ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৮ নভেম্বর ২০২৪, ২৬ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

ক্রিকেট

অতীতের দিকে তাকালে চোখে পানি চলে আসে

সাজ্জাদ খান, স্পোর্টস করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৭২৯ ঘণ্টা, এপ্রিল ১২, ২০১৬
অতীতের দিকে তাকালে চোখে পানি চলে আসে বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম

খুলনা থেকে ফিরে: এক এক করে বাংলাদেশ নারী ক্রিকেট দলের ১৩ জন ক্রিকেটার তৈরি করেছেন ইমতিয়াজ হোসেন পিলু। তার হাত ধরেই সালমা, জাহানারা, শুকতারা, রুমানারা আজ বিশ্বতারকা।

তবে কোচিংকে কখনোই পেশা মনে করেননি পিলু। ক্রিকেটের প্রতি অগাধ ভালোবাসায় ২০০৬ সাল থেকে আছেন নারী ক্রিকেটের সঙ্গে। নিজের পকেটের টাকা খরচ করেই তৈরি করছেন ক্রিকেটার।

বল-ব্যাট-প্যাড-হেলমেট দিয়েও সাহায্য করছেন ক্রিকেটারদের। অনেক বাধা-বিপত্তি এসেছে তারপরও চালিয়ে গেছেন সংগ্রাম। পরিশ্রম, চেষ্টা আর সততায় আজ নিজেই হয়ে উঠেছেন ক্রিকেটার তৈরির প্রতিষ্ঠান। পিলুর পরিচর্যায় প্রতি বছরই নারী দলে জায়গা করে নেন কোনো না কোনো ক্রিকেটার।

এজন্য পুরো কৃতিত্ব খেলোয়াড়দেরই দেন নিবেদিতপ্রাণ এই কোচ। ‘আমি প্লেয়ার বানাইনি, ওরাই হয়েছে। আমার কেবল গাইডলাইন ছিল। এটা ওদের পরিশ্রমের ফল। ওদের কারোরই আর্থিক অবস্থা ভালো ছিলো না। আসলে চেষ্টা, সাধনা থাকলে অনেক কিছুই করা যায়। মেয়েরা তাই করেছে। আমি কেবল গাইডলাইন দিয়েছি। ’

আপনার হাতে গড়া একেকটা ক্রিকেটার যখন জাতীয় দলে যায়, সেখানে ভালো পারফরম করে। কোচ হিসেবে তখন কেমন লাগে? এমন প্রশ্নে পিলুর উচ্ছ্বাস প্রকাশ করে পিলু বলেন, ‘আমার মেয়েরা যখন ভালো পারফরম করে তখন ভালো লাগে। খারাপ করলে মনটা খারাপ হয়ে যায়। আমি ওদের সন্তানের মতো দেখি। ’
 
‘কোচিংটা আমার পেশা ‍না। এটা আমার ভালোবাসা। একটা চ্যালেঞ্জও বলতে পারেন। আজ পর্যন্ত আমি ১০টা টাকা বাসায় নিতে পারিনি। প্রতিদিন আসি পকেটের টাকা যায়’- বলছিলেন ইমতিয়াজ হোসেন পিলু।
 
খুলনায় মেয়েদের ক্রিকেট শেখানোর পেছনে সহায়-সম্পদ, অর্থকড়ি ব্যয় করে চলেছেন নিঃস্বার্থভাবে। অথচ একটু সহায়তার হাত পেলে জাতীয় ক্রিকেটে তার অবদান বেড়ে যেত আরো অনেক। ঢাকা লিগে খেলছেন এমন ৩৬ ক্রিকেটার তারই হাতে গড়া। অথচ ব্যাট, প্যাড, বলসহ ক্রিকেট প্রশিক্ষণে অনেক খরচ। অথচ কানাকড়িও সহায়তা পাননি কখনও।

এ জন্য আফসোস না থাকলেও আছে হতাশা, ‘মানুষের সহায়তা পেলে হয়তো আরও কিছু ক্রিকেটারকে জাতীয় ক্রিকেটার বানানো যেত। নারী ক্রিকেটের জন্য খুলনা জেলা ক্রীড়া সংস্থা, বিভাগীয় ক্রীড়া সংস্থা, ক্রিকেট বোর্ড, ফেডারেশন, জাতীয় ক্রীড়া পরিষদ- কখনো কারও সহযোগিতা নেইনি। আমার পকেটের পয়সা দিয়েই চালিয়েছি। প্রাথমিক অবস্থায় প্রথমে সহযোগিতা চেয়েছিলাম কিন্তু তাদের অসহযোগিতার কারণে লজ্জাবোধ হওয়ায় আর কখনোই চাইনি। যতদিন পারবো ততদিন নারী ক্রিকেটকে এগিয়ে নিয়ে যাব, যখন পারবো না...। ’

 
খুলনার রয়্যাল মোড়ে সিটি কলেজের পাশেই পৈতৃক বাড়িতে বসবাস করেন ইমতিয়াজ হোসেন পিলু। ছোটখাট ব্যবসা আছে বলেই খরচ যোগাতে পারছেন নারী ক্রিকেটারদের প্রশিক্ষণে। কখনও সাধ্য হলে বিকল্প বিকেএসপি গড়ে তুলবেন এমন স্বপ্নও দেখেন পিলু।

‘সবসময় চেষ্টা করি জাতীয় দলের জন্য প্লেয়ার তৈরি করার। আমার চ্যালেঞ্জ ছিল বিকেএসপির সঙ্গে। বিকেএসপি পারলে আমি পারবো না কেন? প্র্যাকটিসের সুযোগ-সুবিধা ভালো থাকলে আরও ক্রিকেটার তৈরি করতে পারতাম। বাংলাদেশের অনেক মেয়ে খুলনায় এসে প্রাকটিস করতে চায়। অনেক মেয়ে আছে যাদের অভিভাবক ফোন করে, দেখা করে। কিন্তু এখানে মাঠ নেই। যদি পেতাম তাহলে আমি হয়তো ব্যক্তি উদ্যোগে ‘বিকল্প বিকেএসপি’ তৈরি করতাম। আমার সেই মানসিক শক্তি আছে। বিকেএসপি অনেক বড় প্রতিষ্ঠান। আমি হিসেব করে দেখেছি তাদের বছরে ৪০-৫০ লাখ টাকা খরচ হয় নারী ক্রিকেটের পেছনে। আমি ১০-১২ লাখ টাকা খরচ করতে পারলে প্রতি বছর ৪-৫টা প্লেয়ার তৈরি করে দিতে পারবো। তাদের পড়ালেখা, থাকা-খাওয়ার জন্য মাসে এক লাখ টাকা ব্যয় হবে। ’
 
কোচিং ক্যারিয়ারে পিলুর সাফল্য বিস্ময়-জাগানিয়া। খুলনা জেলা দলকে পর পর তিনবার জেলা চ্যাম্পিয়ন করেছেন তিনি। বিভাগীয় লিগে তার দল খুলনা বিভাগ চারবারের অপরাজিত চ্যাম্পিয়ন। ঢাকা প্রিমিয়ার ডিভিশন ক্রিকেট লিগে ৭ বারের মধ্যে ৬ বার চ্যাম্পিয়ন করেছেন মোহামেডান স্পোর্টিং ক্লাবকে। প্রথম বিভাগে কলাবাগান ক্লাবের কোচ হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন পিলু। সেই দলও গতবারের চ্যাম্পিয়ন। সব মিলিয়ে ক্রিকেট বোর্ডের ১৭টা লিগের মধ্যে ১৪ বারই চ্যাম্পিয়ন পিলুর দল।

২০০৬ সালের নভেম্বরে তৎকালীন সংসদ সদস্য ও বিসিবি সভাপতি আলী আসগর লবীর নির্দেশনায় খুলনার ক্রিকেট সংগঠক সৈয়দ জাহিদ হোসেন কিছু প্যাড-ব্যাট সংগ্রহ করেছিলেন। তৎকালীন বিভাগীয় কমিশনার ইউসুফুর রহমানও বেশ সহায়তা দেন। এরপর থেকে অদ্যাবধি কেউ খবরও রাখেননি। সাক্ষাৎকারে এ কৃতি কোচ সম্ভাবনার সঙ্গে কিছু ক্ষোভের কথাও কথাও জানালেন বাংলানিউজকে।

তিনি বলেন, ‘আসলে বেশির ভাগ নারী ক্রিকেটার আসে গরিব ঘর থেকে। তাদের জন্য কেডস-প্যাড, ব্যাট ও বল আমাকেই সংগ্রহ করতে হয়। আমিও ওদের নিজের মেয়ের মতো করে সাধ্য অনুযায়ী অভাব পূরণ করি। এ ব্যাপারে কেউ কোনোদিন সহায়তার কথা মনেও করেনি। সহযোগিতার কথা বাদ দিলাম অনেকে অসহযোগিতা ও আমার বিরুদ্ধে নানারকম ষড়যন্ত্রেও লিপ্ত ছিল। অতীতের দিকে তাকালে চোখে পানি চলে আসে। ’

বাংলাদেশ সময়: ১৭১০ ঘণ্টা, এপ্রিল ১২, ২০১৬
এসকে/এমজেএফ
 

** দুই মৌসুম ধরে বন্ধ খুলনা লিগ
** নারী ক্রিকেট মানেই তো সালমা
** মাঠের মানুষ আব্দুস সাত্তার কচি
** জাতীয় দলে ফিরবেন, বিশ্বাস জিয়ার
** লক্ষ্যটা নিজের ভেতরেই রাখতে চান সোহান
** ‘মাশরাফি ভাইয়ের রুমেই বেশী আড্ডা হতো’
** আবু নাসের স্টেডিয়াম যেভাবে ‘লাকি ভেন্যু’ হলো
** ক্রিকেটভক্ত-ক্রিকেটারভক্ত মিম, আফরিদ
** বিশ্বকাপের ক্যাচ দুটি মনে রাখবেন সৌম্য
** ‘লাল-সবুজ’ বাড়ির বাসিন্দা সৌম্য
** সৌম্যর সুন্দরবন-ট্রিপ
** মাশরাফিতে মুগ্ধ মুস্তাফিজের বাবা
** মুস্তাফিজের বোলিংটাই কেবল পাল্টেছে
** ‘কাটার স্পেশালিস্ট’ এর শুরু এ মাঠেই
** গ্রামের বাড়িতে দুরন্ত মুস্তাফিজ
** ক্রিকেটাঙ্গনে দাপট দেখানো খুলনার পথে…

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।