ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১৩ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৮ নভেম্বর ২০২৪, ২৬ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

ক্রিকেট

ঘরের লোকই জ্বলছে ভারতীয় ক্রিকেট আক্রোশে

হুসাইন আজাদ, সিনিয়র নিউজরুম এডিটর | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৫৫৯ ঘণ্টা, এপ্রিল ১৪, ২০১৬
ঘরের লোকই জ্বলছে ভারতীয় ক্রিকেট আক্রোশে হার্শা ভোগলে, অরুণ লাল ও সঞ্জয় মাঞ্জরেকার

ঢাকা: প্রতিদ্বন্দ্বী দল ছাড়িয়ে এবার ভারতীয় ক্রিকেটের কতিপয় প্রশাসক ও ক্রিকেটারের আক্রোশের আগুনে জ্বলছেন খোদ তাদেরই লোক। এই আক্রোশের সর্বশেষ শিকার দেশটির জনপ্রিয় ধারাভাষ্যকার হার্শা ভোগলে।

বিশ্বকাপে বাংলাদেশ-ভারত ম্যাচ চলাকালে ‘প্রতিপক্ষের খেলোয়াড়দের বেশি প্রশংসা করায়’ তাকে ইন্ডিয়ান প্রিমিয়ার লিগের (আইপিএল) ধারাভাষ্য থেকে সরিয়ে দেওয়া হয়েছে। এ নিয়ে খোদ ভারতীয় মিডিয়ায়ই আলোচনা-সমালোচনার ঝড় বইছে।

 

ক’দিন ধরে দেশটির বেশ কিছু সংবাদমাধ্যমে এ বিষয়ে দফায় দফায় প্রকাশিত প্রতিবেদনে বলা হচ্ছে, বিশ্বকাপে বাংলাদেশ-ভারত ম্যাচে ধারাভাষ্য নিয়ে একটি ‍টুইট করেন অমিতাভ বচ্চন। ওই টুইটই কাল হয়ে এসেছে ভোগলের ভাগ্যে।

পানামা পেপারস কেলেঙ্কারিতে অর্থপাচারকারী হিসেবে নাম ওঠা অমিতাভ সেই টুইটে বলেন, ‘একজন ভারতীয় ধারাভাষ্যকার ভারতীয় ক্রিকেটারদের চেয়ে বিদেশি ক্রিকেটারদের নিয়ে বড্ড বেশি কথা বলেন। ’  ওই টুইটে তার মন্তব্যের পক্ষে সায় দিয়ে রিটুইট করেন খোদ ভারতীয় অধিনায়ক মহেন্দ্র সিং ধোনি। তিনি বলেন, ‘এরপর আর কিছু বলার নেই। ’ ঠিক একইভাবে ভোগলের ওপর ক্ষোভ প্রকাশ করেন সুরেশ রায়না ও রোহিত শর্মার মতো কিছু সিনিয়র ক্রিকেটারও।

সংবাদমাধ্যমগুলোর প্রতিবেদন অনুযায়ী, ওই টুইট-রিটুইটের প্রতিক্রিয়া দৃশ্যমান হয় দিন দশেক আগে। টিভি ধারাভাষ্যে ভারতীয়দের মধ্যে সবচেয়ে জনপ্রিয় এ ধারাভাষ্যকারকে সেসময় একটি চিঠি দিয়ে জানানো হয়, তিনি বিসিসিআই’র ধারাভাষ্যকারদের প্যানেল থেকে বাদ পড়েছেন।

এই খবর ছড়ানোর পর সংবাদমাধ্যম হার্শা ভোগলের সঙ্গে যোগাযোগ করলে তিনি বলেন, ‘এখন সবাই তো সব কিছু জানেন। আমি আর নতুন করে নাই বা বললাম। শুধু এটুকু বলতে পারি যে, আইপিএলে থাকতে চেয়েছিলাম। সেই ইচ্ছা আর পূরণ হল না বলে খারাপ লাগছে। ’

এর আগে, অমিতাভ-ধোনি-রায়নাদের টুইট-রিটুইটের প্রতিক্রিয়ায় ভোগলে বলেছিলেন, ‘শচীন-সৌরভ-রাহুলদের সময়টা সত্যিই আলাদা ছিল। ওরা সব বিষয়ে মাথা ঘামাতো না। ’

ভোগলেকে সরিয়ে দেওয়ার বিষয়ে ভারতীয় ক্রিকেট বোর্ড বিসিসিআই’র একজন শীর্ষ কর্মকর্তা একটি সংবাদমাধ্যমকে বলেন, ‘এটা আলোচনা করেই হয়েছে। ভোগলে ক্রমশ একঘেয়ে হয়ে উঠছিলেন। ’

ভোগলের মতো ব্যক্তিত্বকে নজিরবিহীনভাবে বিসিসিআই’র ধারাভাষ্যকার প্যানেল থেকে বাদ দেওয়ার খবরের পেছন কারণ খুঁড়তে বের হয়ে আসছে আরও বিতর্কিত সব ঘটনা। সংবাদমাধ্যম জানাচ্ছে, ভোগলের আগেও এমন আক্রোশের শিকার হয়েছেন ভারতীয়দের ‘ঘরের’ আরও কয়েকজন। এদের মধ্যে অরুণ লাল ও সঞ্জয় মাঞ্জরেকারের কথা বলতেই হয়।

অরুণ লালের ‘অপরাধ’ ২০১২ সালে বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগের (বিপিএল) প্রথম আসরে ধারাভাষ্য দেওয়া। ভারতীয় ক্রিকেট প্রশাসকরা কেবল আইপিএলকেই অপ্রতিদ্বন্দ্বী লিগ হিসেবে ক্রিকেটবিশ্বে দেখতে চান। সেই বিবেচনায় বিপিএলের আগমনী ঢামাঢোলে অরুণ লাল গলা মেলানোয় অরুণ লালকে সরিয়ে দেওয়া হয় আইপিএলের ধারাভাষ্য থেকে।

আর সঞ্জয় মাঞ্জরেকারের অপরাধ বিসিসিআই সভাপতি এন শ্রীনিবাসন ও আইপিএলের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা সুন্দর রমনের বিতর্কিত কিছু পদক্ষেপের সমালোচনা। যে কারণে বোর্ডের সঙ্গে চুক্তি থাকা সত্ত্বেও ধারাভাষ্যকারদের প্যানেল থেকে ২০১৩ সালে সরিয়ে দেওয়া হয় তাকে।

কেবল হার্শা ভোগলে, অরুণ লাল কিংবা সঞ্জয় মাঞ্জরেকারই নন, দলের পাশাপাশি ব্যক্তি হিসেবে ভারতীয় ক্রিকেটের আক্রোশের শিকার হয়েছেন অনেক বিদেশি ক্রিকেট ব্যক্তিত্বও।

এদের মধ্যে অস্ট্রেলিয়ান আম্পায়ার ড্যারেল হার্পার, ওয়েস্ট ইন্ডিজের আম্পায়ার স্টিভ বাকনর, নিউজিল্যান্ডের ধারাভাষ্যকার ড্যানি মরিসন, দক্ষিণ আফ্রিকার অ্যাকারম্যান, অস্ট্রেলিয়ার সাবেক অধিনায়ক ইয়ান চ্যাপেলের কথা উল্লেখযোগ্য।

ড্যারেল হার্পার ২০১১ সালে বাধ্যতামূলক অবসরে যাওয়ার আগে বলে যান, ভারতের সঙ্গে ওয়েস্ট ইন্ডিজের একটি সিরিজে আম্পায়ারিং মহেন্দ্র সিং ধোনিদের মনোপূত না হওয়ায় তাকে সরানোর ষড়যন্ত্র চলছে। আর ভারতের সঙ্গে অস্ট্রেলিয়‍ার একটি সিরিজে আম্পায়ারিং নিয়ে ধোনিদের সমালোচনার মুখে সরিয়ে দেওয়া হয় বাকনরকে।

অন্য দিকে ড্যানি মরিসন ও অ্যাকারম্যানদের ‘অপরাধ’ ছিল, তারা ধারাভাষ্যে বিরাট কোহলিকে ভারতের ‘পরবর্তী অধিনায়ক’ বলেছিলেন। ইয়ান চ্যাপেলকে সরে যেতে হয় বিসিসিআইয়ের চুক্তির বাইরে তাদের দল নির্বাচন নিয়ে কথা বলার ‘অপরাধে’।

আগেকার এসব ঘটনা নিয়ে ভারতীয় মিডিয়ায় ততোটা আলোচনা না হলেও সমালোচনার ঝড় বইছে হার্শা ভোগলেকে সরানোর পর। এ নিয়ে ভারতের সোশ্যাল মিডিয়ায়ও তোলপাড় চলছে।

সামাজিক যোগাযোগ ব্যবহারকারীরা বলছেন, যেখানে বহু নিম্নমানের ধারাভাষ্যকার কাজ করার সুযোগ পাচ্ছেন, সেখানে হার্শা ভোগলের মতো একজন জ্যেষ্ঠ ও জনপ্রিয় ধারাভাষ্যকারকে সরানোটা হঠকারিতা ছাড়া কিছু হতে পারে না।

বাংলাদেশ সময়: ১৫৪৩ ঘণ্টা, এপ্রিল ১৪, ২০১৬
এইচএ/

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।