বিকেএসপি থেকে ফিরে: প্রিমিয়ার লিগের আবাহনী লিমিটেড-প্রাইম দোলেশ্বর ম্যাচের ভেন্যু হঠাৎ বদলে যাওয়ায় শঙ্কাটা আগেই তৈরি হয়েছিল। ম্যাচের একদিন আগে লিগের গুরুত্বপূর্ণ ম্যাচটির ভেন্যু কোনো কারন ছাড়াই বদলে ফেলে লিগের আয়োজক সিসিডিএম।
শেষ পর্যন্ত তাদের এ শঙ্কাই সত্যি হলো। শুরু এবং শেষে আম্পায়ারের দুটি বিতর্কিত সিদ্ধান্তে বিকেএসপির তিন নম্বর মাঠে প্রশ্নবিদ্ধ হলো ম্যাচের শেষ বলে পাওয়া আবাহনীর তিন উইকেটের জয়টি।
সকালের টানা দুই ঘণ্টার বৃষ্টিতে ম্যাচটি নেমে আসে ২৮ ওভারে। টসে হেরে ব্যাটিংয়ে নামা দোলেশ্বরের ইনিংসের প্রথম বলেই আবাহনী ফিল্ডারদের আবেদনের সামনে আম্পায়ার নাদির শাহর আঙ্গুল উঠে যায় উপরে। লেগস্ট্যাম্পের বাইরের বল ফ্লিক করতে গিয়ে কিভাবে উইকেটের পেছনে কট-বিহাইন্ড হলেন সেটি মেলাতে পারলেন না দোলেশ্বর ওপেনার ইমতিয়াজ হোসেন। চলমান লিগের সর্বোচ্চ স্কোরার ইমতিয়াজ আক্ষেপ ঝারলেন মাঠের বাইরে এসে। ড্রেসিংরুমে ঢুকতে ঢুকতে বলছিলেন, ‘এভাবে খেলে লাভ কি, এর চেয়ে না খেলে বাড়ি ফেরাই ভালো। ’
শুরুর এ ঘটনা ভুলে যেতেই পারতেন প্রাইম দোলেশ্বরের ক্রিকেটাররা! বরং শুরুর আক্ষেপ কয়েকগুন বেড়ে গেল শেষে। আম্পায়ারের আরেকটি বিতর্কিত সিদ্ধান্তেই যেন প্রমাণ হলো ইমতিয়াজের অমন আক্ষেপ মোটেও অহেতুক নয়। শুধু ইমতিয়াজ না, এরপর গোটা দলকেই আক্ষেপ নিয়ে ছাড়তে হলো বিকেএসপির তিন নম্বর ভেন্যু।
১৯২ রানের লক্ষ্যে নামা আবাহনীর শেষ তিন বলে দরকার ১০ রান, হাতে তিন উইকেট। দোলেশ্বরের হাতে তখনো ম্যাচ। স্ট্রাইক প্রান্তে তখন ৪৫ রানে অপরাজিত মোসাদ্দেক হোসেন সৈকত। নন স্ট্রাইকিং প্রান্তে তাসকিন আহমেদ। জিততে হলে স্ট্রাইক ধরে রাখতে হবে মোসাদ্দেক হোসেনকেই। তবে ফরহাদ রেজার শেষ ওভারের চতুর্থ বলে মোসাদ্দেকের কাভার ড্রাইভে ২ রান নেয়ার কোনো সুযোগ ছিল না। ফিল্ডারের ভুল থ্রো’তে অবশ্য দ্বিতীয় রানের সুযোগ চলে আসে। দ্বিতীয় রানের জন্য তাসকিন ছুটতেই নন স্ট্রাইকিং প্রান্তে থ্রো চলে আসে ফিল্ডারের হাত থেকে। ফরহাদ রেজা বল ধরে স্ট্যাম্পও ভাঙেন দ্রুত। নিশ্চিত রান আউট ভেবে উল্লাসিতই ছিলেন দোলেশ্বর ফিল্ডাররা।
কিন্তু আম্পায়ার রেজওয়ান পারভেজ ইশারা করে বোঝালেন তাসকিন জায়গা মতো পৌঁছে গেছে। আম্পায়ারের এমন কাণ্ডে রীতিমতো বাকরুদ্ধ নাসির হোসেন, আল আমিন, ফরহাদ রেজারা। আম্পায়ারের উপর ফুঁসছিল গোটা দল।
বাংলানিউজের ফটোসাংবাদিকের ক্যামেরায় ধরা পড়ে ওই বিতর্কিত সিদ্ধান্তের বেশ কিছু স্থিরচিত্র। তাতে স্পষ্ট দেখা যায় তাসকিন আহমেদ দূর থেকে ব্যাট উঁচিয়ে ক্রিজের দিকে ফেরার চেষ্টা করছেন। ব্যাট মাটিতে রাখার আগেই উইকেট ভেঙে দিয়েছেন ফরহাদ রেজা।
পরের দুই বলে ছক্কা-চার হাঁকিয়ে বাঁচা-মরার ম্যাচে আবাহনীকে উদ্ধার করেন মোসাদ্দেক হোসেনই। জয়ের খুব কাছে গিয়েও শেষ দিকের নাটকীয়তায় হার সঙ্গী হয় দোলেশ্বরের। ম্যাচ শেষে পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠানে আসেননি দোলেশ্বরের কোনো ক্রিকেটার। ম্যাচ শেষে দোলেশ্বরের এক কমকর্তা মুঠোফোনে আরেক কমকর্তাকে বলছিলেন, ‘আমরা ম্যাচ হারি নাই, হারানো হয়েছে। ’
ভেন্যু বদল হওয়ার কথা জানার পরই দোলেশ্বর কমকর্তারা আশঙ্কা করে আসছিলেন বিকেএসপিতে ম্যাচ কাভার করতে সংবাদকর্মী ও টেলিভিশন ক্যামেরা কম আসে বলে বিসিবির প্রভাবশালী পরিচালকদের ভারে ভারী আবাহনীর জন্য সেখানে এসব অন্যায় করা সহজ হবে। তাদের আশঙ্কা ও আগের একটি ম্যাচে আবাহনীর উপর আম্পায়ারদের পক্ষপাতিত্বের অভিযোগ ওঠায় বেশ কিছু সংবাদমাধ্যমের সংবাদকর্মীরা ম্যাচ কাভার করতে বিকেএসপিতে উপস্থিত হন। এবার তাদের চোখের সামনেই ঘটলো এমন ঘটনা। মোটা দাগে এ দুটি ঘটনা ছাড়াও দোলেশ্বরের বাঁহাতি পেসার সোহাগ রেজার ফুলটস বলকে আম্পায়ার নাদির শাহ’র ‘নো বল’ ডাকাও ছিল প্রশ্নবিদ্ধ একটি সিদ্ধান্ত।
গত ৪ মে ফতুল্লায় ভিক্টোরিয়া স্পোর্টিং ক্লাবের বিপক্ষে ম্যাচও আবাহনীর প্রতি আম্পায়ারদের পক্ষপাতিত্বের অভিযোগ উঠেছিল। ওই ম্যাচে শেষের দিকে সোহরাওয়ার্দি শুভসহ আরও দুই টেলএন্ডার ব্যাটসম্যানকে এলবিডব্লুউ দেয়ার সিদ্ধান্ত ভালোভাবে নেয়নি ভিক্টোরিয়া।
বাংলাদেশ সময়: ২২৩৫ ঘণ্টা, ২৮ মে ২০১৬
এসকে/এমআর