ঢাকা: ২০০৯ সালে লাহোরে শ্রীলঙ্কা ক্রিকেট দলকে বহনকারী বাসে সন্ত্রাসী হামলার পর থেকে পাকিস্তানে আন্তর্জাতিক ক্রিকেট প্রায় বন্ধ হয়ে আছে। সাত বছর ধরে দেশের মাটিতে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটের স্বাদ থেকে তারা প্রায় বঞ্চিত।
বিদেশি ক্রিকেটারদের পাকিস্তানে ফেরাতে দেশটির ক্রিকেটের সর্বোচ্চ নিয়ন্ত্রক সংস্থা আশ্বাস দিচ্ছে নিরাপত্তার স্বার্থে থাকবে বুলেটপ্রুফ বাস। ক্রিকেটারদের রাখা হবে নতুন তৈরি ১৪টি কক্ষে। এমনকি পাকিস্তান সুপার লিগের (পিএসএল) ম্যাচ খেলতে গেলে বিদেশি ক্রিকেটাররা পাবেন মোটা অঙ্কের অর্থ। তাতে পাকিস্তানের মাটিতে খেলতে বেশ কিছু বিদেশি ক্রিকেটার নাকি রাজিও হয়েছেন!
২০০৯ সালের ওই ঘটনায় লঙ্কান ছয় ক্রিকেটার আহত হন। এছাড়া, ছয়জন নিরাপত্তা রক্ষীসহ দুইজন বেসামরিক নাগরিককে হত্যা করে সন্ত্রাসীরা। ২০০৯ সালের পর থেকে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে পাকিস্তানের ‘হোম’ ম্যাচগুলো অনুষ্ঠিত হয় সংযুক্ত আরব আমিরাতে। তবে, নিজেদের মাটিতে আবারো ক্রিকেটকে ফেরাতে যেন উঠেপড়ে লেগেছে পিসিবি। দেশটির জমজমাট ঘরোয়া ক্রিকেট লিগের (পিএসএল) প্রথম আসর আরব আমিরাতে অনুষ্ঠিত হলেও কমপক্ষে দ্বিতীয় আসরের ফাইনালের ম্যাচটি লাহোরে আয়োজন করতে চাইছে দেশটির ক্রিকেট বোর্ড (পিসিবি)।
এমন পরিস্থিতিতে পিসিবি বিদেশি ক্রিকেটারদের নিরাপত্তার কথা মাথায় রেখে চারটি বুলেটপ্রুফ বাস কিনেছে। লক্ষ্য একটাই হলেও, পাকিস্তান সুপার লিগের (পিএসএল) চেয়ারম্যান নাজাম শেঠি জানালেন, বিদেশি ক্রিকেটারদের নিয়ে পিএসএলের দ্বিতীয় আসরের ফাইনালটি দেশের মাটিতে করতে চাইছেন।
পিএসএলের দ্বিতীয় আসরের খেলা অনুষ্ঠিত হবে আগামী বছরের ফেব্রুয়ারিতে। আসন্ন সেই আসরের ফাইনালটি লাহোরে অনুষ্ঠিত হবে বলে জানান নাজাম শেঠি। তিনি আরও জানান, সব সময় বিদেশি ক্রিকেটারদের এজেন্টদের সঙ্গে যোগাযোগ রাখছি। অনেকেই পাকিস্তানে আসতে রাজি হয়েছেন। আপাতত আমি তাদের নাম বলতে চাইছি না। তবে, এটুকু নিশ্চিত যে আমাদের নিরাপত্তার কথা জেনেই তারা রাজি হয়েছেন।
২০০৯ সালের মার্চে লাহোরে শ্রীলঙ্কা দলের বাসে সন্ত্রাসী হামলার ঘটনার পর গত বছর মে মাসে জিম্বাবুয়ে ক্রিকেট দল এবং বাংলাদেশ নারী ক্রিকেট দল পাকিস্তান সফরে গিয়েছিল। এছাড়া গত সাত বছরে আর কোনো দল পাকিস্তানে যেতে রাজি হয়নি।
গত আসরে বিশ্বসেরা অলরাউন্ডার সাকিব আল হাসানের সঙ্গে পিএসএলের আসরে খেলেছিলেন টাইগারদের ওপেনার তামিম ইকবাল এবং টেস্ট দলপতি মুশফিকুর রহিম। তবে, প্রথম আসরে সাকিব-তামিম-মুশফিকরা খেলেছিলেন সংযুক্ত আরব আমিরাতের মাটিতে।
চলতি বছরের অক্টোবরে সংযুক্ত আরব আমিরাতে খেলোয়াড়দের ড্রাফট অনুষ্ঠিত হবে বলেও জানান শেঠি। বিদেশি ক্রিকেটারদের নিরাপত্তা ভীতি দূর করে দ্বিতীয় আসরটি আরও বড় আয়োজনের মধ্যদিয়ে করার চেষ্টা হবে বলে জানান তিনি।
তিনি যোগ করেন, বিদেশি ক্রিকেটারদের পাকিস্তান ভীতি দূর করতে আমাদের দেশে ক্রিকেট আয়োজন করা জরুরি। ক্রিকেটকে ছড়িয়ে দিতে আমরা লাহোরের গাদ্দাফি স্টেডিয়ামে ফাইনালের আয়োজন করতে চাচ্ছি। কেননা দ্বিতীয় আসরে জন্য উত্তেজনার মাত্রা ইতোমধ্যে অনেক গুনে বেড়ে গিয়েছে। লাহোরে ফাইনাল খেলতে আসা বিদেশি ক্রিকেটারদের জন্য অতিরিক্ত বেতন দেওয়ার জন্য কথা চলছে। ফাইনালে খেলতে আসা বিদেশিদের জন্য ন্যাশনাল ক্রিকেট একাডেমিতে ১৪টি নতুন কক্ষ তৈরি করা হচ্ছে।
গত বছরের আসরটিতে ১৩৮ জন পাকিস্তানিসহ মোট ৩১০ জন ক্রিকেটারকে পাঁচটি ক্যাটাগরিতে ভাগ করে খেলোয়াড়দের ড্রাফটে উঠানো হয়। ক্যাটাগরিগুলো হলো প্লাটিনাম, ডায়মন্ড, গোল্ড, সিলভার ও ইমারজিং। যেখানে ক্রিস গেইল, কেভিন পিটারসেন, শেন ওয়াটসন ও ডোয়েন ব্রাভোদের মতো তারকা ছিলেন। এবারে যোগ হচ্ছেন ইংল্যান্ডের ইয়ন মর্গান আর নিউজিল্যান্ডের ব্রেন্ডন ম্যাককালামের মতো তারকারা। গতবার সাকিব আর মুশফিক খেলেন একই দল করাচি কিংসের হয়ে। অন্যদিকে তামিম ইকবাল খেলেছিলেন পেশোয়ার জালমির হয়ে।
বাংলাদেশ সময়: ১৪২০ ঘণ্টা, ২১ জুলাই ২০১৬
এমআরপি