চট্টগ্রাম থেকে ফিরে: সব কিছু ঠিক থাকলে অক্টোবর থেকে শুরু হচ্ছে বাংলাদেশ ও ইংল্যান্ডের মধ্যকার দুই ম্যাচ সিরিজের টেস্ট ও তিন ম্যাচ সিরিজের ওয়ানডে। দেশের মাটিতে প্রায় ১০ মাস ওয়ানডে ও ১৪ মাস টেস্ট অনুষ্ঠিত না হওয়ায় আসন্ন এই সিরিজটি বাংলাদেশের জন্য বেশ গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে।
ইংলিশদের বিপক্ষে হাইভোল্টেজ এই সিরিজে সফরকারীদের চেয়ে স্বাগতিক বাংলাদেশকেই ফেভারিট মনে করছেন বাংলাদেশ জাতীয় ক্রিকেট দলের সাবেক ওপেনিং ব্যাটসম্যান, বর্তমান হাই-পারফরমেন্স কোচ ও চট্টগ্রাম বিভাগীয় প্রধান কোচ নুরুল আবেদিন নোবেল।
নোবেল জানান, ‘বাংলাদেশ দল এখন সম্পূর্ণ অন্যরকম। টেস্টের কথাই বলি। পাকিস্তানের সঙ্গে আমরা ভীষণ দাপট দেখিয়ে সিরিজ ড্র করলাম। দক্ষিণ আফ্রিকার অবস্থাও খারাপ করে দিয়েছি। আমাদের এই উপমাহাদেশে যখন ইংল্যান্ড আসবে ফেভারিট আমরাই থাকবো। তাদের ওখানে তারা যাই করুক, আমাদের ছেলেদের যে পারফরমেন্স ও আত্মবিশ্বাস তাতে আমরাই কিন্তু আপার হ্যান্ডে। ’
২০১৫ সালে অস্ট্রেলিয়া-নিউজিল্যান্ড বিশ্বকাপ থেকে যে বাংলাদেশকে আমরা দেখছি ক্রিকেটের আন্তর্জাতিক অঙ্গনে সে এক অন্য বাংলাদেশ। বিশ্বকাপের ওই আসরে গ্রুপ পর্বের খেলায় আফগানিস্তান, স্কটল্যান্ড ও ইংল্যান্ডকে হারিয়ে বিশ্বকাপে প্রথমবারের মতো কোয়ার্টার ফাইনালে জায়গা করে নিয়ে পুরো ক্রিকেট বিশ্বকে তাক লাগিয়ে দিয়েছিলেন মাশরাফি-মুশফিকরা।
বিশ্বকাপ থেকে ফিরেই এপ্রিলে দেশের মাটিতে প্রথমবারের মতো পাকিস্তানকে ধবল ধোলাইয়ের লজ্জা দেয়। শুধু ওয়ানডেই নয়, টেস্টেও শক্তিশালী দেশটির বিপক্ষে প্রথমবারের মতো সিরিজ ড্র’র স্বাদ নেয় লাল-সবুজের দল। পাকিস্তানের পর জুনে ভারতের বিপক্ষে পুরো সিরিজেই সফরকারীদের উপর চোখ রাঙ্গানি অব্যাহত রেখে প্রথমবারের মতো ২-১ এ ওয়ানডে সিরিজ নিজেদের করে নেয় এশিয়ার উদীয়মান পরাশক্তি বাংলাদেশ। তবে বৃষ্টি ফতুল্লায় বাধা দেওয়ায় সিরিজের একমাত্র টেস্টটি ড্র হয়।
জুলাইয়েও একই ধারাবাহিকতা অব্যাহত রেখে ক্রিকেটে সব সময়ের শক্তিশালী দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষেও প্রথমবারের মতো ২-১ এ ওয়ানডে সিরিজ জেতে স্বাগতিক বাংলাদেশ। আর দুই ম্যাচ সিরিজের প্রথম টেস্টে চট্টগ্রাম জহুর আহমেদ চৌধুরী স্টেডিয়ামে ষষ্ঠ উইকেটে সাকিব-লিটনের ৮২ রানের জুটিতে প্রথম ইনিংসে ৭৮ রানের লিড নিয়ে প্রোটিয়াদের কপালে চিন্তার ভাঁজ ফেলে দিয়েছিল স্বাগতিক বাংলাদেশ। বৃষ্টি সেখানে অনাহুত অতিথি হয়ে না এলে ওই টেস্ট দিয়েই হয়তো লেখা হতো বাংলাদেশের আরেক সাফল্যের ইতিহাস। চট্টগ্রামের মতো ঢাকায়ও সিরিজের দ্বিতীয় টেস্টটি বৃষ্টিতে ভেসে গেলে দুটি টেস্টই ড্র হয়।
পুরো বছর দলটির এমন দাপুটে পারফরমেন্সের সেই ধারাবাহিকতা অব্যাহত রেখে সদ্য সমাপ্ত আইসিসি টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপেও বাছাইপর্ব বাধা উতরে শেষ দশে জায়গা করে নেয় টিম বাংলাদেশ। তবে, তার আগেই এশিয়া কাপের ফাইনালে উঠেছিল টাইগাররা।
টি-টোয়েন্টিতে অনভ্যস্ত হওয়ায় শেষ দশে ব্যাটে-বলে সেভাবে জ্বলে উঠতে পারেনি টাইগাররা। তারপরেও বেঙ্গালুরুর চিন্বাস্বামী স্টেডিয়ামে স্বাগতিক ভারত ও অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে হাথুরুসিংহের শিষ্যরা যেভাবে হুঙ্কার দিয়েছিল তাতে পুরো ক্রিকেট বিশ্ব যে প্রবলভাবে কেঁপে উঠেছিল সে কথা বলার আর অপেক্ষা থাকছে কোথায়?
সংগত কারণেই মাশরাফি, সাকিবরা তাদের সেই পরাক্রমশালী ধারাবাহিকতা ইংল্যান্ডের বিপক্ষে ধরে রাখতে পারলে আপার হ্যান্ডে স্বাগতিক বাংলাদেশই থাকবে।
তবে শুধু ইংল্যান্ডই নয়, নোবেল মনে করছেন বাংলাদেশের নাকি এখন বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন হওয়া সময়ের ব্যাপার মাত্র, ‘আমারতো মনে হয় যে কোনো সময়ই বাংলাদেশ বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন হবে। আমরা এমনই এক দল যারা যে কোনো ম্যাচে যে কোনো কিছু করে বসতে পারি। হেরেই চলছি এমন দিন পার হয়ে গেছে। এক বা দুটি বছর খারাপ করার পর আমরা আবার ফিরেছি। আমাদের দল সামনেও এই ধারাবাহিকতা অব্যাহত রাখবে বলে আমি বিশ্বাস করি। ’
বাংলাদেশ সময়: ১৭২২ ঘণ্টা, ৭ আগস্ট ২০১৬
এইচএল/এমআরপি