ঢাকা: দৃষ্টিহীন চোখের জলই এখন তার সবচেয়ে বড় সম্বল। নাম তার ভালাজি দামো।
আজন্ম দৃষ্টিহীন ভালাজির সবচেয়ে বড় স্বপ্ন ছিল দেশের জার্সি গায়ে নামবেন বিশ্বকাপের ময়দানে। সে স্বপ্ন পূরণ হয়েছিল ১৯৯৮ সালে। সে বার ‘ব্লাইন্ড ক্রিকেট ওয়ার্ল্ডকাপে ভারতকে সেমিফাইনালে তুলেছিলেন অলরাউন্ডার ভালাজি। সেমিফাইনালে দক্ষিণ আফ্রিকার কাছে হারের মুখ দেখলেও ভালাজির রেকর্ড ছিল মনে রাখার মতো।
জাতীয় দলের হয়ে ১২৫টি ম্যাচ খেলে ৩,১২৫ রান করেছিলেন ভালাজি। উইকেটের সংখ্যা ১৫০। এখন পর্যন্ত ভারতের সর্বোচ্চ উইকেট তারই দখলে। সেবার হয়েছিলেন ‘প্লেয়ার অব দ্য টুর্নামেন্ট’। দেশকে এমন উচ্চতায় নিয়ে যাওয়ায় গোটা দলকে শুভেচ্ছা জানিয়েছিলেন ততকালীন ভারতীয় রাষ্ট্রপতি কে আর নারায়ন।
তার পরের জীবনটা এভাবে বদলে যাবে, স্বপ্নেও ভাবেননি ভালাজি। ভেবেছিলেন বিশ্বকাপ খেলার পর একটা চাকরি জুটবে। কিন্তু সে আশা পূরণ হয়নি। প্রতিবন্ধী কোটাও কাজে আসেনি। গুজরাট সরকার যা দিয়েছিল তা বহু বছর আগেই শেষ হয়ে গিয়েছে জীবন নির্বাহে। এখন তিনি মাঠে গরু চরিয়ে বেড়ান। কখনও একটু আধটু চাষাবাদ করেন। সংসার চালাতে তার স্ত্রীকেও হাত লাগাতে হয় চাষের কাজে। স্ত্রী ও এক সন্তানকে নিয়ে এক কামরার অভাবের সংসারে তাও নুন আনতে পান্তা ফুরিয়ে যায়!
বর্তমানে ৩৮ বছর বয়সী সাবেক এ ক্রিকেটার একটা সময় না দেখে একের পর এক বল সরাসরি উইকেটে লাগাতে পারতেন । আজ তার হাত কাঁপে। মাঝে মাঝে স্থানীয় ‘ব্লাইন্ড স্কুল’এ ছাত্রদের ক্রিকেট শিখিয়ে আসেন। পুরো পরিবারের মাসিক আয় খুব বেশি হলে তিন হাজার টাকা। কিন্তু ১৮ বছর আগে ‘প্লেয়ার অব দ্য টুর্নামেন্ট’ হয়ে জিতেছিলেন ৫ হাজার টাকা। আজ সেই টাকাটাও রোজগার করতে পারেন না।
ভারতীয় গণমাধ্যমের এক সাক্ষাতকারে ভালাজি বলেন, ‘বিশ্বকাপের সময় আমাদের দলের প্লেয়াররা আমাকে শচীন টেন্ডুলকার বলে ডাকত। ’ ন্যাশনাল অ্যাসোসিয়েশন ফর ব্লাইন্ড এর সহ-সভাপতি ভাস্কর মেহতা জানান, ‘ভারতীয় ব্লাইন্ড দলে এ রকম প্রভিভাবান প্লেয়ার আর আসেনি। এটা খুব দুঃখজনক হলেও সত্যি প্রতিবন্ধী প্লেয়াররা স্বীকৃতি পায় না। ’
বাংলাদেশ সময়: ১৬৪৮ ঘণ্টা, ১৯ সেপ্টেম্বর, ২০১৬
এমএমএস