মিরপুর থেকে: শততম ওয়ানডে জয়ের মাইলফলক স্পর্শের ম্যাচ হিসেবে সবাই ধরে নিয়েছিলেন সিরিজের দ্বিতীয় ওয়ানডেকে। ঘরের মাঠে টানা ছয়টি ওয়ানডে সিরিজ জয়ের আনন্দের সঙ্গে ১০০টি ওয়ানডে জয়ের কীর্তি দেখার জন্যই শের-ই-বাংলা স্টেডিয়ামে দশর্ক উপস্থিতি ছাড়িয়ে গিয়েছিলো প্রথম ওয়ানডেকে।
এমনই চাঞ্চল্য নিয়ে শুরু হওয়া ম্যাচের শেষটা বিষাদে মাখা। শেষ অবধি জয় হয়েছে আফগানদেরই। ম্যাচের ২ বল হাতে রেখে দুই উইকেটের জয় তুলে সিরিজ সমতায় (১-১) এনেছে তারা। আগামী শনিবার (০১ অক্টোবর) মিরপুরে হবে শিরোপা নির্ধারণী ম্যাচ।
আফগানদের ২০৯ রানের ছোট টার্গেট দিয়েও টাইগাদের বোলারদের দারুণ বোলিংয়ে ম্যাচে ফিরেছিল বাংলাদেশ। আফগানরা জয় থেকে যখন ১৩ রান দূরে তখন সুযোগ এসেছিল অষ্টম উইকেট ফেলার। ১৯ রানে অপরাজিত নজিবুল্লাহ জাদরান ১৯ রানে জীবন পান মুশফিকুর রহিমের স্টাম্পিং মিসে। পরে ওই ব্যাটসম্যান যখন ফেরেন জয় থেকে মাত্র ২ রান দূরে তখন আফগানরা।
ওই ২ রান নিতে তেমন বেগ পেতে হয়নি সফরকারীদের। মিরওয়াইস আশরাফ ৯ ও দৌলত জাদরান ৪ রানে অপরাজিত থেকে ১ বল বাকি রেখে দুই উইকেটের তুলে নেন। তাসকিনের করা শেষ ওভারের পঞ্চম বলে জাদরানের বাউন্ডারিতেই লেখা হয় বাংলাদেশের পরাজয়।
২০৯ রানের ছোট টার্গেটে ব্যাটিংয়ে নামা আফগানদের জয়ের কাজটা সহজ করেন অধিনায়ক আজগার স্তানিকজাই ও মোহাম্মদন নবী। এ দু’জন চতুর্থ উইকেট জুটিতে যোগ করেন ১০৭ রান। ৪৯ রান কিরে নবী বিদায় নিলে ভাঙে জয়ের ভিত গড়া জুটিটি। এর পর মাশরাফি, তাইজুল, মোসাদ্দেক, সাকিবরা নিয়ন্ত্রিত বোলিংয়ে জয়ের সফরকারীদের জয়ের পথ কঠিন হয়ে যায়।
ছোট পুঁজি নিয়েও শেষ পর্যন্ত লড়াই অবশ্য হারের আক্ষেপ কমিয়েছে। চার উইকেট নিয়ে আবারও নিজেকে প্রমাণ করেছেন সাকিব আল হাসান। প্রথম বোলার হিসেবে মিরপুরে ১০০ উইকেট নেওয়ার রেকর্ড গড়েন সাকিব। মোসাদ্দেক হোসেন সৈকতের ‘কিপটে’ বোলিংও নজর কেড়েছে সবার। ১০ ওভারে মাত্র ৩০ রান দিয়ে দুই উইকেট নিয়েছেন এ ম্যাচে অভিষেক হওয়া মোসাদ্দেক। ১০ ওভারে ৩১ রান দিয়ে ১ উইকেট নেওয়া মাশরাফিও করেছেন দারুণ বোলিং।
প্রথম ওয়ানডেতে বাংলাদেশের স্কোরবার্ডে ২৬৫ রান দেখেও সন্তুষ্ট হওয়া যাচ্ছিলো না। শেষ পর্যন্ত ওই ম্যাচে বাংলাদেশ ৭ রানে জিতে সিরিজে লিড (১-০) নিলেও ব্যাটিং, বোলিং, ফিল্ডিং-সব ডিপাটমেন্টই ভাবাচ্ছিল বাংলাদেশকে। আর সেখানে আফগানদের ২০৯ রানের টার্গেট তো অনেক ছোট।
এ পুঁজি নিয়েই অবশ্য লড়াই জমিয়ে তুলেছিল বাংলাদেশের বোলাররা। নিজের দ্বিতীয় ওভারে জোড়া উইকেট তুলে নিয়ে ম্যাচ জয়ের দারুণ আশা জাগান সাকিব। আফগানদের সংগ্রহ তখন মাত্র ১৪ রান।
অভিষেক ম্যাচে প্রথম বলেই উইকেট নিয়ে মোসাদ্দেক হোসেন সৈকত ভাঙেন ভয়ঙ্কর হয়ে উঠতে থাকা ৪৫ রানের তৃতীয় উইকেট জুটিটি। আফগানদের ৬৩ রানের মাথায় সাকিবের তৃতীয় আঘাতে পড়ে আফগানদের চতুর্থ উইকেট। ৩৫ বলে ৪টি চার ও ২টি ছক্কায় গড়া ৩৫ রানের ইনিংস খেলে তাসকিনের হাতে ক্যাচ দিয়ে ফেরার পর বাংলাদেশের কাছেই ছিল ম্যাচটি। পরের গল্পটা টাইগারদের দারুণ বোলিং আর আফগানদের ধৈর্যশীল ব্যাটিংয়ের ম্যাচে জয় হয় আফগানদেরই। এর আগে ২০১৪ সালের এশিয়া কাপে ফতুল্লায় বাংলাদেশকে প্রথমবার হারায় তারা।
মেঘাচ্ছন্ন আবহাওয়া ব্যাটিংয়ে নামা বাংলাদেশের শুরুটা মন্দ ছিলো না। তামিম ইকবাল ও সৌম্য সরকার ওপেনিং জুটিতে যোগ করেন ৪৫ রান। মিরওয়াইশ আশরাফের বলে থাডম্যানে দৌলত জাদরানের হাতে ক্যাচ দিয়ে ফেরেন তামিম (২০)। তামিমের দেখানো পথে একই বোলারের বলে একই ফিল্ডারের হাতে ক্যাচ দেন সৌম্য (২০)। ৫০ রানে দুই উইকেট হারালেও তৃতীয় উইকেট মাহমুদউল্লাহ রিয়াদের সঙ্গে মুশফিকুর রহিম জুটি গড়ে ভালো সংগ্রহের পথেই রাখে বাংলাদেশকে। দলীয় ১১১ রানে মাহমুদউল্লাহর বিদায়ের পরই পাল্টাতে থাকে দৃশ্যপট। এর পর একে একে বিদায় নেন মুশফিকুর রহিম (৩৮) সাকিব আল হাসান (১৭), সাব্বির রহমান (৪) ও মাশরাফি বিন মর্তুজা (২)। ১১১ থেকে ১৪১ রানে পৌঁছাতে বাংলাদেশ হারায় পাঁচ উইকেট।
এ ম্যাচেই ওয়ানডে অভিষিক্ত মোসাদ্দেক হোসেন সৈকতের সঙ্গে জুটি বেধে তাইজুল ইসলাম লড়াইটা চালিয়ে যান। ১৬৫ রানে ১০ রান করা তাইজুল সাজঘরে ফেরার পরের বলেই তাসকিন ফেরেন সাজঘরে। শেষ উইকেট জুটিতে মোসাদ্দেক হোসেন ও রুবেল হোসেন মিলে ৪৩ রান যোগ করলে ২০৮ রানের পুঁজি পায় বাংলাদেশ। সর্বোচ্চ ৪৫ রান আসে অভিষিক্ত তরুণ মোসাদ্দেকের ব্যাট থেকে।
বাংলাদেশ সময়: ২৩৩৫ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ২৮, ২০১৬
এসকে/টিআই