বাংলাদেশের হয়ে একটি করে উইকেট দখল করেছেন তাসকিন আহমেদ, মেহেদি হাসান মিরাজ আর তাইজুল ইসলাম।
নিজেদের মাটিতে ঐতিহাসিক টেস্টে টস জিতে ব্যাটিংয়ের সিদ্ধান্ত নেন স্বাগতিক ভারতের অধিনায়ক বিরাট কোহলি।
হায়দ্রাবাদে সিরিজের একমাত্র টেস্ট খেলছে দু’দল। ভারতের মাটিতে এটিই বাংলাদেশের প্রথম কোনো দ্বি-পাক্ষিক সিরিজ। রাজীব গান্ধী আন্তর্জাতিক স্টেডিয়ামে ম্যাচটি অনুষ্ঠিত হচ্ছে। এ মাঠে এর আগে তিনটি টেস্ট খেলেছে ভারত। যেখানে একটি ড্রয়ের বিপরীতে দু’টিতে জিতেছে। সর্বশেষ ২০১৩ সালে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে ইনিংস ও ১৩৫ রানে জয় পায় ভারত।
ভারতের হয়ে ব্যাটিংয়ের উদ্বোধন করতে নামেন মুরালি বিজয় এবং লোকেশ রাহুল। প্রথম ওভারে বাংলাদেশের হয়ে বোলিংয়ে আসেন তাসকিন আহমেদ। আর নিজের প্রথম ওভারেই লোকেশ রাহুলকে বোল্ড করে সাজঘরে পাঠান টাইগার এই পেসার। প্রথম ওভারের চতুর্থ বলে বোল্ড হওয়ার আগে ব্যক্তিগত দুই রান করেন লোকেশ রাহুল। দলীয় ২ রানের মাথায় ভারতের প্রথম উইকেটের পতন ঘটে। এর আগে মাশরাফি তিনবার, শাহাদাত হোসেন একবার করে সাদা পোশাকের ম্যাচে প্রথম ওভারে উইকেট তুলে নিয়েছিলেন।
শুরুর ধাক্কা সামলে খেলতে থাকেন মুরালি বিজয় আর চেতশ্বর পুজারা। তবে, দলীয় ৬৮ রানের মাথায় সহজ রান আউটের সুযোগ নষ্ট করেন মেহেদি হাসান মিরাজ। রান নিতে গিয়ে মুরালি বিজয় আর চেতশ্বর পুজারার ভুল বোঝাবুঝিতে একপ্রান্তে ছিলেন দুই ব্যাটসম্যান। ফিল্ডারের হাত ঘুরে হাতে বল জমা হলেও স্ট্যাম্প ভাঙতে পারেননি টাইগার স্পিনার মিরাজ, বেঁচে যান বিজয়।
প্রথম সেশনে টাইগারদের প্রাপ্তি ছিল এক উইকেট। লোকেশ রাহুলের উইকেট হারিয়ে প্রথম সেশনে ২৭ ওভার ব্যাট করে স্বাগতিকরা তোলে ৮৬ রান। পানি পানের বিরতির আগে ৪৪ ওভার ব্যাট করে ভারত এক উইকেট হারিয়ে তোলে ১৪৬ রান।
ভারতের প্রতিরোধ ভাঙেন মিরাজ। ইনিংসের ৫১তম ওভারে দ্বিতীয় উইকেটের দেখা পায় বাংলাদেশ। ম্যাচের আগে মিরাজকে খেলে তার বল প্রসঙ্গে মন্তব্য করবেন বলে জানিয়েছিলেন চেতশ্বর পুজারা। সেই পুজারাকে মুশফিকের গ্লাভসবন্দি করে ফেরান মিরাজ। ব্যক্তিগত ৮৩ রানে বিদায় নেন পুজারা। সাজঘরে ফেরার আগে পুজারা-বিজয় স্কোরবোর্ডে ১৭৮ রান যোগ করেন। ১৭৭ বলে ৯টি বাউন্ডারিতে পুজারা তার ইনিংসটি সাজান। বিদায় নেওয়ার আগে পুজারা ভেঙেছেন ভারতীয় ক্রিকেটের ৫০ বছর পুরোনো রেকর্ড। ১৯৬৪-৬৫ মৌসুমে ২৮ ইনিংসে ১ হাজার ৬০৪ রান করেছিলেন চাঁদু বোর্দে। ২১ ইনিংসেই এত দিনের পুরোনো রেকর্ড ছাড়িয়ে যান পুজারা (১ হাজার ৬০৫ রান)। দলীয় ১৮০ রানের মাথায় দ্বিতীয় উইকেট হারায় ভারত।
দ্বিতীয় সেশন শেষে ভারতের সংগ্রহ দাঁড়ায় ৫৮ ওভারে দুই উইকেট হারিয়ে ২০৬ রান।
ভারতীয় ওপেনার মুরালি বিজয়কে দলীয় ২৩৪ রানের মাথায় নিজের প্রথম উইকেট বানান তাইজুল ইসলাম। তৃতীয় সেশনে বাংলাদেশ শিবিরে স্বস্তি এনে দেন তাইজুল ইসলাম। সেঞ্চুরিয়ান মুরালি বিজয়কে সরাসরি বোল্ড করেন বাঁহাতি স্পিনার। সুইপ করতে গিয়ে বোল্ড হন ডানহাতি মুরালি। ১৬০ বল খেলে ১২টি চার ও একটি ছক্কার সাহায্যে ১০৮ করেন তিনি। এটি তার ক্যারিয়ারে নবম সেঞ্চুরি। অধিনায়ক কোহলির সঙ্গে ৫৪ রানের পার্টনারশিপ গড়েন সেঞ্চুরিয়ান বিজয়।
এরপর জুটি গড়েন বিরাট কোহলি- আজিঙ্কে রাহানে। ছন্দে থাকা কোহলি ৭০ বলে হাফসেঞ্চুরি পূর্ণ করেন। তিন অঙ্কের ম্যাজিক ফিগারে পৌঁছাতে তার প্রয়োজন হয় ১৩০ বল। মিরাজের বলে বাউন্ডারি হাঁকিয়ে ১৬তম টেস্ট সেঞ্চুরি উদযাপন করেন কোহলি।
ভারত এর আগে বাংলাদেশের বিপক্ষে টেস্টে আটবার মুখোমুখি হলেও প্রতিটি ম্যাচই অনুষ্ঠিত হয়েছে টাইগারদের মাটিতে। তাই দু’দেশ তথা পুরো বিশ্বই এই টেস্টের দিকে নজর রাখছে। পাশাপাশি দু’দল রয়েছে দুই মেরুতে। ভারত বর্তমানে টেস্টের শীর্ষ দল। আর বাংলাদেশ রয়েছে নয় নম্বরে।
ভারতের বিপক্ষে এর আগে আট টেস্টে বাংলাদেশ কখনোই জিততে পারেনি। ছয় টেস্টে হারের বিপরীতে দুই টেস্টে ড্র করেছে টাইগাররা। যেখানে চারটি টেস্টই ছিল ইনিংসে হার। আর ড্র দুটি টেস্টই এসেছে বৃষ্টির কল্যাণে। তবে এবারের বাংলাদেশ দল খুবই প্রত্যয়ী। কারণ ক’দিন আগেই নিউজিল্যান্ডে মাটিতে তাদের সঙ্গে বুক চিতিয়ে খেলেছে মুশফিক-তামিমরা।
বাংলাদেশ একাদশ: তামিম ইকবাল, সৌম্য সরকার, মুমিনুল হক, মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ, সাকিব আল হাসান, মুশফিকুর রহিম (অধিনায়ক ও উইকেটরক্ষক), সাব্বির রহমান, মেহেদি হাসান মিরাজ, তাইজুল ইসলাম, তাসকিন আহমেদ ও কামরুল ইসলাম রাব্বি।
ভারত একাদশ: মুরালি বিজয়, লোকেশ রাহুল, চেতশ্বর পুজারা, বিরাট কোহলি (অধিনায়ক), আজিঙ্কে রাহানে, উমেস যাদব, ঋদ্ধিমান সাহা (উইকেটরক্ষক), রবিচন্দ্রন অশ্বিন, রবিন্দ্র জাদেজা, ইশান্ত শর্মা ও ভুবনেশ্বর কুমার।
বাংলাদেশ সময়: ১৭১৬ ঘণ্টা, ০৯ ফেব্রুয়ারি, ২০১৭
এমআরপি