সেই স্টোকসের সেঞ্চুরির উদযাপনের ছবি এখন টাইগার ক্রিকেট সমর্থকের ফেসবুক ওয়ালে। সেই বাটলারের একেকটি চারের মারের প্রশংসায় লাল-সবুজের বাহিনীর ক্ষ্যাপাটে সমর্থকেরা।
শুক্রবার (৯ জুন) কার্ডিফে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে মহাকাব্যিক ম্যাচে বাংলাদেশের ঐতিহাসিক জয়ের পরই টাইগার সমর্থকেরা ‘দলে দলে যোগ’ দিতে থাকেন ইংল্যান্ড সমর্থনে, অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে তাদের জয় কামনায়। ইংল্যান্ড জিতলেই যে পয়েন্ট টেবিলের তিন নম্বর জায়গা থেকে বিদায় ঘণ্টা বাজবে অস্ট্রেলিয়ার, সেমিফাইনালের দরজা খুলে যাবে পয়েন্ট টেবিলের দুইয়ে থাকা বাংলাদেশের।
ইংল্যান্ড সমর্থক হয়ে ওঠা সেই টাইগার ভক্তদের কেউ কেউ শনিবার (১০) এজবাস্টনে দু’দলের খেলা দেখতে যান বাংলাদেশের লাল-সবুজ জার্সি গায়ে আর ইংলিশদের ক্যাপ পরে। কেউ কেউ বিকেল থেকে মধ্যরাত অবধি টিভি সেটের সামনে, রেডিওতে কান পেতে বসেছিলেন। মনে মনে প্রার্থনা করছিলেন কেবল, হয় ইংল্যান্ড জেতো, অথবা বৃষ্টি ভাসিয়ে দাও পুরো দেশটাকে। ইংল্যান্ডের প্রত্যেকটি উইকেটপ্রাপ্তিতে তারা উল্লাস করছিলেন মাশরাফি-মোস্তাফিজ-সাকিব-তাসকিনদের উইকেট শিকারের আনন্দে। ইংল্যান্ডের ব্যাটসম্যানদের প্রত্যেকটি চার-ছক্কার মারে তারা হইহই করেছেন তামিম-সাকিব-মাহমুদুল্লাহদের ব্যাটে ঝড় তোলার আনন্দে। খানিক সময়ের জন্য ইংল্যান্ডের বিপদ বুকে কাঁপন ধরালেও শেষ অবধি মধ্যরাতে এই ‘বাংলাদেশি-ইংলিশ’ সমর্থকেরাই মেতেছেন বিজয়ের আনন্দে। উচ্ছ্বাসে মেতেছে পুরো বাংলাদেশ। এজবাস্টনে অস্ট্রেলিয়াকে বিদায় করে দিয়েছে ইংল্যান্ড, আর তাতে টাইগাররা উঠে গেছে স্বপ্নের সেমিফাইনালে।
এই উচ্ছ্বাসের ঢেউ দেখা যাচ্ছে ফেসবুক-টুইটারসহ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে। সরকারি কর্মকর্তা থেকে স্কুল পড়ুয়া কিশোর-কিশোরী; সবার ওয়ালজুড়ে এখন কেবল ইংল্যান্ডের জয়ের খবর, আর তাতে বাংলাদেশের স্বপ্নের সেমিতে ওঠার উচ্ছ্বাস।
লেখক রিয়াজুল আলম শাওন ফেসবুকে স্ট্যাটাস দেন, ‘বাংলাদেশ সেমিফাইনালে... জয়তু বাংলাদেশ ক্রিকেট দল। স্বপ্নটা বড় হয়ে গেল। ’
ডার্কওয়াথ লুইস (ডি/এল) পদ্ধতিতে ম্যাচের ফলাফল নির্ধারিত হওয়ার পর তরুণ ক্রীড়া বিশ্লেষক রুশাদ রাসেল স্ট্যাটাস দেন, ‘খেলা শেষ। ইয়েস!!!!! ইংল্যান্ড ৪০ রানে জিতছে। বাংলাদেশ প্রথমবারের মত চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির সেমিফাইনালে। ’
নিউজিল্যান্ডকে বাংলাদেশের হারানোর পর ‘ঈদ মোবারক’ জানানো তরুণ ফিচার লেখক মাসুদ আনসারী ইংল্যান্ডের জয়ের পর স্ট্যাটাস দেন, ‘দ্বিতীয় ঈদ মোবারক’।
ইংল্যান্ডের জয়ের খবর প্রকাশের পর বাংলানিউজের সানাজ সানা নামে এক পাঠক প্রতিবেদনের নিচে মন্তব্য করেন, ‘এই বার চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি নিয়েই দেশে আসবে টাইগার্স। দেখি কে আটকায়!’
একই ধরনের মন্তব্য করেন এসএম সাগর খান, শেফাত খান ও আফজাল হোসেনসহ বাংলানিউজের আরও বেশ কিছু পাঠক।
অবশ্য খেলা শুরু হওয়ার আগে বাংলাদেশের অনেক ক্রিকেটপ্রেমী ইংল্যান্ড সমর্থনে ওই ‘দলে দলে যোগ’দাতাদের মধ্যে থাকলেও ম্যাচ শেষ হওয়ার পর কৌতুকচ্ছলে সে ‘সমর্থন প্রত্যাহারেরও’ ঘোষণা দিতে থাকেন। অনেকে কৌতুকচ্ছলে ইংল্যান্ডকে না চেনার ভানও প্রকাশ করেন ফেসবুক স্ট্যাটাসে।
কাওসার মুক্তাদির নামে টাইগারদের এক অন্ধ সমর্থক স্ট্যাটাস দেন, ‘এখন ইংল্যান্ডকে বলতে ইচ্ছে করছে সাবেক প্রেমিকাদের মতো, হু আর ইউ? সরি আমি আপনাকে চিনি না। ব্লক। ’
এই উচ্ছ্বাসের রেশ এখন লেগেছে রোববার (১১ জুন) ওভালে অনুষ্ঠেয় দক্ষিণ আফ্রিকা ও ভারতের মধ্যকার ম্যাচ ঘিরে। ভারতীয় ক্রিকেট প্রশাসকদের একটি অংশের ‘অসততা’র শিকার হয়ে বাংলাদেশ বিগত ২০১৫ বিশ্বকাপে কোয়ার্টার ফাইনালে হেরেছে মনে করে এই ম্যাচে আফ্রিকানদেরই সমর্থনে নেমেছেন টাইগারভক্তরা।
বাংলাদেশ সময়: ০২৩০ ঘণ্টা, জুন ১১, ২০১৭
এইচএ