ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১২ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৮ নভেম্বর ২০২৪, ২৬ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

ক্রিকেট

বেহাল ফতুল্লায় থৈ থৈ পানি

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১১৫৬ ঘণ্টা, জুলাই ২৭, ২০১৭
বেহাল ফতুল্লায় থৈ থৈ পানি ছবি: সুমন শেখ / বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম

ফতুল্লা ঘুরে: যেদিকে তাকাই থৈ থৈ পানি। ১ নম্বর গেট থেকে শুরু করে ফতুল্লা খান সাহেব ওসমান আলী আউটার স্টেডিয়াম, প্লেয়ারস ও ভিআইপিদের প্রবেশ পথসহ পুরো স্টেডিয়াম চত্বরই লালরঙা দূর্গন্ধযুক্ত কোমর সমান পানিতে তলিয়ে আছে। শুকনো বলতে শুধু সংবাদমাধ্যমের প্রবেশ পথ ও ১০ নম্বর গেটটুকুই যা!

একদিন, দু’দিন নয়। দূষিত এই পানির স্থায়িত্ব মাসখানেক হওয়ায় সেখানে জন্মেছে ছোট ছোট সবুজাভ কচুরি পানা।

আছে সাপেদের আনাগোনা, আর মশাদের জটলা। রাশি রাশি প্লাস্টিকসমেত অন্যান্য আবর্জনার উপস্থিতিও চোখ এড়িয়ে গেল না। স্টেডিয়ামের ভেতর থেকে আসা রাসায়নিক পদার্থ মিশ্রিত পানির স্রোত গিয়ে জমা হচ্ছে অদূরের খালে। তাতে দূষিত হচ্ছে পরিবেশ, বসবাসের অযোগ্য হয়ে উঠেছে তৎসংলগ্ন এলাকা। অথচ স্থানীয় প্রশাসনের কেউ ভ্রুক্ষেপ করছেন না! যেন দেখার কেউ নেই।

আউটারের জলাবদ্ধতার করাল থাবায় আক্রান্ত হয়েছে মূল মাঠ। গত চারদিনের টানা বর্ষণে আউট ফিল্ডে পানি জমেছে। প্লাবিত হয়েছে মিডিয়া এন্ডের সাইডস্ক্রিন। যেহেতু মাঠের বাইরেও পানি, তাই মূল মাঠের পানি সরার কোন পথ নেই। স্থানীয়দের ভাস্যমতে, এই পানি সরতে নূন্যতম এক থেকে দেড় মাস সময় লাগবে। অথচ এখানেই কী না আগামী ২২ ও ২৩ আগস্ট আসন্ন অস্ট্রেলিয়া সিরিজের দুই দিনের একমাত্র প্রস্তুতি ম্যাচটি অনুষ্ঠিত হবে! ২০০৬ সালে গড়িয়েছে বাংলাদেশ ও অস্ট্রেলিয়ার মধ্যকার টেস্ট। ২০১৫ সালে এখানেই সিরিজের একমাত্র টেস্টে ভারতকে মোকাবেলা করেছে স্বাগতিক বাংলাদেশ। ছবি: সুমন শেখ / বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কমমাঠের কিউরেটর বেলাল অভয় দিলেন, ‘আর বৃষ্টি না হলে দু’দিনেই মাঠ শুকিয়ে যাবে। ’ তাতে কী লাভ? প্লেয়ার, ম্যাচ অফিসিয়াল, বিসিবি কর্মকর্তা কিংবা সফরকারী ক্রিকেট অস্ট্রেলিয়ার কর্মকর্তারাতো আর কোমর সমান পানি ভেঙে মাঠে আসবেন না।

মাঠের প্রশাসক, কিউরেটর, সমন্বয়ককে সংবাদ মাধ্যমের সঙ্গে কথা না বলতে বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের কড়া নিষেধাজ্ঞা। তাই এই পানির উৎস কোথায়, কেনই বা সরছে না? জানতে চাওয়া হয়েছিল স্থানীয়দের কাছে। তাদের ভাষ্যমতে, ‘নিজস্ব ড্রেনেজ ব্যবস্থাপনা না থাকায় ফতুল্লা খান সাহেব ওসমান আলী স্টেডিয়ামের পেছনের রাস্তা (নামাপাড়া) দিয়ে স্থানীয় গার্মেন্টস ও অন্যান্য শিল্প কারখানার রাসায়নিক মিশ্রিত পানি এসে এখানে জমা হচ্ছে। স্টেডিয়াম যখন করা হয় তখন আশেপাশে মানুষের বসতি ছিল খুব সামান্যই। এখন যারা এখানে বসবাস করছে তাদের অবস্থান মাঠ থেকে উঁচুতে হওয়ায় স্বাভাবিক প্রক্রিয়ায় পানি সরার কোনো পথ নেই। উল্টো তাদের ব্যবহারের পানি এসে মাঠে জমা হয়। একজন জানালেন, ‘স্টেডিয়ামের সাথে ঢাকা-নারায়নগঞ্জ সড়কে একটি কালভার্ট আছে। কিন্তু টানা বৃষ্টিতে সড়কের ওপাশের মাঠ এবং খাল টইটুম্বুর থাকায় এখানকার জমে থাকা পানি সরছে না। ’ছবি: সুমন শেখ / বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কমস্থানীয়দের অভিযোগ ‘স্থানীয় শিল্প প্রতিষ্ঠানের সত্বাধীকারীরা প্রভাবশালী হওয়ায় আমাদের কথা তারা কানে নেয় না। বেশ কয়েকবার আমরা তাদের পথ অবরুদ্ধ করেছি। কিন্তু লাভ হয়নি। ’

বাংলাদেশ ক্রিকেটের জন্য অতি গুরুত্বপূর্ণ এই সিরিজের আগে মাঠের এমন বেহাল দশা কেন? জানতে চাওয়া হয়েছিল মাঠের অভিভাবক সংস্থা জাতীয় ক্রীড়া পরিষদের সচিব অশোক কুমার বিশ্বাসের কাছে। তিনি সুর মেলালেন স্থানীয়দের সাথেই। নতুন যা বললেন, ‘ফতুল্লা স্টেডিয়ামের সমস্যাটি স্থায়ী। ’
  
তাহলে সমাধান কী? জানালেন, ‘সমস্যা সমাধানে বুয়েটের প্রকৌশলী নিয়োগ দিয়েছে বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড। সমাধানের উপায় নিয়ে ওদের একটি প্রতিবেদনের অপেক্ষায় আমরা আছি। তারা উপায় জানালে তাদের পরামর্শ মোতাবেক আমরা কার্যকরী ব্যবস্থা নেব। আমরা জানতে পেরেছি স্টেডিয়াম থেকে পানি সরতে নূন্যতম একমাস সময় লাগবে। ’ তাহলে অস্ট্রেলিয়ার সাথে প্রস্তুতি ম্যাচের ভাগ্য কী? অশোকের উত্তর, ‘বিষয়টি নিয়ে বিসিবি সম্পূর্ণ ওয়াকিবহাল আছে। তারাই তাদের প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করবে। ’

জাতীয় ক্রীড়া পরিষদের সচিবের বক্তব্যের রেশ ধরে কথা হয় বিসিবির গ্রাউন্ডস কমিটির চেয়ারম্যান হানিফ ভুঁইয়ার সাথে। জানতে চাওয়া হলো, বাংলাদেশ-অস্ট্রেলিয়া সিরিজের ভাগ্য নির্ধারণে শন ক্যারলের নেতৃত্বে এই মুহূর্তে বাংলাদেশ সফর করছে ক্রিকেট অস্ট্রেলিয়ার পাঁচ সদস্যের দল। মাঠের এই অবস্থা। দায় কার? হানিফ ভুঁইয়ার সোজা কথা, ‘দায়টা সবারই কিছু না কিছু আছে। যেমন আছে স্থানীয় প্রশাসনের। তেমনি শিল্প কারখানার মালিক ও জেলা ক্রীড়া পরিষদের। তবে অবশ্যই ক্রিকেট বোর্ডের না। আমরা চেষ্টা করেছি। ’ছবি: সুমন শেখ / বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কমতার দাবী, ‘মাঠের দায়িত্ব বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডকে দেয়া হোক, আমি মনে করি সেই চ্যালেঞ্জ নেয়ার মতো ক্ষমতা আমাদের আছে। আমরা অতীতেও দায়িত্ব নিয়েছি। কিন্তু আরেকজনের মাঠের দায়িত্ব আমরা নেব না। ভেন্যু নিয়ে আমি নিয়ে চিন্তিত না। বিকল্প হিসেবে আমরা বিকেএসপি ও মিরপুর শের-ই-বাংলা জাতীয় স্টেডিয়ামকে প্রস্তুত করছি। ’

এদিকে ফতুল্লা স্টেডিয়ামের জলাবদ্ধতা সংকটের আশু নিরসনে বৃহস্পতিবার (২৭ জুলাই) দুপুরে জাতীয় ক্রীড়া পরিষদে সভা করেছে; বুয়েটের প্রতিনিধি, বিসিবি, জাতীয় ক্রীড়া পরিষদের সংশ্লিষ্ট প্রকৌশলী, নারায়নগঞ্জ জেলা প্রশাসকের পক্ষে এডিসি জেনারেল ও ফতুল্লা জেলা থানার ওসি। জানা গেছে অস্ট্রেলিয়া সিরিজকে সামনে রেখে সভায় ফতুল্লার জলাবদ্ধতা সমস্যা সমাধানে বুয়েটকে অনুরোধ করেছে জাতীয় ক্রীড়া পরিষদের পরিকল্পনা ও উন্নয়ন। অর্থের বিষয়ে অনুরোধ জানানো হয়েছে বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডকে। যেন প্রাথমিক অর্থের যোগানটি তারাই দেয়।

বাংলাদেশ সময়: ১৭৫২ ঘণ্টা, ২৭ জুলাই ২০১৭
এইচএল/এমআরপি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।