ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১৩ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৮ নভেম্বর ২০২৪, ২৬ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

ক্রিকেট

অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে ঐতিহাসিক জয়

স্পোর্টস ডেস্ক | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৭৩৬ ঘণ্টা, আগস্ট ৩০, ২০১৭
অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে ঐতিহাসিক জয় ছবি: শোয়েব মিথুন-বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম

অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে প্রথমবারের মতো টেস্ট জয়ের ইতিহাস গড়লো বাংলাদেশ। মিরপুরে ইংল্যান্ডের পর অজি বধ করলো টাইগাররা। ঢাকা টেস্টে একদিন হাতে রেখে ২০ রানের রোমাঞ্চকর জয় দিয়ে দুই ম্যাচ সিরিজে ১-০ তে এগিয়ে গেল মুশফিকুর রহিমের দল। স্মরণীয় হয়ে থাকলো সাকিব-তামিমের ৫০তম টেস্ট।

বাংলাদেশের ছুঁড়ে দেওয়া ২৬৫ রানের টার্গেট তাড়া করতে গিয়ে ২৪৪-এ থামে সফরকারীরা (৭০.৫ ওভার)। শেষ ৮৬ রানে আট উইকেটের পতন ঘটে।

জশ হ্যাজেলউডকে (০) এলবিডব্লু করে অজি ইনিংসের সমাপ্তি টানেন তাইজুল ইসলাম। সঙ্গে সঙ্গেই বাঁধভাঙা উল্লাসে মাতেন সাকিব-মুশফিক-তামিম-মিরাজ-তাইজুলরা। অজিদের শেষ ভরসা হয়ে থাকা প্যাট কামিন্স ৩৩ রানে অপরাজিত থেকে মাঠ ছাড়েন।

ছবি: শোয়েব মিথুন-বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কমদুই ইনিংসে ১০ উইকেট নিয়ে ম্যাচ জয়ের নায়ক বিশ্বসেরা অলরাউন্ডার সাকিব আল হাসান। সাকিবময় ঢাকা টেস্ট বললেও বোধ হয় ভুল হবে না। তামিম ইকবালের সঙ্গে ব্যাট হাতে প্রথম ইনিংসে তার ৮৪ রানের ইনিংসটি ম্যাচের গতিপথ বদলে দেয়।  দ্বিতীয় ইনিংসে বাকি পাঁচ উইকেটের মধ্যে তাইজুল তিনটি ও মেহেদি হাসান মিরাজ নেন দু’টি।

সাকিব-মিরাজ-তাইজুলদের স্পিন ঘূর্ণিতেই কাবু অজিদের ব্যাটিং লাইনআপ। দুই ইনিংসে ১৯টি উইকেটই (প্রথম ইনিংসে ওসমান খাজা রানআউট) স্পিনারদের দখলে। দ্বিতীয় ইনিংসে পেসার শফিউল ইসলামকে বোলিংয়েই আনেননি অধিনায়ক মুশফিকুর রহিম। মাত্র এক ওভার করেন মোস্তাফিজুর রহমান।

ছবি: শোয়েব মিথুন-বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কমমিরপুর শের-ই-বাংলা স্টেডিয়ামে গত বছরের অক্টোবরে বাংলাদেশের কাছে প্রথমবার টেস্ট ম্যাচে ধরাশায়ী হয় ইংলিশরা। ১-১ সমতায় শেষ হয় সিরিজটি। এবার অজিদের হোয়াইটওয়াশ করার রোমাঞ্চ কাজ করছে সমর্থকদের মাঝে। চট্টগ্রামে আগামী ৪ সেপ্টেম্বর (সোমবার) দুই ম্যাচ সিরিজের দ্বিতীয় টেস্ট শুরু হবে।

দীর্ঘ ১১ বছর পর টেস্ট সিরিজ খেলতে বাংলাদেশ সফরে এসেছে অস্ট্রেলিয়া। সাদা পোশাকে এ নিয়ে পাঁচবার মুখোমুখি হয়েছে দু’দল। বাংলাদেশের বর্তমান স্কোয়াডের কেউই এর আগে অজিদের বিপক্ষে টেস্ট খেলেননি। আগের চার ম্যাচেই হার মানলেও ২০০৬ সালে ফতুল্লা টেস্টে রিকি পন্টিংয়ের দলকে প্রায় হারিয়েই দিয়েছিল টাইগাররা। জিততেও জিততেও শেষ পর্যন্ত তিন উইকেটের পরাজয় বরণ করতে হয়েছিল। দীর্ঘ সময় পেরিয়ে ফতুল্লায় হাবিবুল বাশারদের সেই অাক্ষেপটা মিরপুরে ঘোঁচালেন মুশফিক-সাকিবরা।

ছবি: শোয়েব মিথুন-বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কমদ্বিতীয় সেশনের প্রথম বলেই গ্লেন ম্যাক্সওয়েলকে (৫) বোল্ড করে দুই ইনিংসেই পাঁচ উইকেটের ক্লাবে প্রবেশ করেন ম্যাচ সেরা সাকিব। অষ্টম উইকেট হারায় কোণঠাসা অস্ট্রেলিয়া। প্রতিরোধ গড়ে তোলা কামিন্স-লায়নের নবম উইকেট জুটি (২৯) ভেঙে ব্রেকথ্রু এনে দেন মিরাজ। সৌম্য সরকারের তালুবন্দি হয়ে মাঠ ছাড়েন নাথান লায়ন (১২)।

মধ্যাহ্ন বিরতির আগে চতুর্থ দিনের প্রথম সেশনেই পাঁচ উইকেট হারিয়ে ম্যাচ থেকে অনেকটাই ছিটকে যায় অজিরা। বুধবার (৩০ আগস্ট) স্মিথ-ওয়ার্নার জুটি (১৩০) ভেঙে প্রথম ব্রেকথ্রু এনে দেন সাকিব। ডেভিড ওয়ার্নারকে (১১২) এলডিব্লুর ফাঁদে ফেলে স্বস্তি ফেরান বাংলাদেশ শিবিরে। অজিদের ‍রান তখন ১৫৮। ওয়ার্নারের বিদায়ের পরই ভেঙে পড়ে অজিদের ব্যাটিং লাইনআপ।  সাকিবের ঘূর্ণিতে স্টিভেন স্মিথও (৩৭) বেশিক্ষণ টিকতে পারেননি। মুশফিকুর রহিমের গ্লাভসে ধরা পড়েন অজি অধিনায়ক।

ছবি: শোয়েব মিথুন-বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কমপিটার হ্যান্ডসকম্বকে (১৫) ফিরিয়ে পঞ্চম উইকেটের পতন ঘটান তাইজুল ইসলাম। স্লিপে প্রথম চান্সে ক্যাচ মিস করলেও দ্বিতীয় প্রচেষ্টায় শূন্যে থাকা বল তালুবন্দি করে সতীর্থ উদযাপনের মধ্যমণি বনে যান সৌম্য। এরপর অজি ব্যাটিং লাইনআপে আবারো সাকিবের আঘাত। এলবিডব্লু হয়ে তার চতুর্থ শিকারে পরিণত হন ম্যাথু ওয়েড (৪)। তাইজুলকে ফিরতি ক্যাচ দিয়ে প্যাভিলিয়নের পথ ধরেন অ্যাশ্টন অ্যাগার (২)।

এর আগে দুই উইকেটে ১০২ রান নিয়ে ঢাকা টেস্টের তৃতীয় দিনের খেলা শেষ করে সফরকারীরা। নতুন জীবন পেয়ে উইকেটে থিতু হয়ে ম্যাচের নিয়ন্ত্রণ নেন ওয়ার্নার ও অধিনায়ক স্মিথ। ২৮ রানে দুই উইকেট হারানোর ধাক্কা সামলে ৮১ রানের অবিচ্ছিন্ন জুটিতে মাঠ ছাড়েন দু’জন। ওয়ার্নার ৭৫ ও স্মিথ ২৫ রানে অপরাজিত থাকেন।

ছবি: শোয়েব মিথুন-বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কমঅজিদের দ্বিতীয় ইনিংসে দলীয় ২৭ রানের মাথায় আগের ইনিংসের সর্বোচ্চ রান (৪৫) সংগ্রাহক ওপেনার ম্যাট রেনশকে (৫) এলবিডব্লুর ফাঁদে ফেলেন মিরাজ। ১ রান যোগ হতেই উসমান খাজাকে ‍তাইজুল ইসলামের ক্যাচে পরিণত করেন সাকিব।

এর আগে নিজেদের দ্বিতীয় ইনিংসে ২২১ রানে অলআউট হয় স্বাগতিকরা। দুই ইনিংসেই (৭১ ও ৭৮) সেঞ্চুরি বঞ্চিত হন তামিম ইকবাল। প্রথম ইনিংসে ৪৩ রানের লিড থাকায় অজিদের সামনে টার্গেট দাঁড়ায় ২৬৫। তামিম ও সাকিবের (৮৪) ব্যাটে ভর করে প্রথম ইনিংসে বাংলাদেশের ২৬০ রানের জবাবে তারা ২১৭ রানে গুটিয়ে যায়। ব্যাট হাতে আলো ছড়ানো সাকিব একাই তুলে নেন পাঁচটি উইকেট।

বাংলাদেশ সময়: ১৩৩৫ ঘণ্টা, ৩০ আগস্ট, ২০১৭
এমআরএম

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।