ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১৩ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৮ নভেম্বর ২০২৪, ২৬ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

ক্রিকেট

এক ক্যাচেই ম্যাচের নিয়ন্ত্রণ হাতছাড়া

স্পোর্টস ডেস্ক | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১১১৪ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ৫, ২০১৭
এক ক্যাচেই ম্যাচের নিয়ন্ত্রণ হাতছাড়া ছবি: উজ্জ্বল ধর-বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম

চট্টগ্রাম টেস্টের নিয়ন্ত্রণ চলে যাচ্ছে অস্ট্রেলিয়ার হাতে! ঘুরে দাঁড়ানোর সুযোগ আসলেও ব্যর্থতার মাশুল গুনতে হচ্ছে। প্রথম ইনিংসে বাংলাদেশের ৩০৫ রানের জবাবে আট উইকেট হাতে রেখে ৮০ রানে পিছিয়ে থেকে দ্বিতীয় দিন শেষ করেছে অজিরা। ১২৭ রানের অবিচ্ছিন্ন জুটিতে মাঠ ছাড়েন ডেভিড ওয়ার্নার ও পিটার হ্যান্ডসকম্ব।

দু’বার জীবন পেয়ে ব্যাক-টু-ব্যাক সেঞ্চুরির পথে ওয়ার্নার। ৮৮ রানে অপরাজিত অজি ওপেনার।

তাকে যোগ্য সঙ্গই দিয়েছেন হ্যান্ডসকম্ব (৬৯ অপ.)। দু’জনের ব্যাটে ভর করে দলীয় স্কোর দুই উইকেটে ২২৫। অথচ দৃশ্যপটটা অন্যরকমও হতে পারতো।

ইনফর্ম ওয়ার্নারকে ফেরানোর সুবর্ণ সুযোগ হাতছাড়া করেন মুমিনুল হক। ৩৯তম ওভারে তাইজুল ইসলামের বলে লেগশর্টে ক্যাচ তালুবন্দী করতে পারেননি। স্কোর তখন ১৩১। তৃতীয় উইকেট জুটি ৩৩ রানে। সেট হয়ে ব্যক্তিগত ৫২ রানে আউটের হাত থেকে বেঁচে যান ঢাকা টেস্টের দ্বিতীয় ইনিংসের সেঞ্চুরিয়ান।

ব্যক্তিগত ৭৩ রানের মাথায় আবারো ভাগ্যের সহায়তা পান ওয়ার্নার। ৫৭তম ওভারে মেহেদি হাসান মিরাজকে ডাউন দ্য উইকেটে খেলতে গিয়ে মিস করেন। সহজ স্ট্যাম্পিং কাজে লাগাতে ব্যর্থ মুশফিকুর রহিম। বলের লাইনটাই বুঝে উঠতে পারেননি। খানিকটা নিচু হয়ে আসা ডেলিভারি তার কিপিং প্যাডে গিয়ে লাগে। স্কোর তখন ২০১। পার্টনারশিপ ১০৩।

স্টিভেন স্মিথের সঙ্গে ৯৩ রানের জুটির পর হ্যান্ডসকম্বকে নিয়ে বাধার দেয়াল হয়ে দাঁড়িয়েছেন নতুন জীবন পাওয়া ওয়ার্নার। বাংলাদেশকে ম্যাচে ফিরতে হলে তৃতীয় দিনে যত দ্রুত সম্ভব ওয়ার্নার-হ্যান্ডসকম্ব জুটি ভাঙতে হবে।

স্মিথকে ফিরিয়ে নিজের প্রথম ওভারের প্রথম বলেই দলকে মূল্যবান ব্রেকথ্রু এনে দেন তাইজুল। ক্লিন বোল্ড হয়ে সাজঘরে ফেরেন অজি অধিনায়ক (৫৮)। দলীয় ৫ রানে ম্যাট রেনশকে হারানোর পর দারুণ পার্টনারশিপে দলকে পথ দেখান দু’জন। ইনিংসের ২৯তম ওভারে এসে বোলিংয়ে পরিবর্তন এনেই সাফল্যের ‍মুখ দেখেন মুশফিক।

ছবি: উজ্জ্বল ধর-বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কমস্পিনবান্ধব উইকেটে তিনশ’ ছাড়ানো স্কোর পেয়েছে টিম বাংলাদেশ। মুশফিক দ্রুত আউট না হলে তা আরও বড় হতে‍া।  জবাবে শুরুতেই ১ উইকেট হারিয়ে চাপের মুখে পড়লেও স্মিথ-ওয়ার্নার-হ্যান্ডসকম্ব দৃঢ়তায় ঘুরে দাঁড়িয়েছে সমতায় ফিরতে মরিয়া অজিরা।

প্রথম টেস্টে উইকেটশূন্য মোস্তাফিজুর রহমান ব্রেকথ্রু এনে দেন। লেগসাইড ডেলিভারি রেনশর (৪) ব্যাট ছুঁয়ে মুশফিকুর রহিমের গ্লাভসবন্দী হয়। ঝাঁপিয়ে পড়ে এক হাতে দুর্দান্ত ক্যাচ উপহার দেন টাইগার অধিনায়ক।

মঙ্গলবার (৫ সেপ্টম্বর) আগের দিনের ৬ উইকেটে ২৫৩ রান নিয়ে ব্যাটিংয়ে নামেন মুশফিকুর রহিম ও নাসির হোসেন। বাকি চার উইকেটে আসে ৫২। ভরসার প্রতীক অধিনায়ক মুশফিক দ্রুতই ফিরে যান। চাপের মুখে তার দায়িত্বশীল ইনিংসটি থামে ৬৮ রানে।

ডিফেন্স করতে গিয়ে ব্যাট-প্যাড হয়ে বল স্ট্যাম্পে আঘাত হানে। নাথান লায়নের ষষ্ঠ শিকারে পরিণত হন। সাব্বির রহমানকে (৬৬) ছাড়িয়ে আউট হয়েছেন মুশফিক। এ দু’জনের জুটিই প্রথম দিনে বাংলাদেশ শিবিরে স্বস্তি ফেরায়। নাসিসের সঙ্গে মুশফিকের পার্টনারশিপে আসে ৪৩।

মুশফিক-সাব্বিরের পর ইনিংসের তৃতীয় হাফসেঞ্চুরির কাছাকাছি এসে আক্ষেপে পুড়েন টেস্টে ১ হাজারি রানের ক্লাবে প্রবেশ করা নাসির (৪৫)। অ্যাশটন অ্যাগারের বল তার ব্যাট ছুঁয়ে ম্যাথু ওয়েডের গ্লাভসে আটকা পড়ে।

নাসিরের বিদায়ের পর ডেভিড ওয়ার্নারের সরাসরি থ্রোতে রানআউটের শিকার হন ২ রান নিতে যাওয়া মেহেদি হাসান মিরাজ (১১)। নাসির-মিরাজ অষ্টম উইকেট জুটিতে আসে ২৮। শেষদিকে দলীয় স্কোরটা ৩০০ পার করেন তাইজুল ইসলাম (৯)।

ছবি: উজ্জ্বল ধর-বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কমসবকটি উইকেট দখল করেন দুই অজি স্পিনার নাথান লায়ন ও অ্যাশটন অ্যাগার। একাই সাতটি নেন লায়ন। তাইজুলকে স্মিথের ক্যাচ বানিয়ে সমাপ্তি টানেন। বাকি দুই উইকেট অ্যাগারের।

এর আগে টস জিতে দ্বিতীয় টেস্টের প্রথম দিনে ১১৭ রানে পাঁচ উইকেট হারানোর ধাক্কা সামলে মুশফিক-সাব্বিরের জুটিতে (১০৫) ঘুরে দাঁড়ায় বাংলাদেশ। শেষ বিকেলে ছন্দে ফেরা সাব্বির দুর্ভাগ্যজনকভাবে আউট না হলে আরও ভালো অবস্থানে থাকতো দল।

সাব্বিরের দুর্দান্ত ইনিংসটি থামে ৬৬ রানে। লায়নের লেগসাইড ডেলিভারি মিস করে শরীর ও পায়ের ভারসাম্য রাখতে পারেননি। থার্ড আম্পায়ার রিপ্লেতে স্ট্যাম্পিং হয়ে আক্ষেপ নিয়েই মাঠ ছাড়েন। পূর্ণ হয় লায়নের পাঁচ উইকেট।

ঢাকা টেস্টের দুই ইনিংসেই (৭১ ও ৭৮) অর্ধশতক হাঁকানো তামিম ইকবাল ঘরের মাঠে মাত্র ৯ রান করেন। আরেক ওপেনার সৌম্য সরকার ৩৩ করে বিদায় নেন। আবারো ব্যর্থতার পরিচয় দেন ইমরুল কায়েস (৪)।

একাদশে ফেরা মুমিনুল হকের ব্যাট থেকে আসে ৩১। টপঅর্ডারের চারটিই উইকেটই দখল করেন লায়ন। দলীয় ১১৭ রানের মাথায় সাকিব আল হাসানকে (২৪) ম্যাথু ওয়েডের গ্লাভসবন্দী করেন বাঁহাতি স্পিনার অ্যাশটন অ্যাগার।

অজিদের বিপক্ষে সিরিজ জয়ে দৃঢ়প্রতিজ্ঞ স্বাগতিক শিবির। ঢাকায় অনুষ্ঠিত মিরপুর টেস্টে ২০ রানের রোমাঞ্চকর জয়ে দুই ম্যাচ টেস্ট সিরিজে ১-০ তে লিড নেয় টাইগাররা। চট্টগ্রামের জহুর আহমেদ চৌধুরী স্টেডিয়ামে আরেকটি ইতিহাস গড়ার স্বপ্ন দেখছে মুশফিকের দল। সেই লক্ষ্যে তৃতীয় দিনে ঘুরে দাঁড়ানোর বিকল্প নেই।

বাংলাদেশ সময়: ১৭১৫ ঘণ্টা, ৫ সেপ্টেম্বর, ২০১৭
এমআরএম

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।