আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে নাঈম হাসানের আবির্ভাবটা ছিল উল্কার মতোই। ২০১৮ সালে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে অভিষেক টেস্টে মাঠে নেমেই নিয়েছিলেন ৫ উইকেট।
এখন এই অফ স্পিনারকে অপেক্ষায় থাকতে হয় অন্যের 'খারাপ' সময়ের জন্য। কেননা কেউ চোটে পড়লেই যে কপাল খুলে তাঁর। চট্টগ্রামে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে আজ (১৫ মে) থেকে শুরু হওয়া প্রথম টেস্টেও এই তরুণ সুযোগ পেয়েছেন আরেক অফ স্পিনার মেহেদী হাসান মিরাজ চোটে পড়ায়।
মিরাজের চোটে পাওয়া সুযোগটা অবশ্য হেলায় হারাননি চট্টগ্রামের সন্তান। ঘরের মাঠে বহুদিন পর দেশের হয়ে খেলতে নেমেই নিজেকে চিনিয়েছেন নতুন করে। একেই হয়তো বলে সুযোগের সদ্ব্যবহার।
১৫ মাস পর দলে সুযোগ পেয়ে নাঈম বল হাতে তুলে নিয়েই শিকার করেছেন উইকেট। নিজের করা প্রথম ওভারেই সাজঘরের পথ দেখিয়েছেন বেশ দিন কিছু ধরে সাদা বলের ক্রিকেটে বাংলাদেশের অন্যতম 'শত্রু' হয়ে ওঠা লঙ্কান দলপতি দিমুথ করুনারত্নকে। সবমিলিয়ে প্রথম দিনে প্রথম সেশনে বাংলাদেশ ফেরাতে পেরেছে লঙ্কানদের দুই ব্যাটারকে। আর দুজনই নাঈমের শিকার।
রোববার (১৫ মে) শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে টেস্টে খেলতে নামার আগে ৭ ম্যাচ খেলেছেন নাঈম। ৩ ইকোনমি গড়ে নিয়েছেন ২৫ উইকেট। ছোট্ট ক্যারিয়ারে এক ইনিংসে ৫ ইউকেট নেওয়ার কৃতিত্বও রয়েছে ২ বার।
নাঈমের এমন পারফরম্যান্সে হাসি ফুটেছে বাবা মাহবুবুল আলমের মুখেও। চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের চান্দগাঁও ওয়ার্ডের সাবেক কাউন্সিলর হিসেবে মাহবুবুল আলমের এলাকায় এমনিতেই বেশ পরিচিতি আছে। তবে এখন নতুন পরিচয় তৈরি হয়েছে তাঁর। সাবেক কাউন্সিলর হিসেবে পরিচয় দেওয়ার চেয়ে তাই তো নাঈমের বাবা হিসেবে পরিচিত হতে গর্ববোধ করেন তিনি।
খেলা চলাকালীন সময়ে কথা হয় মাহবুবুল আলমের সঙ্গে। তিনি বাংলানিউজকে বলেন, 'খেলা শুরুর পর থেকে টিভির সামনে বসে আছি। নাঈম ভালো খেলছে দেখে ভালো লাগছে। আশা করছি ৫ দিন পর ম্যাচ জেতার সুংবাদ শুনতে পারব। অনেকদিন আন্তর্জাতিক ক্রিকেট খেলা হয়নি তার। সুযোগ পেয়ে কাজে লাগিয়েছে সে। '
মাহবুবুল আরও বলেন, 'ছেলে ভালো করলে আমাদেরও ভালো লাগে। এলাকায় এখন নতুন পরিচয় তৈরি হয়েছে। সবাই এখন নাঈমের বাবা হিসেবে চেনে। ছেলের পরিচয়ে পরিচিত হতে ভালো লাগে। '
পাঁচ বছর আগে টেস্টে অভিষেক হলেও এখনও রঙ্গিন পোশাক গায়ে ওঠেনি নাঈমের। এ নিয়ে কিছুটা আক্ষেপ থাকলেও বাবার চাওয়া দলে নিয়মিত খেলুক ছেলে। তিনি বলেন, 'হাতে চোট পাওয়ার কারণে বেশ কিছু দিন নাঈম দলের বাইরে ছিল। এখন নতুন করে আবার সুযোগ পেয়েছে। নিজের ভালো পারফরম্যান্স দিয়ে দলে জায়গাটা ধরে রাখবে। বাবা-মা হিসেবে আমাদের এটুকুই চাওয়া। '
২২ বছর বয়সী নাঈমের পড়ালেখা বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় প্রিমিয়ার ইউনিভার্সিটিতে। অভিষেক ম্যাচে ৫ উইকেট নেওয়া সর্বকনিষ্ঠ এ বোলার ২০১৩ সালে চট্টগ্রাম জেলা দলের হয়ে আসরে সর্বোচ্চ উইকেট নেন। কিন্তু এত ভালো পারফরম্যান্স করার পরও বিভাগীয় দলে হয়নি সুযোগ। এতেই যেন জেদ চেপে বসে তার মনে। ২০১৫ সালে জেলা দলের হয়ে একই সঙ্গে সর্বোচ্চ রান এবং উইকেট শিকার করেন তিনি। এরপরই অনূর্ধ্ব-১৮ দলে সুযোগ পান এই ক্রিকেটার। ঐ দলের হয়ে ৬ ম্যাচে ২১ উইকেট ও ১৬৯ রান করে অনূর্ধ্ব-১৯ দলে নিজের অবস্থান শক্ত করেন তিনি।
এখন নাঈমের সামনে জাতীয় দলেও নিজের অবস্থান শক্ত করার পালা।
বাংলাদেশ সময়: ১৫২৬ ঘণ্টা, মে ১৫, ২০২২
এমআর/টিসি/এআর