অপেক্ষার প্রহরগুলো ছুটছিল অনন্তের পথে। দুঃসময়ের সীমানা দড়ি কোথায়, জানা যাচ্ছিল না তার উত্তরও।
অভিমানের দুয়ার মেলে বলে ফেলেন, ‘একজন ছাড়া কেউই তো খারাপ সময়ে খোঁজ নেয়নি’। তাতে কথার পাল্টা লড়াই শুরু হয়। কিন্তু আকাঙ্ক্ষিত তিন অঙ্কটা ছুঁয়ে দেখা হয় না। কোহলি ব্যাট ধরা ছেড়ে দেন, বিরতিতে যান, খেলেন না, অবসরের গুঞ্জন ছড়ায়, মানসিক চাপের কথা স্বীকার করেন; তবুও পাওয়া হয় না সেঞ্চুরিটা।
অপেক্ষার প্রহর গোণা শেষ অবশেষে। এমন দিনে, যেদিনের ম্যাচটা স্রেফ মূল্যহীন। কিন্তু কোহলি সেটাকে রাঙিয়ে তুলেন নিজের অহমে। চোয়ালবদ্ধ সংকল্প খুঁজে পায় গন্তব্য। পাঠক, কোহলি তার ক্যারিয়ারের ৭১তম সেঞ্চুরি করেছেন; আশেপাশে এমন মাইকিং শুরু হলে অবাক হবেন না দয়া করে।
কেন? সেঞ্চুরিকে ডালভাত বানিয়ে ফেলা কোহলিকে অপেক্ষা করতে হয়েছে ৭২ ম্যাচ। তিন বছর। ১০২০ দিন। অবশেষে সেঞ্চুরি এলো এশিয়া কাপে, তার শেষ মঞ্চ ভাবা হচ্ছিল যাকে। আফগানিস্তানের বিপক্ষে। দুবাইয়ে। দল টুর্নামেন্ট থেকে বাদ পড়ে যাওয়ার পর। তাতে কীইবা যায়-আসে?
কোহলি সেঞ্চুরি করেন। ওই প্রান্তে দাঁড়িয়ে থাকা ঋষভ পন্থকে জড়িয়ে ধরেন। দাঁত বের করে হাসেন। ওই হাসির অর্থ বের করা কঠিন হয়ে যায়। সম্ভবত, ‘আমি পেরেছি’ এর অহম মিশে থাকে হাসিতে। এরপর চেইনটা বের করেন বুক থেকে। চুমু খান। কেন? জানা যায় না উত্তর। তবুও কোহলির স্নিগ্ধতাটাটুকু বোঝা যায়।
হাসির নিচে লুকিয়ে থাকা স্বস্তিও। মাঠের ভেতরে ও বাইরে লড়াই জেতার আনন্দ প্রকাশ্যে আসে। আসে গন্তব্যে পৌঁছানো পথিকের নির্মম বেদনা পাড়ি দিতে পারার তৃপ্তি। কোহলি শুধু কান্নাটুকুই বাকি রাখেন। চোখে জল নামার দৃশ্য দেখা হয় না।
সেটা তার হয়ে হয়তো পৃথিবীর কোনো এক প্রান্তে তার সমর্থকরা সেরে নেন। কোহলিও নিশ্চয়ই জানেন, এরাই তার পথচলার অনুপ্রেরণা। সংকল্প জেতার লড়াইয়ের স্পৃহা তৈরি করে তারা। কত কত পণ হয়ে যায় তার সেঞ্চুরির অপেক্ষায়। ভ্যাপসা গরমে কোহলি তাই তাদের বুকের ওপর থেকে সরিয়ে দেন এক খণ্ড বরফ। তাতেও তাদের মন খারাপ হয় না। আজ মন খারাপের দিন না। আজ উৎসব হবে। যে উৎসব কোহলিই এনে দিতে পারেন কেবল।
সেঞ্চুরি করে। হেসে। রেকর্ড গড়ে। আর? আজকের মতো অপেক্ষার প্রহরকে থমকে দিয়ে। কোহলি আপনি হাসুন। আপনার সমর্থকদের হাসান। খোদ ক্রিকেট অনুভূতি জানাতে পারলেও নিশ্চয়ই এমনই চাইতো। তাহলে আপনি কেন হাসবেন না, সেঞ্চুরি করবেন না, বলুন?
বাংলাদেশ সময় : ২১৩২, সেপ্টেম্বর ৮, ২০২২
এমএইচবি