ঢাকা, শুক্রবার, ১৪ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৯ নভেম্বর ২০২৪, ২৭ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

ক্রিকেট

লিটনকে ২০০ টাকা দেওয়ার অপেক্ষায় মন্টু দত্ত

মাহমুদুল হাসান বাপ্পি, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২০১৯ ঘণ্টা, নভেম্বর ৫, ২০২২
লিটনকে ২০০ টাকা দেওয়ার অপেক্ষায় মন্টু দত্ত

স্বপ্নের শুরু হয় কখন? লিটন দাসের গল্পদের কল্পনায় হাজির হওয়া বোধ হয় বাংলাদেশ ক্রীড়া শিক্ষা প্রতিষ্ঠান থেকেই। দিশা হারিয়ে বারবার তিনি ছুঁটে গেছেন শিকড়ে, পথ খুঁজে বেড়িয়েছেন গন্তব্যের।

সর্বশেষ টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ থেকে বাদ পড়ার পরও ফিরে গিয়েছিলেন প্রিয় শিক্ষক মন্টু দত্তের কাছে।

প্রতিবার সেঞ্চুরি করার পরই ১০০ টাকা উপহার পাওয়া স্যারের কাছে বলেছিলেন নিজের অস্বস্তি। বিকেএসপির ছাত্রদের নিয়ে মিরপুরে আসা মন্টু শোনাচ্ছিলেন ওই গল্প, ‘টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের পর দল থেকে বাদ পড়ে গেল, তখন জাতীয় লিগ খেলতো বিকেএসপিতে। আমাকে বলল, স্যার ব্যাটটা ঘুরে যাচ্ছে আর সুইংয়ে সমস্যা হচ্ছে। ’ 

ছাত্রের সমস্যার কারণ বের করেছিলেন মন্টু, বুঝিয়ে দিয়েছিলেন তাকেও। ড্রিল করিয়েছেন, ‘কাভারের উপর দিয়ে খেলা শট’ লিটন ফিরে পেয়েছিলেন আবার। এর ক’দিন বাদেই পাকিস্তানের বিপক্ষে সেঞ্চুরি করেন লিটন।

ছাত্রদের কারও সেঞ্চুরি বা পাঁচ উইকেট মানেই মন্টুর কাছ থেকে একশ টাকা পুরস্কার। শেষ দুবারেরটা অবশ্য এখনও পাওনা লিটনের, ‘ওর শেষ দুুইটা সেঞ্চুরির টাকা বাকি আছে। এর আগে যতগুলো সেঞ্চুরি করেছে, ১০০ টাকা করে পেয়েছে। সেঞ্চুরি করার পরই আমি বলেছিলাম, তোমার পাওনা নিয়ে যেও। কিন্তু ও আসার সময় পায়নি এখনো। ’

এরপরই স্মৃতি হাতড়ে মন্টু ফিরে যান বহু বছর আগে। লিটন তখন অনূর্ধ্ব-১৪ এর কোন একটি টুর্নামেন্টে খেলতে গিয়েছিলেন বরিশালে, এক টানা করেছিলেন পাঁচ সেঞ্চুরি। মন্টু বলেন এমনভাবে যেন ছবিটা এখনও স্পষ্ট তার কাছে, ‘একসঙ্গে সেবার ৬০০ টাকা পেয়েছিল লিটন। ওই প্রথম তাকে দিয়েছিলাম। এখনও আমার স্পষ্ট মনে আছে এত খুশি হয়েছিল টাকা পাওয়ার পর!’

‘স্যার আমাকে দেন...’ মন্টু দত্তের কাছে আফিফ হোসেন এমনভাবেই চেয়েছিলেন ১০০ টাকা। ক্রিকেট খেলছেন বেশ কয়েক বছর হলো, আয়ও নেহায়ত কম নয়। তবুও আফিফের কাছে ওই ১০০ টাকার মাহাত্ম্য অন্যরকম।

বাংলাদেশ ক্রীড়া শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের (বিকেএসপি) সব ছাত্রদের কাছেই তাই। ঢাকা প্রিমিয়ার লিগের ম্যাচ খেলতে গতবার যাওয়ার পর লিটন দাস-মাহমুদুল হাসান জয়দের পাওনা বুঝিয়ে দিচ্ছিলেন মন্টু। তখনই আফিফ টেনে ধরেছিলেন একটি নোট। তিনি অবশ্য পাননি পরে, মন্টু দত্তের নিয়মের ব্যতয় হয়নি।

বলেছিলেন, ‘সেঞ্চুরি করে এসো, এরপর পাবে। ’ আফিফ একরকম অভিমানের সুরেই তাকে বলেছিলেন তখন, ‘আমি যখন টাকা দেইনি- আফিফ আমাকে বলল স্যার এত পরে ব্যাটিংয়ে নেমে কীভাবে সেঞ্চুরি করবো!’ মন্টু বলেছিলেন, ‘সুযোগ আসবে কোন একদিন...’

তবুও আফিফদের আবদারের কারণ বুঝতে পারেন মন্টু দত্ত, পেছনের ভালোবাসাটুকুও, ‘তারা কখনো এটাকে টাকা হিসেবে মনে করে না। আমার স্বাক্ষর করা নোট তারা জমিয়ে রাখে স্মৃতি হিসেবে। বিকেএসপির সব ছাত্ররা এই ১০০ টাকা পাওয়ার জন্য উদগ্রীব। ’

রাত পোহালেই পাকিস্তানের বিপক্ষে মাঠে নামবেন লিটন। আবার কি সেঞ্চুরি করতে পারবেন? মন্টু দত্ত অবশ্য মন-প্রাণে চান তার পকেট থেকে আরও অনেক অনেক টাকার গন্তব্য হোক তার ছাত্রের হাত।

‘আশা করছি এরকম ১০০ কেন, আরও হাজার টাকা চলে যাক একশ, একশ করে। আমি চাই লিটন পাকিস্তানের সঙ্গে সেঞ্চুরি করুক। বাংলাদেশ পাকিস্তানের সঙ্গে ম্যাচ জিতুক এই আশা নিয়েই আছি। ’

পরীক্ষার ঝামেলায় আটকে গিয়ে বয়সভিত্তিক পর্যায়ে খেলা বিকেএসপির অনেক ছাত্রই মেডিকেল সেরে রাখতে পারেননি। তাদের নিয়েই মন্টু দত্ত বাসে চড়ে সাভার থেকে এসেছিলেন মিরপুরের বিসিবি কার্যালয়ে। পরে ছাত্রদের আবদারে তাকে যেতে হয়েছে পাশের স্পোর্টস সামগ্রী বিক্রির দোকানে।

ওখানে দাঁড়িয়েই তিনি বলছিলেন, ‘সাকিব-মুশফিকরা যেমন তারকা হয়েছে, লিটনও এমন বড় তারকা হবে বলে আমার বিশ্বাস। ’ লিটন দাস হয়তো কখনো শুনেন বা পড়েননি এমন কিছু। তবুও তিনি নিশ্চয়ই উপলব্ধি করেন স্যারের চাওয়া। শিক্ষক এমনভাবে চাইলে, বড় না হয়ে উপায় কী। লিটন ‘সবচেয়ে উজ্জ্বল তারা’ হবেন ক্রিকেটের, মন্টু দত্তের মতো এমন চাওয়া তো আর কম লোকের না!

বাংলাদেশ সময় : ২০১৭ ঘণ্টা, নভেম্বর ৫, ২০২২
এমএইচবি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।