চট্টগ্রাম: যুক্তরাষ্ট্রের ইউনিভার্সিটি অব ম্যাসাচুসেটস আমহার্স্টের বোস্টন ক্যাম্পাসে কম্পিউটার বিজ্ঞানে পড়ালেখা করতো ফটিকছড়ির ছেলে সৈয়দ ফয়সাল আরিফ। তাদের বাড়ি দাতমারা ইউনিয়নের দাতমারা বাজার এলাকায়।
জানা গেছে, ২০১৫ সালের দিকে আরিফের বাবা এস এম মজিবুল হক ও মা শাহেদা বেগম যুক্তরাষ্ট্রে বসবাস শুরু করেন।
আরিফের মামাতো ভাই মিজানুল আকবর চৌধুরী জানান, ‘আরিফ চট্টগ্রামের চান্দগাঁও আবাসিক এলাকায় রেসিডেন্সিয়াল কিন্ডারগার্টেন স্কুলে পঞ্চম শ্রেণি পর্যন্ত পড়ালেখা করেছে। চান্দগাঁও আবাসিক এলাকায় বি-ব্লকে আমরা একসাথে ছিলাম। বয়সে আমার ছোট হলেও একসাথে ঘুরেছি, খেলাধুলা করেছি। ২০১৫ সালের দিকে সে যুক্তরাষ্ট্র চলে যায়। আরিফ গান গাইতে ভালোবাসতো। চট্টগ্রাম শিল্পকলা একাডেমিতে যেতো। যুক্তরাষ্ট্রেও গান ও খেলাধুলার উপর সে কয়েকটি কোর্স করেছিল। দুই মাস আগে সে নেপাল ও দুবাই ভ্রমণ করেছে। দুই বছর আগে গ্রামের বাড়িতে এসেছিল। তাকে নিয়ে কক্সবাজারসহ চট্টগ্রামের বিভিন্ন জায়গায় ঘুরেছি’।
যুক্তরাষ্ট্রের ম্যাসাচুসেটস অঙ্গরাজ্যের কেমব্রিজে চেস্টনাট স্ট্রিটে বুধবার (৪ জানুয়ারি) বিকেলে পুলিশের গুলিতে সৈয়দ ফয়সাল আরিফ (২০) নিহত হয়। স্থানীয় সংবাদমাধ্যমের খবরে বলা হয়েছে, বেলা সোয়া ১টার দিকে কেমব্রিজের এক বাসিন্দা ৯১১ নম্বরে ফোনে করে জানান, এক ব্যক্তি একটি অ্যাপার্টমেন্টের জানালা দিয়ে লাফিয়ে পড়েছেন। তার হাতে চাপাতির মতো ধারালো অস্ত্র রয়েছে। পুলিশ গিয়ে সিডনি স্ট্রিটের একটি ভবনের পেছনে ওই ব্যক্তিকে দেখতে পায়। পরে জানা গেছে, তিনি ফয়সাল। পুলিশ যাওয়ার পর ফয়সাল অস্ত্র হাতে সেখান থেকে দৌড়ে পালানোর চেষ্টা করে। তার হাতে এক ফুট লম্বা একটি ছোরা ছিল।
খবরে আরও বলা হয়েছে, এক পুলিশ কর্মকর্তা প্রাণঘাতী নয়, এমন অস্ত্র ব্যবহার করলেও ফয়সালকে আটকাতে পারেনি। তিনি ছোরা নিয়ে পুলিশের দিকে তেড়ে আসতে থাকেন। একপর্যায়ে এক পুলিশ কর্মকর্তা গুলিবর্ষণ করেন এবং তাতে ফয়সাল বিদ্ধ হয়। ঘটনার পর ফয়সালকে উদ্ধার করে ম্যাসাচুসেটস জেনারেল হাসপাতালে নেওয়া হয়। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তার মৃত্যু হয়।
একমাত্র সন্তান হত্যার সুষ্ঠু তদন্ত ও বিচার চান পরিবার। এটিকে পুলিশি হত্যাকাণ্ড দাবি করে বিচার চান প্রবাসী বাংলাদেশিরাও। আরিফের বাবা এস এম মজিবুল হক বলেন, ‘আমার ছেলের কোনও খারাপ অভ্যাস ছিল না। আমাদের পরিবারের কেউ কখনও কোনও অপরাধে জড়ায়নি। বাংলাদেশেও আমাদের পরিবারের সুনাম রয়েছে। ছেলেকে গুলি করে হত্যার তদন্ত ও বিচার চাই।
যুক্তরাষ্ট্রের সিটি হল প্রাঙ্গণে আয়োজিত প্রতিবাদ সমাবেশে কমিউনিটির নেতারা বলেন, সংঘবদ্ধ আওয়াজ তুলতে হবে এহেন বর্বরতার বিরুদ্ধে। পুলিশের এ ধরনের আচরণে সবাই হতবাক। এখানে যদি পুলিশের গুলিতে মানুষের প্রাণ যায়, তাহলে ভাবতে হবে যুক্তরাষ্ট্রে কেউ নিরাপদ নয়।
প্রতিবাদ সমাবেশে বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব নিউ ইংল্যান্ডের প্রেসিডেন্ট পারভিন চৌধুরী, সেক্রেটারি তানভির মুরাদ, যুদ্ধাহত বীর মুক্তিযোদ্ধা ইউসুফ চৌধুরী, আরিফের চাচা সেলিম জাহাঙ্গীর প্রমুখ যোগ দেন।
বাংলাদেশ সময়: ১৫০০ ঘণ্টা, জানুয়ারি ০৭, ২০২৩
এসি/টিসি