ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ২৭ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১২ ডিসেম্বর ২০২৪, ০৯ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

চট্টগ্রাম প্রতিদিন

১৫ চাষির রঙিন ফুলকপি চাষে চমক

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১১৩৩ ঘণ্টা, জানুয়ারি ১২, ২০২৩
১৫ চাষির রঙিন ফুলকপি চাষে চমক ছবি: সংগৃহীত

চট্টগ্রাম: সাদা রঙের ফুলকপি খেতে অভ্যস্ত চট্টগ্রামের মানুষ এখন পাবেন রঙিন ফুলকপি। রঙ দেওয়া নয়, প্রাকৃতিকভাবেই  হলুদ ও বেগুনি রঙের এই ফুলকপির চাষাবাদ হচ্ছে সীতাকুণ্ড উপজেলায়।

উপজেলা কৃষি বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, ১৫ জন চাষি ১৩ শতাংশ জমিতে রঙিন ফুলকপি চাষ করেছেন। ১ হাজার ২০০টি হলুদ ও বেগুনি রঙের ফুলকপির চারা লাগানো হয়।

এসব চারায় ভালো ফলন হয়েছে। ‘পরিবেশবান্ধব কৌশলের মাধ্যমে নিরাপদ ফসল উৎপাদন’ প্রকল্পের আওতায় পরীক্ষামূলক চাষ সফল হওয়ায় চট্টগ্রাম অঞ্চলে রঙিন ফুলকপি চাষের সম্ভাবনা সৃষ্টি হয়েছে।

উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. হাবিবুল্লাহ জানান, জামালপুরের একটি কৃষি খামার থেকে অনলাইনে চারাগুলো কিনে আনা হয়। বাসে পাঠানোর কারণে গরমে কিছু চারা নষ্ট হয়েছে। প্রতিটি চারা কিনতে খরচ হয়েছে সাড়ে ৭ টাকা। চাষের জন্য চাষিদের সার সরবরাহ, সেক্সফেরোমেন ফাঁদসহ সব সহায়তা দেওয়া হয়েছে।

ফৌজদারহাট এলাকার চাষি মো. জাহাঙ্গীর আলম বলেন, দুই শতক জমিতে ২৫০টি চারা লাগিয়ে ভালো ফলন পেয়েছি। হলুদ রঙের এসব ফুলকপি বিক্রি হচ্ছে ৩৫ থেকে ৪০ টাকায়। ৭০-৮০টি সাদা ফুলকপি চাষে যে জায়গা দরকার, একই জায়গায় ১০০টি রঙিন ফুলকপির চারা লাগানো যায়। সাদা ফুলকপির পাতা আশপাশে ছড়ানো থাকে, কিন্তু রঙিন ফুলকপির পাতা থাকে লম্বালম্বি।

বাংলাদেশে ‘রঙিন’ ফুলকপির চাষ শুরু হয় ২০২১ সালে। জামালপুরের এক একর জমির ওপর প্রতিষ্ঠিত বাংলাদেশ অ্যাগ্রো কম্পোজিট ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেডে মাটি ছাড়াই কোকোফিডের মধ্যে সবজির চারা উৎপাদন করা হয়। তারা ভারত থেকে কিছু রঙিন ফুলকপির বীজ এনেছিল পরীক্ষামূলক চাষের জন্য। সেখানে রবি মৌসুমে হাজার দুয়েক চারা উৎপাদন করা হয়।  

জানা গেছে, অতিরিক্ত পরিমাণে বেটা ক্যারোটিনের কারণে ফুলকপি কমলা রঙের হয়। এই রঙের সবজিতে অন্য রঙের সবজির তুলনায় পঁচিশ গুণ বেশি ভিটামিন এ উপাদান থাকে। আবার অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট অ্যান্থোসিয়ানিন্সের উপস্থিতির কারণে ফুলকপির রঙ বেগুনি হয়। বেগুনি ফুলকপি রান্নার পর বিবর্ণ হলেও কমলা ফুলকপি বিবর্ণ হয় না। কমলা রঙের ফুলকপির মতো বেগুনি ফুলকপিতেও সাদা ফুলকপির তুলনায় অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট বেশি থাকে। বেগুনি রঙের ফুলকপি প্রদাহ উপশম, কার্ডিওভাসকুলার সমস্যা এবং ক্যান্সারের ঝুঁকি কমাতে উপকারী।

সীতাকুণ্ড উপজেলা কৃষি বিভাগের তথ্যমতে, এখানে মোট ৮০ হেক্টর জমিতে ফুলকপির চাষ হয়। চারা রোপণের ৬০-৭০ দিনের মধ্যে ফুলকপি বিক্রির উপযোগী হয়। রঙিন ফুলকপি চাষের পদ্ধতি সাদা ফুলকপির মতোই। সাদা রঙের প্রতিটি ফুলকপির বাজারমূল্য ২৫ টাকা, রঙিন ফুলকপির মূল্য ১০ টাকা বেশি। সাদা ফুলকপির বাজার ৭ কোটি ৪৪ লাখ টাকা হলে, এই জমিতে রঙিন ফুলকপি চাষ করলে মিলবে প্রায় ১২ কোটি টাকা। এতে কৃষকরা লাভবান হবেন।

এই সবজিকে উচ্চমূল্যের ফসল হিসেবে চিহ্নিত করে কৃষি কর্মকর্তারা বলছেন, সাদা ফুলকপির চাইতে কিছুটা কম সময় লাগে রঙিন ফুলকপি চাষ করতে। তারা এর বীজ চাষিদের মধ্যে ছড়িয়ে দিতে কাজ করবেন।

সীতাকুণ্ড উপজেলা উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা সুপর্ণা বড়ুয়া বলেন, রঙিন ফুলকপি চাষে রোগবালাই কম হয়। জৈব উপায়ে এই ফুলকপিতে আসা পোকামাকড় দমন করা যায়। চাষিকে বাড়তি কোনও কীটনাশক ব্যবহার করতে হয় না।

বাংলাদেশ সময়: ১১৩০ ঘণ্টা, জানুয়ারি ১২, ২০২৩ 
এসি/টিসি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।