চট্টগ্রাম: নগরে গত এক বছরে ২৫৯ জন আত্মহত্যা করেছে। যাদের ১৪২ জন পুরুষ এবং ১১৭ জন নারী।
এসব আত্মহননের পেছনে পারিবারিক জটিলতা, সম্পর্কের অবনতি, পড়ালেখা নিয়ে হতাশা, আর্থিক সংকট মূল কারণ বলে মনে করছেন সমাজ চিন্তাবিদ ও মনোবিজ্ঞানীরা।
আত্মহত্যা নিয়ে পুলিশের রিপোর্ট পর্যালোচনা করে দেখা যায়, তরুণরাই বেশি বেছে নিয়েছে আত্মহননের পথ। ১৬ থেকে ২৫ বছর বয়সী তরুণ-তরুণী আত্মহত্যা করেছে ৪৭ দশমিক ৪৮ শতাংশ। যেখানে পুরুষ ২৫ দশমিক ০৯ শতাংশ এবং নারী ২২ দশমিক ৩৯ শতাংশ।
পুলিশ জানিয়েছে, ২০২২ সালের জানুয়ারি মাস থেকে ডিসেম্বর মাস পর্যন্ত নগরের ১৬ থানা থেকে সংগৃহীত তথ্যের ভিত্তিতে প্রতিবেদনটি তৈরি করা হয়েছে। প্রতিবেদন সূত্রে জানা যায়, আত্মহত্যাকারীদের মধ্যে ১০ থেকে ১৫ বয়সী পুরুষ ৮ জন। যা মোট আত্মহত্যার ৩ দশমিক ০৮ শতাংশ। একই বয়সী নারী ১৪ জন। যা মোট আত্মহত্যার ৫ দশমিক ৪০ শতাংশ। ১৬ থেকে ২৫ বয়সী পুরুষ ৬৫ জন। যা মোট আত্মহত্যার ২৫ দশমিক ০৯ শতাংশ। একই বয়সী নারী ৫৮ জন। যা মোট আত্মহত্যার ২২ দশমিক ৩৯ শতাংশ। ২৬ থেকে ৩৫ বয়সী পুরুষ ২৬ জন। যা মোট আত্মহত্যার ১০ দশমিক ০৩ শতাংশ। একই বয়সী নারী ২৮ জন। যা মোট আত্মহত্যার ১০ দশমিক ৮১ শতাংশ। ৩৬ বছরের ঊর্ধ্বে পুরুষ ৪৩ জন। যা মোট আত্মহত্যার ১৬ দশমিক ৬০ শতাংশ। একই বয়সী নারী ১৭ জন। যা মোট আত্মহত্যার ৬ দশমিক ৫৬ শতাংশ। সর্বমোট পুরুষ-নারী ২৫৯ জনের মধ্যে পুরুষ ৫৪ দশমিক ৮ শতাংশ ও নারী ৪৫ দশমিক ১৬ শতাংশ।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, তথ্যপ্রযুক্তির এই যুগে অকারণেই ছেলে-মেয়েরা বাবা-মায়ের সঙ্গে রাগ করে আত্মহত্যার পথ বেছে নিচ্ছে। হতাশাগ্রস্ত কম বয়সী তরুণ-তরুণীরা বেশি আত্মহত্যা করছে। আত্মহত্যার প্রবণতা কমাতে পরিবারে কাউন্সেলিং করা প্রয়োজন। প্রত্যেক পরিবারে বাবা-মায়ের উচিত, তাদের সন্তানদের একটু বেশি সময় দেওয়া। সন্তান কি করছে- তার খোঁজখবর রাখা। তাহলে আত্মহত্যার প্রবণতা কমে আসবে।
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য সমাজবিজ্ঞানী ড.ইফতেখার উদ্দিন চৌধুরী বাংলানিউজকে বলেন, জীবন থেকে মুক্তি পাওয়ার প্রচেষ্টায় নিকৃষ্ট কাজ আত্মহত্যা। তরুণ-তরুণীদের মধ্যে আত্মহত্যার প্রবণতা বেশি। শিক্ষাজীবন শেষ করার পর চাকরি না পাওয়া, জীবনের প্রতি হতাশা, প্রেমে ব্যর্থতা, চরম দারিদ্র্য ও ভবিষ্যৎ নিয়ে শঙ্কাসহ নানা বিষয়কে কেন্দ্র করে আত্মহত্যার ঘটনা ঘটছে। মানসিক চাপের কারণে আত্মহত্যা বাড়ছে? এই রোগ মূলত চাওয়া-পাওয়ার পার্থক্যের কারণে সৃষ্টি হয়। আত্মহত্যা ঠেকাতে পরিবার, সমাজ ও রাষ্ট্রের একসঙ্গে কাজ করতে হবে। সবার সম্মিলিত চেষ্টাতেই আত্মহত্যার মতো জটিল সিদ্ধান্ত থেকে বাঁচিয়ে তোলা যাবে যে কাউকে।
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালযের সাবেক অধ্যাপক, মনোবিজ্ঞানী ও সাইকোথেরাপিস্ট শিব প্রসাদ ভট্টাচার্য্য বাংলানিউজকে বলেন, বিষণ্ণতা থেকেই মূলত মানুষ আত্মহত্যা করে। টেনশন, উদ্বেগ থেকে মানুষ নিজেকে নিয়ন্ত্রণ করতে পারে না। বিশেষ করে তরুণ-তরুণীদের মধ্যে আত্মহত্যার প্রবণতা সবচেয়ে বেশি। তারা ভবিষ্যতের অনিশ্চিত যাত্রা থেকে মুক্তি পেতে আত্মহত্যার পথ বেছে নিচ্ছে। আত্মহত্যার কারণগুলো যত তুচ্ছই হোক না কেন, আত্মহত্যাপ্রবণ ব্যক্তির কাছে তা অনেক বড় একটি ঘটনা। আত্মহত্যার মত ঘটনা শতভাগ প্রতিরোধযোগ্য। কোনো ছেলেমেয়ে যদি আত্মহত্যা করতে চায়, তাদের লক্ষণ দেখলেই বোঝা যায়। মেডিসিনের পাশাপাশি একটু কাউন্সেলিং করলেই তাদের এ পথ থেকে ফিরানো যায়।
বাংলাদেশ সময়: ১১৪০ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ০১, ২০২৩
এমআই/টিসি