চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়: ১১ বছর বয়সী লারাইব ফারজাল ইশমামের সঙ্গে কথা বলার জন্য আমরা এসেছি তার মা মরিয়ম লিনার কাছে। তিনি চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের (চবি) ৩৫তম ব্যাচের শিক্ষার্থী।
মায়ের সঙ্গে এসে দারুণ উচ্ছ্বসিত ইশমাম।
বাবা-মায়ের সফলতায় অনুপ্রাণিত হয়ে সন্তানরাও এখন থেকে দেখতে শুরু করেছে বড় স্বপ্ন। এই যেমন- ইশমামের স্বপ্ন বড় হয়ে কম্পিউটার ইঞ্জিনিয়ার হওয়ার। চট্টগ্রামের হালিশহর ক্যান্টনমেন্ট পাবলিক স্কুলের ক্লাস ফাইভে পড়া ইশমামকে হয়তো তার স্বপ্নের চেয়ে বড় কিছু হতেও সহযোগিতা করবে বাবা-মা।
শৈশব মানেই তো এমন নির্ভার জীবন। যে জীবন বার্ধক্যকালে দারুণ সব স্মৃতি মনে করিয়ে দেবে। তবে আশপাশে একটু চোখ বুলালেই দেখা যায় ভিন্ন চিত্র। শৈশবের জীবনটা কারও কাছে নির্ভার, আবার কেউ টানছে পরিবারের বোঝা। এমনই এক শিশু আলিফ হোসেন মশিউর। নিজের বয়সটাই তার জানা নেই। আপাত দৃষ্টিতে দেখে মনে হচ্ছে ৯-১০ বছরের বেশি নয়। বাবা আমিনুর রহমান অসুস্থ হয়ে বিছানায় পড়ে আছেন দীর্ঘদিন। মা মমতা বেগম কাজ করেন অন্যের বাসায়। আবার কখনও পরিবার চালাতে হাত পাতেন মানুষের দ্বারে। তাই মশিউরের সুযোগ নেই পড়াশোনা করার। হয়তো কখনও সেই স্বপ্ন দেখারও সুযোগ হয়নি তার।
গ্রামের বাড়ি রংপুর হলেও চট্টগ্রামের ষোলশহর রেলস্টেশনের পাশের বস্তিতে বাবা মায়ের সঙ্গে থাকে মশিউর। প্রতিদিন শাটল ট্রেনে চড়ে ক্যাম্পাসে এসে কুড়িয়ে পাওয়া প্লাস্টিকের বোতল কেজি দরে বিক্রি করে সে। সেখান থেকে দিনে আয় হয় ২০০ থেকে ৩০০ টাকা। বিশ্ববিদ্যালয়ে বড় কোনো অনুষ্ঠান থাকলে সেদিন আয়ের পরিমাণটা একটু বাড়ে। এতেই মিলে রাজ্যের সুখ।
সুবর্ণ জয়ন্তী উৎসবে বাবা-মায়ের সঙ্গে আসা অনেক উচ্ছ্বসিত শিশুর মধ্যে মশিউরদের মতো সুবিধাবঞ্চিত-অবহেলিত শিশুদের সংখ্যা একেবারে কম না। সবার সুদৃষ্টির আড়ালে তারা কাটিয়ে দিচ্ছে বছরের পর বছর। বড় বড় উৎসবে খাবার নষ্ট করার মতো মানুষের অভাব না থাকলেও এসব শিশুদের মুখে খাবার তুলে দেওয়া মানুষের ঠিকই অভাব ছিল। কথা শেষে পকেটে গুঁজে দেওয়া ৫০ টাকার একটি ছোট্ট নোট হয়তো মশিউরের আজকে দিনের পাওয়া সেরা উপহার। যারা শৈশব থেকে টানছে তাদের পরিবার।
বাংলাদেশ সময়: ১৫৩৩ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ০৪, ২০২৩
এমএ/টিসি