কক্সবাজার থেকে ফিরে: সাগরের নীল জলরাশি আর ঢেউয়ের গর্জন, সাথে হিমেল হাওয়ায় মনোমুগ্ধকর এক পরিবেশ কক্সবাজারে। নৈসর্গিক সৌন্দর্যে ভরা পৃথিবীর দীর্ঘতম সমুদ্র সৈকতে সৃষ্টিকর্তা যেন রূপসী বাংলার সব রূপ ঢেলে দিয়েছেন।
নাজিরার টেক থেকে শুরু করে শাহপরীর দ্বীপ পর্যন্ত বিস্তৃত সৈকতের বেলাভূমি। ১২০ কিলোমিটার দীর্ঘ এই সমুদ্র সৈকতে পানিতে শরীর ভেজাতে, ঢেউয়ের গর্জন শুনতে প্রতি বছর দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে ভ্রমণপিয়াসী পর্যটক কক্সবাজারে ঘুরতে আসেন।
ভ্রমণকারীরা কক্সবাজার থেকে টেকনাফ পর্যন্ত সাগরের পাড় ঘেঁষে বয়ে যাওয়া মেরিন ড্রাইভ প্রাণবন্ত হয়ে উপভোগ করেন। এই শীত মৌসুমে সাগরের লোনা জলে রৌদ্রস্নান আর সূর্যাস্তের নয়নাভিরাম দৃশ্য অবলোকন করতে জমছে ভিড়।
কক্সবাজার জেলায় রয়েছে মাতামুহুরী, বাঁকখালী, রেজু, কোহেলিয়া ও নাফ নদী। উপভোগ করা যায় মহেশখালী, কুতুবদিয়া, সোনাদিয়া দ্বীপ, শাহপরীর দ্বীপ ও সেন্টমার্টিন দ্বীপের প্রাকৃতিক পরিবেশ। দর্শনীয় স্থান লাবণী পয়েন্ট, পাহাড় ঝর্ণার হিমছড়ী, পাথুরে সৈকত ইনানী, নাইক্ষ্যংছড়ি লেক ও ঝুলন্ত ব্রিজ, রামু বৌদ্ধ বিহার, রাবার বাগান, ডুলাহাজরা সাফারি পার্ক, কলাতলী বীচ, লং মেরিন ড্রাইভ, রেডিয়েন্ট ফিশ অ্যাকুয়ারিয়াম, দরিয়ানগর, নয়নাভিরাম প্রবাল দ্বীপ সেন্টমার্টিন, সোনাদিয়া দ্বীপ, পাহাড়ি দ্বীপ মহেশখালী, রামু লামার পাড়া বৌদ্ধ ক্যায়াং, কক্সবাজার বৌদ্ধ মন্দির, ইতিহাসখ্যাত কানা রাজার গুহা, রাখাইন পল্লী; যা ভ্রমণপিপাসু পর্যটককে আকৃষ্ট করে।
নানারকম জিনিসের পসরা সাজিয়ে সৈকতসংলগ্ন এলাকায় রয়েছে ছোট-বড় অনেক দোকান। কেনাকাটার জন্য রয়েছে বেশকিছু ভিন্ন আঙ্গিকের মার্কেট। প্রসিদ্ধ বার্মিজ মার্কেটে রয়েছে রাখাইন রমণীদের দ্বারা পরিচালিত বিভিন্ন রকম হস্তশিল্প ও মনোহরি পণ্যের দোকান। এছাড়া পর্যটকদের জন্য গড়ে উঠেছে ঝিনুক মার্কেট, ঝিনুক শিল্পের রকমারি জিনিসপত্রের প্রধান বিক্রয় ও বিপণন কেন্দ্র।
সমুদ্র সৈকতে রয়েছে ঘোড়ায় চড়ার ব্যবস্থা, স্পিডবোট, ওয়াটার বাইক, মোটরবাইক, প্যারাসাইকেলিং, সার্ফিংসহ নানা বিনোদনের ব্যবস্থা। কক্সবাজার শহর থেকে লং মেরিন ড্রাইভ সড়কে যাওয়ার পথে বেশ কয়েকটি প্রাকৃতিক ঝর্ণা, সমুদ্র আর পাহাড়সহ দর্শনীয় স্থানের দেখা মিলবে। সাথে চলার পথে সমুদ্রের গর্জন, পাখির কুজন ও পাহাড়ি ঝর্ণার প্রাকৃতিক পরিবেশ।
কক্সবাজারে ৫ শতাধিক ছোট-বড় হোটেল, রিসোর্ট, গেস্ট হাউজ আছে। এসব হোটেল আগে থেকেই প্রায় বুকিং থাকে। প্রতি বছর নভেম্বর-ডিসেম্বর মাস থেকে পর্যটন মৌসুম শুরু হয়, সেটা চলে মার্চ মাস পর্যন্ত। তাই এ সময়ে ভ্রমণের পরিকল্পনা করলে অবশ্যই আগে থেকে কাঙ্ক্ষিত হোটেলে বুকিং দিয়ে যেতে হয়।
কক্সবাজার ভ্রমণে গিয়ে পর্যটকদের বেশি আকর্ষণ থাকে সামুদ্রিক বিভিন্ন মাছের প্রতি। বিশেষ করে চিংড়ি, রূপচাঁদা, লইট্যা, কোরাল, টুনা ফিস, ছুরি মাছসহ মজাদার হরেক রকম শুঁটকি মাছের ভর্তা জনপ্রিয়। শহরের সুগন্ধা বিচের পাশেই আছে তাজা সামুদ্রিক মাছের ভ্রাম্যমাণ দোকান। সন্ধ্যায় বসে দোকানে পছন্দমতো রকমারি সামুদ্রিক ভাজা মাছের স্বাদ নেওয়া যায়। দাম ঠিক করে পছন্দমত মাছ অর্ডারের কিছুক্ষণ পরেই মিলবে ধোঁয়া ওঠা গরম ভাজা মাছ।
চট্টগ্রামের পর্যটক আরিফা বিনতে হক বলেন, ছেলে-মেয়েদের বার্ষিক পরীক্ষা শেষ হওয়ার পর কক্সবাজারে বেড়াতে এসেছেন। স্বচ্ছ নীল জলরাশির বিশাল সমুদ্র সৈকত। প্রকৃতি আর সময়ের এত আয়োজন একসঙ্গে উপভোগের সুযোগ হাতছাড়া করতে চায় না কেউ। তাই পরিবার-পরিজন নিয়ে শত ব্যস্ততার মধ্যেও সবাই ছুটে এসেছেন কক্সবাজারে। এর মধ্যে তারা গাড়ি ভাড়া করে মেরিন ড্রাইভে ঘুরে এসেছেন। ভালো লেগেছে প্রাকৃতিক পরিবেশ।
বাংলাদেশ সময়: ০৯৩০ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ১৪, ২০২৪
এসএস/টিসি