ঢাকা, রবিবার, ১ পৌষ ১৪৩১, ১৫ ডিসেম্বর ২০২৪, ১২ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

চট্টগ্রাম প্রতিদিন

দুই মাসে চবির ভারপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রারের ভার ৪ জনের কাঁধে

মোহাম্মদ আজহার, ইউনিভার্সিটি করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৪৫৬ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ২৩, ২০২৩
দুই মাসে চবির ভারপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রারের ভার ৪ জনের কাঁধে ...

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়: ভারপ্রাপ্ত ভারাক্রান্ত চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের (চবি) অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ পদ ‘রেজিস্ট্রার’। দীর্ঘ ২৮ বছর এ পদে স্থায়ী কোনও নিয়োগ দেওয়া হয়নি।

তাই চবিতে এ পদের প্রচলিত নাম হয়ে গেছে ‘ভারপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রার’।  

ভারপ্রাপ্তের ভার সামাল দিতে হিমসিম খাচ্ছে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ।

গত দুই মাসে গুরুত্বপূর্ণ এ পদে ভারপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রারের দায়িত্ব পালন করেছেন ৪ জন।  

এই রেজিস্ট্রার পদ নিয়ে কাড়াকাড়িও কম হয়নি। কর্মচারী-কর্মকর্তারা চান, রেজিস্ট্রারের দায়িত্ব পালন করুক কর্মকর্তাদের মধ্য থেকে কেউ একজন। অপরদিকে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ চায় শিক্ষকদের মধ্য থেকে কাওকে রেজিস্ট্রারের দায়িত্ব দিতে।  

বিশ্ববিদ্যালয়ের জ্যেষ্ঠ শিক্ষক-কর্মকর্তাদের মতে, স্থায়ী রেজিস্ট্রার নিয়োগ না দেওয়ার পেছনে অন্যতম একটি কারণ হলো- নিজেদের এজেন্ডা বাস্তবায়ন সহজ করা। আরেকটু ভেঙে বললে- নিজেদের পছন্দসই কেউ রেজিস্ট্রারের দায়িত্বে থাকলে সহজেই অনুমোদন করানো যায় অনেক কিছু। আবার ভারপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রার যদি নিজেদের নিয়ন্ত্রণের বাইরে যান, তাহলে ভারপ্রাপ্তের অজুহাতে যেকোনও সময় রেজিস্ট্রার পদ থেকে সরিয়ে দেওয়াটাও সহজ।  

চলতি বছরের ২ জানুয়ারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের আন্দোলনের মুখে চারদিনের ছুটিতে যান ভারপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রার অধ্যাপক এসএম মনিরুল হাসান। সে সময় রেজিস্ট্রার পদ থেকে অব্যাহতি চেয়ে পদত্যাগপত্র জমা দেন তিনি। তবে বিষয়টি আড়ালে রেখে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ পদত্যাগ পত্র ঝুলিয়ে রাখলেও ছুটিতে যাওয়ার পর আর এ পদে যোগদান না করায় রেজিস্ট্রার পদ থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয় অধ্যাপক এসএম মনিরুল হাসানকে।

এরপর ভারপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রারের দায়িত্ব পালন করেন অ্যাস্টেট শাখার ডেপুটি রেজিস্ট্রার মাহবুব হারুন চৌধুরী। কিছুদিন পরেই শোনা যায়, অবসরপ্রাপ্ত কর্মকর্তা কেএম নূর আহমদকে চুক্তিভিত্তিক ভারপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রার পদে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে।  

এর আগে ২০১৮ সালের ৩ এপ্রিল থেকে ২০২০ সালের ২৯ জুন পর্যন্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রারের দায়িত্ব পালন করেছেন কেএম নূর আহমদ। রেজিস্ট্রার দফতরের কাউন্সিল শাখার ডেপুটি রেজিস্ট্রার হিসেবে ২০২০ সালের ৩০ জুন অবসরে যান তিনি। তবে ২০২২ সালের ৬ নভেম্বর বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ পুনরায় কাউন্সিল শাখায় চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ দেয় তাঁকে। চলতি বছরের ১৩ ফেব্রুয়ারি থেকে কেএম নূর আহমদ ভারপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রারের দায়িত্ব পালন শুরু করেন।

এদিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের কাজে কেএম নূর আহমদ এবং সম্প্রতি ভারপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রারের দায়িত্ব পালন করা মাহবুব হারুন চৌধুরী কক্সবাজার অবস্থান করায় গত ২০, ২১ এবং ২২ ফেব্রুয়ারি তিনদিন ভারপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রারের দায়িত্ব পালন করেন রেজিস্ট্রার দফতরের শিক্ষক নিয়োগ শাখার ডেপুটি রেজিস্ট্রার মো. হাছান মিয়া।  

মো. হাছান মিয়া বাংলানিউজকে বলেন, রেজিস্ট্রার কোনও কারণে অনুপস্থিত থাকলে জ্যেষ্ঠতার ভিত্তিতে মাহবুব হারুন চৌধুরী ভারপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রারের দায়িত্ব পালন করেন। ভারপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রার কেএম নূর আহমদ এবং মাহবুব হারুন চৌধুরী দু’জনই বিশ্ববিদ্যালয়ের বাইরে থাকায় গত তিনদিন আমাকে এ দায়িত্ব পালন করতে হয়েছে।

তবে রেজিস্ট্রার পদটি ভারপ্রাপ্ত দিয়ে পরিচালনার অভিযোগ দীর্ঘদিনের। বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার পর থেকে রেজিস্ট্রার পদে দায়িত্ব পালন করেছেন ১৭ জন। এর মধ্যে ১৪ জনই ভারপ্রাপ্ত। সর্বশেষ পূর্ণকালীন রেজিস্ট্রার হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন আবদুর রশিদ। ১৯৯৫ সালের ফেব্রুয়ারিতে তিনি অবসরে যাওয়ার পর গত ২৮ বছর ধরে ভারপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রার দিয়ে চলছে বিশ্ববিদ্যালয়ের গুরুত্বপূর্ণ এ পদ।

চলতি বছরের ১ জানুয়ারি থেকে পূর্ণকালীন রেজিস্ট্রার নিয়োগের দাবিতে আন্দোলন শুরু করেন বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। আন্দোলনের মুখে ২ জানুয়ারি ছুটিতে যান ভারপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রার অধ্যাপক এসএম মনিরুল হাসান। পরে তিনি পদত্যাগ করেন রেজিস্ট্রার পদ থেকে।  

আন্দোলনের অংশ হিসেবে গত ০১ ফেব্রুয়ারি মুখে কালো কাপড় বেঁধে রেজিস্ট্রার কার্যালয়ে অবস্থান নেন কর্মকর্তারা। এসময় রেজিস্ট্রার কার্যালয়ের সামনে থাকা নামফলক কালো কাপড় দিয়ে ঢেকে দেন তারা। সবাইকে অবাক করে গত ১৩ ফেব্রুয়ারি ভারপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রারের দায়িত্বে আনা হয় অবসরপ্রাপ্ত কর্মকর্তা কেএম নূর আহমদকে।

সমাজবিজ্ঞান অনুষদের ডিন অধ্যাপক সিরাজ উদ দৌল্লাহ বাংলানিউজকে বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাসে সম্ভবত অবসরে যাওয়ার পর এই প্রথম চুক্তিভিত্তিক কাওকে এনে ভারপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রার হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। কর্তৃপক্ষের এমন সিদ্ধান্ত বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের (ইউজিসি) নির্দেশনা ও সুশাসনের পরিপন্থী।  

এ বিষয়ে জানতে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. শিরীণ আখতার ও উপ-উপাচার্য অধ্যাপক বেনু কুমার দে’র সঙ্গে মুঠোফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও সাড়া পাওয়া যায়নি।

বাংলাদেশ সময়: ১৪৫৪ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ২৩, ২০২৩
এমএ/টিসি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।