ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ২৯ কার্তিক ১৪৩১, ১৪ নভেম্বর ২০২৪, ১২ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

চট্টগ্রাম প্রতিদিন

অ্যান্টিবায়োটিকের যত্রতত্র ব্যবহার, নতুন মহামারির শঙ্কা

মোহাম্মদ আজহার, ইউনিভার্সিটি করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৯৪৬ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ২৮, ২০২৩
অ্যান্টিবায়োটিকের যত্রতত্র ব্যবহার, নতুন মহামারির শঙ্কা ছবি প্রতীকী

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়: প্রয়োজন না হওয়া সত্ত্বেও আমরা প্রতিনিয়ত ব্যবহার করছি অ্যান্টিবায়োটিক। সামান্য জ্বর, সর্দি, কাশি হলেই হাতুড়ে ডাক্তারের পরামর্শে কিংবা পরামর্শ ছাড়াই মানুষ সেবন করছে অ্যান্টিবায়োটিক ওষুধ।

যার ফলে অকার্যকর হয়ে যাচ্ছে দেহের উপকারী ব্যাকটেরিয়াগুলো।  

শুধু তাই নয়, ডাক্তারের পরামর্শকে উপেক্ষা করে অ্যান্টিবায়োটিকের পুরো ডোজ শেষ করেন না অনেকে।

যার ফলে শরীরে থেকে যাওয়া ক্ষতিকর ব্যাকটেরিয়াগুলো আরও শক্তিশালী হয়ে ওঠে। সৃষ্টি হয় আরও বড় ধরনের রোগের ঝুঁকি। এ প্রক্রিয়াকে বলা হয় অ্যান্টিবায়োটিক রেজিস্টেন্স।  

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের (চবি) মাইক্রোবায়োলজি বিভাগের কয়েকজন শিক্ষক ও শিক্ষার্থী এমন কিছু নতুন ব্যাকটেরিয়া আবিষ্কার করেছেন, যে ব্যাকটেরিয়াগুলো এ ধরনের ঝুঁকি থেকে রক্ষা করবে।  

সোমবার (২৭ ফেব্রুয়ারি) চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে অনুষ্ঠিত গবেষণা মেলায় এ বিষয়গুলো তুলে ধরেন মাইক্রোবায়োলজি বিভাগের শিক্ষার্থীরা।  

কথা হয় মাইক্রোবায়োলজি বিভাগের ২০১৬-১৭ সেশনের শিক্ষার্থী আতিকুর রহমান আতিক ও মনির হোসেনের সঙ্গে। তারা এছাড়া আরও দুটি গবেষণার কথা জানান।

এর মধ্যে একটি হলো বায়ো র‍েমিডিয়েশন, অন্যটি হলো প্রো-বায়োটিক্স। এ দুটোর ব্যাখ্যা দেওয়ার আগে অ্যান্টিবায়োটিক রেজিস্টেন্স সম্পর্কে আরেকটু জেনে নেওয়া যাক।

অ্যান্টিবায়োটিকের যত্রতত্র ব্যবহারের বিষয়ে সতর্ক করেছেন গবেষকরা। বর্তমানে ডাক্তারের পরামর্শ ছাড়া অধিক হারে অ্যান্টিবায়োটিক গ্রহণ করছে মানুষ। আবার নিজের ইচ্ছেমতো ওষুধ সেবন বন্ধ করে দিচ্ছে। ফলে ক্ষতিকর ব্যাকটেরিয়াগুলো নিজেদেরকে আরও শক্তিশালী করে তুলছে। একপর্যায়ে কোনো অ্যান্টিবায়োটিক আর ক্ষতিকর ব্যাকটেরিয়ার বিরুদ্ধে কাজ করে না। পাশাপাশি উপকারী ব্যাকটেরিয়াগুলো ধীরে ধীরে কমে আসায় একটা সময় কোনো ওষুধ শরীরে কাজ করে না। এছাড়া শরীরে রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতাও কমে যায় এর ফলে। এ অবস্থায় গবেষকরা আশঙ্কা করছেন ভবিষ্যতে এটি মহামারি আকার ধারণ করতে পারে।  

তাই এমন কিছু অ্যান্টিবায়োটিক আবিস্কারের চেষ্টা করছেন গবেষকরা, যা শরীরের ক্ষতিকর ব্যাকটেরিয়াগুলোকে ধ্বংস করার পাশাপাশি উপকারী ব্যাকটেরিয়াগুলোর কোনো ক্ষতি করবে না। এগুলো ল্যাকটিক এসিড ব্যাকটেরিয়ার অন্তর্ভুক্ত। যার উৎস পাওয়া গেছে- দই, আখ, দুধ, দুধ থেকে তৈরি ডেইরি প্রোডাক্ট ও মধুসহ বেশকিছু খাবারে। যাকে কাজে লাগিয়ে শরীরের উপকারী ব্যাকটেরিয়াগুলোকে টিকিয়ে রাখার চেষ্টা করছেন গবেষকরা।

বায়ো র‍েমিডিয়েশন:
শিল্প কারখানা থেকে নির্গত ক্যামিক্যাল ডাই (রং) মিশ্রিত হয়ে প্রতিনিয়ত দূষিত হচ্ছে নদী-নালার পানি। এ পানিতে থাকা বিভিন্ন ধরনের ক্ষতিকারক পদার্থগুলোকে বায়োলজিকাল কোনো অর্গানিজমের (ব্যাকটেরিয়া/জিব) মাধ্যমে বিশুদ্ধ করার প্রক্রিয়াকে বলা হয় বায়ো র‍েমিডিয়েশন। এ নিয়ে গবেষণা করছেন চবির মাইক্রো বায়োলজির বিভাগের শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা। তাই এমন কিছু নতুন ব্যাকটেরিয়া  আবিষ্কার করেছেন তারা, যেগুলো এসব দূষিত পদার্থকে ধ্বংস করে পানিকে বিশুদ্ধ করতে সাহায্য করবে।

চবির মাইক্রো বায়োলজি বিভাগের অধ্যাপক মো. তৌহিদ হোসেন ও সহযোগী অধ্যাপক এইচএম আবদুল্লাহ আল মাসুদের তত্ত্বাবধানে এ কাজটি করেন বিভাগের ২০১৬-১৭ সেশনের শিক্ষার্থী আতিকুর রহমান আতিক।

প্রো-বায়োটিক্স:

প্রো-বায়োটিক্স হলো কিছু উপকারী ব্যাকটেরিয়া। যেগুলো আমাদের শরীরকে সুস্থ রাখতে সাহায্য করে। যেমন- হজম শক্তি বাড়ানো, রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ানো, বিভিন্ন ধরনের ভিটামিন সরবরাহ করা। এছাড়া ক্ষতিকারক ব্যাকটেরিয়াগুলোকে শরীর থেকে বের করে দিতে সহযোগিতা করে প্রো-বায়োটিক্স। গবেষণায় নতুন কিছু প্রো-বায়োটিক্স আবিষ্কার করেছে মাইক্রোবায়োলজি বিভাগের গবেষকরা। যা প্রদর্শন করা হয়েছে এ গবেষণা মেলায়।

বাংলাদেশ সময়: ০৯৩৫ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ২৮, ২০২৩
এমএ/পিডি/টিসি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।