ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ২৯ কার্তিক ১৪৩১, ১৪ নভেম্বর ২০২৪, ১২ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

চট্টগ্রাম প্রতিদিন

চারুকলার আগাছা পরিষ্কার ও টয়লেট স্থাপনের সুপারিশ 

ইউনিভার্সিটি করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২০২৪ ঘণ্টা, মার্চ ১, ২০২৩
চারুকলার আগাছা পরিষ্কার ও টয়লেট স্থাপনের সুপারিশ  চবির চারুকলা ইনস্টিটিউট

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়: ঝুঁকিপূর্ণ ভবন মেরামতের দাবিতে শুরু হয় চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় (চবি) চারুকলা ইনস্টিটিউটের শিক্ষার্থীদের আন্দোলন। পরে সে আন্দোলন রূপ নেয় চারুকলাকে মূল ক্যাম্পাসে স্থানান্তরের এক দাবিতে।

তবে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ ভবন মেরামতের পক্ষে থাকলেও চারুকলাকে ক্যাম্পাসে স্থানান্তর দীর্ঘ প্রক্রিয়া বলে বিষয়টিকে আমলে নিচ্ছে না।  

এদিকে চারুকলার ভবনগুলো পরিদর্শন ও যাচাইয়ের জন্য ৭ সদস্যের একটি কমিটি গঠন করা হয়।

গত ৪ ফেব্রুয়ারি ইনস্টিটিউটের সবগুলো ভবন সরেজমিনে পরিদর্শন শেষে একটি প্রতিবেদন জমা দিয়েছে এ কমিটি।

কমিটির পক্ষ থেকে জানানো হয়, ভবনগুলোতে যেসব ত্রুটি দেখা গেছে তা চবির প্রকৌশল দফতরের তত্ত্বাবধানে মেরামতযোগ্য। এ ভবনগুলো ব্যবহারে কোনো ঝুঁকি নেই। তবে চারুকলার একাডেমিক ভবনে পর্যাপ্ত টয়লেট নেই, যা সুবিধাজনক স্থানে স্থাপন করা যেতে পারে।

বুধবার (১ মার্চ) বাংলানিউজকে প্রতিবেদনের বিষয়টি জানান চবি প্রক্টর ড. রবিউল হাসান ভূঁইয়া।

চট্টগ্রাম নগরের মেহেদীবাগে অবস্থিত চবির চারুকলা ইনস্টিটিউটের ভবনসমূহের ঝুঁকি, ব্যবহার উপযোগিতা যাচাই ও প্রতিকারের জন্য গঠিত এ কমিটি ভবনগুলোর প্রাথমিক অবস্থা মূল্যায়নের জন্য ইনস্টিটিউটের সংশ্লিষ্টদের উপস্থিতিতে ভবন পর্যবেক্ষণ করেন।

ইনস্টিটিউটের চারতলা বিশিষ্ট একাডেমিক ভবন, তিনতলা বিশিষ্ট ভাস্কর্য ভবন, দ্বিতল বিশিষ্ট শিল্পী রশীদ চৌধুরী আর্ট গ্যালারী ও তিনতলা বিশিষ্ট প্রশাসনিক ভবন রয়েছে। যা ১৯৯০ থেকে ১৯৯৫ সালের মধ্যে শিক্ষা প্রকৌশল অধিদফতরের তত্ত্বাবধানে নির্মাণ করা হয়। প্রতিটি ভবন রি-ইনফোর্সড কংক্রিট (RC) মোমেন্ট প্রতিরোধী ফ্রেম কাঠামো হিসেবে ডিজাইন করা হয়েছে। ভবনগুলো পরিদর্শন ও সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের সঙ্গে আলোচনা করে পর্যবেক্ষণগুলো তুলে ধরা হয়।

পর্যবেক্ষণ-একাডেমিক ভবন:
একাডেমিক ভবনের ফাউন্ডেশনে কোনো ত্রুটি নেই। প্রথমতলা (পেইন্টিং শাখা): গঠনগত উপাদান তথা কলাম ও বীম এ কোনো ত্রুটি নেই। নীচতলার পশ্চিম পার্শ্বের উত্তরদিকের কিছু কক্ষে দেয়ালে ফাটল দেখা দিয়েছে। দ্বিতীয়তলা প্রিন্ট মেকিং শাখায় কলাম, বীম ও ছাদে কোনো ত্রুটি নেই। তৃতীয়তলা প্রিন্টিং শাখায় কলাম, বীম ও ছাদে কোনও ত্রুটি নেই। তবে পশ্চিম পার্শ্বের উত্তর দিকে দেয়ালে স্যাঁতসেঁতে দেখা গেছে। চতুর্থ তলার কলামে কোনো ত্রুটি নেই। তবে বর্ষাকালে ছাদে পানি জমে থাকার কারণে বিশেষ করে করোনাকালে ছাদে ঝরে পড়া পাতা জমে থাকায় কিছু কক্ষের ছাদ ও বীমের পলেস্তারা খসে পড়েছে এবং কিছুকিছু জায়গায় পলেস্তারা খসে পড়ে ফাটল তৈরি হয়েছে। এসব স্থানে মেরামত করা সম্ভব। এছাড়া কিছু কক্ষে জানালার পাশে দেয়াল চুয়ে পানি পড়ার কারণে কিছুকিছু দেয়াল স্যাঁতসেঁতে হয়ে গেছে, যা মেরামতযোগ্য। একাডেমিক ভবনের উপরের ছাদে প্রচুর পাতা জমে থাকার কারণে বর্ষাকালে ছাদে পানি নিষ্কাশন ব্যবস্থা ব্যাহত হয়।

ভাস্কর্য ভবন:
ভাস্কর্য ভবনের শ্রেণীকক্ষে কোনো ত্রুটি পাওয়া যায়নি। তবে ছাদের কিছুকিছু স্থানে আগাছা উঠেছে, যা দ্রুত পরিস্কার করা প্রয়োজন।

শিল্পী রশীদ চৌধুরী আর্ট গ্যালারী ভবন:
গ্যালারী ভবনের কিছুকিছু দেয়ালে স্যাঁতসেঁতে দেখা দিয়েছে। ছাদে ড্রেইনেজ সিস্টেমে সমস্যা থাকার কারণে গ্যালারী ভবনের কিছুকিছু রুম স্যাঁতসেঁতে হয়ে গেছে।

প্রশাসনিক ভবন:
প্রশাসনিক ভবনের নীচতলা ও দ্বিতীয়তলায় কোনো সমস্যা নেই। তৃতীয়তলায় মাস্টার্সের শ্রেণীকক্ষে বীমে কিছু ফাটল দেখা গেছে। এছাড়া ছাত্রছাত্রীদের টয়লেটের ব্যবস্থা প্রয়োজনের তুলনায় অপ্রতুল।

গঠিত কমিটির সুপারিশ:
সকল ভবন পর্যবেক্ষণ করে দেখা যায় কিছু স্থানে পলেস্তারা ও বীমে কিছু ফাটল রয়েছে, যা মেরামতযোগ্য। যেসব স্থানে পলেস্তারা খসে পড়েছে সেগুলোতে ড্যাম্পপ্রুফ ক্যামিকেল ব্যবহারের মাধ্যমে পলেস্তারা সম্পূর্ণরুপে নতুনভাবে মেরামত করা সম্ভব। এছাড়া যেসব স্থানে বীম ও ছাদে রি-ইনফোর্সমেন্ট উন্মুক্ত হয়ে যাওয়ার কারণে ফাটল পরিলক্ষিত হয়েছে ঐ সকল স্থানে ইপোক্সি এ এবং বি ব্যবহারের মাধ্যমে রিইনফোর্সমেন্ট এর মরিচা প্রতিরোধ করে মেরামত করা সম্ভব। অতিরিক্ত সাবধানতা অবলম্বনের জন্য বীমগুলোকে ফাইবার রি-ইনফোর্সড পলিমার দিয়ে শক্তিশালী করা যেতে পারে।

ভবনগুলো পরিদর্শন শেষে গঠিত কমিটি জানায়, যেসব ত্রুটি দেখা গেছে তা চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় প্রকৌশল দফতরের তত্ত্বাবধানে মেরামতযোগ্য। এ ভবনগুলো ব্যবহারে কোনো ঝুঁকি নেই। তবে একাডেমিক ভবনে পর্যাপ্ত টয়লেট নেই, যা সুবিধাজনক স্থানে করা যেতে পারে।

গঠিত কমিটির আহ্বায়ক ছিলেন ইঞ্জিনিয়ারিং অনুষদের ডিন অধ্যাপক ড. রাশেদ মোস্তফা। এছাড়া সদস্য ছিলেন চারুকলা ইনস্টিটিউট পরিচালক অধ্যাপক সুফিয়া বেগম, চবির ভারপ্রাপ্ত প্রধান প্রকৌশলী ছৈয়দ জাহাঙ্গীর ফজল, চুয়েট পুরকৌশল বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক মোহাম্মদ তারেকুল আলম, চট্টগ্রাম বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী মোহাম্মদ হাসান আলী, চবি প্রকৌশল দফতরের তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী আবদুল আহাদ। এছাড়া সদস্য সচিব ছিলেন চবি প্রকৌশল দফতরের তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী মো. ইলিয়াস চৌধুরী।

বাংলাদেশ সময়: ২০১০ ঘণ্টা, মার্চ ১, ২০২৩
এমএ/পিডি/টিসি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।