ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ২৭ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১২ ডিসেম্বর ২০২৪, ০৯ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

চট্টগ্রাম প্রতিদিন

পাচারকারীর হাত থেকে বেঁচে ফিরলো ফাতেমা

নিউজরুম এডিটর | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৫৩০ ঘণ্টা, মার্চ ১১, ২০২৩
পাচারকারীর হাত থেকে বেঁচে ফিরলো ফাতেমা ...

চট্টগ্রাম: পিরোজপুরের বাসিন্দা ফাতেমা নামের এক নারী নগরের একটি সামাজিক সংগঠনের সহায়তায় পাচারকারীর হাত থেকে বেঁচে ফিরেছে। শুক্রবার (১০ মার্চ) বিকেলে পুনর্বাসনের জন্য নগদ টাকা দিয়ে তাকে বাড়িতে পাঠিয়ে দেওয়া হয়।

জানা গেছে, মুঠোফোনে পরিচয়ের সূত্র ধরে চাকরি দেওয়ার প্রলোভন দেখিয়ে স্বামী পরিত্যক্তা তরুণী ফাতেমাকে চাঁদপুরে নিয়ে আসে রাকিব নামের এক ব্যক্তি। এরপর কক্সবাজারে চাকরিতে পাঠানোর নামে গত ২ মার্চ চট্টগ্রাম নিয়ে আসা হয়।

এখানে তাকে পতিতাবৃত্তিতে বাধ্য করার পর ৫ মার্চ আরেক নারীর সাথে রাখা হয়। সেই নারীকে সবকিছু জানালে তিনি সামাজিক সংগঠন ভোরের আলো’র প্রতিষ্ঠাতা সাংবাদিক শফিকুল ইসলামকে অবগত করেন।

গত ৬ মার্চ ভোরের আলো কার্যালয়ে এসে ফাতেমা বলেন, দুই ভাই ও ১ বোনের মধ্যে তিনি মেজ। মাদকসেবী পিতা অনেক সম্পত্তি বিক্রি করে দিয়েছে। খুলনা শহরে তাদের সেমিপাকা ঘর ভাড়া দিয়ে চলে সংসার। বড় ভাই বিয়ে করে আলাদা থাকেন। ১৩ বছর বয়সে ফাতেমার বিয়ে দেয় পরিবার। এক বছর পর তার কন্যা সন্তানের জন্ম হয়, যার বয়স এখন ৫ বছর। ফাতেমার স্বামী সম্পত্তি পাওয়ার জন্য তাকে নির্যাতন করতো। সিগারেটের ছ্যাঁকা দেওয়া হয় শরীরে। যন্ত্রণা সহ্য করতে না পেরে স্বামীকে তালাক দিতে বাধ্য হন তিনি। স্বামীর সাথে ছাড়াছাড়ির পর ১৬ বছর বয়স থেকে বাবার বাড়িতেই থাকতেন কন্যাকে নিয়ে। সন্তানের ভবিষ্যতের কথা ভেবে চাকরি করার চিন্তা করছিলেন। এরপর পড়েন পাচারকারীর ফাঁদে।

পরে তার পরিবারের সাথে যোগাযোগ করা হয় সংগঠনটির পক্ষ থেকে। মানসিকভাবে বিপর্যস্ত তরুণীকে কাউন্সিলিং এর পর ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংক আগ্রাবাদ শাখার ব্যবস্থাপক ও ভাইস-প্রেসিডেন্ট মো. নিয়ামত উল্লাহ এবং কলেজিয়েট-৮৪ ব্যাচ এর সহায়তায় ১০ মার্চ বিকেলে তার হাতে পুনর্বাসনের লক্ষ্যে নগদ কিছু টাকা তুলে দেওয়া হয়। এসময় চসিকের সাবেক কর্মকর্তা, চবি অ্যালামনাই অ্যাসোসিয়েশনের দফতর সম্পাদক সাইফুদ্দীন সাকী এবং উত্তর কাট্টলীর সমাজ সংগঠক মাসুদ রশীদ ও ভোরের আলো’র প্রতিষ্ঠাতা মো. শফিকুল ইসলাম খান উপস্থিত ছিলেন। পরে সন্ধ্যা সাড়ে ৬টার দিকে তাকে বাড়ির উদ্দেশ্যে গাড়িতে তুলে দেওয়া হয়।

শফিকুল ইসলাম খান বাংলানিউজকে বলেন, যে নারী ফাতেমাকে নিয়ে আমাদের কাছে এসেছিলেন-তিনিও এর আগে পতিতাবৃত্তিতে জড়িত ছিলেন। কাউন্সিলিংয়ে তিনি কয়েক মাস ধরে ছেড়েছেন অন্ধগলির পথ। এখন একটি দোকান দিয়েছেন। তাঁর কাছে ফাতেমাকে নিয়ে আসে রাকিব নামের কথিত পাচারকারী। তিনি বিষয়টি বুঝতে পেরে ফাতেমাকে আলোর সন্ধান দিয়েছেন। তবে আবারও ক্ষতির আশংকায় তারা মামলা কিংবা পুলিশকে জানাতে রাজি হননি।

বাংলাদেশ ইউনাইটেড নেশনস নেটওয়ার্ক এর তথ্যমতে, পাচারের শিকার মানুষের মধ্যে ৫১ শতাংশই পাচারকারীদের ফাঁদে পড়ে ভাগ্য ফেরাতে গিয়ে বা অর্থনৈতিক কারণে। ৯ শতাংশ শিশুকালে পিতা-মাতার স্নেহ থেকে বঞ্চিত থাকে। ৬ শতাংশের প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা সীমিত এবং শারীরিক প্রতিবন্ধিতা রয়েছে ৩ শতাংশের।  

বাংলাদেশ সময়: ১৫২০ ঘণ্টা,  মার্চ ১১, ২০২৩
এসি/টিসি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।