ঢাকা, শুক্রবার, ২৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ১০ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

চট্টগ্রাম প্রতিদিন

‘স্যারের বুকে লাথি মেরেছে ওরা'

ইউনিভার্সিটি করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২০২৫ ঘণ্টা, মার্চ ১৫, ২০২৩
‘স্যারের বুকে লাথি মেরেছে ওরা'

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়: সেন্টমার্টিনে জাহাজের স্টাফদের সঙ্গে কথা কাটাকাটি হওয়ার পর টেকনাফে এসে জাহাজ কর্তৃপক্ষের সঙ্গে এ বিষয়ে কথা বলার জন্য সবাইকে জাহাজ থেকে নামিয়ে দিয়ে আমরা পাঁচজন শিক্ষার্থী এবং দুইজন স্যার ছিলাম। হঠাৎ জাহাজের থাকা ২৫-৩০ জন এসে আমাদের ওপর অতর্কিত হামলা চালায়।

সর্বপ্রথম আফতাব স্যারকে আঘাত করেন তারা। আমি স্যারের পাশেই ছিলাম।
তারা স্যারের বুকে লাথি মারছিলো।  

সেন্টমার্টিন ঘুরতে গিয়ে ভয়াবহ অভিজ্ঞতার কথা বলছিলেন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের (চবি) অর্থনীতি বিভাগের মাস্টার্সের শিক্ষার্থী মোসাদ্দেকুল ইসলাম। কথাগুলো বলার সময় ভারি হয়ে আসে মোসাদ্দেকের গলা। নিজের অজান্তে কেঁদে ফেললেন সবার সামনে। পাশে থাকা শিক্ষার্থীদের চোখ ছলছল করছিল মোসাদ্দেকের বর্ণনা শুনে।

গতকাল (১৪ মার্চ) দুপুরে সেন্টমার্টিন ও টেকনাফে দুই দফায় হামলার শিকার হন চবির অর্থনীতি বিভাগের শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা।  

এ ঘটনার প্রতিবাদের বুধবার (১৫ মার্চ) দুপুরে চবির বুদ্ধিজীবী চত্বরের সামনে বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন বিভাগের শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা মানববন্ধন করেন। সেখানেই শিক্ষার্থী মোসাদ্দেকের বক্তব্যের সময় সৃষ্টি হয় এমন হৃদয়বিদারক দৃশ্য।  

অর্থনীতি বিভাগের শিক্ষার্থী আব্দুল্লাহ আল মোছাদ্দিকের সঞ্চালনায় মানববন্ধনে শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা বক্তব্য রাখেন। এসময় তারা ৪ দফা দাবি জানান।

দাবিগুলো হলো:

ঘটনার সঙ্গে জড়িতদের ২৪ ঘন্টার মধ্যে গ্রেফতার করতে হবে। বে-ক্রুজ ইন্টারন্যাশনাল জাহাজের লাইসেন্স বাতিল করতে হবে। জাহাজ কর্তৃপক্ষের মিথ্যা ও বানোয়াট স্টেটমেন্ট প্রত্যাহার পূর্বক লিখিত মুচলেকা দিয়ে নিঃশর্ত ক্ষমা চাইতে হবে। জাহাজ কর্তৃপক্ষকে শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের জান-মালের যে ক্ষতি হয়েছে তার যথাযথ ক্ষতিপূরণ দিতে হবে।

অর্থনীতি বিভাগের শিক্ষার্থী সুমাইয়া রাজা রূহানী বলেন, আমরা কোনো ঝামেলা চাইনি। আমরা চেয়েছিলাম আমাদের বুকিং দেয়া সীটে সবাই না বসতে পারলেও অন্তত যাদের খুব বেশি প্রয়োজন তাদেরকে বসাতে। সেখানে আমাদের ওপর জাহাজের স্টাফ ও স্থানীয়রা মিলে দুই দফায় হামলা চালায়। আমরা আজকের এ মানববন্ধন থেকে এ ঘটনার সুষ্ঠু বিচার চাই। বে ক্রুজ-১ জাহাজের সব ধরনের লাইসেন্স বাতিল করতে হবে।  

মোসাদ্দেকুল ইসলাম বলেন, আমাদের ওপর যখন জাহাজের স্টাফ এবং স্থানীয়রা হামলা চালাচ্ছিলেন তখন বিজিবিসহ প্রশাসনের অন্যান্য লোকেরা সেখানে ছিলেন। কিন্তু তারা হামলাকারীদের আটকানোর চেষ্টা করেননি। তারা সেখানে দাঁড়িয়ে তামাশা দেখছিলেন। এমনকি আমাদের একজন বিজিবির পায়ে ধরেও বাঁচানোর জন্য আকুতি করছিলো, এরপরও তারা কোনো সহযোগিতা করেনি। বে ক্রুজ-১ জাহাজের মালিক যে বাহাদুর সে ওখানকার জাহাজ মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক। সে কারণেই প্রশাসন দেখেও কোনো কিছু করেনি। আমাদের দাবি ওই রুটে বে ক্রুজ-১ জাহাজটি যাতে আর চলাচল করতে না পারে কক্সবাজার জেলা প্রশাসনকে সে ব্যবস্থা করতে হবে।  

মারধরের শিকার হওয়া অর্থনীতি বিভাগের প্রভাষক মোহাম্মদ আফতাব হোসেন বলেন, আমরা সেখানে কোনো প্রকার ঝামেলা করতে যাইনি, আমরা বেড়াতে গিয়েছিলাম। ঝামেলা তৈরি হওয়ার পরও আমরা চাচ্ছিলাম যে ঠান্ডা মাথায় সমঝোতার মাধ্যমে সমাধান করতে। কিন্তু তারা আমাদের কোনও কথায় কর্ণপাত করেনি। তারা আমাদের ওপর দুই দফায় অতর্কিত হামলা চালায়। এটা শুধুমাত্র আমাদের ওপর হামলা নয়। এটা মূলত দেশের স্বাধীনতার যে মূল্যবোধ তার উপর হামলা করা হয়েছে।

তিনি আরো বলেন, ঘটনার সময় উপস্থিত পুলিশ ও প্রশাসনের যে নিরব ভুমিকা ছিলো, তা সত্যিই আমাদের অবাক করেছে। তারা কেন এমন আচরণ করেছে তা আমার বোধগম্য নয়। এসময় তিনি বে ক্রুজ-১ জাহাজের সকল স্টাফকে গ্রেফতারের পাশাপাশি ওই জাহাজের সব ধরনের লাইসেন্স বন্ধ করার দাবি জানান।

অধ্যাপক ড. আবুল হোসাইন বলেন, আজকে আমরা বিভাগের অভ্যন্তরীণ কমিটির মিটিংয়ে দুইটা সিদ্ধান্ত নিয়েছি। একটি হল বিশ্ববিদ্যালয়ের পক্ষ থেকে মামলা করা। আরেকটি হল হামলার শিকার শিক্ষার্থীদের ক্ষতিপূরণের ব্যবস্থা করা। মূলত যতই ক্ষতিপূরণ দেয়া হোক না কেন, ছাত্রছাত্রীদের হৃদয়ে যে ক্ষত সৃষ্টি হয়েছে তা কোনভাবে পুরণ করার মতো না। আমরা এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছি। উপাচার্য বিশ্ববিদ্যালয়ের পক্ষ থেকে এ ব্যাপারে ব্যবস্থা গ্রহণের আশ্বাস দিয়েছেন।

মানবন্ধনে আরও উপস্থিত ছিলেন অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক ড. আলা উদ্দিন মজুমদার, অধ্যাপক ড. সাইফুল ইসলাম, অধ্যাপক ড. তারিকুল হাসান চৌধুরী, অধ্যাপক ড. এএইচএম সেলিমুল্লাহ, সহযোগী অধ্যাপক মল্লিকা রায়, সহকারী অধ্যাপক ফজলে রাব্বি চৌধুরী, প্রভাষক খালেদা বেগম মাইফুল ও ফাতেমা আক্তার হিরামনি।

বাংলাদেশ সময়: ২০১৭ ঘণ্টা, মার্চ ১৫, ২০২৩
এমএ/পিডি/টিসি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।