ঢাকা, শুক্রবার, ১ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১৫ নভেম্বর ২০২৪, ১৩ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

চট্টগ্রাম প্রতিদিন

চবির হলের খাবার ফিরলো আগের দামে, মান নিয়ে শঙ্কা 

ইউনিভার্সিটি করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৫২৩ ঘণ্টা, মার্চ ২৫, ২০২৩
চবির হলের খাবার ফিরলো আগের দামে, মান নিয়ে শঙ্কা  ...

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়: শিক্ষার্থীদের দাবির মুখে আগের দামে রাখা হয়েছে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের (চবি) আবাসিক হলগুলোর খাবার। সম্প্রতি খাবারের দাম বেড়ে যাওয়ায় আন্দোলন করেন শিক্ষার্থীরা।

পরে জরুরি সভা ডেকে কমানো হয়েছে খাবারের দাম।  

দাম কমানোয় শিক্ষার্থীদের মধ্যে যেমন স্বস্তি দেখা গেছে তেমনি খাবারের মান কমে যাওয়ার আশঙ্কাও করছেন শিক্ষার্থীরা।

এমনিতেই হলের খাবার মানেই স্বাদ গন্ধহীন ডাল-ভাত। তার ওপর যদি কমে যায় খাবারের মান, তাহলে পুরো রমজান মাস কষ্ট করতে হবে শিক্ষার্থীদের।  

চবির আবাসিক হলে খাবারের দাম ছিলো ২০ টাকা। ২০২১ সালে ৫ টাকা বাড়িয়ে ২৫ টাকা করা হয়। দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির কারণে রমজানের প্রথমদিন থেকে খাবারের দাম নির্ধারণ করা হয়েছিলো ৩৫ টাকা। পাশাপাশি সেহরির দাম ৫০ টাকা থেকে বাড়িয়ে ৬০ টাকা করা হয়। কর্তৃপক্ষের এমন সিদ্ধান্তে ক্ষুব্ধ হয়ে আন্দোলন করেন শিক্ষার্থীরা।  

শুক্রবার (২৪ মার্চ) বিকেল ৩টার দিকে চবির বুদ্ধিজীবী চত্ত্বরে শিক্ষার্থীদের মানববন্ধন ও উপাচার্যের বাসভবনের সামনে অবস্থান কর্মসূচি পালনের পর রাতেই জরুরি সভায় দাম কমানোর সিদ্ধান্ত নেয় কর্তৃপক্ষ।  

লোকপ্রশাসন বিভাগের শিক্ষার্থী মো. মিলন শেখ থাকেন চবি’র আলাওল হলে। নিম্নমানের খাবারের বিষয়ে তিনি বাংলানিউজকে বলেন, পুষ্টিকর খাবারের অভাবে বিশ্ববিদ্যালয় মেধাশূন্য হচ্ছে। কথাটা শুনতে অবাস্তব মনে হলেও এটাই সত্য। আগে আমাদের বাঁচতে হবে। তারপর শিখবো। আর সেই শিক্ষাকে কাজে লাগিয়ে নতুন কিছু উদ্ভাবন করবো। যে খাবার আমাদের শরীরে পুষ্টি জোগায়, রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়, শরীর গঠনে সহায়তা করে সেই খাবার থেকে আমরা বঞ্চিত। তাহলে বিশ্ববিদ্যালয়ের পেছনে সরকারের এত ভর্তুকি দিয়ে কি লাভ?

তিনি আরও বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ে বেশিরভাগ শিক্ষার্থী মধ্যবিত্ত, নিম্ন মধ্যবিত্ত অথবা নিম্নবিত্ত পরিবারের। অনেক শিক্ষার্থী পরিবার থেকে সাপোর্ট পেলেও অনেকের পরিবার উল্টো সন্তানের দিকেই তাকিয়ে থাকে। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় শহর থেকে ২২ কিলোমিটার দূরে হওয়ায় এখানে শিক্ষার্থীদের তেমন কোনো কর্মসংস্থান নেই। যার ফলে বেশিরভাগ শিক্ষার্থীকে পরিবারের ওপর নির্ভর করেই পড়ালেখা চালিয়ে যেতে হয়।

শুধু খাবারের পেছনে একজন শিক্ষার্থীকে প্রতিমাসে ৪-৫ হাজার টাকা ব্যয় করতে হয়। শিক্ষা উপকরণ ও ব্যক্তিগত খরচের হিসেব না হয় বাদ। তার ওপর খাবারে নেই গুণগত মান। ফুড পয়জনিংয়ের কারণে বিশ্ববিদ্যালয়ের অনেক শিক্ষার্থী ইতিপূর্বে অসুস্থ হয়েছে। এমনকি অর্থনীতি বিভাগের এক শিক্ষার্থীর মৃত্যুও হয়েছে বলে শুনেছি আমরা।

এছাড়া খাবারের সঙ্গে বিশুদ্ধ পানির জন্য নেই পর্যাপ্ত ফিল্টারিং ব্যবস্থা। প্রতিটি হলে ৩০০ থেকে ৫০০ এর বেশি শিক্ষার্থী থাকে। অথচ সেখানে মাত্র একটা ফিল্টার। তাই বেশিরভাগ শিক্ষার্থীর ভরসা ট্যাংকের পানি। বিষয়গুলো পরিবর্তনের দাবিতে কয়েক দফায় শিক্ষার্থীরা আন্দোলনও করেছে। কিন্তু ফলাফল শূন্য।

চবির আরেক শিক্ষার্থী বলেন, সম্প্রতি খাবারের দাম বাড়ানোয় শিক্ষার্থীরা আন্দোলন করেছে। তাই দাম আগেরটা রাখা হয়েছে। কর্তৃপক্ষ কি দাম কমানোর জন্য ডাইনিং ম্যানেজারদের ভর্তুকি দিবে? আর যদি না দেন, তাহলে তারা কম দামের মধ্যে একই খাবার কিভাবে দিবেন? নিশ্চয়ই খাবারের মান আরও একধাপ কমে যাবে এবারও।

চবি প্রক্টর ড. নূরুল আজিম সিকদার বাংলানিউজকে বলেন, শিক্ষার্থীদের দাবির প্রেক্ষিতে খাবার আগের দামেই রাখার সিদ্ধান্ত হয়েছে। শুক্রবার রাত ১০টার দিকে জরুরি সভার সিদ্ধান্ত অনুযায়ী খাবারের দাম রোজার পরে বাড়ানো হবে। আপাতত রমজানের কথা বিবেচনা করে পূর্বের দামে খাবার খেতে পারবে শিক্ষার্থীরা।

খাবারের দাম কমানোর জন্য বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ কি ভর্তুকি দেবে, নাকি খাবারের মান কমানো হবে? এমন প্রশ্নের জবাবে প্রক্টর বলেন, সেটা আপনাকে পরে জানাবো।

বাংলাদেশ সময়: ১৫১৫ ঘণ্টা, মার্চ ২৫, ২০২৩
এমএ/টিসি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।