ঢাকা, শনিবার, ১ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১৬ নভেম্বর ২০২৪, ১৪ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

চট্টগ্রাম প্রতিদিন

নির্মাণ হচ্ছে আরো দুই সৌরবিদ্যুৎ কেন্দ্র, যুক্ত হবে জাতীয় গ্রিডে

সৈয়দ বাইজিদ ইমন, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট  | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৯৪০ ঘণ্টা, মে ৭, ২০২৩
নির্মাণ হচ্ছে আরো দুই সৌরবিদ্যুৎ কেন্দ্র, যুক্ত হবে জাতীয় গ্রিডে ...

চট্টগ্রাম: দেশে চলমান বিদ্যুৎ সংকটের মধ্যেই নতুন সুখবর দিয়েছে দুটি সৌরবিদ্যুৎ কেন্দ্র। নবায়নযোগ্য বিদ্যুৎ উৎপাদনের লক্ষ্যে এ দুটি সৌরবিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণ করতে যাচ্ছে সরকার।

কেন্দ্র দুটি থেকে উৎপাদিত বিদ্যুৎ সরাসরি জাতীয় গ্রিডে (অন গ্রিড) গিয়ে যুক্ত হবে।

রাঙ্গুনিয়া উপজেলায় ৫০ মেগাওয়াট ক্ষমতাসম্পন্ন এবং রাঙামাটির কাপ্তাই উপজেলার কর্ণফুলী পানি বিদ্যুৎকেন্দ্র এলাকায় ৭ দশমিক ৬ মেগাওয়াট ক্ষমতাসম্পন্ন সৌর বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপন করবে বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড (বিপিডিবি)।

 

চলতি বছরের ফেব্রুয়ারি মাসের দ্বিতীয় সপ্তাহে অনুষ্ঠিত বোর্ড সভায় রাঙ্গুনিয়া উপজেলায় ৫০ মেগাওয়াট ক্ষমতাসম্পন্ন সৌরবিদ্যুৎ কেন্দ্র স্থাপনের সিদ্ধান্ত নেয় বিপিডিবি। চলতি জুনে বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপনের কাজ শুরু হবে বলে আশা করছেন সংশ্লিষ্টরা।  

অন্যদিকে গত ২৮ নভেম্বর পিডিবি’র বোর্ড সভায় রাঙামাটির কাপ্তাই উপজেলার কর্ণফুলী পানি বিদ্যুৎকেন্দ্র এলাকায় সৌর বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণের প্রস্তাবনা অনুমোদন পেয়েছে। এরপর গত ২৮-৩০ ডিসেম্বর পরিকল্পনা কমিশনের একটি দল বর্তমানে সৌর বিদ্যুৎকেন্দ্র এবং প্রস্তাবিত বিদ্যুৎকেন্দ্রের জন্য স্থান পরিদর্শন করেছেন।

বিপিডিবি’র  নবায়নযোগ্য জ্বালানি এবং গবেষণা ও উন্নয়ন পরিদপ্তরের পরিচালক (তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী) আহমেদ জহির খান বলেন, ডিটেইলড প্রজেক্ট প্ল্যান (ডিপিপি) প্রণয়নের আগেই দরপত্র আহ্বান করা হয়েছে, যেন দ্রুত বিদ্যুৎ কেন্দ্রের কাজ সম্পন্ন করা যায়। এখনো প্রকল্প ব্যয় চূড়ান্ত করা হয়নি। দ্রুত সময়ের মধ্যে ডিপিপি প্রণয়ন করা হবে। শিগগিরই প্রকল্পের কাজ শুরু করা যাবে বলে আমরা আশা করছি।

কর্ণফুলী পানি বিদ্যুৎকেন্দ্রের ব্যবস্থাপক প্রকৌশলী এটিএম আবদুজ্জাহের বলেন, পিডিবি’র বোর্ড সভায় এটি অনুমোদন হয়েছে। পরিকল্পনা কমিশনের প্রতিনিধি দল স্থান পরিদর্শন করেছে। প্রাথমিকভাবে একটি জায়গা নির্ধারণ করা হয়েছে।

বিপিডিবি’র তথ্যমতে, চট্টগ্রাম শহর থেকে প্রায় ৪০ কিলোমিটার দূরে রাঙ্গুনিয়া উপজেলার দক্ষিণ ঘাটচেক এলাকায় বিপিডিবি’র ১৪৯ দশমিক ২৫৯ একর জমিতে ৫০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ কেন্দ্রটি নির্মাণ করা হবে। প্রকল্প বাস্তবায়নের সময় ধরা হয়েছে এক বছর। বিদ্যুৎ উৎপাদনের জন্য ৫৫০ ওয়াট ক্ষমতাসম্পন্ন প্রায় ৯০ হাজার ৯০০টি সোলার প্যানেল স্থাপন করা হবে। আর উৎপাদিত বিদ্যুৎ ব্যবহার উপযোগী করতে ১০০ ওয়াট ক্ষমতাসম্পন্ন ৫০০টি ইনভার্টার স্থাপন করা হবে। এখানে প্রতিদিন ২ লাখ ইউনিট বিদ্যুৎ উৎপাদন হবে।

মূলত ২০২০ সালের মধ্যে রাঙ্গুনিয়ায় বিপিডিবি’র জমিতে বেসরকারি বিদ্যুৎকেন্দ্র (আইপিপি) হিসেবে ৫৫ মেগাওয়াটের সৌরবিদ্যুৎ কেন্দ্রটি স্থাপন করতে চেয়েছিল দুবাইভিত্তিক প্রতিষ্ঠান কনসোর্টিয়াম অব মেটিটো ইউটিলিটিজ লিমিটেড। ৫ দশমিক ৯৮ টাকা প্রতি কিলোওয়াট ঘণ্টা দরে এখান থেকে ২০ বছর মেয়াদ পর্যন্ত বিদ্যুৎ কেনার সিদ্ধান্ত নিয়েছিল সরকার। তবে প্রকল্প ব্যয়ের হিসেব করে উদ্যোগটি থেকে পিছু হটে দুবাইভিত্তিক ওই প্রতিষ্ঠানটি। এরপর অনিশ্চয়তায় পড়ে প্রকল্পটি। তবে দেশব্যাপী জ্বালানী ভিত্তিক বিদ্যুৎ সংকটের পর আলোর মুখ দেখতে যাচ্ছে তিন বছর আগের এই উদ্যোগটি।  

অন্যদিকে, রাঙামাটির কাপ্তাই উপজেলার কর্ণফুলী পানি বিদ্যুৎকেন্দ্র এলাকার ব্রিক ফিল্ড নামের একটি স্থানে ২৩ দশমিক ০৬ একর জমি নির্ধারণ করা হয়েছে নতুন প্রকল্পের জন্য। ইতিমধ্যে নির্ধারিত স্থানটি পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন করে উন্নয়নের কাজ চলছে। তবে এখনো প্রকল্প ব্যয়, বিস্তারিত পরিকল্পনা ও নকশা প্রণয়নের কাজ শুরু হয়নি।

রাঙ্গুনিয়ার প্রকল্পে ৪০০ কোটি টাকার বেশি নিট ব্যয় হতে পারে। এর সঙ্গে ভূমির উন্নয়ন, সড়ক, ভবন ও প্রয়োজনীয় অবকাঠামো নির্মাণসহ আনুষঙ্গিক ব্যয়ও যুক্ত হবে।

বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের মতে, বর্তমানে দেশে নবায়নযোগ্য উৎস থেকে ২ শতাংশ বিদ্যুৎ উৎপাদনের সক্ষমতা রয়েছে। টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা বা এসডিজি অর্জনের জন্য এসব উৎস থেকে কমপক্ষে ১২ শতাংশ বিদ্যুতের প্রয়োজন।  

টেকসই ও নবায়নযোগ্য জ্বালানি উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (স্রেডা) প্রস্তুতকৃত ‘ন্যাশনাল সোলার এনার্জি রোডম্যাপ ২০২১-৪১’ অনুসারে, বাংলাদেশ ২০৪১ সালের মধ্যে সৌর বিদ্যুতের উৎপাদন সুবিধা সম্প্রসারণের মাধ্যমে ২০ হাজার মেগাওয়াট গ্রিন ইলেকট্রিসিটি উৎপাদন করতে পারে। এমনকি নদী তীরবর্তী এবং পরিত্যক্ত জমির যথাযথ ব্যবহার করে সৌর বিদ্যুতের সক্ষমতা ৩০ হাজার মেগাওয়াটে উন্নীত করা যেতে পারে।  

জমির সংকটের মধ্যে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বিদ্যুৎকেন্দ্র ও পিডিবি’র অব্যবহৃত জমিগুলো নবায়নযোগ্য জ্বালানির উন্নয়নে ব্যবহারের জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে নির্দেশ দিয়েছেন।

রাঙ্গুনিয়ার প্রকল্পের দরপত্রের সঙ্গে রাঙামাটির কাপ্তাইয়ের কর্ণফুলী পানি বিদ্যুৎ কেন্দ্রের ৭ দশমিক ৬ মেগাওয়াট ক্ষমতাসম্পন্ন সৌরবিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণের দরপত্রও আহ্বান করেছে বিপিডিবি। এছাড়া ওই বিদ্যুৎ কেন্দ্রের বিদ্যমান ৭ দশমিক ৪ মেগাওয়াট ক্ষমতাসম্পন্ন সৌরবিদ্যুৎ কেন্দ্রের সক্ষমতা আরো এক মেগাওয়াট বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে সংস্থাটি।

পরিকল্পনা কমিশনের সদস্য (ভৌত অবকাঠামো বিভাগ) ড. মোহাম্মদ এমদাদ উল্লাহ মিয়ান বলেন, দেশের বিভিন্ন স্থানে সৌরবিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণের সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। এ লক্ষ্যে উপযোগী স্থানের খোঁজে গত বছরের শেষের দিকে বেশকিছু স্থান পরিদর্শন করা হয়েছে।

বিপিডিবির তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী আহমেদ জহির খান বলেন, গড়ে সোলারের প্রতি ইউনিট বিদ্যুতের উৎপাদন ব্যয় ১০ টাকার মতো পড়ে।

বাংলাদেশ সময়: ০৯৩০ ঘণ্টা, মে ০৭, ২০২৩ 
বিই/টিসি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।