ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ২৭ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১২ ডিসেম্বর ২০২৪, ০৯ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

চট্টগ্রাম প্রতিদিন

১৫ দিন দুই হাসপাতালের আইসিইউতে শিশু আনিকা, তবুও হয়নি অপারেশন

মিজানুর রহমান, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট  | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৯৫৮ ঘণ্টা, মে ২৪, ২০২৩
১৫ দিন দুই হাসপাতালের আইসিইউতে শিশু আনিকা, তবুও হয়নি অপারেশন

চট্টগ্রাম: বিশেষ চাহিদা সম্পন্ন ৫ বছরে শিশু আফরা আনিকা। গত ১৫ দিন ধরে আছেন হাসপাতালের নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে (আইসিইউ)।

জীবনের প্রতিটি মুহূর্তই লড়ছেন মৃত্যু সঙ্গে। কিন্তু এ ১৫ দিন বেঁচে থাকাটাও কম কণ্টকাকীর্ণ ছিল না আনিকার।
অপারেশন যোগ্য হলেও চিকিৎসকের অপরাগতায় দিনের পর দিন পড়ে থাকতে হচ্ছে আইসিইউতে।  

জানা গেছে, গত ৯ মে মাথায় গুরুতর আঘাত জনিত সমস্যা নিয়ে (এক্সট্রাডুরাল হেমাটোমা) নগরের একটি বেসরকারি হাসপাতালে আসেন আনিকা। ওই হাসপাতালের  চিকিৎসক সিটি স্ক্যান করে অপারেশন প্রয়োজন বলে মত দেন। পাশাপাশি রোগীর জন্য আইসিইউ প্রয়োজন বলেও জানান। অপারেশন পরবর্তী আইসিইউর প্রয়োজনীতার কথা চিন্তা করে ওই দিনই রাত ৯টায় চট্টগ্রাম মা ও শিশু হাসপাতালে নিয়ে যান শিশুটির বাবা। রোগীর অবস্থা বিবেচনায় শিশুটিকে আইসিইউতে রাখা হয়। পরের দিন সকালে রোগী দেখতে ওই হাসপাতালে নিউরো সার্জন ডা. মঈনউদ্দিন মাহমুদ ইলিয়াছকে অনকলে পাঠানো হয়। চিকিৎসক রোগীর অবস্থা খুবই খারাপ, এই অবস্থায় রোগীর অপারেশন সম্ভব নয় বলে স্বজনদের জানান। রোগীর অবস্থার উন্নতি হলে অপারেশন করা যেতে পারে বলে স্বজনদের আশ্বস্ত করেন। পরবর্তীকে রোগীর অবস্থার উন্নতি হলে বিষয়টি সংশ্লিষ্ট চিকিৎসক ডা. মঈনউদ্দিন মাহমুদকে জানানো হয়। কিন্তু শিশুটির অবস্থার উন্নতি হওয়া স্বত্তেও রহস্যজনক কারণে অপারেশন করাতে অপারাগতা প্রকাশ করেন ওই চিকিৎসক। এরপরেও শিশুটির স্বজনদের পক্ষ থেকে অপারেশনের জন্য অনুরোধ করা হয়। এর মধ্যে ১৪ মে আইসিইউর চিকিৎসকরা লক্ষ্য করেন শিশুটির চোখ দুটি বন্ধ থাকায় নষ্ট হয়ে গেছে। বিষয়টি ওই দিনই ওই হাসপাতালের চক্ষু বিভাগের এক চিকিৎসককে অনকলে পাঠানো হয়। মস্তিষ্কে রক্তক্ষরণ জনিত কারণে রোগীর চোখের এই অবস্থা হয়েছে বলে মত দেন তিনি। এর চিকিৎসা শিশু হাসপাতালে সম্ভব নয় এবং যদি সম্ভব হয় শিশুটিকে পাহাড়তলী চক্ষু হাসপাতালে পাঠানোর পরামর্শ দেন। পরবর্তীতে ১৬ মে বাচ্চার ব্যাপারে বিভিন্ন ওয়ার্ডের চিকিৎসকের সমন্বয়ে জরুরি মেডিক্যাল বোর্ড গঠন করেন হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। যার মধ্যে শিশু বিভাগের বিভাগীয় প্রধান, আইসিইউ ইনচার্জ, সংশ্লিষ্ট নিউরোসার্জন ও চক্ষু বিভাগের অধ্যাপকরা ছিলেন। এতে ‘এই বাচ্চার অপারেশন এখানে করা সম্ভব নয়, তাকে সিএমসিএইচ অথবা ঢাকায় পাঠানো প্রয়োজন মর্মে অভিমত ব্যক্ত করেন ওই নিউরোসার্জন। দীর্ঘদিন অপেক্ষার পরও চিকিৎসক শিশুটির অপারেশন না করায় বাধ্য হয়ে গত ২১ মে শিশুটির বাবা স্বেচ্ছায় ছাড়পত্র নিয়ে চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজ (চমেক) হাসপাতালে নিয়ে আসনে।  

মা ও শিশু হাসপাতালের আইসিইউতে থাকাকালীন রোগীর অবস্থা কেমন ছিল জানতে চাইলে চট্টগ্রাম মা ও শিশু হাসপাতালের শিশু আইসিইউর ইনচার্জ ডা. দিদারুল আলমের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি এ বিষয়ে কিছু মনে নেই বলে জানান। যদিও কয়েকদিন আগেই শিশুটিকে নিয়ে হওয়া মেডিক্যাল বোর্ডের একজন সদস্য ছিলেন তিনি।  

এদিকে, শিশুটিকে মা ও শিশু হাসপাতাল থেকে নিয়ে এসে চমেক হাসপাতালে ভর্তি করানোর পর ওই দিন রাতেই শিশুটির অপারেশনের প্রস্তুতি নেন চিকিৎসকরা। কিন্তু দীর্ঘ কয়েক ঘণ্টা অপারেশন থিয়েটারের রাখার পর রাত আড়াইটার দিকে অজ্ঞাত কারণে অপারেশন না করিয়ে রোগীকে ফিরিয়ে দেওয়া হয়।  

এ বিষয়ে চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজ (চমেক) হাসপাতালে নিউরো সার্জারি বিভাগের প্রধান ডা. রবিউল করিম দাবি করেন, কয়েকবার এনেস্থেসিয়া দেওয়ার জন্য চেষ্টা করেও ব্যর্থ হয়েছেন এনেস্থিসিয়োলজিস্ট। রোগীর প্রেশার কম থাকায় কিছুই করা যাচ্ছে না। তবে সময়মত হাসপাতালে আনা হলে রোগীকে অপারেশন করা যেত বলেও জানান তিনি।  

দুর্ঘটনার পর পর রোগীকে অপারেশন করা যেত কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, আগে যেখানে ছিল সেখানে হয়তো রোগী ভালো ছিল। সেখানের চিকিৎসক যদি এ অপারেশন যোগ্য মনে করতেন তাহলে করা যেত।  

এদিকে চমেক হাসপাতালের নিউরো সার্জারি বিভাগের প্রধান শিশুটির অবস্থা খারাপ দাবি করলেও চমেক হাসপাতালের আইসিইউ বিভাগের প্রধান হারুণ উর রশিদ রোগীর অবস্থা ভালো এবং চিকিৎসকরা চাইলে রোগীকে ওয়ার্ডে নিয়ে যেতে পারেন বলে জানান।  

বর্তমানে রোগীর অপারেশনের অবস্থা আছে কিনা জানতে চাইলে তিনি বিষয়টি সংশ্লিষ্ট ওয়ার্ডের চিকিৎসকের সিদ্ধান্তের বলে উল্লেখ করেন।  

বাংলাদেশ সময়: ১৯৪৫ ঘণ্টা, মে ২৪, ২০২৩
এমআর/পিডি/টিসি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।