ঢাকা, সোমবার, ৩ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১৮ নভেম্বর ২০২৪, ১৬ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

চট্টগ্রাম প্রতিদিন

অনাগত সন্তানের ভবিষ্যত নিয়ে চিন্তায় রোজিনা

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১০৪২ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ৭, ২০২৩
অনাগত সন্তানের ভবিষ্যত নিয়ে চিন্তায় রোজিনা ছবি: বাংলানিউজ

চট্টগ্রাম: ভাগ্য হয়তো এমন করেই লেখা রোজিনার। অনাগত সন্তানের অপেক্ষায় সংসারে যখন খুশির আমেজ, তখন বিনা মেঘে হলো বজ্রপাত।

এক বিস্ফোরণে তছনছ তার সাজানো সংসার। মনের কোণে জ্বলতে থাকা শত খুশির মুহুর্তগুলো এক নিমেষেই রূপ নিলো নিকষ কালো অন্ধকারে।
বলছি কক্সবাজারে নৌকায় বিস্ফোরণে দগ্ধ মনির আহমদের স্ত্রীর কথা।  

অন্তঃসত্ত্বা হয়েও বিস্ফোরণে দগ্ধ স্বামীর সেবায় গত ৭ দিন ধরে পড়ে আছেন চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজ (চমেক) হাসপাতালে। একদিকে অনাগত সন্তানের পৃথিবীতে আসার অপেক্ষা অন্যদিকে স্বামী জীবন মৃত্যুর সন্ধিক্ষণে। এ যেন তার অগ্নিপরীক্ষা।  

স্বামীর এমন অবস্থা কোনোভাবেই মানতে পারছেন না রোজিনা। মনিরের স্বল্প আয়ে চলতো সংসার। কিন্তু হঠাৎ স্বামীর এ দুর্ঘটনা রোজিনাকে ঠেলে দিয়েছে অনিশ্চিত ভবিষ্যতের দিকে। তাই হাসপাতালে স্বামীসেবা করতে করতে নীরবে চোখের জল মুছছেন আঁচলে।

মনিরের শারীরিক পরিস্থিতি নিয়ে কথা হয় স্ত্রী রোজিনার সঙ্গে। তিনি বাংলানিউজকে জানান, গত ছয়দিন ধরে হাসপাতালে আছেন। শারীরিক অবস্থার উন্নতি হচ্ছে না। রাত হলেই জ্বালা যন্ত্রণায় ছটফট করছেন। চিকিৎসক-নার্সকে ডাকতে গেলেই বকা দিয়ে পাঠিয়ে দেন। চিকিৎসক আইসিইউতে নিয়ে যেতে বলেছেন। সেখানে খালি হলে হয়তো নিয়ে যাওয়া হবে।

পরিবারে একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তি অসুস্থ হওয়ায় চিকিৎসা ব্যয় মিটাতে হিমশিম খেতে হচ্ছে রোজিনার। ধার দেনা করে স্বামীর ওষুধের টাকা যোগাচ্ছেন তিনি। প্রথম দুইদিন বোট মালিকের পক্ষ থেকে টাকা ও খাবার পেলেও এখন তাও বন্ধ হয়ে গেছে। হাসপাতালে রোগীর জন্য দেওয়া খাবার তিনজনে ভাগা়ভাগি করে খাচ্ছেন তারা।  

দুই কন্যা আর স্ত্রীসহ মনিরের ৪ সদস্যের পরিবার চলতো মাছ ধরে। সপ্তাহখানেক আগে সমুদ্রে গিয়েছিলেন মাছ ধরতে। খুব ভোরে ফিরে আসেন তারা। নৌকা থেকে মাছ নামানোর সময়ই গ্যাসের গন্ধ নাকে আসে তাদের। কারণ খুঁজতে খুঁজতে ততক্ষণে বিস্ফোরণ।

মনিরের মা লাইলা বেগম বলেন, পরিবার নিয়ে আলাদা থাকতো মনির। মাছ ধরে নিজের সংসারের পাশাপাশি আমাদের পরিবারেও টাকা দিত। তার দুই মেয়ে এখনও ছোট। ছেলের বউও অন্তঃসত্ত্বা। এ অবস্থায় মেয়েটির (ছেলের বউ) নিজেরই সেবা দরকার। কিন্তু ভাগ্য খারাপ। স্বামীর এমন অবস্থায় নাওয়া খাওয়া ফেলে এক সপ্তাহ ধরে পড়ে আছে হাসপাতালে। শাশুড়ি-বউ দুইজনে একবেলা খাই তো দুইবেলা উপোস। তারপরও চাই আমার ছেলে সুস্থ হয়ে ফিরে আসুক।

চিকিৎসকরা বলছেন, আগুনে পোড়া রোগীর অবস্থা কখনোই নিশ্চিত করে বলা যায় না। কারণ যে কোনো সময় যে কোনো জটিলতা দেখা দিতে পারে।  

চমেক বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইউনিটের প্রধান ডা. রফিক উদ্দিন বাংলানিউজকে বলেন, বর্তমানে যে তিনজন ভর্তি আছেন এদের মধ্যে ২ জন আইসিইউতে, একজন ওয়ার্ডে ভর্তি রয়েছেন। কেউই শঙ্কামুক্ত নয়। সবার শ্বাসনালি পুড়ে গেছে। আমরা আমাদের চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি।

গত শুক্রবার (১ সেপ্টেম্বর) সকালে কক্সবাজার বিমানবন্দর সড়কের বাঁকখালী নদীর নুনিয়ারছড়া ঘাটে নোঙর করা একটি মাছ ধরার ট্রলারে বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটে। এতে দগ্ধ হয় ১২ জেলে। এর মধ্যে ১০ জনকে আনা হয় চমেক হাসপাতালে। দুইজনকে ঢাকায় পাঠানো হলে বাকি ৮ জন চিকিৎসাধীন ছিলেন এ হাসপাতালে। এর মধ্যে গত তিনদিনে ৫ জনের মৃত্যু হয়। চিকিৎসাধীন বাকি ৩ জনের অবস্থাও আশঙ্কাজনক।

বাংলাদেশ সময়: ১০৩০ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ০৭, ২০২৩
এমআর/এসি/টিসি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।