ঢাকা, মঙ্গলবার, ৪ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১৯ নভেম্বর ২০২৪, ১৭ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

চট্টগ্রাম প্রতিদিন

শেখ রাসেল স্মরণে জীবনমুখী প্রয়াস বইমেলা: ড. পবিত্র সরকার

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট  | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৮৫২ ঘণ্টা, অক্টোবর ১৩, ২০২৩
শেখ রাসেল স্মরণে জীবনমুখী প্রয়াস বইমেলা: ড. পবিত্র সরকার ...

চট্টগ্রাম: খ্যাতিমান সাহিত্যিক ড. পবিত্র সরকার বলেছেন, স্বপ্ন দেখার একটি উপকরণ বই। শিশুরা বই পড়ে স্বপ্ন দেখবে।

স্বপ্ন সার্থক করতে প্রবল পরিশ্রম করতে হবে। বই অনেক বড় বন্ধু।
 

শুক্রবার (১৩ অক্টোবর) বিকেলে জেলা শিল্পকলা একাডেমি মিলনায়তনে বাংলাদেশ শিশু সাহিত্য একাডেমি আয়োজিত শেখ রাসেল বইমেলা ও শিশুসাহিত্য উৎসবের উদ্বোধনকালে এসব কথা বলেন।

ড. পবিত্র সরকার বলেন, পঁচাত্তরের পনেরোই আগস্ট পৃথিবীর ইতিহাসে কলঙ্কের অধ্যায়। এটা কি অপরিসীম কাপুরুষতা ও বিশ্বাসঘাতকার ব্যাপার। বর্তমান প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বে বাংলাদেশ এগিয়ে গেছে। শেখ রাসেলকে স্মরণ করে জীবনমুখী প্রয়াস এ বইমেলা। বাংলাদেশ নারী শিক্ষায় অনেকদূর এগিয়েছে। শিশুরাতো শিখছেই। শিশুর হাতে বই উঠলে তারা বিশ্বনাগরিক হবে।  

প্রধান অতিথির বক্তব্যে আজাদী সম্পাদক এমএ মালেক বলেন, আমরা সুন্দর পৃথিবীর স্বপ্ন দেখি। এর জন্য সরকার, সমাজ, শিক্ষক, অভিভাবক সবার দায়িত্ব আছে। মা, বাবা, শিক্ষক কোনো বিনিময় ছাড়া শিশুদের ভালোবাসে। আমি বৃদ্ধাশ্রমের বিপক্ষে। বাবা-মাকে অবহেলা করা যাবে না 

তিনি বলেন, যেকোনো কাজে ভালো করে লেগে থাকলে পুরস্কারও পাওয়া যায়। আমার বাবা 'কাঁদতে আসিনি ফাঁসির দাবি নিয়ে এসেছি' কবিতাটি ছাপিয়ে দিয়েছিলেন রাষ্ট্রদ্রোহিতার অপরাধ জেনেও। এর জন্য আমি গর্ব অনুভব করি। বই পড়ার জন্য শিক্ষা দরকার। না পড়লে জ্ঞানের পরিধি বাড়বে না। অনুষ্ঠানে ফুল দিলে আমি বলি বই দিতে। তাহলে বই পড়ার আগ্রহ জন্মাবে। পৃথিবীতে সব কিছু পরিবর্তনশীল। পরিবর্তনের সঙ্গে মানিয়ে নিতে হবে। ডায়নোসর শক্তিশালী হয়েও প্রকৃতির সঙ্গে খাপ খাওয়াতে পারেনি। কিন্তু মানুষ টিকে আছে।  

মা বাবার দায়িত্ব সন্তানের মনে স্বপ্ন গড়ে দেওয়া। তাহলে শিশুরা বাকিটা করে নেবে। পশু জন্মের পরই পশু। শিশুকে সমাজ পরিবার গাইড না করলে ভালো মানুষ তৈরি হয় না।  

সভাপতির বক্তব্যে খ্যাতিমান সমাজবিজ্ঞানী, প্রিমিয়ার বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ড. অনুপম সেন বলেন, পনেরোই আগস্ট অমোচনীয় কলঙ্কের দিন।  

তিনি বলেন, মানুষ একমাত্র জীব যারা প্রকৃতিকে বদলে দিতে পারে। প্রতিনিয়ত প্রকৃতিকে বদলাচ্ছে। প্রকৃতিকে ভালোবেসে একাত্ম হয়ে বিশ্ব গড়তে হবে। সভ্যতা মানে বই। শিশুসাহিত্য কল্পনার বিস্তার ঘটায়। শিশুরা বাংলাদেশকে নতুন করে গড়ে তুলবে এ আশা রাখি।

শিশুসাহিত্যিক আনসার উল হক বলেন, শেখ রাসেল বইমেলা বিশ্বের বাংলাভাষী শিশুসাহিত্যিকদের মধ্যে উন্মাদনা তৈরি করেছে। চট্টগ্রামে প্রথম এসেছি। এ বইমেলা নিয়মিত হবে এ আশা রাখি।  

বাংলাদেশ শিশু একাডেমির মহাপরিচালক শিশুসাহিত্যিক আনজীর লিটন বলেন, শেখ রাসেল বাঙালির ইতিহাসের গর্বিত নাম। সে লাল সবুজের রাজপুত্তুর। স্বাধীনতার আগে বঙ্গবন্ধুর সান্নিধ্য খুব বেশি পায়নি রাসেল। রাসেলকে জানতে হলে প্রধানমন্ত্রীর লেখা বই পড়তে হবে।  

রাসেল বাবার সঙ্গে ঘুরতে পছন্দ করতো। পঁচাত্তরে বাবার সঙ্গে ঘাতকরা তার ছোট্ট বুকটি ঝাঁজরা করে দিয়েছিল। সে মায়ের কাছে যেতে চেয়েছিল, কিন্তু যেতে দেয়নি। রাসেল কয়েকটি ছবির মাধ্যমে আমাদের হৃদয়ে গেঁথে আছে।  

বাংলাদেশ শিশু সাহিত্য একাডেমির পরিচালক কবি রাশেদ রউফ বলেন, শেখ রাসেল বিশ্বের দুরন্ত রাজপুত্রের প্রতীক। পঁচাত্তরে বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে তাকে নির্মমভাবে হত্যা করেছিল ঘাতকরা। ১৮ অক্টোবর শেখ রাসেলের জন্মদিনকে ঘিরে এ বইমেলার আয়োজন। শিশুদের বইমুখী করতে আমাদের এ প্রয়াস।

উপস্থাপনা করেন আবৃত্তিশিল্পী আয়েশা হক শিমু। 'জোতির্ময় বঙ্গবন্ধু' সংকলনের মোড়ক উন্মোচন করেন অতিথিরা।

সন্ধ্যা সাড়ে ৬টায় শিশুসাহিত্যিক বিপুল বড়ুয়ার সভাপতিত্বে শেখ রাসেলকে নিয়ে ছড়া-কবিতা পাঠে অংশ নেন আহসানুল হক, উম্মে হাবিবা সূচনা, ক্যামেলিয়া আহমেদ, জাকির হোসেন কামাল, জোবায়দা আক্তার চৌধুরী, নাসরীন রীনা, নুরনাহার ডলি, পাশা মোস্তফা কামাল, মালেক মাহমুদ, মাইছুরা ইশফাত, মেরিনা সুলতানা, রূপক কুমার রক্ষিত, শওকত জসীম, শাহনাজ পারভীন, সানজিদা আফরীন, হাসিনা আকতার।

সন্ধ্যা ৭টায় অনুষ্ঠিত হয় পবিত্র সরকার সন্ধ্যা ‘ছড়া পড়ার ইচ্ছে আছে?’ বই নিয়ে আলোচনা। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ড. শিরীণ আখতারের সভাপতিত্বে আলোচনায় অংশ নেন শিশুসাহিত্যিক, প্রাবন্ধিক সুজন বড়ুয়া। রাত ৮টায় শিশুসাহিত্যিক রহীম শাহের সভাপতিত্বে ‘আমার লেখা আমার বই: শেখ রাসেল’ বিষয়ে সেমিনারে আলোচনায় অংশ নেন ইউসুফ রেজা, নেছার আহমদ, আ. ফ. ম. মোদাচ্ছের আলী, মিলন বনিক, ইফতেখার মারুফ ও রুনা তাসমিনা।

এদিকে উৎসব উপলক্ষে প্রকাশিত হয়েছে ড. পবিত্র সরকারের ‘ছড়া পড়ার ইচ্ছে আছে’, রাশেদ রউফ ও মহসিন চৌধুরী সম্পাদিত জ্যোতির্ময় বঙ্গবন্ধু, আজিজ রাহমানের ‘রঙ লেগেছে পাতায় পাতায়’, প্রদ্যোত বড়ুয়ার ‘পেখম খুলেছে আলোর পাখি’, লিপি বড়ুয়ার ‘আলোর পাখি শেখ রাসেল’, বনশ্রী বড়ুয়া ‘সবুজ হাসে বাংলাদেশে’, গৌতম কাননুগোর ‘চাঁদের হাসি খোকার হাসি’, সজল দাশের ‘দিচ্ছে পাড়ি বন-বাদাড়ি’, ইসমাইল জসীমের ‘সবুজের সাথে মন মাতাতে’ ও রুনা তাসমিনা সম্পাাদত ‘অনন্যধারা’।

গ্যালারি ভবনের দোতলায় বইমেলা, নিচতলা ও তৃতীয় তলায় সাংস্কৃতিক প্রতিযোগিতা চলছে। ১৮ অক্টোবর পর্যন্ত বইমেলা চলবে।  

বাংলাদেশ সময়: ১৮৪০ ঘণ্টা, অক্টোবর ১৩, ২০২৩
এআর/পিডি/টিসি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।