ঢাকা, মঙ্গলবার, ২৫ ভাদ্র ১৪৩১, ১০ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০৬ রবিউল আউয়াল ১৪৪৬

চট্টগ্রাম প্রতিদিন

বিশ্ববিদ্যালয়ের দুর্নীতি তদন্তে 'উচ্চশিক্ষা দুর্নীতি দমন কমিশন' গঠনের দাবি

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট  | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২০৫০ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ৯, ২০২৪
বিশ্ববিদ্যালয়ের দুর্নীতি তদন্তে 'উচ্চশিক্ষা দুর্নীতি দমন কমিশন' গঠনের দাবি

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়: স্বৈরাচার হাসিনা সরকারের আমলে প্রায় সকল পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে টেন্ডারবাজি, নিয়োগ বাণিজ্যসহ বিভিন্ন প্রকারের দুর্নীতি সংঘটিত হয়েছে। বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসিদের বিরুদ্ধে ইউজিসি তদন্ত কমিটিও গঠন করেছিল, কিন্তু সঠিকভাবে তদন্ত হয়নি এবং কিছু বিশ্ববিদ্যালয়ের তদন্ত হলেও তদন্ত রিপোর্ট অনুসারে কোনো শাস্তি কার্যকর হয়নি।

তাই পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর বিভিন্ন পর্যায়ের দুর্নীতি তদন্ত করে একটি শ্বেতপত্র প্রকাশের জন্য 'উচ্চশিক্ষা দুর্নীতি দমন কমিশন' গঠন করা হোক।  

অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের একমাস পূর্তি উপলক্ষে 'অন্তর্বর্তী সরকার ও জনপ্রত্যাশা' শীর্ষক সংবাদ সম্মেলনের এসব কথা বলেন সমাজ ও রাষ্ট্রচিন্তা কেন্দ্রের পরিচালক ও চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় (চবি) রাজনীতি বিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. মো. এনায়েত উল্যা পাটওয়ারী।

সোমবার (০৯ সেপ্টেম্বর) বেলা ১২ টায় চবি সাংবাদিক সমিতির কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনটি অনুষ্ঠিত হয়।

এসময় আরও উপস্থিত ছিলেন, যোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ড. শহীদুল হক, দর্শন বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক মোহাম্মদ মোজাম্মেল হক এবং অর্থনীতি বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক মোহাম্মদ মোর্শেদুল হক।

লিখিত বক্তব্যে ড. মো. এনায়েত উল্যা পাটওয়ারী বলেন, কোটা সংস্কারের মতো যৌক্তিক আন্দোলন দমন করার জন্য হাসিনা সরকার সর্বশক্তি প্রয়োগ করেছে। অনেক চড়াই-উতরাই পেরিয়ে ৫ আগস্ট বাংলাদেশ 'দ্বিতীয় স্বাধীনতা' লাভ করে এবং শেখ হাসিনা ভারত পালিয়ে যায়। পতনের দিনও তার পেটুয়া বাহিনী পুলিশের গুলিতে শতাধিক ছাত্র জনতা শহীদ হন। সহস্রাধিক মানুষ গুলিবিদ্ধ হয়। জনতার ক্ষোভের বহিঃপ্রকাশ ঘটে এবং ৪৫০টি পুলিশ স্টেশন আক্রান্ত হয়। সর্বোপরি এক ধ্বংসস্তূপের ওপর ড. ইউনুসের সরকার দায়িত্ব গ্রহণ করে।  

আহতদের সুচিকিৎসার প্রয়োজনীয়তা তুলে ধরে তিনি বলেন, গণঅভ্যুত্থানে নৃশংসতার শিকার গুলিবিদ্ধ মানুষের অগ্রাধিকার ভিত্তিতে সুচিকিৎসার ব্যবস্থা করা প্রয়োজন। জীবন ঝুঁকিতে থাকা ব্যক্তিদের উন্নত চিকিৎসার জন্য বিদেশ প্রেরণ করা উচিত। শহীদ, আহত এবং নির্যাতিত ব্যক্তিদের পরিবারে সর্বাগ্রে খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে।

প্রশাসন ও পুলিশের সংস্কারের প্রয়োজনীয়তা উল্লেখ করে ড. এনায়েত উল্যা বলেন, বিগত ফ্যাসিস্ট সরকারের দোসর প্রশাসনের বিভিন্ন পর্যায়ের বাকি কর্মকর্তাদের অনতিবিলম্বে বরখাস্ত করে বিচারের আওতায় নিয়ে আসা জরুরী। তাদের দুর্নীতি তদন্ত করে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। অনতিবিলম্বে পুলিশ বাহিনীকে পুনর্গঠন করে এ বাহিনীকে জনবান্ধব করার কার্যকর উদ্যোগ নেওয়া দরকার। পুলিশের হারানো গৌরব বিশেষ করে তাদের আইডেন্টিটি ক্রাইসিস নিরসনের ব্যবস্থা করা। দুর্নীতিবাজ সকল পুলিশ কর্মকর্তা এবং সিপাহিদের আইনের আওতায় এনে তদন্তপূর্বক দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি প্রদান করা অত্যাবশ্যক। অনতিবিলম্বে পুলিশ বাহিনীতে সিপাহী ও কর্মকর্তা নিয়োগের বিষয়ে জরুরি ব্যবস্থা গ্রহণ করা সময়ের দাবী।

যোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ড. শহীদুল হক বলেন, দেশের প্রতিটা মানুষকে সামরিক প্রশিক্ষণের আওতায় আনতে হবে। পৃথিবীর বিভিন্ন দেশেই নাগরিকদের সামরিক প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়। যেহেতু ইন্ডিয়া কোনো কারণ ছাড়াই বিভিন্ন সময় বলছে 'আমরা প্রস্তুত'। তাহলে আমাদেরও উচিৎ প্রস্ততি নেওয়া। সাম্প্রদায়িক ইস্যুগুলো বারবার সামনে আসছে। ইতিমধ্যে হিন্দু ধর্মাবলম্বীরা অক্টোবরের মাঝামাঝি সময়ে অবস্থান কর্মসূচি করে পুরো ঢাকা অচল করে দেওয়ার ঘোষণা দিয়েছে। এই বিষয়গুলোর সুন্দর সুরাহা হওয়া জরুরী।  

তিনি আরও বলেন, আমরা দেখেছি ওসি প্রদীপ একাই ২৫০ জন মানুষকে হত্যা করেছে। তার হাতে হত্যার শিকার অধিকাংশই ছিলো শিবির কর্মী। তার মানে প্রদীপ মুসলমানদের টার্গেট করেই মেরেছে। আমরা কিন্তু তখন বলিনি যে সে সাম্প্রদায়িক কাজ করছে। তাই গত ১৫ বছরে সংখ্যালঘুদের অবস্থান কি ছিলো সেটাও আমাদের দেখতে হবে। তারা তো উল্টো মুসলমানদের সংখ্যালঘু বানিয়ে রেখেছিল। এটাও তদন্ত হওয়া জরুরী।

ড. শহীদুল হক বলেন, গত ১৫ বছরে ইন্ডিয়াসহ বিভিন্ন দেশের সঙ্গে অনেক চুক্তি সাক্ষরিত হয়েছে। নিয়মানুযায়ী যেকোনো চুক্তি তিন মাসের মধ্যে সংসদে উত্থাপনের মাধ্যমে জনগণের সামনে চুক্তির ভালোমন্দ দিক তুলে ধরতে হয়। কিন্তু অনেক চুক্তির কথা আমরা বিভিন্ন মাধ্যমে শুনলেও সরকার সেগুলো আমাদেরকে জানায়নি। একটা চুক্তির কারণে একটা দেশ দীর্ঘ মেয়াদে ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে। তাই প্রতিটা চুক্তির বিষয়ে সুস্পষ্ট বক্তব্য দিতে হবে। যেসব চুক্তির বিষয়ে এখনো মানুষ জানে না, সবগুলো সামনে আনতে হবে। ভালোমন্দ বিবেচনায় প্রয়োজনে কিছু কিছু চুক্তি বাতিল করতে হবে। এসব চুক্তির পেছনে যদি কোনো অসৎ উদ্দেশ্য থাকে, যারা এর সঙ্গে জড়িত ছিলো তাদের আইনের আওতায় আনতে হবে।

বাংলাদেশ সময়: ২০৫০ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ৯, ২০২৪
এমএ/পিডি/টিসি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।