ঢাকা, শুক্রবার, ১২ পৌষ ১৪৩১, ২৭ ডিসেম্বর ২০২৪, ২৪ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

চট্টগ্রাম প্রতিদিন

বছরজুড়ে আলোচনায় চট্টগ্রাম শিক্ষাবোর্ড 

সৈয়দ বাইজিদ ইমন, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট  | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৩২৪ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ২৬, ২০২৪
বছরজুড়ে আলোচনায় চট্টগ্রাম শিক্ষাবোর্ড  ...

চট্টগ্রাম: নানান ঘটনার জন্ম দিয়ে সারা বছরই আলোচনায় ছিল চট্টগ্রাম শিক্ষাবোর্ড। প্রশ্ন ফাঁস থেকে শুরু করে জালিয়াতি, অনিয়ম ও ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের দ্বন্দ্বে এই প্রতিষ্ঠান শিরোনাম হয়েছে বছরজুড়ে।

চট্টগ্রামের মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোর নিয়ন্ত্রক প্রতিষ্ঠানটি এসব কারণে ইমেজ সংকটে পড়েছে।

শিক্ষা বোর্ডের নানা অভিযোগ নিয়ে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের নির্দেশে তদন্তে নামে মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক অধিদপ্তর (মাউশি)।

এছাড়া চট্টগ্রাম শিক্ষা বোর্ডের নানা অভিযোগ গড়িয়েছে আদালত ও থানায়। এসব অভিযোগ তদন্ত করে দেখছে পুলিশের কাউন্টার টেরোরিজম ইউনিটসহ একাধিক সংস্থা। একইসঙ্গে শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যানের নির্দেশে অভ্যন্তরীণ তদন্তও চলছে।

শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোর নিয়ন্ত্রক এই শিক্ষাবোর্ডের বেহাল দশা দেখে ক্ষুব্ধ সুশীল সমাজ। জালিয়াতি, অনিয়ম এবং গ্রুপিং বন্ধে তারা ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানিয়েছেন।

চেয়ারম্যান হয়ে ফিরেছেন সমালোচিত রেজাউল

২০২৪ সালের চট্টগ্রাম শিক্ষাবোর্ডে সবচেয়ে আলোচিত ঘটনার মধ্যে অন্যতম হলো সাবেক শিক্ষামন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেলের সুপারিশে চেয়ারম্যান পদে আসা অধ্যাপক রেজাউল করিমের নিয়োগ। ওএমআর শিট সরবরাহকারী একটি প্রতিষ্ঠান থেকে ‘হাতে হাতে টাকা’ নিয়ে সমালোচনার মুখে পড়েছিলেন চট্টগ্রাম শিক্ষাবোর্ডের সাবেক সচিব অধ্যাপক রেজাউল করিম। দুই দফা কারণ দর্শানো নোটিশ জারি করার পর গত বছরের ১৯ অক্টোবর তাকে মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদফতর (মাউশি) চট্টগ্রাম অঞ্চলে বদলি করা হয়। তখন এই অনিয়ম নিয়ে শিক্ষাবোর্ডের বর্তমান সচিব অধ্যাপক নারায়ণ চন্দ্র নাথের সাথে ভুল বোঝাবুঝি হয়েছিল রেজাউল করিমের। গত ১৪ মে সেই রেজাউল করিম চেয়ারম্যান হয়ে ফিরেন চট্টগ্রাম শিক্ষাবোর্ডে।

পরীক্ষার দায়িত্বে না থেকেও সম্মানী গ্রহণ

চলতি বছরের এসএসসি পরীক্ষার ফলাফল প্রকাশিত হয় গত ১২ মে। চট্টগ্রাম শিক্ষাবোর্ডের বর্তমান চেয়ারম্যান রেজাউল করিম দায়িত্ব নেন আরও দুইদিন পর ১৫ মে। এর আগপর্যন্ত পরীক্ষা সংক্রান্ত কার্যক্রমে যুক্ত না থেকেও তিনি সম্মানী বাবদ ৮৪ হাজার ৯৪৭ টাকা নিয়েছেন। দায়িত্ব পালন না করে তাঁর এই টাকা নেওয়া নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে।

নিয়ম অনুযায়ী, শিক্ষাবোর্ডের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা এসএসসি ও এইচএসসি পরীক্ষা আয়োজনের মাধ্যমে প্রতিবছর ৮টি করে মোট ১৬টি সম্মানী পান। এর মধ্যে পরীক্ষার্থীদের নিবন্ধন প্রক্রিয়া শেষ করলে মূল বেতনের অর্ধেক, পরীক্ষার প্রবেশপত্র বিতরণের পর অর্ধেক, পরীক্ষা শেষ হওয়ার পর মূল বেতনের সমপরিমাণ ও ফলাফল প্রকাশের পর মূল বেতনের অর্ধেক সম্মানী দেওয়া হয়। এর বাইরে ব্যবহারিক পরীক্ষার উত্তরপত্র যাচাই, পুনর্নিরীক্ষণের ফলাফল প্রকাশ, নম্বরপত্র ও সনদ বিতরণ করলে বিভিন্ন অনুপাতে আরও চারটি সম্মানী পান কর্মকর্তা-কর্মচারীরা।

শিক্ষাবোর্ডের নথিতে দেখা গেছে, ব্যবহারিক পরীক্ষার উত্তরপত্র যাচাই ও পরীক্ষা শেষ করায় দুটি সম্মানী বণ্টনের জন্য তৎকালীন চেয়ারম্যান নারায়ণ চন্দ্র নাথ বরাবর আবেদন করে পরীক্ষা নিয়ন্ত্রকের দপ্তর। ১৪ মে এ আবেদন করা হয়। ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান ওইদিনই আবেদনপত্র অনুমোদন করে সম্মানী বণ্টনের জন্য হিসাব ও নিরীক্ষা শাখার উপপরিচালক বরাবর চিঠি পাঠান। পাশাপাশি ১৪ মে অধ্যাপক রেজাউল করিমকে চেয়ারম্যান পদে নিয়োগ দিয়ে বিজ্ঞপ্তি জারি করা হয়। তিনি ১৫ মে যোগ দিয়ে পরীক্ষাসংক্রান্ত কাজের সম্মানী বাবদ মূল বেতনের অর্ধেক ৩২ হাজার ৩০ টাকা গ্রহণ করেন। ১৬ মে এ টাকা বণ্টন করা হয়।

শিক্ষাবোর্ডের প্রণোদনা বণ্টনবিষয়ক একটি নথিতে উল্লেখ করা হয়েছে, ২০২৪ সালের এসএসসি পরীক্ষার মোট ব্যবহারিক উত্তরপত্রের সংখ্যা ছিল ৩ লাখ ৫১ হাজার ৭০৪টি। প্রতি উত্তরপত্র বাবদ ৫ টাকা হারে ১৭ লাখ ৫৮ হাজার ৫২০ টাকা কর্মকর্তা-কর্মচারীদের মাঝে বণ্টন করা হয়। চেয়ারম্যান রেজাউল করিম চৌধুরী সম্মানী পেয়েছেন ৫২ হাজার ৯১৭ টাকা। ১১ জুন অন্য কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সঙ্গে এ টাকা পান চেয়ারম্যান।

ফলাফল চ্যালেঞ্জ করে পাস ১০২ পরীক্ষার্থী

চট্টগ্রাম শিক্ষাবোর্ডে ২০২৪ সালের এসএসসি পরীক্ষার ফলাফল পুনঃনিরীক্ষণে নতুন করে ফেল থেকে পাস করে ১০২ জন পরীক্ষার্থী। এদের মধ্যে একজন জিপিএ-৫ পায়। এ বছর ফলাফল পুনঃনিরীক্ষণের জন্য আবেদন করে মোট ২৮ হাজার ৩৫১ জন পরীক্ষার্থী। এদের মধ্যে দুই হাজার ৬০ জন পরীক্ষার্থীর নম্বর পরিবর্তন হয়।

সদস্য না হয়েও তদন্ত কমিটির সাক্ষাৎকারে উপসচিব

চট্টগ্রাম শিক্ষাবোর্ডের সচিব নারায়ণ চন্দ্র নাথের সন্তানের ফলাফল পুনর্নিরীক্ষণের জন্য অবৈধভাবে আবেদন করা হয়েছিল। এ ঘটনার পর ফলাফল জালিয়াতির অভিযোগে তদন্ত কমিটি গঠন করে মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তর (মাউশি)। কমিটির দুই সদস্য বোর্ডের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সাক্ষাৎকার নেন। তবে সাক্ষাৎকার নেওয়ার সময় শিক্ষাবোর্ডের উপসচিব মো. বেলাল হোসেন কমিটির সদস্যদের সঙ্গে উপস্থিত ছিলেন। এ নিয়ে প্রশ্ন তুলেন কর্মকর্তা-কর্মচারীরাই । তাঁদের অভিযোগ, তদন্ত কার্যক্রম প্রভাবিত করতে উপসচিব উপস্থিত ছিলেন।

অফিস কক্ষের ট্রাংক থেকে মার্কশিট উধাও 

চট্টগ্রাম শিক্ষাবোর্ডের উপপরীক্ষা নিয়ন্ত্রক মো. দিদারুল আলম। চার তলায় তার কক্ষের তিনটি ট্রাংকে উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষা-২০২৩ এর শিক্ষার্থীদের লক্ষাধিক নম্বরফর্দ রক্ষিত ছিল। গত ১৯ মে সকাল ১০টার দিকে দেখা যায়, ওই তিন ট্রাংকের মধ্যে একটি ট্রাংকে লাগানো তালা নেই। ঘটনা জানাজানির পর মাউশির তদন্ত কর্মকর্তাদের নির্দেশে ৩ জুন বিকেলে শিক্ষাবোর্ডের দুইজন কর্মকর্তার উপস্থিতিতে ভাঙা ট্রাংকটিতে দেখা যায়- শিক্ষার্থীদের দুটি নম্বরফর্দ নেই।

পুলিশ ও শিক্ষাবোর্ড কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, এ ঘটনায় তড়িঘড়ি করে উপসচিব দিদারুল আলমকে পাঁচলাইশ থানায় জিডি করতে নির্দেশ দেন শিক্ষাবোর্ডের চেয়ারম্যান। তবে দিদারুল আলম বিষয়টি তার দায়িত্ব নয় উল্লেখ করে প্রথমে জিডি করতে অপারগতা প্রকাশ করেন। তার যুক্তি, মার্কশিট উধাও হলে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়ার দায়িত্ব পরীক্ষা নিয়ন্ত্রকের। তবে পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক শিক্ষা বোর্ডের সচিব নারায়ণ চন্দ্রের লোক বলে পরিচিত হওয়ায় তাকে বাদ দিয়ে চেয়ারম্যান উপপরীক্ষা নিয়ন্ত্রককেই জিডি করতে নির্দেশ দেন।  

একপর্যায়ে চেয়ারম্যানের চাপে পাঁচলাইশ থানায় জিডি করতে যান দিদারুল আলম। সেখানে বাধে আরেক বিপত্তি। চেয়ারম্যানের লিখিত নির্দেশ ছাড়া জিডি নিতে আপত্তি জানায় পাঁচলাইশ থানা পুলিশ। একপর্যায়ে হাতে লিখিত একটি কাগজে জিডির অনুমতি দেন শিক্ষাবোর্ডের চেয়ারম্যান। এরপর ৪ জুন জিডি রেকর্ড হয়।

আইসিটি পরীক্ষা না দিয়ে পাস ১৭ জন

তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি (আইসিটি) বিষয়ে পরীক্ষা না দিয়ে পাস করেছে চট্টগ্রাম শিক্ষা বোর্ডের ১৭ জন শিক্ষার্থী। দুইজন শিক্ষার্থীর বিষয়ে তদন্তে নেমে আরও ১৫ জনকে শনাক্ত করে শিক্ষাবোর্ড। মূলত কুমিল্লা থেকে আনা দুইজন বিশেষজ্ঞ এ ঘটনা শনাক্ত করেন।

বিষয়টি জানাজানির পর শিক্ষাবোর্ডের কর্মকর্তাদের মধ্যে চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়। এটি কোনো কর্মকর্তা বা কর্মকর্তাদের যোগসাজশে জালিয়াতি নাকি ভুলক্রমে হয়েছে, তা নিয়ে প্রশ্ন ওঠে। আবার কোনো কোনো কর্মকর্তা জানিয়েছেন, যে প্রক্রিয়ায় ফলাফল প্রস্তুত হয় সেখানে কোনো কর্মকর্তার যোগসাজশ না থাকলে এতো বড় জালিয়াতির ঘটনা ঘটতো না। এ ছাড়া আইসিটি বাদে অন্য কোনো বিষয়ে এ ধরনের ঘটনা ঘটেছে কি না, সে বিষয়ে তদন্তে নামছে চট্টগ্রাম শিক্ষাবোর্ড।

জানা গেছে, বাঁশখালীর চাম্বল উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের এসএসসি পরীক্ষার কেন্দ্র ছিল বাঁশখালী আদর্শ উচ্চ বিদ্যালয়। মাধ্যমিকে আইসিটি বিষয়ে নৈর্ব্যক্তিক ও ব্যবহারিকে ২৫ নম্বর করে ৫০ নম্বরের পরীক্ষা হয়। গত ২৮ ফেব্রুয়ারি ওই বিষয়ের নৈর্ব্যক্তিক পরীক্ষা ছিল। ৩০ মিনিটের নৈর্ব্যক্তিক পরীক্ষার কেন্দ্রেই উপস্থিত হয়নি দুই শিক্ষার্থী। অথচ গত ১২ জুন প্রকাশিত এসএসসির ফলাফলে দেখানো হয়, তারা দুজন আইসিটি বিষয়ের পরীক্ষায় জিপিএ-৫ পেয়েছে।

প্রকাশিত ফলাফলে দেখা যায়, ব্যবহারিক পরীক্ষায় উত্তীর্ণ দেখিয়ে পরীক্ষাকেন্দ্র (বাঁশখালী-০১) থেকে দুই পরীক্ষার্থীর নম্বরপত্র পাঠানো হয়। একইভাবে অনুপস্থিত দুই শিক্ষার্থীর উত্তরপত্র জমা না হওয়া সত্ত্বেও তত্ত্বীয় (নৈর্ব্যক্তিক) পরীক্ষায়ও সর্বোচ্চ নম্বর দিয়ে তাদের জিপিএ-৫ পাইয়ে দেন বোর্ড পরীক্ষকরা। এ ঘটনার বিষয়ে খোঁজ নিতে কুমিল্লা শিক্ষাবোর্ড থেকে দুইজন বিশেষজ্ঞ আনা হয় চট্টগ্রাম শিক্ষা বোর্ডে। তারা আগের দুজনসহ মোট ১৭ জন আইসিটি পরীক্ষায় অংশ না নিয়েও পাস করার বিষয়টি শনাক্ত করেন। এর পরিপ্রেক্ষিতে গত ১০ জুন শিক্ষাবোর্ডের এক সভায় ১৭ শিক্ষার্থীর ফল বাতিল ঘোষণা করা হয়।

ফটকে তালা, কর্মকর্তারা অবরুদ্ধ 

২০২৪ সালের এইচএসসি ও সমমান পরীক্ষা বাতিলের দাবিতে চট্টগ্রাম শিক্ষা বোর্ডের সামনে আন্দোলন করে শিক্ষার্থীরা। চলতি বছরের ২০ আগস্ট শিক্ষাবোর্ডের প্রধান ফটক বন্ধ করে ৪ ঘণ্টা বিক্ষোভ করে তারা। এসময় কর্মকর্তারা ভেতরে অবরুদ্ধ হয়ে পড়েন। এসময় সেনাবাহিনীকেও শিক্ষাবোর্ডের বাইরে অবস্থান করতে দেখা যায়। মূল ফটকে তালা থাকায় সেনাবাহিনীর সদস্যরা ভেতরে প্রবেশ করতে পারেনি। পরবর্তীতে শিক্ষার্থীদের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে আলোচনা শেষে পরীক্ষা বাতিলের দাবি মেনে নেওয়ার ঘোষণা দেন ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান তপন কুমার সরকার। কিন্তু এ ঘোষণার পরিপ্রেক্ষিতে প্রজ্ঞাপন জারি না হওয়ায় বিকেল পর্যন্ত শিক্ষাবোর্ডের সব কর্মকর্তা-কর্মচারীকে অবরুদ্ধ করে রাখেন শিক্ষার্থীরা। বিকেল ৫টার পরে ঢাকা শিক্ষাবোর্ডের চেয়ারম্যানের আশ্বাসে বিক্ষোভ থেকে সরে আসেন তারা।  

এ ছাড়াও ২০২৪ সালের এইচএসসির ফল পুনর্মূল্যায়নের দাবিতে রাত পর্যন্ত অবস্থান করে শিক্ষাবোর্ড কর্মকর্তা-কর্মচারীদের অবরুদ্ধ করে রাখেন আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা। এর আগে ২১ অক্টোবর দুপুর ২টার কিছু সময় পর থেকে সেখানে অবস্থান নিয়ে গেট আটকে সর্বসাধারণের প্রবেশে বাধা দেন শিক্ষার্থীরা।

পদোন্নতিবঞ্চিত কর্মকর্তা-কর্মচারীদের আন্দোলন

দীর্ঘদিন ধরে পদোন্নতি বন্ধ ছিল চট্টগ্রাম শিক্ষাবোর্ডের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের। দাবি আদায়ে আন্দোলনে নামেন তারা। ৭ অক্টোবর শিক্ষাবোর্ড চেয়ারম্যানের কক্ষ ঘেরাও করে আন্দোলন শুরু করেন পদোন্নতিবঞ্চিত এসব কর্মকর্তা-কর্মচারী। সরকার পতনের পর গেল কয়েকদিন ধরে পদোন্নতির বিষয়টি নতুন করে সামনে আসে শিক্ষাবোর্ডে। এ সময় শিক্ষাবোর্ড চেয়ারম্যানকে পদোন্নতির কার্যক্রমে গতি আনতে তাগাদা দেন বঞ্চিতরা। শেষে দাবি আদায় না হওয়ায় আন্দোলনে নামেন তারা।  

অর্গানোগ্রাম অনুযায়ী পদ না থাকায় পদোন্নতি বন্ধ রয়েছে চট্টগ্রাম শিক্ষাবোর্ডে। এর আগে ২০১৯ সালে কর্মকর্তা-কর্মচারীদের পদোন্নতি নিয়ে অনিয়মের অভিযোগ ওঠে শিক্ষাবোর্ড কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে। ওই সময় সেকশন অফিসার পদ শূন্য না থাকলেও অর্গানোগ্রামের বাইরে গিয়ে ছয় কর্মচারীকে সেকশন অফিসার, যোগ্যতা না থাকা সত্ত্বেও ডাটা এন্ট্রি কন্ট্রোল অপারেটরকে সহকারী প্রোগ্রামার পদে পদোন্নতি দেওয়া হয় বলে অভিযোগ করেন সংশ্লিষ্টরা। পরবর্তীতে অনিয়মের মাধ্যমে দেওয়া এসব পদোন্নতি নিয়ে প্রশ্ন তোলে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। ওই বছরের ২০ অক্টোবর মন্ত্রণালয়ের উপ-সচিব ড. মো. মোকছেদ আলীর সই করা এক চিঠিতে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের পূর্ব অনুমতি ছাড়া এসব পদোন্নতির যৌক্তিক কারণ উল্লেখ করে লিখিতভাবে জানাতে বোর্ড চেয়ারম্যানকে নির্দেশনা দেওয়া হয়।  

সাবেক সচিবের বিরুদ্ধে আরেক সচিবের স্ত্রীর মামলা 

চলতি বছরের ২৫ জানুয়ারি চট্টগ্রামের সাইবার ট্রাইব্যুনাল আদালতে শিক্ষাবোর্ডের সাবেক সচিব অধ্যাপক আব্দুল আলিমসহ দুইজনের বিরুদ্ধে সাইবার নিরাপত্তা আইনে পরিচয় প্রতারণা, কম্পিউটারে বেআইনি প্রবেশসহ নানা অভিযোগ এনে মামলা দায়ের করেন সদ্য সাবেক সচিব অধ্যাপক নারায়ণ চন্দ্র নাথের স্ত্রী বনশ্রী নাথ।  

মামলার আর্জিতে বনশ্রী নাথ উল্লেখ করেছেন, তার স্বামী চট্টগ্রাম শিক্ষাবোর্ডের সচিব (ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান) হিসেবে দায়িত্বরত। ছেলে নক্ষত্র দেবনাথ গত বছর অনুষ্ঠিত এইচএসসি পরীক্ষার্থী ছিল। পরীক্ষার ফলাফল প্রকাশের পর ওই বছরের ২৮ নভেম্বর নক্ষত্র দেবনাথের এইচএসসির রোল এবং রেজিস্ট্রেশন নম্বর সংগ্রহ করে আসামিরা অপরাধ সংঘটনের জন্য শিক্ষাবোর্ডের ওয়েবসাইটে প্রবেশ করে পরীক্ষার খাতা পুনঃনিরীক্ষার আবেদন করেছে। এ ঘটনার পর বাদি থানায় একটি সাধারণ ডায়েরিও করেছিলেন।

মামলায় তিনি আরও উল্লেখ করেন, গত বছরের ২৭ ডিসেম্বর ১ নম্বর আসামি আব্দুল আলিম বাদির ছেলের পরীক্ষার খাতা পুনঃনিরীক্ষা এবং তার স্বামীকে নিয়ে ইঙ্গিতপূর্ণ পোস্ট করেন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে। মামলার ২ নম্বর আসামিও পরপর দুইবার এমন ইঙ্গিতপূর্ণ পোস্ট করেছেন।  

তিনি আসামি এবং অজ্ঞাতনামা আসামিদের অংশগ্রহণে ভিকটিম নক্ষত্র দেবনাথের এইচএসসির রোল ও রেজিস্ট্রেশন নম্বর সংগ্রহ করে কম্পিউটার সিস্টেমের মাধ্যমে শিক্ষাবোর্ডের ওয়েবসাইটে অপরাধ সংঘটনের জন্য বেআইনি প্রবেশের অভিযোগ এনে সাইবার নিরাপত্তা আইন ২০২৩ এর ১৮/২৪/২৬/৩৩ ধারায় মামলাটি দায়ের করেন।

বাংলাদেশ সময়: ১৩২০ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ২৬, ২০২৪
বিই/টিসি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।